Tuesday, June 18, 2013

কয়রায় ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চলছে একজন চিকিৎসক দিয়ে

কয়রা উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি চলছে মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সপ্তাহের অধিকাংশ সময় হাসপাতালের বাইরে ব্যস্ত থাকায় তার পদটি শূন্যই বলা যায়। যে কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত ওয়ার্ড বয় এবং সেবিকাদের অনেক সময় জরুরী প্রয়োজনে চিকিৎসকের ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য জনবল সংকটের কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।

সরেজমিন দেখা গেছে, নতুন নতুন কয়েকটি ভবন বাড়ানো হলেও জনবল বাড়েনি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে গড়ে প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন ১৫০ জন রোগী এবং ভর্তি থাকেন গড়ে ৫০ জন রোগী। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সেবা দিতে হাসপাতালের একমাত্র চিকিৎসককে হিমসিম খেতে হচ্ছে। কোন সময় জরুরী বিভাগের স্বাস্থ্য সহকারিদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় রোগীদের। চিকিৎসক সংকটের কারনে হাসপাতালের ভর্তি রোগীদের সারাদিনের চিকিৎসা সেবা জোটে ওয়ার্ডবয় এবং সেবিকাদের দিয়ে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ৩১ শয্যা কমপ্লেক্সটি ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু এখানো পর্যন্ত প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামোগত কোন উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। সরবরাহ করা হয়নি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, নেই কোন টেকনেশিয়ান, নেই প্রয়োজনমত চিকিৎসক। সাধারণ ওয়ার্ডে শয্যা সংকট থাকায় অধিকাংশ রোগীদের মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। সেখানে কোন সিলিং ফ্যানেরও ব্যবস্থা না থাকায় নিদারুন দুর্ভোগের মধ্যে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে সর্ব সাধারণকে। হাসপাতালে সুইপার না থাকায় ময়লা আবর্জনার স্তুপ জমা হয়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া হাসপাতালের একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি বিকল থাকায় গরীব রোগীদের বাইরে থেকে টাকার বিনিময়ে এক্স-রে করাতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডাঃ সুজাত আহমেদ জানান, প্রত্যন্ত এ এলাকায় যে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয় তারা আসতে না আসতেই অন্যত্র বদলি নিতে তদবীর শুরু করেন। তিনি আরো বলেন, ভেতরে বাইরে অনেক রোগী। কিন্তু ডাক্তার আমি একাই। এর মধ্যে টি.এইচ,এ দাপ্তরিক কাজে প্রায় সময় বাইরে থাকেন। বহির্বিভাগে রোগীদের চাপে নিয়মিত ভর্তি রোগীদের খেয়াল করতে পারি না। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ায় আগের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু জনবল বাড়েনি। এ মুহুর্তে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও জনবল বৃদ্ধি করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তৌহিদুর রহমান বলেন, অন্তহীন সমস্যার মধ্যে থেকেও যে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে সেবা দিতে পারছি এটা ভেবে ভাল লাগে। আমি যোগদানের পর থেকে হাসপাতালের প্রধান সমস্যা জনবল সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এছাড়া হাসপাতালটির পুরনো ভবনে ফাটল দেখা দেয়ায় সেখানে রোগীদের দিনরাত ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে। আমাদের দায়িত্ব সঠিক জায়গায় সঠিক তথ্য পৌছে দেয়া। এর বেশি আমরা কিছুই করতে পারি না।

খুলনার ১০ জেলায় পরিবহন ধর্মঘট শুরু

বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে সোমবার সকাল থেকে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। শ্রমিক ফেডারেশন খুলনা বিভাগীয় কমিটি এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। শ্রমিক নেতারা জানান, তারা দীর্ঘ ৪ মাস ধরে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছেন।

ইতিমধ্যে চট্রগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে শ্রমিকদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু খুলনা বিভাগের মালিকরা শ্রমিকদের দাবি মানছেন না। বাধ্য হয়ে সোমবার সকাল থেকে খুলনা বিভাগের যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুরসহ ১০ জেলার পরিবহন শ্রমকিরা ধর্মঘটে গেছেন। এজন্য এ অঞ্চল থেকে কোন পরিবহন ঢাকায় যাচ্ছেনা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে।

কপিলমুনি প্রেসক্লাব নির্বাচনের তপশীল ঘোষনা; ২৬ জুন ভোট গ্রহন

কপিলমুনি প্রেস ক্লাবের কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনের তপশীল ঘোষনা করা হয়েছে। ১২ জুন বিকাল ৫টায় কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দিরের প্রধান শিক্ষকের কার্যলয়ে নির্বাচন কমিশনারবৃন্দের অনুষ্ঠিত সভায় উক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে গত ১৪ জুন বিকাল ৪টায় প্রেস ক্লাবের সদস্যদের জ্ঞাতার্থে উক্ত তপশীল ঘোষনা করা হয়।

তপশীল অনুযায়ী ১৭ জুন সোমবার চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, ১৮ জুন মঙ্গলবার মনোনয়ন পত্র বিক্রয়, ১৯ জুন বুধবার মনোনয়ন পত্র জমা ও বাছাই, ২০ জুন মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার। প্রেস ক্লাব ভবনস্থ নির্বাচন কমিশনের কার্যলয়ে নির্দ্ধারিত তারিখে বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এ সকল কার্যক্রম চলবে এবং আগামী ২৬ জুন বুধবার বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। কপিলমুনি কলেজ অধ্যক্ষ মোঃ সহর আলী গাজী প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক হরেকৃষ্ণ দাশ ও কপিলমুনি মেহেরুন্নেছা বালিকা উচচ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রহিমা আখতার শম্পা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

অবশেষে নিষিদ্ধ হলো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে শিশুদের ব্যবহার

“সহিংস রাজনীতির শিকার দেশের কোমলমতি শিশুকিশোররা” শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সংবাদ সংস্থায় সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যবহার করলে শাস্তির বিধান রেখে জাতীয় সংসদে পাশ হলো শিশু আইন ‘১৩ বিল। আইনটি শিশু সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত দিয়েছেন শিশু অধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সুত্রমতে, নানা ইস্যুতে দেশে গত কয়েকমাসের সহিংস রাজনীতির শিকার হয় অসংখ্য কোমলমতি শিশু-কিশোররা। অধিকার ক্ষুন্ন করে কোমলমতি শিশু কিশোরদের যথাইচ্ছা রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যবহার করার ফলে মানষিক বিপর্যয় ঘটার আশংকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে শিশু অধিকার সংগঠনগুলো।

গত কয়েকমাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৩ এপ্রিল ২০১৩ জামায়াতের ডাকা খুলনা জেলায় অর্ধদিবস হরতালে খুলনার পাইকগাছায় শিবিরের নেতাকর্মীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করার সময় টায়ারের আগুনে অগ্নিদগ্ধ হয় গোপালপুর গ্রামের নজরুল দপ্তরীর ১১বছরের শিশুপুত্র জাহিদুল ইসলাম। আগুনে তার একটি পা ঝলসে যায়।

৬ এপ্রিল শিবিরের সকাল-সন্ধ্যা হরতালে পিকেটারদের ইটের আঘাতে মারাত্মক আহত হয় ফরিদপুরের ৬ বছরের শিশু সোহান, ককটেল বিষ্ফোরনে আহত হয় চট্টগ্রামের স্কুলছাত্রী অন্তু বড়ুয়া, ১৯ ফেব্রুয়ারী পাইকগাছা উপজেলা সদরে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে মিছিল করার অপরাধে আটক হয় কয়রার কালিকাপুর গ্রামের মাদ্রাসাছাত্র কিশোর মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, ৭ ফেব্রুয়ারী জামায়াত শিবিরের বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়ে লাঠিচার্জের শিকার হয়ে পুলিশের হাতে আটক হয় কিশোর মোজাফফার হোসাইন, ৫ ফেব্রুয়ারী উপজেলা সদরে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে পিকেটিং করার সময় অগ্নিদগ্ধ হয় আব্দুল কাইয়ুম নামের এক কিশোর শিবিরকর্মী।

এভাবেই প্রতিনিয়ত কোন না কোনভাবেই সহিংস রাজনীতির শিকার হয় দেশের কোমলমতি শিশু-কিশোররা। এসব ঘটনার সচিত্র প্রতিবেদন সর্বপ্রথম ২০ এপ্রিল “সহিংস রাজনীতির শিকার দেশের কোমলমতি শিশুকিশোররা” শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সংবাদ সংস্থায় সংবাদ প্রকাশের পর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের ইউনিসেপ। পরবর্তীতে ৫ মে হেফাজতের মহাসমাবেশে হাজারো শিশু অংশগ্রহন করলে সমাবেশে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের অপসারনে পুলিশি অভিযানে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হয় অংশগ্রহনকারী শিশুরা।

শিশুদের এ ভয়াবহ পরিস্থিতি বিভিন্ন ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর টনক নড়ে দেশের সচেতন মহলের। শিশু সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ২২ মে সমাজকল্যান মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩১ তম বৈঠকে শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যবহার বন্ধে শিশু আইন ২০১৩ প্রস্তাব করা হয়। এরপর ৫ জুন ৩২ তম বৈঠকে শিশু আইন ২০১৩ বিলের রিপোর্ট চূড়ান্ত করে সংসদীয় কমিটি। বিলটি সংসদের চলতি অধিবেশনে গত ১৬ জুন রোববার জাতীয় সংসদে পাশ হওয়ার মাধ্যমে আইনে পরিণত হলো।

আইনটি শিশু সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত দিয়েছেন পাইকগাছা শিশু অধিকার সংরক্ষন ফোরামের সভাপতি এ্যাড. শফিকুল ইসলাম কচি। সম্ভাবনা রয়েছে। অবশেষে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে শিশুদের ব্যবহার না করার বিধান রেখে আইন প্রনয়ন করায় সংশ্লিষ্টদের সাধুবাদ জানিয়েছে পাইকগাছা শিশু অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের নেতৃবৃন্দ। সংগঠনের সভাপতি এ্যাড. শফিকুল ইসলাম কচি জানান বিলটি আইনে পরিণত হলে সহিংস রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যথাইচ্ছা ব্যবহারে সুযোগ থাকবে না। দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে শিশুদের ব্যবহার করা থেকে সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।