Monday, March 31, 2014

গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর টনক নড়েছে প্রশাসনের (ফলোআপ)

পাইকগাছায় তড়িঘড়ি করে দু’টি মন্দির উন্নয়নে ইট মজুদ


পাইকগাছায় মন্দির উন্নয়নের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর টনক নড়েছে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কমিটি নেতৃবৃন্দের। ইতোমধ্যে মন্দির দু’টি পরিদর্শন করে এক সপ্তাহের মধ্যে উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং মন্দিরের উন্নয়ন কাজ করার লক্ষে তড়িঘড়ি করে নির্মাণ সামগ্রী (ইট) মজুদ করেছে প্রকল্প কমিটি।

উল্লেখ্য, উপজেলার লস্কর ইউনিয়নের পূর্ব খড়িয়া গ্রামে পূর্ব খড়িয়া আদর্শ রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সার্বজনীন দূর্গামন্দির ও কালিমন্দির নামে দু’টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠান দু’টি দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ অবস্থা বিরাজ করায় গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তৎকালীন স্থানীয় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ২০১২-১৩ অর্থ বছরে মন্দির দু’টির অনুকুলে বিভিন্ন সময় ৫ মেঃ টন গম/চাউল বরাদ্দ দেন।

বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে মন্দির উন্নয়নে কোন কাজ না করে ইউপি সদস্য ও প্রকল্প কমিটির সভাপতি প্রনব কান্তি হালদার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিল ভাউচার দাখিল করেছে এমন অভিযোগে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ করে।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি
Voice of Paikgacha'সহ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে টনক নড়ে প্রশাসনের। অপরদিকে তড়িঘড়ি করে উন্নয়ন কাজ শুরু করার চেষ্ঠা করেন প্রকল্প কমিটি। সোমবার সকালে মন্দির দু’টি পরিদর্শন করে এক সপ্তাহের মধ্যে উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়াদ্দার।

একই দিন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় নির্মাণ সামগ্রী (ইট) মজুদ করেছেন প্রকল্প কমিটির নেতৃবৃন্দ। এ ব্যাপারে মন্দির সংলগ্ন এলাকার মুকুন্দ বিহারী হালদার ও শুভাদ্রা হালদার জানান, মন্দির দু’টিতে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন যাবৎ পূজা করে আসছেন। সরকারি বরাদ্দের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এতদিন প্রকল্প কমিটি কাজ না করে সোমবার সকালে দু’টি মন্দিরের চত্ত্বরে ইট মজুদ করেছে।

ইউপি সদস্য ও প্রকল্প কমিটির সভাপতি প্রনব কান্তি হালদার জানান, প্রথম দু’টনের অর্থ দিয়ে বালু ভরাট করা হয়েছিল। অবশিষ্ট তিন টনের অর্থ দিয়ে ইট ক্রয় করা হয়েছে।

নির্বাচনের ফলাফলে পাইকগাছার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হওয়ার আশা

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আ’লীগের চরম ভরাডুবি হওয়াটা আ’লীগের জন্য অনেকটা প্রেস্টিজ ইস্যু বা অশনী সংকেত হলেও নির্বাচনের ফলাফল সামগ্রিকভাবে পাইকগাছার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত ও সুগম করবে বলে ধারণা করছেন সচেতন মহল। পরীক্ষিত দুই নেতা যথাক্রমে সংসদ সদস্য আ’লীগ নেতা এ্যাড. শেখ মোঃ নূরুল হক ও নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. স,ম বাবর আলীকে কাছে পেয়ে উপজেলাবাসী তাই’ই আশা করছেন। 

কেননা সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের আর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান’সহ দু’ভাইস চেয়ারম্যানই ১৯ দলীয় জোটের হওয়ায় জবাবদিহিতার একটা বিষয় থেকে যায়। সেক্ষেত্রে পৌরসভা তথা উপজেলার উন্নয়নের জন্য অবশ্যই সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মাঝে সমন্বয় হওয়াটা জরুরী বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

গেল ১৫ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আ’লীগ সমর্থিত উপজেলা আ’লীগ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রশীদুজ্জামানকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা এ্যাড. স,ম বাবর আলী। শুধু তাই’না ভাইস চেয়ারম্যান দু’টি পদেও জামায়াত তথা ১৯ দলের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন।

এলাকাবাসীর অনেকের ধারণা মোঃ রশীদুজ্জামান উপজেলা চেয়ারম্যান পদে পরাজিত হলেও তিনি উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আ’লীগ এবং পাইকগাছা-কয়রার সংসদ সদস্যও আওয়ামী লীগের। বিধায় উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে এ্যাড. স,ম বাবর আলী তেমন কোন প্রভাব ফলাতে বা উন্নয়নমূলক তেমন কোন কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

অবশ্য সচেতন ও অভিজ্ঞ মহলের ধারণাটা আবার ভিন্ন। তাদের মতে এ্যাড. স,ম বাবর আলী সত্তুরের দশকে একবার সংসদ সদস্য ও আশির দশকে দু’বার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে পাইকগাছায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলেন। ওদিকে ১৯৯৬ সালে এ্যাড. শেখ মোঃ নূরুল হক খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এই দু’উপজেলার রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটান।

২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ্যাড. নূরুল হক পরাজিত হবার পর এক অর্থে থমকে দাঁড়ায় পাইকগাছার সার্বিক উন্নয়ন। যার বড় একটি উদাহরণ হলো খুলনা-পাইকগাছা সড়ক। ভেঙেচুরে বিগত ৫/৭ বছর যাবৎ অত্র সড়কে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। জানামালের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করছে ব্যস্ততম এই সড়কে।

দীর্ঘদিন পর হলেও সাংসদ নূরুল হক ও উপজেলা চেয়ারম্যান স,ম বাবর আলী পাইকগাছার হাল ধরাতে এলাকাবাসি বেশ খানিকটা আস্বস্ত হয়েছেন। এখন শুধু অপেক্ষা ও দেখার পালা যোগ্যতা সম্পন্ন এই দুই নেতার মধ্যে কতটুকু সমন্বয় ঘটে এবং অত্র অঞ্চলের উন্নয়ন কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।

মন্দির উন্নয়নে বরাদ্দকৃত চাউল/গম আত্মসাৎ করার অভিযোগ

পাইকগাছায় পূর্ব খড়িয়া সার্বজনীন দূর্গামন্দির ও কালিমন্দিরের অনুকুলে ৫ মেঃ টন গম/চাউল বরাদ্দ দেওয়া হলেও ইতোমধ্যে প্রকল্প কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য প্রনব কান্তি হালদার বরাদ্দকৃত চাউল উত্তোলন পূর্বক বিল, ভাউচার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দাখিল করলেও মন্দির উন্নয়নে কোন কাজ করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, উপজেলার লস্কর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পূর্ব খড়িয়া গ্রামে সার্বজনীন দূর্গামন্দির ও কালিমন্দির নামে দু’টি মন্দির রয়েছে। উন্নয়নের অভাবে মন্দির দু’টি দীর্ঘদিন জরাজীর্ন অবস্থায় রয়েছে। এমতাবস্থায় স্থানীয় তৎকালীন এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মন্দির দু’টির অনুকুলে ২০১২-১৩ অর্থবছরে পৃথকভাবে ৫ মেঃ টন গম/চাউল বরাদ্দ দেন।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্য প্রনব কান্তি হালদার এ ব্যাপারে এলাকাবাসীকে অবহিত না করে পকেট কমিটি গঠন করার মাধ্যমে বরাদ্দকৃত চাল/গম উত্তোলন করে মন্দিরের কোন উন্নয়নের কাজ না করেই সংশ্লিস্ট দপ্তরে বিল/ভাউচার দাখিল করেছেন।

পরবর্তীতে বিষয়টি এলাকাবাসী জানতে পেরে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ করেছে। এ ব্যাপারে মুঠোফোনে ইউপি সদস্য প্রনব কান্তি হালদারকে পাওয়া যায়নি।

মাধবদীতে পাইকগাছার ১৪ শ্রমিকের মানবেতর জীবনযাপন

মাধবদীর পার্শ্ববর্তী কাজিরচর এলাকার এমএ ব্রিকফিল্ড থেকে উদ্ধার হওয়া ১৪ নারী ও শিশু শ্রমিকের ২২ দিন ধরে কাজ না থাকায় ভাড়া বাসায় থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কেউ তাদের কাজ দিচ্ছে না।

জানা যায়, প্রায় ১ মাস আটক রেখে উলি্লখিত নারীও শিশু শ্রমিককে পারিশ্রমিক না দিয়ে নির্যাতন করে আসছিল। এমতাবস্থায় তাদের একজন গোপনে পালিয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসনে অভিযোগ করলে গত ২২ মার্চ রাত সাড়ে ৮টায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে এক শিশুসহ ১৪ নারী শ্রমিককে উদ্ধার করেন।

উদ্ধারকৃত শ্রমিকদের সবার বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলায়। তারা হলেন ওই উপজেলার শান্তা গ্রামের ইকবাল শেখের স্ত্রী শিউলী আকতার (২২) ও তার মেয়ে মেয়ে খাদিজা (৪), সোহেল মিয়ার স্ত্রী আয়েশা আক্তার (২০) ও তার ছেলে সাজ্জাদ মিয়া (৪), ইসহাক মিয়া (৩৫) ও তার স্ত্রী জরিনা বেগম(২৭) এবং তাদের দু'ছেলে হাসান (৭) ও হোসাইন (২), শুকুর আলী (৩৫), ইয়াছিন (২৫), রাকিব মিয়া (২২) এবং গড়ইখালী গ্রামের নাইম মিয়া (৩৪) ও তার স্ত্রী মনিরা বেগম (২৫)।

উদ্ধার হওয়া শিউলী আক্তার বলেন, ইট ভাটায় রাতের বেলায় তালাবদ্ধ ও দিনের বেলায় পাহারা দিয়ে রাখা হতো। সপ্তাহের ৩ দিন কিছু চাল আর কিছু সবজি দেয়া হতো আর বাকি তিন দিন উপোস করতে হয়েছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ইকবাল ও সোহেল নামে দু'জন শ্রমিক পালিয়ে যাওয়ার পর রাতে মুছা, মকবুল ও আরেকজন আমাদের ঘরে ঢুকে আমার ননদ আয়েশা আক্তারকে মারধর ও নির্যাতন করে। ইট ভাটার মালিকের অভিযোগ ছিল শ্রমিক সর্দার তাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়েছিল আর তাই তাদের সঙ্গে এ আচরণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া শ্রকিরা এখনও কোথাও কাজ পাননি আর তাই পাঁচদোনায় ভাড়াটে বাসায় থেকে শিশু সন্তানদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মারাত্মক কষ্টে দিন যাপন করছেন। ইট ভাটার কাজ শিখেছে অন্যকাজে অভিজ্ঞতা না থাকায় কোন কাজ করতে পারছে না। এ অবস্থায় বাড়িতে চলে গিয়েও সংসার চালানোর মতো অবস্থা না থাকায় উভয় সংকটে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।