৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকে সরবরাহ করা হচ্ছে ৩১ প্রকার ঔষধ
৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ দিবস। স্বাস্থ সেবা নিশ্চিত করার লক্ষে
বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় প্রতি বছর এ দিন সারা দেশে নানা কর্মসূচীর
মধ্য দিয়ে পালিত হয় দিবসটি। দিবসটি উপলক্ষে খুলনার পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ
কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে স্বাস্থ খাতে সরকারের অর্জিত সাফল্য
তুলে ধরে র্যালী, আলোচনা সভাসহ আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচী। এদিকে স্বাধীনতা পরবর্তী যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমান সরকারের বাস-বমুখী
পদক্ষেপে বিগত ৫ বছরে স্বাস্থ খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলে
বিশ্ব স্বাস্থ দিবসকে সামনে রেখে অভিমত ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় এমপিসহ
স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত সংশ্লিষ্টরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়,
বর্তমানে উপজেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। ২০০১ সাল পরবর্তী সময়ে তৎকালীন
সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে হুমকির মুখে পড়ে
স্বাস্থ্য সেবা। একমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপর নির্ভর করতে হতো
গোটা উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্য সেবা। বিপুল পরিমাণ এ জনসংখ্যার স্বাস্থ্য
সেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হতো কর্তৃপক্ষের। ফলে মারাত্মকভাবে
ব্যাহত হতো স্বাস্থ্য সেবা।
স্বাস্থ্য খাতে এ দুরাবস্থার দৃশ্য
পাল্টে যায় বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর। ২০০৯ সালের ২
ডিসেম্বর ৩০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায়
উন্নীতকরণ, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সচল, জনবল বৃদ্ধিসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে ঔষধ
সরবরাহ করার ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌছে যায় স্বাস্থ্যসেবা।
উপজেলায় ১টি ৫০ শয্যার হাসপাতাল, ১টি ১০ শয্যার হাসপাতাল, ৫টি ইউনিয়ন
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ১টি উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৪টি ইউনিয়ন
স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা
প্রদান করা হচ্ছে।
বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১টি
মঞ্জুরীকৃত প্রথম শ্রেণীর পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ১১জন কর্মকর্তা।
দ্বিতীয় শ্রেণীর ১৬ পদের বিপরীতে ১২, তৃতীয় শ্রেণীর ১৫৬ পদের বিপরীতে ১২৪
এবং চতুর্থ শ্রেণীর ৩২ পদের বিপরীতে ১৫। অর্থাৎ মোট ২২৫ পদের বিপরীতে
কর্মরত ১৬২জন। শূন্য রয়েছে ৬৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ।
অপরদিকে মোট
৩৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে সচল রয়েছে ৩৬টি। নির্মাণ কাজ শেষে
হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে সোনাখালী কমিউনিটি ক্লিনিক। এছাড়াও কুমখালী ও
পাতড়াবুনিয়ার ভবন নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩৬ জন
সিএইচসিপি সার্ভিস প্রোপ্রাইটর হিসেবে সেবা কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
প্রত্যেকটি ক্লিনিকে প্রতিদিন ১ জন সিএইচপি, সপ্তাহে ৩ দিন ১ জন এইচএ ও
একজন এফডব্লিউএ সেবা প্রদান করে থাকেন।
লতার তেতুলতলা এলাকার
গৃহবধু সবিতা রাণী জানান, এক সময় স্বাস্থ্য গত যেকোন সমস্যার জন্য দীর্ঘ পথ
পাড়ি দিয়ে যেতে হতো উপজেলা সদরে। যেকোন ধরণের স্বাস্থসেবা এখন কমিউনিটি
ক্লিনিকগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ ও প.প. কর্মকর্তা
(ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ প্রভাত কুমার দাশ জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সচল করার
ফলে প্রত্যন- অঞ্চলের মানুষ বেশি এর সুবিধা পাচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো
থেকে নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ প্রসবপূর্ব ও প্রসবোত্তর সেবা, মাতৃ স্বাস্থ ও
পরিবার পরিকল্পনা, সাধারণ ডেলিভারী, রক্ত স্বল্পতা, সাধারণ সর্দিজ্বর,
ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ইপিআই, শিশু ও মায়েদের পুষ্টি সেবাসহ বিভিন্ন সেবা
প্রদান করা হয়।
স্থানীয় এমপি এ্যাডঃ শেখ মোঃ নূরুল হক জানান, বিগত ৫
বছরে সরকারের বাস-বমুখী পদক্ষেপে স্বাস্থ্যখাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত
হয়েছে। অনেক চ্যালেঞ্জ থাকা স্বত্ত্বেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
গতিশীল নেতৃত্বে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।
কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সচল
করা বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ উল্লেখ করে এমপি হক বলেন, এর
মাধ্যমে সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ সেবা দৌড়গোড়ায় পৌছে দিয়েছে।
কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মাধ্যমে ৩১ প্রকার ঔষধ সরবরাহ করে সরকার নজিরবিহীন
দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী যেকোন সময়ের চেয়ে স্বাস্থ খাতে
সরকারের অর্জিত এ সাফল্য অব্যাহত রাখতে বিশ্ব স্বাস্থ দিবস উপলক্ষ্যে
স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহবান জানান।
--আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা।