Monday, April 18, 2016

পাইকগাছার ভোলানাথ সুখদা সুন্দরী স্কুলে প্রকাশিত হল দেয়াল পত্রিকা 'বেলাভূমি'

পাইকগাছা উপজেলার ভোলানাথ সুখদা সুন্দরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রকাশিত হল ব্যতিক্রমধর্মী দেয়াল পত্রিকা 'বেলাভূমি'। ১৭ এপ্রিল দুপুরে পত্রিকাটি প্রকাশের পর বিদ্যালয়ের সব পড়ুয়াদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এর আগে গতবছর এই বিদ্যালয়ে 'বেলাভূমি'র দু’টো সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা কেউ লিখেছে সুন্দরবন নিয়ে, কেউ লিখেছে সুন্দরবনের বিলুপ্ত প্রাণী নিয়ে, কেউ লিখেছে জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে।



ওদের লেখায় উঠে এলো চারপাশের নানান বিষয়। নারী নির্যাতন, বাল্য বিয়ে, বিদ্যুৎ সংকট, পানি সংকটের মত বিষয় উঠে এসেছে কোমলমতি পড়ুয়াদের প্রতিবেদনে। বিষয় নির্ধারণ থেকে প্রতিবেদন লেখা এবং দেয়াল পত্রিকা তৈরির কাজটিও করেছে বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।

কর্মশালায় আলোচনার পর পড়ুয়ারা নিজেরাই লেখার বিষয় নির্ধারণ করে। এরপর প্রত্যেকে একটি করে লেখা জমা দেয়। সবগুলো লেখা থেকে বাছাই করা ১৯টি প্রতিবেদন দেয়াল পত্রিকায় স্থান পায়। রঙিণ পেপারে লেখাগুলো লিখে পড়ুয়ারা নিজেরাই দৃষ্টিনন্দন দেয়াল পত্রিকাটি তৈরি করে। কাঁচি দিয়ে রঙিণ কাগজ কেটে পত্রিকার চারপাশে লাগানোর ফলে দেয়াল পত্রিকাটি আরও আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে। পত্রিকার ফাঁকা জায়গাগুলোতে পড়ুয়াদের কোমল হাতে রঙিণ কলমের আঁচড় বেলাভূমি’কে যেন জীবন্ত করে তোলে।



দেয়াল পত্রিকা প্রকাশের আগে এ বিষয়ে ধারণা বিনিময়ের লক্ষ্যে বিদ্যালয়ের মালটিমিডিয়া কক্ষে লেখালেখির কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর ৩০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। কর্মশালা পরিচালনা করেন উপকূল-সন্ধানী সংবাদকর্মী ও উপকূল জুড়ে এই দেয়াল পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম মন্টু। তিনি পড়ুয়াদের লেখালেখির প্রয়োজনীয়তা, লেখার বিষয় ও লেখার কলাকৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন। শেষে অংশগ্রহনকারীদের দেয়াল পত্রিকা তৈরির কৌশল দেখিয়ে দেন। 

কর্মশালায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হায়দার আলী পাড়, সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত মন্ডল ও স্থানীয় সাংবাদিক ও প্রেসক্লাব পাইকগাছার সভাপতি প্রকাশ ঘোষ বিধান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নির্দেশনামূলক কথা বলেন। দেয়াল পত্রিকাটির কাজ সম্পন্ন হলে পত্রিকাটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হায়দার আলী পাড়ের হাতে তুলে দেয় অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীরা। এসময় পড়ুয়ারা স্কুল থেকে প্রতিমাসে দেয়াল পত্রিকা ‘বেলাভূমি’ প্রকাশের আগ্রহের কথা জানালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাদের আশ্বস্ত করেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মেধা বিকাশের সহায়ক হিসাবে এই দেয়াল পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হবে। এই লেখা দিয়ে একটি বার্ষিক ম্যাগাজিন প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনে পৃথক তহবিল গঠণের উদ্যোগ গ্রহনেরও আশ্বাস দেন প্রধান শিক্ষক। 

প্রসঙ্গত, উপকূল অঞ্চলের স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের সৃজনশীল মেধা বিকাশ এবং তাদেরকে চারপাশের বিষয় সম্পর্কে সচেতন করতেই দেয়াল পত্রিকা প্রকাশের এই উদ্যোগ। উপকূলের প্রায় অর্ধশত স্কুলে এই ব্যতিক্রমী দেয়াল পত্রিকা 'বেলাভূমি' প্রকাশিত হচ্ছে। আর এর সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী।

পাইকগাছায় নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনে কদর বেড়েছে পরিবেশ বান্ধব ঘোড়ার গাড়ির

দুই শতাধিক পরিবারের জীবিকার অন্যতম মাধ্যম এটি


পাইকগাছায় নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনে কদর বেড়েছে পরিবেশ বান্ধব ঘোড়ার গাড়ির। এতে একদিকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে অপরদিকে দূষণ থেকে মুক্ত থাকছে পরিবেশ। বর্তমানে উপজেলায় ঘোড়ার গাড়ির উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছে দুই শতাধিক পরিবার।

সূত্রমতে, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পাইকগাছা উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় মালামাল পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম ছিল নদী পথ। আর নদী পথে মালামাল বহনের জন্য নৌযান হিসাবে ব্যবহত হতো নৌকা। জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈষ্ণিক উষ্ণতার ফলে ধীরে ধীরে বেশির ভাগ নদ-নদী গুলো ভরাট হয়ে যায়। আবার দু’একটি নদী সচল থাকলেও নাব্যতা সংকটের কারণে নৌযান চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। 



নৌপথ গুলো বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন ঘটে। দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় মালামাল পরিবহনে উপজেলার সর্বত্রই ব্যবহত হতে থাকে আধুনিক যানবহন। বিশেষ করে নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনে বেশির ভাগ ব্যবহার হতো ট্রাক, পিকআপ, ট্রলি, থ্রী হুইলার ও ইঞ্জিন চালিত নসিমন। এতে একদিকে যেমন বাড়তি জ্বালানি খরচ হতো তেমনি যানবাহনের ধুয়াই মারত্মক ভাবে দূষণ হতো পরিবেশ। 

এরপর মালামাল পরিবহনে গত কয়েক বছরে কদর বেড়েছে ঘোড়ার গাড়ির। বিশেষ করে অভ্যন্তরীন নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাটা গুলো থেকে বসতবাড়ী কিংবা যেখানে স্থাপনা নির্মিত হয় এর যাবতীয় নির্মাণ সামগ্রী যেমন, ইট, বালি, কাঁঠ, বাঁশ সহ প্রায় সব সামগ্রী বহনের জন্য ঘোড়ার গাড়িই এখন অন্যতম পরিবেশ বান্ধব পরিবহন হিসাবে প্রচলন হয়েছে। দিনে দিনে মানুষের জীবন যাত্রার মান যেমন বেড়েছে, তেমন বেড়েছে স্থাপনা নির্মাণ। আর তার সাথেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইট ভাটা সহ নির্মাণ সামগ্রী ব্যবসা। ফলে এসব সামগ্রী পরিবহনে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। 

বর্তমানে উপজেলার গদাইপুর, চেচুয়া, ঘোষাল, গোপালপুর, বিরাশী, মালথ, আগড়ঘাটা, কপিলমুনি, কাশিম নগর, গজালিয়া, চাঁদখালী সহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় দুইশ পরিবারের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। এতে একদিকে জ্বালানি খরচ লাগছে না। অপরদিকে পরিবেশও দূষণ হচ্ছে না। স্বল্প সময়ে অধিক আয়ের জন্য অনেকেই অন্য পেশা ছেড়ে ঝুকছে প্রাচীনতম ঘোড়ার গাড়ি চালানোর পেশায়। 

সরল গ্রামের মান্দার গাজীর ছেলে রাজ্জাক গাজী জানান, তিনি দীর্ঘদিন এ পেশায় জড়িত রয়েছেন। দিনে দুইবার ভাটা থেকে ইট বহন করে থাকেন। পুরাইকাটি ইট ভাটা থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত ৪০০ ইট (এক গাড়ি) বাবদ বহন খরচ পান ২৫০ টাকা। এতে দিনে কমপক্ষে ৫০০ টাকা আয় হয়, যার মধ্যে ঘোড়ার খাদ্যবাবদ ব্যায় হয় ১০০ টাকা। বাকি ৪০০ টাকায় তিনি সংসার চালান। দিনের অন্য সময় তিনি বাড়ীর অন্যান্য কাজ করেন। 

সব মিলিয়েই ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখেই আছেন তবে ঘোড়ার খাদ্য সংকটের কারণে কিছুটা হলেও বিপাকে পড়তে হয় বলে অধিকাংশ ঘোড়ার গাড়ি চালকরা জানান।

বৈশাখী দুপুরে স্বস্তির আশায় পাইকগাছার একটি পরিবার !

পাইকগাছার কপিলমুনিতে কপোতাক্ষ নদ খনন কার্যক্রম

প্রবীনদের মতে, কপোতাক্ষ নদের নামকরণ হয়েছে কবুতরের চোখের জল থেকে। অর্থাৎ কবুতরের চোখের জলের ন্যায় কপোতাক্ষের জল স্বচ্ছতার আলোকে এতটাই স্বচ্ছ ও পবিত্র। সেই কপোতাক্ষের যৌবন ফুরিয়ে আজ মৃত।

ছবি তুলেছেন :: আমিনুল ইসলাম বজলু