Tuesday, May 5, 2015

পাইকগাছার সন্তান ‘আবদুস সামাদ’এর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল ক্যালেন্ডার উদ্ভাবন

আগে ফাগুন এলেও বুঝতে পারত না দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা। কোনদিন কী বার তা জানতেও তাদের অন্যের সাহায্য নিতে হতো। কিন্তু এখন ক্যালেন্ডারে হাত দিয়েই তারা বলতে পারবে দিন, মাস ও বছর ! কোনদিনে কী ধর্মীয় উৎসব তাও জানতে পারবে নিজে নিজেই। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য এমন অভিনব এক ক্যালেন্ডার উদ্ভাবন করেছেন আবদুস সামাদ। চট্টগ্রাম সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তিনি। ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রথমবারের মতো তৈরি করা তার এ ক্যালেন্ডার এরই মধ্যে সংগ্রহ করেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা। 

আবদুস সামাদ খুলনার পাইকগাছা উপজেলার লস্করবাড়ির মৃত সমেজ উদ্দীন ফকিরের ছেলে। তিনি ১৯৭৬ সালে পাইকগাছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৭৮ সালে খুলনার সরকারি বিএল কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৮৩ সালে ঢাকার আবুজর ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ ও ১৯৯৬ সালে বিএসইডি পাস করেন। ১৯৮৪ সালে রাজশাহী সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। 

১৯৭৭ সাল থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর বই ও বিভিন্ন লেখকের বই ব্রেইল পদ্ধতিতে তৈরি করে আসছেন শিক্ষক আব্দুস সামাদ। এর মধ্যে পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের নকশিকাঁথার মাঠ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের গল্প বই, নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেন ও কবি সুফিয়া কামালের জীবনী, স্নাতকের নীতিবিদ্যা, ডিগ্রির ইংরেজি বই উল্লেখযোগ্য। ব্রেইল পদ্ধতিতে এ পর্যন্ত প্রায় ১২০টি বই তৈরির কথা জানিয়েছেন আবদুস সামাদ। ব্রেইল পদ্ধতিতে বই তৈরি করতে কাগজে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় বলে তিনি জানান।

ব্যতিক্রমী এ উদ্ভাবন প্রসঙ্গে আবদুস সামাদ বলেন, 'দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের অনেক চাওয়া পূর্ণ হয় না। তার মধ্যে একটি চাওয়া হলো স্বাভাবিক মানুষের মতো নতুন বছরে নতুন ক্যালেন্ডার হাতে পাওয়া। ক্যালেন্ডার না পাওয়ার কারণে অনেক বিষয় অজানা থাকত তাদের। দেরিতে হলেও তাদের হাতে ব্রেইল পদ্ধতির ক্যালেন্ডার তুলে দিতে পেরে খুব ভালো লাগছে।' 

জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে ব্রেইল পদ্ধতিতে তিনশ' কপি ক্যালেন্ডার ছাপানো হয়েছে। এ জন্য দুই রিম কাগজ দিয়েছে রোটারি ক্লাব অব চিটাগং ওশান ব্লু। ব্রেইল পদ্ধতিতে একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করতে সময় লেগেছে তিন দিন। তার পর তা ব্রেইল প্রিন্টারের (ইমবোসার) মাধ্যমে তিনশ' কপি ছাপানো হয়। এ কাজে যুক্তরাষ্ট্রের এলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাকিব হাসান ও মালয়েশিয়া প্রবাসী দিদারুল আলম সহযোগিতা করেছেন। দিদারুল আলম ৫৯৫ ডলার মূল্যের ব্রেইল মেশিনের 'ডাক্সবারি ব্রেইল সফটওয়্যার' দিয়েছেন। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে ক্যালেন্ডার, বই ইত্যাদি সহজে ও কম সময়ে কনভার্ট করা যায়। ক্যালেন্ডার তৈরিতে কিছু কারিগরি সমস্যার সৃষ্টি হলেও তা এ সফটওয়্যারটি সমাধান করে দিয়েছে। 

ব্রেইল পদ্ধতিতে তৈরি ক্যালেন্ডার ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের পাঁচটি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্কুলে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০টি করে ও স্কুলে ১০টি করে পাঠানো হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০ জন হওয়ায় সেখানে ৬০টি কপি পাঠানো হয়েছে বলে আবদুস সামাদ জানান। শিক্ষার্থীরা জানতে পারবে মনীষীদের উপদেশমূলক উদ্ধৃতি : ব্রেইল পদ্ধতিতে তৈরি ক্যালেন্ডারটি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কেবল দিন, মাস, বছরই জানাবে না; তারা এ থেকে জানতে পারবে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত মনীষীদের উপদেশ ও পরামর্শমূলক বেশ কিছু উদ্ধৃতিও। 

ক্যালেন্ডারটিতে তুলে ধরা হয়েছে মাদার তেরেসার 'আনন্দ প্রার্থনার মতো, এটা শক্তি', জর্ন ওরিয়েনের 'দুনিয়াটি মিথ্যাময় হয়ে গেছে, সত্য বলাটাই বিপ্লব কাজ', শেকসপিয়রের 'কাজের মধ্যে আনন্দ থাকে', বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধের 'তিনটি জিনিস কারও কাছে লুকানো যায় না_ সূর্য, চাঁদ ও সত্য', গ্রিস লেখক ইশপের 'দয়া কখনও বৃথা যায় না, যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন'সহ আরও কয়েকজন বিখ্যাত মনীষীর উদ্ধৃতি। 

ক্যালেন্ডার পেয়ে স্বপ্ন পূরণচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মো. একরাম আলী। প্রথমবারের মতো হাতে ক্যালেন্ডার পেয়ে উচ্ছ্বসিত তিনি। একরাম বলেন, 'রাত শেষ হয়ে দিন আসত। কিন্তু আজ কী বার, কত তারিখ ও কোন মাস তা অন্যের কাছ থেকে জানা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। এ ছাড়া জানতে পারতাম না বছরে কতদিন সরকারি ছুটি, কখন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে। এখন ব্রেইল ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে এসব নিজেই জানতে পারছি।' 

চট্টগ্রাম সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রেবেকা আক্তার রুনা বলেন, 'প্রথমবারের মতো হাতে ব্রেইল পদ্ধতিতে ক্যালেন্ডার পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে কেবল শিক্ষক আবদুস সামাদের কারণে।'

Monday, May 4, 2015

পাইকগাছা-আঠারমাইল সড়কে যাত্রীবাহী বাস উল্টে খাদে; আহত ২৫

পাইকগাছা-আঠারমাইল সড়কে যাত্রীবাহী বাস পাল্টি খেয়ে খাদে পড়ে কমপক্ষে ২৫ যাত্রী আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার সকাল ১১টার দিকে পাইকগাছা-তালা সীমান্তের ঘোষনগর এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। 

পাইকগাছা-আঠারমাইল সড়কটি বর্তমানে চলাচল উপযুক্ত ! রাস্তা যেহেতু ভালো তাই ড্রাইভিংয়ের সময় গতিসীমা লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটে অহরহ। আর এটিই হাঠাৎ করে পাইকগাছা-আঠারমাইল সড়কে দূর্ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার একটি অন্যতম কারণ !

ছবি তুলেছেন :: রানা ঘোষ
প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, পাইকগাছা পৌর বাসস্ট্যান্ড থেকে খুলনা অভিমুখে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী বাস ঘটনাস্থলে পৌছানোর পর বিপরীত দিক থেকে ছেড়ে আসা দ্রুতগামী মোটরসাইকেলকে পাশ কাটাতে গেলে যাত্রীবাহী বাসটি উল্টে খাদে পড়ে যায়। 

এ ঘটনায় পাইকগাছা-কয়রা খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি অন্দ্রিয় ডি রোজারিও, এ্যাডঃ ইদ্রিসুর রহমান মন্টুর কন্যা মুনমুন রহমান‘সহ কমপক্ষে ২৫ যাত্রী আহত হয়। আহতদের তাৎক্ষনিকভাবে কপিলমুনি ও তালা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে অধিকাংশই পাইকগাছার বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন আন্দ্রিয় ডি রোজারিও।

ছবি তুলেছেন :: রানা ঘোষ