Sunday, April 6, 2014

পাইকগাছায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট

৬৫ ভাগ নলকূপে আর্সেনিক, ৭০ ভাগ মানুষের সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই 

 

পাইকগাছায় সুপেয় পানি নিয়ে বিপাকে রয়েছেন এলাকাবাসী। সুপেয় পানির একমাত্র উৎস, ৬৫% অগভীর নলকূপের পানি আর্সেনিকযুক্ত হওয়ায় বিকল্প হিসাবে পুকুরের পানি পান করেই জীবন ধারন করতে হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষকে। ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় নামমাত্র গভীর নলকূপগুলো অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। 

পরীক্ষা-নীরিক্ষার অভাবে ১০ বছরেও অধীক সময় ধরে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করায় আর্সেনিকে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। এ পর্যন্ত ৮৬ জন আর্সেনিক রোগী পাওয়া গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সূত্রমতে, জেলার সুন্দরবন সংলগ্ন ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত হয়েছে পাইকগাছা উপজেলা। উপজেলায় মোট আড়াই লাখ লোকের বসবাস হলেও প্রায় ৭০ ভাগ মানুষের জন্য সুপেয় পানির কোন ব্যবস্থা নেই। অথচ ৩০ বছর আগেও এ অঞ্চলে যখন লবন পানির অনুপ্রবেশ ছিল না তখন এ অঞ্চলে সুপেয় পানির তেমন কোন ঘাটতি ছিল না।

৮০’র দশকের দিকে এ অঞ্চলে বানিজ্যিক ভিত্তিতে লবন পানির চাষ শুরু হলে ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকে সুপেয় পানির উৎসগুলো। বছরে প্রায় অধিকাংশ সময় অধিকাংশ এলাকা লবন পানিতে তলিয়ে থাকায় ভূ-গর্ভের পানিতেও দেখা দেয় লবনাক্ততা। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শেখ সরফরাজ আলী জানান, বর্তমানে উপজেলায় মোট ২ হাজার ৬০৮টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। যার মধ্যে ব্যবহৃত হয় ২ হাজার ৩৩৭টি নলকূপ। ব্যবহৃত এসব নলকুপের মধ্যে ৬৫ ভাগ নলকূপেই রয়েছে আর্সেনিক।

সর্বশেষ ২০০৩ সালে আর্সেনিক পরীক্ষা করার পর গত ১০ বছরেও অধিক সময় সরকারিভাবে আর কোন পরীক্ষা না করার ফলে অধিকাংশ মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। অনেকেই আবার বিকল্প হিসাবে পুকুরের পানি পান করে জীবন ধারন করছে।

উপজেলার কপিলমুনি, হরিঢালী, গদাইপুর এলাকায় সুপেয় পানির কিছুটা উৎস্য থাকলেও প্রত্যন্ত অঞ্চল অর্থাৎ বিশেষ করে সুন্দরবন সংলগ্ন গড়ইখালী, দেলুটি, লতা, সোলাদানা, লস্কর ও চাঁদখালী ইউনিয়নে সুপেয় পানির বালাই নেই। এসব এলাকার মানুষের সুপেয় পানির একমাত্র উৎস্য হল পুকুর, পিএসএফ ও রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম ব্যবস্থা। এসব এলাকায় কয়েক কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পানি সংগ্রহ করতে হয়।

পৌর এলাকাও এর ব্যাতিক্রম নয়। মধুমিতা পার্ক ও লোনাপানি কেন্দ্রের কয়েকটি পুকুর পৌর বাজারের সকল হোটেল, রেস্তোরা থেকে শুরু করে গোটা পৌরবাসীর একমাত্র পানির উৎস। শিববাটী গ্রামের বাসন্তি রাণী জানান, প্রায় আড়াই কিলোমিটার পায়ে হেটে লোনা পানি কেন্দ্রের পুকুরে পানি আনতে গিয়ে দিনের অধিকাংশ সময়ই চলে যায়। ফলে দিনের অর্ধেকটা সময় ব্যয় করতে হয় পানির জন্য।

এভাবেই চলতি শুষ্ক মৌসুমে তীব্র পানি সংকটের মধ্যে দিয়ে জীবন ধারন করছেন গোটা উপজেলাবাসী। সুপেয় পানি সংকটের এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে এসএসটি, ভিএসএসটি ব্যবস্থা উপযোগী বলে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শেখ সরফরাজ আলী জানান। তিনি বলেন এ অঞ্চলে ভূগর্ভের গভীরে আর্সেনিক, আয়রন ও লবনাক্ত পানি বিরাজ করায় এসএসটি, ভিএসএসটি ব্যবস্থায় ৪০ থেকে ৬০ ফুটের মধ্যে সুপেয় পানির উৎস্য পাওয়া যাবে।

Voice of Paikgacha makes you nostalgic !

Manipulated Image