Saturday, April 27, 2013

সাভারে নিহতদের স্মরনে পাইকগাছায় শোকসভা ও দোয়া অনুষ্ঠান

গত ২৪ এপ্রিল সাভার রানা প্লাজা ধসে নিহত, আহত ও এখনও যারা আটকে আছে তাদের জন্য পাইকগাছা পৌর ইমাম পরিষদের উদ্যোগে শোকসভা এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

শনিবার বিকালে স্থানীয় শহীদ মিনার চত্ত্বরে পৌর ইমাম পরিষদের সভাপতি হাফেজ মাওঃ জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন-পৌর ইমাম পরিষদের সেক্রেটারী মাওঃ সোলাইমান হোসাইন নোমানী, মাওঃ মনিরুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন-মাওঃ রইসুল ইসলাম, স.ম আব্দুর জব্বার, হাফেজ নূর হোসাইন, মাওঃ মুজিবুর রহমান, মাওঃ সিরাজুল ইসলাম, মুফতি ইয়াস হোসাইন, মাওঃ সাইফুল ইসলাম। বক্তারা অবিলম্বে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় আনার দাবী জানান। দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সভাপতি হাফেজ মাওঃ জালাল উদ্দিন।


এক সপ্তাহেও জমেনি খুলনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা

উদ্বোধনের এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও জমেনি খুলনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। হরতাল-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শুরু হওয়া এবারের মেলা রাজনৈতিক অস্থিরতার জালে আটকে যেতে পারে এমন মন্তব্যও করেছেন অনেকে। সেই সাথে মেলা শুরুর ৫ দিনের মাথায় সাভারে ভবন ধসে তিন শতাধিক লোকের প্রাণহানির ঘটনায়ও ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে শোকার্ত পরিবেশ। যে কারণে খুলনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা জমতে আরও সময় লাগবে এমন মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।


এদিকে মেলা শুরুর ৭ দিনের মাথায় গতকাল শুক্রবার থেকে টিকিট গ্রহণ শুরু হলেও এখনও অনেক স্টল ও প্যাভিলিয়নই রয়েছে ফাঁকা। খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ আয়োজিত এ মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ বেনারসি মসলিন এন্ড জামদানী সোসাইটি। নগরীর সার্কিট হাউজে মাসব্যাপী চলমান এ মেলা অভ্যন্তরে গিয়ে দেখা গেছে, ১৩৬টি স্টলের প্রায় অর্ধেকই এখনও ফাঁকা। সেই সাথে ১৫টি প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন থাকলেও সেগুলোও ফাঁকা দেখা গেছে আগোছালোভাবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১৯ এপ্রিল খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে মাসব্যাপী খুলনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু হয়েছে। মেলার ৮ম দিনে গতকাল বিকেলে টিকিট বিক্রি কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এর আগে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকলেও কোন টিকিট ছিল না।

আজ শনিবার থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ১০টাকা দর্শনীয়র বিনিময়ে প্রবেশ করা যাবে মেলাভ্যন্তরে।

রোববারের মধ্যে রানা গ্রেফতার না হলে বৃহস্পতিবার হরতাল

রোববারের মধ্যে সাভার ট্রাজেডির মূল হোতা যুবলীগ নেতা সোহেল রানাকে গ্রেফতার করা না হলে বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে গণতান্ত্রিক বামমোর্চা ও সিপিবি-বাসদ। শনিবার সকালে পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলনে বামমোর্চা ও সিবিপি-বাসদএ হরতালের ডাক দেয়। এর আগে শুক্রবার গণতান্ত্রিক বামমোর্চার এক সভায় সাভারে ভবনধসের ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ২৮ এপ্রিলের মধ্যে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না নিলে হরতালসহ বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

পাইকগাছার পৌর মেয়র মালেয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম সফরে

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ১০ দিনের সফরে মালেয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম যাচ্ছেন পাইকগাছা পৌরসভার মেয়র মোঃ সেলিম জাহাঙ্গীর। তিনি ২৮ এপ্রিল রোববার রাত সাড়ে ৮টায় বিমানযোগে রওনা হবেন বলে জানাগেছে। তিনি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ও নাগরিক অধিকার কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য দু'দেশে ১০ দিন অবস্থান করবেন। সময় স্বল্পতার কারনে সফরের বিষয়টি সবাইকে অবহিত করতে না পারায় সকলের কাছে তিনি দোয়া আর্শিবাদ চেয়েছেন।


সাভারে বৃষ্টি; তাঁবু চেয়ে মাইকিং

সাভারের বৃষ্টি শুরু হওয়ায় রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। সেখানে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সবার কাছে তাঁবু চেয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। শনিবার দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে সেখানে আকাশ কালো করে মেঘ করে এবং তার পরই বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হচ্ছে। সে কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে, সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের জন্য টানানো তাঁবুটিও খুলে নিয়ে ধ্বংস স্তূপের সুড়ঙ্গ ও ফাটল ঢেকে দিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে। অপরদিকে, শনিবার সকালে আরও ১৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

অভিনব সাহায্য !

“টেলিভিশনে স্বজনদের আহাজারি দেখে আর সহ্য করতে পারলাম না। আমরা ও তো মানুষ। মা-বোন ভাইদের জীবিত বা মৃত উদ্ধার করতে দু’বন্ধু ছুটে আসি সাভারে ধসে পড়া রানা প্লাজায়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও উদ্ধার কর্মীরা ভিতরে ঢুকতে দেয়নি।

বাড়িতে দু’বন্ধু বলে এসেছি, শেষ মৃত বা জীবিত ব্যক্তিকে জীবনের বিনিময়ে হলেও উদ্ধার করবো। যদি প্রাণ যায় তাহলেও ফিরবো না। কিন্তু ততক্ষণে আমাদের মোবাইলের চার্জ শেষ। অনেক চেষ্টা করেও মোবাইল চার্জ দিতে পারিনি। তখন অনেক চিন্তা করে দু’বন্ধু প্রায় তিন হাজার টাকা খরচ করে সবার সাহায্যের জন্য মোবাইল চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা করলাম।’’

কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জ থেকে সাভারে ছুটে আসা ইলেকট্রিক মিস্ত্রী সজিব। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, উদ্ধার কাজ যখন শেষ হবে তখন বাড়ি ফিরবো, না হয় ফিরবো না। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর শত শত ফোন। যখন দু’বন্ধুর ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যায়, তখন ভাবলাম মনে হয় আর সাহায্য করা হবে না।”

তিনি বলেন, “যারা নিহত হয়েছেন তাদের স্বজনদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম মোবাইল। কিন্তু অনেকের দেখলাম মোবাইলে চার্জ শেষ হয়ে গেছে। নিহতের দূর-দূরান্তের স্বজনদের অন্তত মোবাইলে মৃত্যুর সংবাদটি দিতেও অনেকেই ঘুরছেন সাভারের রাস্তায়। এ থেকে দু’বন্ধু চিন্তা করলাম, সামান্য হলেও এ দুঃখের ভাগিদার হই।’’

তিনি জানান, “চার্জ দেওয়ার প্রায় তিন হাজার টাকার সরাঞ্জামাদি কিনে অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় গেইটে তারা মোবাইলে ফ্রি চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

আরেক বন্ধু নাছির বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত অন্তত পাঁচ শতাধিক মোবাইলে ফ্রি চার্জ দিয়েছি। স্বজনহারা মানুষগুলো সামান্য চার্জ দিয়ে অন্তত স্বজনদের এটুকু আশ্বস্ত করতে পারছেন যে, লাশ পাওয়া যাবে।”

এটুকু আশার বাণী শোনানোর জন্য হলেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যতদিন অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় লাশ ও স্বজনহারাদের আনাগোনা থাকবে ততদিন এ কাজ করে যাবে বলেও তিনি জানান।

লাশ আসছে লাশ যাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ খাবার, পানিসহ অন্যান্য জিনিস দিয়ে স্বজনহারাদের অন্তত শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন। নাছির, সজিবের মতো শত শত মানুষ যে যেভাবে পারছেন সাহায্য করছেন অসহায় মানুষগুলোকে।

কিন্তু এত সাহায্য, এত করুণার পর কি স্বজনরা তাদের প্রিয়জনকে খুঁজে পাবে? বিচার হবে কি সেই নর পিশাচদের? শেষ হবে কি এ ন্যাক্কারজনক অধ্যায়ের? এমন প্রশ্ন এখন শুধু অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আসা স্বজনদের নয়, সারাদেশের মানুষের।