Saturday, April 18, 2015

বাশরি সিনেমা হল (শহীদ এম এ গফুর মিলনায়তন), পাইকগাছা পৌরসভা

ইতিহাসে কপিলমুনির হজরত জাফর আউলিয়া’র মাজার

পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনিতে রয়েছে জাগ্রত পীর হজরত জাফর আউলিয়ার মাজার। দক্ষিণ বঙ্গে যে ক'জন পীর-আউলিয়া রয়েছেন তার মধ্যে হজরত জাফর আউলিয়া অন্যতম। তাকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য কীর্তিগাথা। আর মাজার ও পীরকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য ইতিহাস-ঐতিহ্য। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, আজ থেকে শত শত বছর আগে সাধক হজরত জাফর আউলিয়া (রহ.) কপিলমুনিতে সাধনার জন্য আসেন। তখন এ অঞ্চল ছিল বনজঙ্গলে ভরা সুন্দরবনের একটি অংশ। এই নির্জন স্থানেই সাধনা আশ্রম গড়ে তোলেন হজরত জাফর আউলিয়া। 

কপিলমুনিতে পীর হজরত জাফর আউলিয়ার মাজার
জানা যায়, হজরত জাফর আউলিয়া (রহ.) হজরত খাজা খানজাহান আলী (রহ.)-এর সম্ভবত শিষ্য ছিলেন। তবে কোন সময় কত সালে এখানে (কপিলমুনি) আসেন এর সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তাছাড়া প্রথম কোথায় তিনি সাধনা স্থল তৈরি করেন তাও জানা যায়নি। তবে সে সময় বেতবনে ঘেরা কপিলমুনিতে যে সাধনা আশ্রম গড়ে তোলেন তার স্মৃতিচিহ্ন এখনো রয়েছে। 

তার অসংখ্য শিষ্য ও ভক্ত ছিল। আর সাধনা আশ্রমেই তার মৃত্যু হয় বলে জানা যায়। সেখানে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। সেই সমাধিস্থলে সুদর্শন হজরত জাফর আউলিয়ার মাজার গড়ে তোলা হয়েছে। জীবদ্দশায় তার মানবসেবা আজও এ অঞ্চলের মানুষ স্মরণ করে। হজরত জাফর আউলিয়ার মাজারে প্রতিদিন আসছে অসংখ্য ভক্ত। সাম্প্রদায়িক বিভেদ ভুলে হিন্দু-মুসলিমসহ সব ধর্মের মানুষ মানত ও শিরনি নিয়ে আসেন করুণা প্রত্যাশার আশায়। 

তাছাড়া চৈত্র মাসে কপিলমুনি কপোতাক্ষ নদে বারুনি স্নান উপলক্ষে মাসব্যাপী মাজারের চার পাশে বসে রকমারি দোকান নিয়ে মেলা। তার স্মৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যে মাজারের সামনে গড়ে উঠেছে সিনিয়র মাদরাসা, মসজিদ, কপিলমুনি-কাঠামারী সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে 'জাফর আউলিয়া সড়ক'। 

হজরত জাফর আউলিয়াকে (রহ.) ঘিরে রয়েছে অনেক অলৌকিক কাহিনী। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি থেকে জানা যায়, একদিন তিনি তাঁর অন্যতম শিষ্য ছালাওয়ালা ফকিরসহ দুর্গম এলাকায় যান। সেখানে কিছুদিন অবস্থানকালে এক বৃদ্ধা তাকে পানের জন্য দুধ দিতেন। হঠাৎ বৃদ্ধার গাভীটি মারা যায়। এদিকে প্রতিদিনের মতো পীর সাহেবের শিষ্য ছালাওয়ালা বৃদ্ধার বাড়ি যান দুধ আনতে। তিনি বৃদ্ধার গরুর মৃত্যু খবর শুনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। দুধ না হলে হুজুর কি খাবেন? তিনি বৃদ্ধার কাছ থেকে জেনে নেন মরা গাভীটির কোথায় ফেলা হয়েছে। এরপর ছালাওয়ালা ফকির মরা গাভীটি লেজ ধরে টেনে বলেন, এই গাভী ওঠ। অমনি জীবিত হয়ে ওঠে গাভীটি। আর ওই মৃত গাভীর দুধ এনে পান করান পীরকে। বিষয়টি আধ্যাতিক দৃষ্টিতে পীর কেবলা বিষয়টি অবগত হন। তিনি ছালাওয়ালাকে ধমক দিয়ে বলেন, 'তুই আমাকে মরা গরুর দুধ খাওয়াবি'। সঙ্গে সঙ্গে এহেন অপরাধে অন্য শিষ্যরা ছালাওয়ালাকে বস্তাবন্দী করে নদীতে ফেলে দেয়। পুরো এলাকায় কানাঘুষা শুরু হয়, 'পীর কেবলা তার এক শিষ্যকে বস্তাবন্দী করে নদীতে ডুবিয়ে মেরেছেন'। 

হুজুরে অলৌকিক শক্তিবলে সম্ভবত তিনি চমক দেওয়ার জন্যই ওই এলাকা ত্যাগ করে কপিলমুনি ফিরে আসেন এবং শিষ্যদের নিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে তিনি স্থায়ী স্থান তৈরি করেন। তিনি ইসলাম প্রচার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে আধ্যাতিক বলে মানুষের খেদমত শুরু করেন। নদীভাঙন, খালের বাঁধ, বনে বাঘের হাত থেকে রক্ষা পেতে তদবির দিতেন। এ ধরনের অসংখ্য অলৌকিক শক্তির কথা শোনা যায় এ জাগ্রত পীর জাফর আউলিয়া সম্পর্কে।

প্রতিবেদনটি 'ভয়েস অফ পাইকগাছা'য় প্রথম প্রকাশিত হয় ২৯ জানুয়ারি ২০১৩