Tuesday, April 14, 2015

'ভয়েস অফ পাইকগাছা'র পক্ষ থেকে সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা !

আসুন অনেক ভালো থাকি ১৪২২-এ.... 


আবার এলো পহেলা বৈশাখ, নতুন ভোরের আলো....
অন্ধ মনের বন্ধ কপাট, খুলে ফেলাই ভালো....

ছবিতে পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের সামনে 'ভয়েস অফ পাইকগাছা'র বৈশাখী আলপনা। (ফাইল ফটো)

চৈত্র সংক্রান্তির উৎসব

ঋতু বৈচিত্রের দেশ বাংলাদেশ। ষড়ঋতুর শেষ ঋতু বসন্তকাল। পত্র পুষ্পে নতুন পল্লবে সজ্জিত হয়ে বৃক্ষরাজী রূপ ধারন করে শ্যামল বর্ণ। চৈত্র মাস হলো বছরের শেষ মাস। নববর্ষের প্রারম্ভিক ধর্মকার্য বিষুবকৃত্য। পূর্বদিনের সংক্রান্তির নাম মহাবিষুব সংক্রান্তি।

বিষুবকৃত্যে শক্তুদান, জলদান, ফলদান, অন্নদান ইত্যাদি পূর্ণ কর্মরুপে বিবেচিত হয়। আর্য়ুবেদ শাস্ত্রে বলা হয়েছে “শরৎ গ্রীষ্মে, শীত” গ্রীষ্মকালে পিত্ত প্রকোপিত হয়। তাই বসন্তরোগের প্রার্দুভাব ঘটে। শুক্তু ও নিমপাতা পিত্ত প্রকোপ নাশ করে। বিষুব সংক্রান্তির পরে নববর্ষ শুরু হয়।

চৈত্র সংক্রান্তি শেষ দিনে শুরু হয় চৈত্র সংক্রন্তির শুভ আয়োজন। বাংলাদেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠিত হয় শিব-কালীর পূজা। কোন অঞ্চলে চড়ক পূজা, কোন অঞ্চলে ক্ষেত্রপাল পূজা। কারণ চৈত্র সংক্রান্তির পূর্ণ লগ্নে শিব ও কালীর মিলন হয় বলে বৃহত্তর আঙ্গীকে পূজার আয়োজনে ব্যস্ত থাকে ভক্তবৃন্দরা।

এটিকে কোন এলাকায় ক্ষেত্রপাল পূজা বলে। ক্ষেত্রপাল অর্থ হলো ক্ষেত্রের অধিপতি ও সৃষ্টির অধিপতি বা মঙ্গলের ধারক ও বাহক। তাই শিবের এক নাম মঙ্গলেশ্বর। তাই বলা হয় ‘‘যত্র জীব তত্র শিব”। অর্থাৎ যেখানে জীব সেখানে শিব। এই পৃথিবী ক্ষেত্র বা প্রকৃতি রূপে কালী আর ক্ষেত্রের অধিপতি শিব। এখানে চড়ক পূজা হলো শিব ও কালীর প্রতীক। চড়ক পূজার গাছটি হলো শিবের প্রতীক, আর ঘুরানো চড়ক হলো কালীর প্রতীক। শিব আর কালীর মিলন স্বরুপ হলো কালী পূজা।

চড়ক পূজা উপলক্ষে ৭, ৯, ১৫ দিন আগে বিভিন্ন এলাকার পূজারীদের মধ্যে ২০-৩০ জন সন্যাস ধর্মে দীক্ষিত হয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিব-গৌরী নিত্যগীতি সহকারে মাগন করে। চড়ক পূজা পর্যন্ত তারা পবিত্রতার সাথে সন্যাস ব্রত পালন করে এবং নিরামিষ খাদ্য ভক্ষণ করে। সারাদিন উপবাস পালন করে।

পূজার ২ দিন আগ থেকে পুজারীরা শ্মশানে গিয়ে পূজা অর্চনা করেন ও শেষে গৌরির বিয়ে, গৌরি নাচ ও বিভিন্ন ধর্মীয় পালাগান গেয়ে ঢাক, ঢোল বাজনা সরগম করে গোটা এলাকা প্রদিক্ষণ করে। ছেলেরা গৌরি সাজে, ঘুঙুর পরে নিত্য করে। চৈত্র মাসের শেষ দিন সন্যাসীরা পূজা করে পান বাটা দিয়ে চড়ক গাছকে নিমন্ত্রণ জানায়। বালিচ্ছেদ দিয়ে নৃত্য, শিবের নৃত্য, কালীর নৃত্য দেখানো হয়। নৃত্যের তালে তালে চড়ক গাছ ঘুরানো হয়। 

চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন সন্যাসীরা খেঁজুর গাছে উঠে খেঁজুর নৃত্য করে এবং দর্শকদের মধ্যে খেঁজুর ছিটিয়ে দেয়। তিনদিন ধরে অনুষ্ঠিত পূজার চৈত্র মাসের শেষ দিন পূজা শেষে অগ্নী নৃত্যের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠিকতা শেষ হয়। আদি পূরাণে বর্ণিত রাজা দক্ষের এক কন্যা ছিল চিত্রা। চিত্রার নাম অনুসারে এক নক্ষত্রের নাম করা হয় চিত্রা নক্ষত্র এবং চিত্রা নক্ষত্র থেকে চৈত্র মাসের নামকরা হয়। তাই হিন্দু ধর্মে চৈত্র মাসের বিশেষ স্থান।

প্রাচীনকাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে চড়ক পুজা ও মেলা। দেশের বিভিন্ন স্থানে চৈত্র মাসের শেষ দিন চড়ক পূজার মেলা অনুষ্ঠিত হয়। চৈত্র সংক্রান্তির শুভ দিনে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণি সুখী হোক এবং মহাবিশ্ব শান্তিধামে পরিণত হোক। স্বার্থক হোক মহাবিষুর সংক্রান্তি।

--প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছা।

কপিলমুনিতে বর্ষবরণে আজ থাকছে নানা আয়োজন

নতুন বর্ষকে বরণ করে নিতে পাইকগাছার কপিলমুনি সম্মিলিত নববর্ষ উদ্যাপন কমিটি নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টায় কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দির স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গন হতে র‌্যালী, ৮টায় পান্তা-ইলিশ আসর ও সকাল ৯টায় বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে কেকেএসপি’র সাধারণ সম্পাদক এম আজাদ হোসেন জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তবে সকলের সহযোগীতায় অন্য বছরের তুলনায় এবছর অনুষ্ঠানের আরো বেশি শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে বলে আমার মনে হয়।

শুভ নববর্ষ !