পৃথিবীর
ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়ার প্রথম নজির অমর
একুশে। একুশের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষের মনে স্বাধীনতা
সংগ্রামের প্রথম বীজ বোনা হয়েছিল। একুশের অনন্য সাহসই প্রতিটি আন্দোলনে
বাঙালিকে দুর্জয় শক্তি জুগিয়েছিল।
যেভাবে একুশ:
একুশে
ফেব্রুয়ারির সেই সকালে প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনকে ঘিরে রাষ্ট্রভাষার
দাবিতে পরিষদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিয়ে ছাত্ররা
সমবেত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা, মেডিকেল
কলেজ হোস্টেল গেটের সামনে ও বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে। বিকেল সাড়ে ৩টায়
প্রাদেশিক পরিষদের এ অধিবেশন ডাকা হয়েছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগে থেকেই
১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন।
আমতলার সভা থেকে ১৪৪ ধারা ভাঙার
ঘোষণা আসামাত্র একের পর এক দশ জনের মিছিল বের হতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় গেট
থেকে। শুরু হয় ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের রক্তাক্ত সংঘর্ষ। একপর্যায়ে পুলিশ
হঠাৎ করেই মেডিকেল হোস্টেল গেটের সামনে ও বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে জড়ো
হওয়া ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন আবুল বরকত,
রফিকউদ্দিন আহমদ ও আবদুল জব্বার। ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত
আবদুস সালাম মারা যান ৭ এপ্রিল।
সেই থেকে একুশের দিনটি মহান শহীদ
দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। একের পর এক আন্দোলন চলতে থাকে রাষ্ট্রভাষার
দাবিতে। গণআন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত ১৯৫৬ সালের শুরুতেই পাকিস্তানি
সামরিক শাসক নতি স্বীকারে বাধ্য হয়। ২৯ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে
গৃহীত সংবিধানের মাধ্যমে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে
আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি:
ভাষার জন্য বাঙালির বিরল এ আত্মত্যাগ আজ কেবল এ ভূখণ্ডের সীমানায়ই আবদ্ধ
নয়, কালের পরিক্রমায় আন্তর্জাতিক মর্যাদায়ও মহীয়ান হয়েছে একুশে ফেব্রুয়ারি।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালের ১৭
নভেম্বর তাদের ৩০তম সম্মেলনে ২৮টি দেশের সমর্থনে দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক
মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে একযোগে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাঙালি জাতির জন্য এক অনন্যসাধারণ অর্জন।