Saturday, December 17, 2016

নিজ হাতে পতাকা ধরলেন আবুল বাজনদার

‘নিজের হাত নিজেই চিনতে পারতাম না, হাতের আঙুল দেখা যেতো না। সেই হাতে আজ আমি বাংলাদেশের পতাকা ধরেছি। লাল সবুজের এই পতাকা ধরতে পারাটা যে কতটা সৌভাগ্যের সেটা আমি এখন বুঝতে পারছি। মনের ভেতরে এ এক অদ্ভুত অনুভূতি, যা বোঝানো যাবে না।’ কথাগুলো একদমে বলে ফোনের অপর প্রান্তে থাকা আবুল বাজনদার খানিকক্ষণ চুপ থাকলেন। শুক্রবার বিজয় দিবসে আলাপকালে এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা জানালেন ‘বৃক্ষমানব’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আবুল বাজনদার। হাসপাতালের বিছানায় বসেই পতাকা হাতে মেয়েকে শেখাচ্ছেন ‘জয় বাংলা’ বলা।

মোবাইল ফোনে কথা বলার সময়ে আবুল উচ্ছ্বলিত কণ্ঠে আরও বলেন, ‘খুব ছোটবেলায় যখন আমি স্বাভাবিক ছিলাম তখন এসব দিনগুলোয় পতাকা উড়াতাম। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তো আর ধরতে পারিনি। পতাকা হাতে নিয়ে বুকে জড়ায়ে ধরছি। আমার দেশের পতাকা জড়ায়ে ধরার আনন্দের অনুভূতি বোঝানো সম্ভব না। বিশেষ করে আমার মতো মানুষের।’

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি খুলনা থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হন বাজনদার। গত ১০ বছর ধরে তিনি বিরল রোগ এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভ্যারুসিফরমিস-এ আক্রান্ত ছিলেন। হাতে গাছের শেকড়সদৃশ মাংসপিণ্ড তৈরি হয়েছিল তার। এ কারণেই তিনি ‘বৃক্ষমানব’ হিসেবে পরিচিত। তিনি বিশ্বের তৃতীয় রোগী যিনি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বার্ন ইউনিটে ভর্তি হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বাজনদারের দুই হাতে মোট ১১ বার এবং দুই পায়ে তিনবার অপারেশন হয়েছে।

বার্ন ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আবুল বাজনদারের দুই হাতের ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে তার পায়ে আরও দু/তিনটি অপারেশন লাগতে পারে। তিনি কঠিন অধ্যায়গুলো পার হয়ে এসেছেন, হাত এবং পায়ের আঙুলগুলো এখন দৃশ্যমান। পায়ে কয়েকটি অপারেশন লাগলেও সেগুলো খুবই মাইনর অপারেশন।’

প্রতিদিনের মতো বিজয় দিবসের আগের দিনও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আবুল বাজনদারকে দেখতে যান তার ঘনিষ্ঠজন কাজী বাহার।

তিনি বলেন, ‘গতকাল (১৫ ডিসেম্বর) বিকাল থেকেই বাজনদারদের সঙ্গে ছিলাম। সন্ধ্যার পর মনে হলো, দেশকে ভালোবাসা এই মানুষটি এতদিন হাতে পতাকা তুলে নিতে পারেনি। যেহেতু তার দুটি হাতই এখন খুলে দিয়েছেন চিকিৎসকরা, তাই তার জন্য একটি পতাকা কিনে এনে হাতে তুলে দেই। এরপর শহীদ মিনার থেকে পতাকাটি কিনে আবার ওদের কেবিনে যাই।’

বাহার বলেন, ‘আবুল বাজনদারের হাতে যখন পতাকাটি তুলে দেই সেই মুহূর্তের কথা, আবুলের হাসি-কান্না মেশানো মুখভঙ্গি আমি কোনোদিনও ভুলবো না। জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা হলো আমার।’

তিনি আরও বলেন, ‘পতাকা হাতে নিয়ে বাজনদারের চোখ ভরা জল ছিল আর মুখে ছিল প্রশস্ত হাসি। শুধু বাবা বাজনদারের জন্যই নয়, তার পৌনে চার বছরের একমাত্র মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস তাহিরার জন্যও ছোট এক পতাকা নিয়ে গিয়েছেন বাহার। আর সেই পতাকা মেয়ের হাতে দিয়ে বাবা মেয়েকে শেখাচ্ছেন, মা জয় বাংলা বলো।’

বাজনদারের চিকিৎসা করানোর পেছনে যার অন্যতম ভূমিকা রয়েছে সেই প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারী আবুল বাজানদারের পতাকা বুজে জড়িয়ে রাখার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। ছবির নিচে লিখেছেন, ‘অন্য আরেক বিজয়ের কাছাকাছি! বিজয়ী বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিজয়ের নতুন এক নাম আমাদের আবুল। জয় বাংলা।’