Monday, June 3, 2013

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে লংমার্চের ঘোষণা

ভারতীয় কোম্পানি ও দেশী কিছু সুবিধাভোগীদের স্বার্থে সরকার বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎ প্লান্টের মাধ্যমে সুন্দরবন ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। এ প্রকল্প বাতিলসহ সাত দফা দাবিতে আগামী ২৪ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা-রামপাল লংমার্চ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে কমিটি। রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে সোমবার রাজধানীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক লিখিত বক্তব্যে কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রকল্পের বিভিন্ন ক্ষতি দিক তুলে ধরে আনু মুহাম্মদ বলেন, “এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সুন্দরবনের আশেপাশের পরিবেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

তিনি বলেন, “রামপাল বিদ্যুৎ প্লান্ট নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, তাতে দুই দেশের সরকার যৌথভাবে আন্তর্জাতিক বিধি লঙ্ঘন করে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন প্রাণবৈচিত্র্যের আধার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাকৃতিক রক্ষা বন সুন্দরবন ধ্বংসের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছে।”

আনু মুহাম্মদ জানান, সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে জাতীয় কমিটির সাত দফা দাবি পূরণে আগামী ২৪ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা-রামপাল লংমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে করা চুক্তি দ্রুত বাতিল করে প্রকল্প বন্ধের দাবি জানানো হয়।

কপোতাক্ষ নদ মৃত: মনিষীরা মরেও জীবিত

কপোতাক্ষ নদের তীর ঘেষে কালে কালে জমণ গ্রহণ ও আসত্মানা করেছেন অসংখ্য মনিষী। সেই সকল মনিষীরা আজ পৃথিবীতে না থাকলেও ইতিহাসের পাতায় জীবীত অথচ কপোতাক্ষ নদ মৃত।

কত শত হাজার বছর পূর্বে কবে কোন সালে কিভাবে জমেণছিল কপোতাক্ষ নদ, কিভাবে নাম করণ বা হয়েছিল তার সঠিক হিসাব আজও অমত্মরালে। আর এর ইতিহাস পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়নি। তবে যতটুকো জানাগেছে, যুগ যুগ ধরে বয়েচলা বহমান এ নদ লক্ষ কোটি স্মৃতির ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। কালের সাক্ষী হয়ে পীর আওলিয়া, বুদ্ধিজীবী, সাধক, মনিঋষি, কবি, সাহিত্যিক, দেশবরেণ্য ও দানবীর অনেক কে একে একে বিদায় জানিয়েছে কপোতাক্ষ নদ। যতদূর জানাগেছে অসংখ্য মনিষীর জমণ ও অসত্মানা হয়েছে চির ঐতিহ্যের কপোতাক্ষ উপকূলীয় অঞ্চল নতুবা বহমান এ নদের তীরে।

‘‘জমিণলে মরিতে হবে’’ চিরমত্মন এ বানীর পরিমন্ডলে সবকিছুই আবদ্ধ। তাই এক সময়কার খরস্রোতা কপোতাক্ষ নদের গর্জনে প্রাণীকূল থেকে শুরম্ন করে মাঝিমালস্না এমনকি উপকূলীয় মানুষ ভয়ে শঙ্কিত থাকতো। কবি মাইকেল মধুসুধন দত্তের কপোতাক্ষ নদ আজ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। অথচ এ কপোতাক্ষ নদ এক সময় ছিল মানুষের স্বপ্ন, যেন বেঁচে থাকার টনিক। সভ্যতার ইতিহাসে কপোতাক্ষএক বিরল দৃষ্টামত্ম। কপোতাক্ষ নদের অপমৃত্যু উপকূলের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে। নদের অকাল মৃত্যুতে প্রতিবছর বন্যায় প্রত্যাক্ষ ও পরক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দু’কূলের হাজার হাজার পরিবার। সর্বশামত্ম হচ্ছে কপোতাক্ষ উপকূলবর্তী সর্বশ্রেণী পেশার মানুষ। বাসত্মভিটা ছেড়ে লক্ষ থেকে কোটি টাকা অর্থের ক্ষতি কাঁধে নিয়ে অনেকে নিঃস্ব। ভূক্তভোগীরা কপোতাক্ষ নদ রক্ষায় দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করলেও তা সংশিস্নষ্টর সুদৃষ্টি পড়ছে না। কপোতাক্ষ নদ সভ্যতার আদিম যুগ হতে দক্ষিণ জনপদে যে সকল পীর আওলিয়া, বুদ্ধিজীবী, সাধক, মনিঋষি, কবি, সাহিত্যিক, দেশবরেণ্য ও রাজনীতিকদের সংষ্পর্শ পেয়েছে তা অবর্ণনীয়।

বিভিন্ন ইতিহাস থেকে জানাযায়, বাংলাদেশের অধিকাংশ মনিষী ও মহামানবদের জমণ ও আসত্মানার নিদর্শন চিরচেনা কপোতাক্ষ নদের উপকূলে। সে সকল মনিষী ও মহামানবদের নাম আজও দেশের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করে আসছে। তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন হযরত খাজা খানজাহান আলী (রহঃ) তিনি এ দেশে সর্ব প্রথম এসেছিলেন আশাশুনি, পাইকগাছা ও ত্রিকোন মিলনস্থান আমাদীর মসজিদকুড় নামক কপোতাক্ষ নদের মহোনায়। একইভাবে বুড়ো পীর জয়ন্নদ্দিন, হযরত বুরহান উদ্দীন, পীর শেখ ময়েনউদ্দীন, পীর শাহ জাফর আওলিয়া (রহঃ), হাজী মেহের উদ্দীন, জিন্দাপীর ধরম চাঁদ, সুন্নি সাধক হযরত আলম শাহ ফকির, আচার্য প্রফুল্য চন্দ্র রায় (পিসিরায়), কবি মাইকেল মধুসুধন দত্ত, সাধক কপিলেশ্বরী মুণি, যার নামানুসারে কপিলমুনি। কবি কাজী ইমদাদুল হক, কবি সেকেন্দার আবু জাফর, রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু, আধুনিক কপিলমুনি বাজারের প্রতিষ্ঠাতা। দানবীর মেহের মুসলস্নী, দানবীর হাজী ছেপেরম্নদ্দীন, খান সাহেব জয়নাল আবেদীন, খান সাহেব সুলতান আহম্মেদ, খান সাহেব কোমর উদ্দীন, রায় কালীচরণ মন্ডল, পুণ্যশোক হরিমোহন বাঁছাড়, গরীবের বন্ধু খ্যাত ভীমচন্দ্র সরদার, রাজেন্দ্র নাথ সরকার, এম এ গফুর, শেখ মহাতাপ উদ্দীন, মনি মিয়া, মোঃ শামসুর রহমান ও জাতীয় সংসদের সাবেক স্পীকার শেখ রাজ্জাক আলী প্রমূখ।

প্রবীনদের মতে, কপোতাক্ষ নদের নামকরণ হয়েছে কবুতরের চোখের জল থেকে। অর্থাৎ কবুতরের চোখের জলের ন্যায় কপোতাক্ষের জল স্বচ্ছতার আলোকে এতটাই স্বচ্ছ ও পবিত্র। সেই কপোতাক্ষের যৌবন ফুরিয়ে আজ মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে।


নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের জরিপ সূত্রে জানাযায়, দেশের ৩০টি নদী বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। আরও ৮৯টি নদী মরে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালের পর ফারাক্কার ফাঁদে নদীমাতৃক এ দেশের অধিকাংশ নদীর অপমৃত্যু ঘটেছে। অভিজ্ঞদের মতে, ফারাক্কা বন্ধের কারনেই বাংলাদেশের জল পথ গুলি পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। তেমনিই পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছে অসংখ্য স্মৃতি ও ঐতিহাসিক ঘটনার প্রত্যাক্ষ সাক্ষী কপোতাক্ষ নদ। পক্ষান্তরে কপোতাক্ষ নদের কূলের মহামানব ও মনিষীরা মরেও আজ জীবীত রয়েছেন মানুষের মাঝে। অথচ কপোতাক্ষ নদ আজ মৃত!

পাইকগাছায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে চিংড়ীর উৎপাদন

পাইকগাছায় চলতি বছর চিংড়ীর উৎপাদন ভাল হওয়ায় বার্ষিক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার মেঃ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারনা করছে সংশ্লিষ্টরা। বিগত বছরের তুলনায় একদিকে কয়েকগুন উৎপাদন বৃদ্ধি ও কেজি প্রতি দেড়শ টাকা মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় অধিক লাভবান হবে বলে চিংড়ী চাষীরা জানান। চিংড়ী চাষের অনুকুল পরিবেশ বিরাজমান থাকা, রোগবালাইয়ের প্রকোপ কম, চাষীরা অধিক সচেতন ও প্রযুক্তি নির্ভর এবং উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার কারনে উৎপাদন ভাল হওয়ার অন্যতম কারন হিসাবে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মৎস্য অফিস।

সংশ্লিষ্ট সুত্রমতে, চলতি বছর উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৪ সহস্রাধিক ঘেরে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে চিংড়ী চাষ হয়েছে। ৮০’র দশকে শুরু হওয়া চিংড়ী চাষে প্রথম দিকে চাষীরা অধিক লাভবান হলেও রোগবালাইয়ের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় টানা গত কয়েকবছর ধরে লোকসানে থাকায় একপ্রকার লাভের আশা ছেড়ে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট চাষীরা।

চলতি বছর উপজেলায় চিংড়ী উৎপাদনের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার মেঃ টন। বিগত কয়েকবছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও চলতি বছর উৎপাদন ভাল হওয়ায় চলতি জুন মাসের মধ্যে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট মৎস্য কর্মকর্তা জানান। অপরদিকে বিগত বছরের তুলনায় কেজি প্রতি মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে দেড়শ থেকে দু’শ টাকা। উল্লেখ্য চিংড়ীর সাইজ অনুযায়ী ৮ টি গ্রেডে মূল্য নির্ধারণ হয়ে থাকে।

পাইকগাছা চিংড়ী বিপনন কেন্দ্রের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জিকো ফিসের জালাল উদ্দিন জানান চিংড়ীর বর্তমান বাজারমূল্য ১২ গ্রেড ১০২০ টাকা, ১৫ গ্রেড ৮৫০ টাকা, ২২ গ্রেড ৬৭০, ২০ গ্রেড ৫৫০, ৩০ গ্রেড ৫১০, ৪৪ গ্রেড ৪৬০, ৬৬ গ্রেড ৩৪০ ও সর্বনিম্ন ১০০ গ্রেড ৩০০ টাকা। বান্দিকাটির চিংড়ীচাষী মোমিন সরদার জানান ১০বিঘা জমিতে সে চিংড়ী চাষ করেছে। চলতি বছর এখনও পর্যন্ত রোগবালাই দেখা দেয়নি, যার কারনে ইতোমধ্যে সে ১০ বিঘা জমির চিংড়ী ঘের হতে ৩ লক্ষ্য টাকার মাছ বিক্রি করেছে। বিগত বছরের ক্ষতি পুশিয়ে এ বছর অধিক লাভবান হবে বলে তিনি জানান।

এ বছর হেক্টর প্রতি ৩ থেকে ৪ শ কেজি উৎপাদন হতে পারে বলে চিংড়ী চাষী এসএম সালাউদ্দিন ইউছুপ জানান। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এসএম শহীদুল্লাহ জানান-চাষীরা এখন অনেক সচেতন ও প্রযুক্তি নির্ভর অধিকাংশ চিংড়ী চাষীরা উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় বিগত বছরের তুলনায় চিংড়ীর উৎপাদন কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি জানান।