অত্যাচার ও হয়রাণীমূলক মামলায় অর্ধশত হিন্দু পরিবারের দেশ ছাড়ার উপক্রম
পাইকগাছায় প্রভাবশালী এক ঘের মালিকের অত্যাচার, নির্যাতন ও হয়রাণীমুলক
মামলায় দেশ ছাড়ার উপক্রম হয়েছে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার প্রায় অর্ধশত
পরিবার। এসব নির্যাতন ও হয়রাণীমুলক মামলা থেকে পরিত্রাণ পেতে এলাকাবাসীর
পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ঘের মালিক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
বর্তমানে এলাকাবাসীর ভোগ দখলে থাকা শতাধিক বিঘার চিংড়ী ঘেরটি জবর দখল
করতে বিভিন্ন পায়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের
উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
জানা
গেছে, উপজেলার উত্তর সলুয়া গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বার সরদারের পুত্র
প্রভাবশালী ঘের মালিক এস,এম, রফিকুল ইসলাম লতা ইউনিয়নের পানা মৌজায় ১৯৯১
সাল থেকে দুটি খন্ডে ৯৫০ বিঘা জমির উপর মৎস্য লীজ ঘের করে আসছে। ২০ বছরেরও
অধিক সময় ধরে ঘের মালিক রফিকুল ইসলাম নামমাত্র হারির টাকা দিয়ে উক্ত
ঘেরটি পরিচালনা করে আসছিল বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
পানা গ্রামের
মৃত হরিশ্চন্দ্র হালদারের পুত্র বিকাশ চন্দ্র হালদার জানান, যখন বিঘাপ্রতি ৫
হাজার টাকা হারী ছিল, তখন সাড়ে ৩ হাজার এবং যখন ৬ হাজার ছিল তখন ৪ হাজার ও
যখন ৮ হাজার টাকা ছিল তখন ঘের মালিক রফিকুল ইসলাম ৫ হাজার টাকা করে একাধিক
কিস্তিতে হারির টাকা পরিশোধ করেছে। যা এলাকাবাসীর কোন উপকারে আসে নাই।
২০১৩ সালে উক্ত ঘেরের মেয়াদ শেষান্তে ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারী হতে উক্ত
ঘেরের ৪৫০ বিঘার অংশের মধ্য থেকে ১শ বিঘা জমির দখল বুঝে নিয়ে এলাকাবাসীর
পক্ষ থেকে মধুসুদন মন্ডল, ঠাকুর দাস, অজিত, জনেক, বিকাশ, বিধান, অনন্ত ও
পঞ্চরাম হালদারসহ সংখ্যালঘু এলাকাবাসী সমবায় ভিত্তিক লীজ ঘের শুরু করলে
এতে ক্ষীপ্ত হয়ে ঘের মালিক রফিকুল ইসলাম পাশ্ববর্তী এলাকার সন্ত্রাসী ও
লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন সময়ে হামলা, অত্যাচার ও নির্যাতন করে আসছে।
ইতোমধ্যে কয়েকমাসের ব্যবধানে ঘের মালিক এলাকার প্রায় অর্ধশত হিন্দু
পরিবারের বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে ১৬টি হয়রাণীমূলক মামলা করেছে। বর্তমানে
এলাকাবাসীর ভোগদখলে থাকা চিংড়ী ঘেরটি জবর দখল করতে পারে এমন আশংকায়
এলাকাবাসীর পক্ষে গত ২৩ আগষ্ট পাইকগাছা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন এবং
২৫ আগষ্ট খুলনায় মানববন্ধন ও একই দিন জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি
প্রদান করা হয়।
এলাকাবাসীর এসব কর্মসূচীকে ব্যাহত করতে ঘের মালিক
এলাকার কতিপয় লোকজনকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘শাক দিয়ে মাছ
ঢাকার চেষ্ঠা’ করছেন বলে নির্যাতিত এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এ
ব্যাপারে এলাকাবাসীরা জানান, নিজেদের জমিতে নিজেরাই লীজ ঘের করতে গিয়ে ঘের
মালিক রফিকুল ইসলামের নির্যাতন ও হয়রাণীমূলক মামলায় এলাকায় বসবাস করা
দায় হয়ে পড়েছে। প্রশাসন ও ঘের মালিকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ায় আমাদের
এখন দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট
প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।