Sunday, September 22, 2013

পাইকগাছা কলেজ জাতীয়করনের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ঐতিহ্যবাহী পাইকগাছা কলেজ জাতীয়করনের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। রোববার সকালে উপজেলা পরিষদের সামনে প্রধান সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে। 


কর্মসূচীতে অংশগ্রহন করে একাত্মতা পোষন করেন কলেজে কর্মরত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে কয়রার এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাইকগাছার একটি কলেজ জাতীয়করনের ঘোষনা দেন।

পাইকগাছায় মটরসাইকেল চোরাই সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য আটক

পাইকগাছায় থানাপুলিশ আবারও মটরসাইকেল চোরাই সিন্ডিকেটের সদস্য সন্দেহে এক যুবককে আটক করেছে। তাকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আটক যুবকের কাছ থেকে এ ঘটনায় জড়িত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম বেরিয়ে এসেছে বলে থানা পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশের ধারাবাহিক আটক অভিযানে এলাকায় গ্রেফতার আতংকে রয়েছে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

থানা পুলিশসুত্রে জানা যায়, শনিবার রাত ৮ টার দিকে এসআই সিরাজুল ইসলাম অভিযান চালিয়ে পৌর বাজার থেকে বাতিখালী গ্রামের মাহতাব গাজীর পুত্র আবুল হোসেন (৩০) কে আটক করে। আটক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রোববার তাকে ১৫ এপ্রিল তারিখে একটি মটরসাইকেল চুরি মামলায় ৭দিনের রিমান্ড আবেদন চেয়ে আদালতে প্রেরণ করেছে। এ ব্যাপারে ওসি এম মসিউর রহমান জানান আটক আবুল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মটরসাইকেল চুরি কাজে জড়িত রয়েছে এমন এলাকার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম বলেছে। এলাকায় তাদের যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে এছাড়াও মটরসাইকেল উদ্ধারের ব্যাপারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি এলাকায় মটরসাইকেল চুরির প্রবনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত পুলিশ জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ জনকে আটক করে।

ফেনসিডিল, ইয়াবা ও ভারতীয় টিভি চ্যানেল

ভারতীয় চ্যানেল দেখার সময় সংঘবদ্ধ দর্শক গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক। এরকম খবর কবে গণমাধ্যমে দেখা যাবে? অপেক্ষায় আছি এ ধরনের খবর প্রচারের।

যেভাবে ইয়াবা ও ফেনসিডিল বিক্রেতাকে আটক করা হয়, কিংবা এই দুই মাদকে আক্রান্তদের যেভাবে নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হয়, ঠিক সেই আচরণ ভারতীয় চ্যানেলে আসক্ত দর্শকদের সঙ্গে কবে থেকে শুরু করা হবে, অপেক্ষায় আছি সেই দিনটিরও।

আমরা ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা ফেনসিডিলের কথা জানি। নব্বইর দশকের গোড়া থেকে সারাদেশ ফেনসিডিলে সয়লাব হয়ে যেতে শুরু করে। তরুণ-তরুণীরা ফেনসিডিলে দলে দলে আসক্ত হতে থাকে। অফুরান চাহিদা সামাল দিতে বাংলাদেশ সীমান্তের নিকটবর্তী ভারতের এলাকাগুলোতে ফেনসিডিলের কারখানা চালু হবার খবর আছে। ফেনসিডিল বিক্রি করতে ও চোরাইপথে তা আনতে যতো উদ্যোগই নেয়া হোক, এর বিপণনকারীরা নতুন নতুন ফন্দি বের করেছে এর সরবরাহে।

কাঁঠালের ভেতর, মাছের ভেতর, চালের বস্তায় নানা ফন্দি-ফিকিরে ফেনসিডিল বিপণন চলছেই। এর সঙ্গে গত পাঁচ বছরে বেড়েছে ইয়াবার সরবরাহ।

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ইয়াবা সেবনের মাত্রা বেড়েছে। ইয়াবা বিক্রি’র সংগে যুক্ত হয়ে পড়েছে বিনোদন জগতের মানুষ ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা। মাল্টিলেভেল ব্যবসার অনুকরণে চলছে ইয়াবার ব্যবসা। আসক্তে’র সংখ্যাও বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। তবে গণিত-জ্যামিতির সব হিসাব ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের দর্শকদের ভারতীয় চ্যানেলে আসক্তি।

ভারতীয় চ্যানেলে যতো বাংলাদেশি দর্শক আসক্ত, এতোটা আসক্তি কোনো মাদকের প্রতিও নেই। সমস্যা হলো এই নেশায় বুঁদ হয়ে আছে আড়াই বছরের শিশু থেকে আশি বছরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত।

ধারণা জরিপ বলে- ভারতীয় চ্যানেলে মেয়েরাই বেশি নেশাতুর হয়ে আছে। ছেলেরা যে খুব পিছিয়ে আছে তা বলা যাবে না স্টার প্লাস, সনি, কালারস, স্টার গোল্ড, লাইফ ওকে, স্যাটম্যাক্স, এম টিউন, বি ফর ইউ, চ্যানেল এক্স, জি মিউজিক, এস সংগীত, মুভিস ওকে, স্টার জলসা, জলসা মুভি, জিবাংলা, ইটিভি বাংলা, সনি আট, জিবাংলা মুভিজ, তারা মিউজিক গোগ্রাসে হজম করছে পরিবারের সবাই মিলমিশ করেই।

মাদকের নেশা’র যেমন সামাজিক ও শারীরিক ক্ষতি হয়, তেমনি ভারতীয় চ্যানেলের নেশা’তেও সামাজিক ও শারীরিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। পরিবারের কোন সদস্যের মাদকে আসক্তি একটি পরিবারকে কিভাবে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে বা দিচ্ছে তার উদাহরণ এখন আশপাশে তাকালেই পাওয়া যায়। কারো পরিবার, কারো শিক্ষা জীবন এবং অনেক প্রতিভাই অংকুরে পচে গেছে মাদকের নীল ছোবলে।

একইভাবে ভারতীয় চ্যানেলের প্রভাবে দেখা দেয়া সামাজিক ক্ষতগুলো এখন রূপ নিয়েছে কর্কট রোগে। প্রথমত, শিশু থেকে কিশোর বয়সীরা ভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষাকে অনুসরণ করতে শুরু করেছে। চলন-বলনে এবং পোশাকে তারা ভারতীয় চ্যানেলের পাত্রপাত্রীদের অনুকরণ করে। তাদের বাবা-মা এবং অভিভাবকরা আরেক ধাপ এগিয়ে পোশাক-অলংকার এবং সামাজিকতায় ভারতীয় আদল নিয়ে এসেছে। এর সংগে যোগ হচ্ছে দূরশিক্ষণের মাধ্যমে কূটচাল,পরকীয়া, সহিংসতা’র মতো বিষয়গুলো শিক্ষা নেয়া। এই শিক্ষণগুলোর চর্চা এখন পুরোদমে চলছে পরিবার ও সমাজে। কিন্তু যে নেশা একবার পান করা হয়ে গেছে তা কি ছাড়া সম্ভব? সম্ভব নয় বলেই এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া’র উদাহরণগুলো দেখার পরও নেশার ডোজ দিনকে দিন বাড়ছে, কমছে না এক মিনিটও। কারণ এ নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা এদেশের দর্শকদের যেনো নেশা না কাটে, সেজন্য ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো নতুন নতুন উপকরণের নিয়মিত যোগান দিয়েই যাচ্ছে।

ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর নিত্যনতুন উপকরণের যোগানের সঙ্গে পেরে উঠতে পারছে না আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। পারছে না এর একটি সঙ্গত কারণ হলো বহুভাষা ও রাজ্যের ওই দেশটিতে কলাকুশলী অফুরন্ত। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সেই সংখ্যক কলাকুশলী যোগান দেয়ার সাধ্য নেই। সেই সংগে ভারতের জনসংখ্যা অনুপাতে পণ্য ও বিজ্ঞাপনের বাজারের কাছে বাংলাদেশের দু’টি বাজারই খড়কুটো তুল্য।

ফলে ভারতের চ্যানেলের সংগে পাল্লা দেয়ার কোন দিক থেকেই সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। তবে স্মরণ করা যেতে পারে, ভারতে টেলিভিশন চ্যানেলের বিস্ফোরণ ঘটার আগে, বাংলাদেশের বিটিভি’র অনুষ্ঠান কিন্তু ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয় ছিল। বিটিভির অনেক অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল, যেগুলো এখন ভারতীয় চ্যানেলগুলোতে জমকালো করে উপস্থাপিত হয়। বলা যেতে পারে রিয়ালিটি শো’র কথাই। বিটিভিই নতুন কুঁড়ি শুরু করেছিল। এখন আমরা ইন্ডিয়ান আইডলে মাত হচ্ছি। তার কুঁড়ি কিন্তু নতুন কুঁড়ি থেকেই। বাংলাদেশে এখন শত শত নাটক তৈরি হচ্ছে। টেলিফিল্ম তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এই আয়োজন গুলো দেখছে কে? লঞ্চঘাট থেকে প্রাসাদ্যম ফ্ল্যাট সর্বত্রই সকাল থেকে রাত রিমোর্ট খুঁজে ফেরে ভারতীয় টিভি চ্যানেল। 

আমি যে অবস্থান থেকে লিখছি, তাতে আমি সুবিধাজনক অবস্থানেই আছি। কারণ আমি নিউজ চ্যানেলে কাজ করছি। ভারতের টিভি চ্যানেলের সংগে আমার সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। ঈদে-পার্বণে যখন বিশেষ কোন অনুষ্ঠান তৈরি করি, তখন ভাবনায় পড়ি এই অনুষ্ঠানটি কি দর্শকরা দেখবেন? তবে দু:শ্চিন্তায় থাকি প্রতিদিনই কোন খবরটি বা টক শোটি যে দর্শকরা দেখছেন।

অনেকের কাছ থেকে এ কথা শুনতে প্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি-উফ নিউজটি বা টকশোটি দেখা হয়নি, কারণ বাসায় স্ত্রী বা মেয়ে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সিরিয়াল দেখছিল। কোনো  কোনো দিন বেশ গর্ব করেই কেউ কেউ বলে বসেন-তার মেয়ে বা ছেলেটি ভারতীয় চ্যানেলের কোনো না কোন অনুষ্ঠান দেখছিল। আবার অনেকের ঢং’এ ভরা অনুযোগ-অভিযোগও শুনতে পাই- বাসায় তাকে কোন একটা কিছু কিনে দিতে হয়েছে, যে আবদারটি এসেছে ভারতীয় চ্যানেল দেখে।

এই যখন অবস্থা তখন আমাদের তৈরি খবর কয়জনা দেখছে তা নিয়ে দু:শ্চিন্তায় না পড়ে উপায় আছে? তবে সান্ত্বনা খুঁজি অনুষ্ঠান নির্ভর চ্যানেলগুলোর কথা ভেবে। তাদের উদ্যোগের প্রায় ষোল আনাই তো মিছে হয়ে যায় ভারতীয় টিভি চ্যানেলের প্লাবনে। বাংলাদেশে যখন পিক আওয়ার তখন সবাই তার সেরা অনুষ্ঠানটিই দেখান। কিন্তু ওদিকে সীমানার ওপাড়ে তখন সেখানকার পিক আওয়ারের অনুষ্ঠানগুলোও শুরু হয়ে গেছে। কোন দর্শক হয়তো করুনা করে নিজের দেশের টেলিভিশনে কিছুক্ষণ যাত্রা বিরতি দেন। তাতেই ধন্য হতে হয়। তার উপর নির্ভর করেই কোন কোন অনুষ্ঠানের ঠাঁই হয় টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট (টিআরপি)তে।

টিআরপি’র প্রায় ৬০ শতাংশ যখন ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের দখলে তখন বিজ্ঞাপণদাতারা দেশী চ্যানেলকে ফেলে এখন ভারতীয় চ্যানেলমুখি হতে শুরু করেছে। ফলে বিজ্ঞাপনের বাজারে দেখা দিয়েছে মন্দা। ব্যয় অনুযায়ী বিজ্ঞাপণ থেকে আয় করতে পারছে না চ্যানেলগুলো। এরই মধ্যে কোন কোন চ্যানেলে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। কোন কোন চ্যানেল হয়ে পড়ছে রুগ্ন। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো’র রুগ্ন হবার কারণ একটাই, সেটা হলো এদেশের দর্শকদের ভারতীয় চ্যানেলের নেশায় আসক্ত হয়ে থাকা। এই আসক্তিরোধে সরকারে হস্তক্ষেপ চাওয়া হচ্ছে।

বলা হচ্ছে সিরিয়াল, ছবি এবং গান প্রচার হয় ২৪ ঘণ্টা এমন ভারতীয় চ্যানেল বন্ধের উদ্যোগ নিতে। দু’একবার এই উদ্যোগ নিয়েও সরকার তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। কিন্তু একথা সরকারকে মানতেই হবে সেদিন খুব দূরে নেই যেদিন তাদের ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল কোথায় দেখা হচ্ছে, তার খোঁজে অভিযান চালাতে হবে। ইয়াবা এবং ফেনসিডিলের আদলেই।

ফুটনোট: মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির যুগে আমি এমন বাঁধনের পক্ষপাতি নই। তাই ভারতীয় অন্যান্য শিক্ষামূলক, খেলা ও সংবাদভিত্তিক চ্যানেল মুক্ত রাখার পক্ষে। যেহেতু আলোচ্য চ্যানেলগুলো আমাদের পরিবার,সমাজ ও অর্থনীতির উপর নীল ছায়া ফেলেছে, তাই এই চ্যানেলগুলোর বাংলাদেশে সম্প্রচার বন্ধের পক্ষে। এতে ফায়দা সুনিশ্চিত। যেমনটি ডোরিমনের সম্প্রচার বন্ধের পর পাওয়া গেছে।

তুষার আবদুল্লাহ: বার্তা প্রধান, সময় টেলিভিশন

আজ থেকে শুরু হচ্ছে পাইকগাছা-কাশিমনগর রাস্তার সংস্কার কাজ

অবশেষে খুলনা-পাইকগাছা সড়কের পাইকগাছার সীমান্ত কপিলমুনির কাশিমনগর থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত সংস্কার কাজ শুরু হচ্ছে আজ ২২ সেপ্টেম্বর থেকে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য এড. সোহরাব আলী সানা গতকাল শনিবার সকালে সড়ক ও জনপদ বিভাগ খুলনাঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী আঃ রাজ্জাককে সাথে নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে জরুরী ভিত্তিতে চলাচল অযোগ্য রাস্তাটি সংস্কারের নির্দেশ দেন। নির্বাহী প্রকৌশলী আজ থেকে মেরামত কাজ শুরু করার আশ্বাস প্রদান করেন।

উল্লেখ্য, মাত্র কয়েক মাস আগে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয়ে অত্র সড়কের আঠারমাইল থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত সংস্কার কাজ করা হয়েছিল। যা ইতোমধ্যে ভেঙে বড়-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

হরিণ কেনা-বেচার গোপন হাট !

সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে, ``বাঘের লাফ কুড়ি হাত, হরিণের লাফ একুশ।`` অর্থাৎ লাফিয়েই বাঘ মামার থাবা থেকে নিস্তার মেলে হরিণের। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাঘের থাবা থেকে মাঝে মধ্যে রক্ষা পেলেও শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সুন্দরবনের মায়াবী চিত্রল হরিণ।

বনদস্যু ছাড়াও অবৈধ শিকারি ও কাঠ পাচারকারী চক্র এখন বেপরোয়া সুন্দরবনে। বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ, বিষ টোপ এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে হরিণ শিকারে।

বনসংলগ্ন এলাকার লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হরিণ শিকারি পেশাদার ব্যবসায়ী ও বিশেষ সিন্ডিকেট। আর এসব ব্যবসায়ীরা পেশাদার শিকারিদের অগ্রিম দাদন দিয়ে নানা কৌশলে মাংস এনে বিক্রি করছে লোকালয়ে।

আর বনসংলগ্ন বেশ কিছু গ্রামে নিয়মিত বসছে হরিণের মাংস বেচাকেনার গোপন হাট। দামটাও বেশ কম। কেজি প্রতি ৩/৪শ’ টাকায় এসব হাটে মিলবে হরিণের মাংস।

সুন্দরবন সংলগ্ন মংলা উপজেলার জয়মনী, চিলা, বাঁশতলা, বৌদ্ধমারী, বাণীশান্তা মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ঝিউধরা, গুলিশাখালী, সন্ন্যাসী, শরণখোল উপজেলার আমড়াতলা, ধানসাগর, তাফালবাড়ী, চালিতাবুনিয়া, বগি খুলনার দাকোপের ঢাংমারী, খাজুরা প্রভৃতি এলাকায় সুযোগ বুঝে শিকারিরা অনেকটা প্রকাশ্যেই হরিণের মাংস বিক্রি করে থাকে।

সূত্র মতে, মাংস, চামড়া ও শিংয়ের ব্যাপক চাহিদার কারণেই পেশাদার শিকারিরা হরিণ নিধনে মেতে ওঠে। এছাড়া এক শ্রেণীর ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি নিতান্তই শখের বশে হরিণ শিকার করে থাকেন।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের খুশি করতেও তদবির/উপটোকন হিসেবে হরিণের মাংস সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এসব কারণেই প্রধানত লোকালয়ের অনেক লোকই হরিণ শিকারকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। হরিণ শিকারিরা একটি মাঝারি আকৃতির হরিণ শিকার করেই তা কয়েক হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারে।

অনুসন্ধানে জানান যায়, বন সংলগ্ন এলাকার অভাবী ও গরিব লোক অনেকেই দারিদ্রের কারণে হরিণ শিকারকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। এছাড়া লোকালয়ের অনেক লোক শখের বশেও হরিণ শিকার করে থাকে।

বনসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র মতে, সুন্দরবনে সবচেয়ে বেশি হরিণ শিকার হয় ঈদ, পূজা ও সুন্দরবনের রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শরণখোলার একজন সাবেক জন প্রতিনিধি জানান, আগের তুলনায় হরিণ শিকার ও প্রকশ্যে বিক্রি এখন অনেক কমেছে। তবে সামনে কোররানি ঈদ ও পূজার মৌসুমে বাড়তে পারে হরিণ শিকার। কারণ এসময় চাহিদা বেশি থাকায় শিকারিরা বেশি দাম পায়।

তিনি জানান, এসব মৌসুমে এক কেজি হরিণের মাংস হাজার ১২শ’ টাকায়ও বিক্রি হয়।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, শিকারি চক্রের সদস্যরা মাছধরা জেলেদের ছদ্মবেশে বনের গহীনে গিয়ে হরিণ শিকার করে তা গোপনে লোকালয়ে নিয়ে আসে। পরে শিকার করা হরিণ কৌশলে লোকালয় থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়। এজন্য সংঘবদ্ধ শিকারি চক্রের লোকালয়ে নির্দিষ্ট এজেন্ট নিয়োজিত রয়েছে। এসব এজেন্টের মাধ্যমে ৩/৪শ’ টাকা করে কেজি দরে হরিণের মাংস সংগ্রহ করা যায়।

ক্ষেত্র বিশেষে টাকা বেশি হলে এজেন্টরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে এ মাংস পৌঁছে দিয়ে আসে। এছাড়া প্রভাবশালী ধনাঢ্য ব্যক্তিরা অস্ত্র নিয়ে হরিণ শিকার বা শিকারের উদ্দেশে গহীন সুন্দরবনে প্রবেশ করেছেন এমন নানাবিধ ঘটনা ইতোপূর্বে ঘটেছে।

মংলাস্থ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লে. কমান্ডার মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, নিয়মিত টহলের সময় ও অভিযানের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় তারা জেলেদের কাছ থেকে হরিণে মাংস উদ্ধার করেছেন। এ ব্যাপারে কোস্টগার্ড তাদের নজরদারি অব্যাহত রেখেছেন।

শিকারীদের তৎপরতার কথা অস্বীকার না করলেও পূর্ব সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) চৌধুরী আমির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা হরিণের মাংস বিক্রি বা পাচার রোধে আগের চেয়ে মনিটরিং আরও বাড়িয়েছি। বনজীবীদের নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি বন ও আশপাশের এলাকায় এ ধরনের খবর পেলেই সঙ্গে সঙ্গে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।’

এসময় তিনি আরো বলেন, ‘বন ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের জন্য সুন্দরবনকে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের (জিপিএস) আওতায় আনার জন্য কাজ চলছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বন ব্যবস্থাপনায় আরও গতি আসবে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে বনকর্মীদের কাজের গতিবিধি। ফলে সুন্দরবন এলাকার দস্যু, চোরা শিকারি, গাছ পাচারকারী ও অবৈধ জেলে-বাওয়ালীদের তৎপরতা কমে আসবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বনবিভাগের কোনো কর্মকর্তা এধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকজন বনকর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

পাইকগাছায় চলাচল অনুপযোগী সড়ক ২ দিনের মধ্যে সংস্কারের নির্দেশ

চলাচল অনুপযোগী পাইকগাছা-খুলনা রুটের প্রধান সড়ক পরিদর্শন শেষে সড়ক ও জনপদ বিভাগকে ২ দিনের মধ্যে সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় এমপি এ্যাড. সোহরাব আলী সানা।

উল্লেখ্য, পাইকগাছা ও কয়রা থেকে জেলা সদর ও রাজধানীতে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সড়ক ও জনপদ বিভাগের জনগুরুত্বপূর্ণ পাইকগাছা থেকে কাশিমনগর প্রায় ১৭ কিলোমিটার সড়ক চলতি বর্ষা মৌসুমে বড় বড় খানা খন্দে পরিনত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

শুক্রবার স্থানীয় এমপি ঢাকা থেকে নিজ এলাকায় আসার সময় সড়কের বেহাল অবস্থা দেখে নিজেই হতভম্ব হয়ে পড়েন। এরপর শনিবার সকালে সড়কটি পরিদর্শন করে উপস্থিত সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাককে ২ দিনের মধ্যে সংস্কার কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন।