Wednesday, March 12, 2014

কপোতাক্ষ নদ দখল করে নির্মিত হচ্ছে মাছের কাটা

পাইকগাছার কপিলমুনিতে কপোতাক্ষ নদের চর ভরাটি জায়গায় স্থায়ীভাবে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে মাছের কাটা। বাজার সম্প্রসারন বা ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষনের নামে স্থানীয় কতিপয় নেতারা সরকার দলীয় সংসদ সদস্যের নাম ব্যবহার করে অপরিকল্পিতভাবে নদীর চর ভরাটি জায়গায় প্রায় অর্ধশতাধিক মাছের কাটা নির্মানে কাজ শুরু করেছে। 

তবে প্রশ্ন উঠেছে এই কাজে বাজার ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষন হবে তো ? নাকি আবার বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি প্রবাহের পথ রুদ্ধ হয়ে জলোবদ্ধতার শিকার হবেন এই জনপদের ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কপিলমুনি বাজার সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের চর ভরাটি বিশাল জায়গায় কতিপয় ব্যক্তিরা প্রশাসনের দূর্ণীতিবাজ কর্তাদের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে বিভিন্ন সময় ডিসিআর নিয়ে জাগয়া দখলসহ ধান ও মাছ চাষ করে আসছে। বর্তমানে ডিসিআর এর নামে কতিপয় ব্যবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে দখল করে নির্মান করে মাছের কাটা। যা নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনকারীদের সাথে বিরোধ বাঁধে দখলকারীদের।

একইভাবে এই কাটা নিয়ে খোদ সরকার দলের নেতারা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় খুলনা-৬ আসন থেকে নির্বাচিত হন আ’লীগের নেতা এ্যাডঃ শেখ মোঃ নূরুল হক। তিনিও কপোতাক্ষ বাঁচাতে সোচ্চার। একইভাবে কপিলমুনির বাজার উন্নয়ন, জলোবদ্ধতা নিরাসনসহ নানান উন্নয়নমূলক কাজ করতে চান এমনটি ঘোষনা দেন। অথচ অপরিকল্পিতভাবে নদীর চর ভরাটি জায়গায় প্রায় অর্ধশতাধিক মাছের কাটা নির্মান নিয়ে সচেতন মহলের মাঝে দেখা দিয়েছে নানান প্রশ্ন।

এব্যপারে কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন ডাবলু বলেন, কপোতাক্ষ আগে বাঁচাতে হবে আর বাজার উন্নয়নসহ সব কিছু হতে হবে বিধিমোতাবেক।

১নং হরিঢালী ইউপি চেয়ারম্যান আবু জাফর সিদ্দিকী রাজু বলেন, কপোতাক্ষের চর ভারাটি জায়গায় মাছের কাটা নির্মানের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। বাজার উন্নয়নের ব্যাপারে আপত্তি নেই, তবে সব কিছু হতে হবে নিয়মনীতির মধ্যদিয়ে।

কপিলমুনি বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি নির্মল মজুমদার বলেন, কপোতাক্ষ নদ বাঁচিয়ে তারপর অন্য কাজ করলে তার আপত্তি নেই। সাবেক সাধারন সম্পাদক আছাদুর রহমান পিয়ারুল বলেন, কপোতাক্ষ নদী দখল করে অপরিকল্পিভাবে মাছের কাটা নির্মানে তার আপত্তি আছে। তিনি দাবি করেন, ১৩৩৯ সালে রায়সাহেব কপিলমুনি বাজার স্থাপনের পর থেকে আজ অব্যদি ১১টি মাছের কাটা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। হঠাৎ করে আরও ৪০/৫০টি মাছের কাটা নির্মান নিয়ে তার এবং জনমনে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, কপোতাক্ষ নদের মাঝ বরাবর চর দখল করে নদীর স্বাভাবিক গতি প্রতিরোধ করে এই ধরনের অপরিকল্পিত স্থায়ী মাছের কাটা নির্মানে জলোবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এতে চৌগাছা থেকে কপিলমুনি পর্যস্ত নদী কুলের লাখও মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে। তিনি বলেন, নদী খনন কাজ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে এবং বাজার উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি পরিকল্পনায় কাজ করা হউক। তিনি দাবি করেন, বর্তমানে চলছে উন্নয়নের নামে নদী শাসন।

বণিক সমিতি ও হরিঢালী আ’লীগের সাধারন সম্পাদক সরদার গোলাম মোস্তফা বলেন, কপোতাক্ষ খনন কাজে যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে এবং নিয়মনীতির মধ্যদিয়ে বাজার উন্নয়ন ও হাট সম্প্রসারনের কাজ চলছে। অন্যদিকে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

পাইকগাছা উপজেলার ৮০ ভাগ ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ

তৃতীয় দফা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আগামী ১৫ মার্চ ভোট হবে পাইহগাছা উপজেলায়। আর ভোট নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসন অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করলেও ৬৯টি কেন্দ্রের ৫৫টিই ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে গেছে।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার ৮০ ভাগ ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনী। এ জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

খুলনা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে জানা গেছে, পাইকগাছার ১০টি ইউনিয়নে ৬৯ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৫৫টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তারা। নির্বাচনের দিন ও পরে এসব কেন্দ্রের আশপাশে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য কেন্দ্রগুলোতে নেয়া হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

খুলনা পুলিশ সুপার মো. গোলাম রউফ খান জানান, নির্বাচনে যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে পুলিশ। নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ৩ জন পুলিশ, ১২ জন আনসার ও একজন গ্রাম পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে একজন করে পুলিশ বেশি থাকবে। এছাড়া এ সব কেন্দ্রের বাইরে টহল দেবে পুলিশের ১৫টি মোবাইল টিম ও ৬টি স্ট্রাইকিং ফোর্স।

সহকারি রির্টানিং অফিসার ও পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো. কবিরউদ্দিন জানান, বুধবার থেকে পাইহগাছায় সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা রয়েছে। এছাড়া বিজিবি, র‌্যাবও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে। তিনি ভোট শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।

এ উপজেলায় ভোটার ১ লাখ ৮৫ হাজার ৬০৩ জন। পুরুষ ৯৩ হাজার ৪৬৬ জন ও মহিলা ৯২ হাজার ১৩৭ জন। ১০টি ইউনিয়নের ৬৯টি কেন্দ্রের ৪৪২টি বুথে ভোট নেয়া হবে।

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাচনে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা

চায়ের কাপে মুখ লাগিয়ে চলছে ভোটের হিসাব নিকাশ


আগামী ১৫ মার্চ পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন উপলক্ষ্যে চলছে প্রার্থীদের শেষ মুহূর্তের প্রচার প্রচারনা। যে যার মত করে ভোট প্রার্থনা করছেন্ উপজেলার অলিতে-গলিতে। চায়ের কাপে মুখ লাগিয়েই চলছে ভোটের হিসাব নিকাশ। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দলীয় পরিচয় তুলে ধরে প্রার্থীরা করছেন ভোট প্রার্থনা। ভোটারদের কাছ থেকে নিচ্ছেন দোয়া আর্শিবাদ। আর দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। এদিকে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যেতে শুরু করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে পাইকগাছা উপজেলা পরিষদ গঠিত। এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৮৫ হাজার ৬০৩ জন, যার মধ্যে পুরুষ ৯৩ হাজার ৪৬৬ জন ও মহিলা ৯২ হাজার ১৩৭ জন। ভোট কেন্দ্র ৬৯টি এবং ভোট কক্ষ ৪৪২টি।

আগামী ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে চেয়ারম্যানপদে ৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রশীদুজ্জামান। দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে লড়ছেন ১৯ দলীয় জোট সমর্থীত জেলা বিএনপি’র উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এড. স.ম বাবর আলী, ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়াই করছেন উপজেলা জাতীয় পার্টি ও পাইকগাছা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর, কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন সিপিবি’র জাতীয় কমিটির সদস্য ও বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কৃষ্ণপদ মন্ডল, মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ সোহরাওয়ার্দ্দী। চিংড়ী মাছ নিয়ে লড়ছেন বাস্তব প্রতিষ্ঠাকরণ পার্টির (স্বঘোষিত) কবি আবদার রশিদ।

নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলার হাট-বাজারসহ বিভিন্ন অলি-গলি প্রার্থীদের পোষ্টারে ছেয়ে গেছে। প্রার্থীরা রাতদিন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির ডালা সাজিয়ে তাদের মন জয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে জাতীয় রাজনীতির বিভিন্ন ইস্যুতে ১৯ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী এড. স.ম বাবর আলী ভোটারদের আলোচনায় কিছুটা সুবিধা জনক অবস্থানে রয়েছেন।

অপরদিকে, শেষ মুহূর্তে স্থানীয় সংসদ সদস্য এড. শেখ মোঃ নুরুল হক নির্বাচনী প্রচারনায় অংশগ্রহন করায় অনেকটা ভাল অবস্থানে রয়েছেন আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রশীদুজ্জামান। অন্যদিকে ১৯ দলীয় জোট এবং ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থীকে টপকে যদি জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর কোন চমক সৃষ্টি করেন তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে আলোচনা চলছে ভোটারদের মাঝে।

এদিকে ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যানের পাশাপাশি ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নিজ নিজ প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে জয়ী হতে ভোটারদের কাছে ব্যাপক প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ পদে নির্বাচন করছেন ৭ জন প্রার্থী। এরা হলেন আ’লীগ সমর্থিত আলহাজ্ব মুজিবর রহমান সানা (তালা), ১৯ দলীয় জোট সমর্থীত মাওঃ শেখ কামাল হোসেন (টিউবয়েল), স্বতন্ত্র জি এ গফুর (টিয়াপাখি), স্বতন্ত্র এড. এস এম মুজিবর রহমান (বই), স্বতন্ত্র শেখ সামছুল আলম পিন্টু (উড়োজাহাজ), স্বতন্ত্র প্রার্থী ডাঃ টিকেন্দ্র নাথ মন্ডল (মাইক), ইউনাইটেড কমিউনিষ্ট লীগের উপজেলা সাধারন সম্পাদক মোঃ শাহাজান সিরাজ সাজু (চশমা)।

অন্যদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ প্রার্থী হলেন, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও ১৯ দলীয় জোট সমর্থীত রাবেয়া হোসেন (হাঁস), আ’লীগ সমর্থীত উপজেলা আ’লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ইউপি সদস্য দীপ্তি রাণী চক্রবর্তী (পদ্মফুল), জামায়াত সমর্থীত শাহানারা খাতুন (কলম) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোছাঃ মাছুমা খাতুন (ফুটবল)।

তো, কারা হচ্ছেন পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের আগামী চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা) ? জানাতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ১৫ মার্চ পর্যন্ত।