Sunday, March 23, 2014

ঐতিহাসিক কপিলমুনি মহাবারুণী উৎসবের ইতিহাস

বারুণী উৎসবকে জাতীয় স্বীকৃতির দাবি


পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি এক অতি প্রাচীনতম ঐতিহাসিক স্থান। আনুমানিক ৫০০ বছর পূর্বে এ অঞ্চলে বন জঙ্গলে আবৃত ছিল। তার মধ্যে এক মুনির আশ্রম আবিস্কার করেন বাগনাথ মোহন্ত নামক এক সাধু পুরুষ। তার জীবন্ত সমাধী ছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে। আর এক সাধক কপিলমুনির আশ্রম ছিল স্বচ্ছ সলীল সমাধী কপোতাক্ষ নদের তীরে এক বটমূলে। 

জানা যায়, মুনি বিভিন্ন তীর্থ স্থানে ঘুরে বেড়াতেন। তিনি সব সময় তপ জপে মগ্ন থাকতেন। তপস্যার জন্য যে স্থানে দেহ ত্যাগ করেন সেই স্থানের নামানুসারে কপিল থেকে কপিলমুনি নাম করণ করা হয়। নদী ঘেরা, স্বচ্ছ সলিলা চির স্মৃতি বিজড়িত মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মাতৃসম কপোতাক্ষ বিধৌত ঋষিবর মহা সাধন কপিলের সাধনাস্থল, জাগ্রত পীর হযরত জাফর আউলিয়ার পদচারণায় ধন্য রায় সাহেবের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল “বিনোদগঞ্জ”। যা বর্তমানে কপিলমুনি বাজার নামে পরিচিত। কপিলমুনির আধুনিক রুপকার স্বর্গীয় রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু মহোদয় একান্ত চেষ্টা ও অকৃত্রিম ভালবাসা দিয়ে অতি সুনিপুন ভাবে বাংলা ১৩৩৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এই বাজারটি। তাই তারই নামানুসারে নাম করণ হয় বিনোদগঞ্জ।

যতদূর জানা যায়, কপিল থেকে কপিলমুনি এবং কপিলমুনি থেকে বিনোদগঞ্জ। এখানে কোন এক চৈত্র মাসের মধু কৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভক্তরা এই স্থানে কপোতাক্ষ নদে গঙ্গাস্নান বা ঐতিহাসিক মহাবারুণী স্নান উৎসব পালন করেন। সেই স্মরণাতীত কাল থেকে এই তিথীতে গঙ্গার জল এই স্থানে প্রবাহিত হয় এই বিশ্বাস মনে রেখে স্নান করে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভক্তরা।

বরুণ জলের দেবতা, বরুণের স্ত্রী বারুণী। বারুণী আর এক অর্থে গঙ্গা। তাই বারুণী স্নান অর্থাৎ গঙ্গার স্নান। এ কারণেই সেই থেকে কপিলমুনিতে মহাবারুণী মেলা এবং স্নান উৎসব হয়ে আসছে।

যদিও এই মেলাটির জাতীয় কোন স্বীকৃতি নেই। শুধুমাত্র জেলার কর্তা ব্যক্তিদের আন্তরিক সহযোগিতায় মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। যশোর জেলার কেশবপুরের মধু মেলা, নড়াইলের সুলতান মেলা, উড়াকান্দির বারুনী মেলার জাতীয় স্বীকৃতি থাকায় প্রতি বছর যথা সময়ে মহা ধুমধামে অনুষ্ঠিত হয় এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা থাকে।

কিন্তু পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির এই মহাবারুণী মেলার জাতীয় স্বীকৃতি নেই। আর এই স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কেউ কোনদিন চেষ্টাও করেননি। এলাকাবাসীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও জেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মহানুভবতার দৃষ্টিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।