এক সময় নদীতে ছিল স্রোতের তীব্রতা। এ নদী দিয়ে চলাচল করতো নৌকা ও লঞ্চসহ
বিভিন্ন জলযান। আসতো পাখির ঝাঁক। তবে বর্তমানে নদীটি ভরাট হয়ে সরু খালে
পরিনত হয়েছে। নদীটির নাম ‘শালতা’। সাতক্ষীরার তালা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও
পাইকগাছা সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া শালতা নদী আজ তার স্রোতধারা ধরে রাখতে
পারেনি। অস্তিত্ব সংকটে পড়ে কোন রকম বেঁচে আছে নদীটি ।
এদিকে
পার্শবর্ত্তী কপোতাক্ষ নদ পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। বর্ষামৌসুমে কপোতাক্ষ
সংলগ্ন এলাকা প্লাবিত হলে পানি নিস্কাশন হয় শালতা নদী দিয়ে। শালতা নদীর
দু’কুলে কয়েক লাখ মানুষের বসবাস। এ নদীটি ভরাট হয়ে গেলে এলাকার মানুষের
দুঃখের শেষ থাকবে না।
সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য
এ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ জানান, শালতা নদী খনন নিয়ে সংসদের বাজেট
অধিবেশনে তিনি এ নদী খননের দাবী করেছেন। শালতা নদী না বাঁচলে কয়েক লাখ
মানুষ স্থায়ী জলাবদ্ধতার কবলে পড়েবে। এজন্য শালতা নদী খনন খুব জরুরী।
এ শালতা নদী অতীতে ছিল, বর্তমানেও আছে। এ নদী দক্ষিণাঞ্চলের একটি প্রাণ।
শালতা দিয়ে চলাচল করতো বিভিন্ন ধরনের জলযান। যে কারণে এলাকার ব্যবসায়ীরা
শালতাকে অনেক সময় ব্যবসায়ীক পথ হিসাবে ব্যবহার করতেন। জলপথে পণ্য আনা
নেওযার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেকাংশে সাশ্রয় হতো ব্যবসায়ীদের।
কিন্তু কালের বিবর্তনে শালতা নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। এ নাব্যতা হারানোর ফলে এলাকার জনগণের জীবনে নেমে এসেছে এক দূর্বিসহ জীবন। শালতা নদী ও পার্শ্ববর্ত্তী কপোতাক্ষ নদের নাব্যতা হারানো ফলে সবচেয়ে
ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ। সেই জেলে সম্প্রদায়ের কাছে গেলে
বোঝা যাবে কত কষ্টের মধ্যে দিয়ে তাদের জীবন চলছে। কিন্তু তাদের কষ্টের খবর
কেউ রাখে না।
বিগত আ’লীগ সরকারের (১৯৯৬) সময়ে বে-সরকারী সংস্থা
উত্তরণ-এর অর্থায়নে ঝুড়ি কোঁদালে খনন করা হয় এ নদীটি। যে কারণে এখনও
পর্যন্ত ৫ (চওড়া) ফুঁট মতো বেঁচে আছে শালতা নদী। তবে কয়েকবার
সরকারের পক্ষ থেকে শালতা নদী খননের বিষয়টি বলা হলেও তা কোন কাজে আসেনি।
নদীটি পরিদর্শন করতে এসেছে মন্ত্রি পরিষদের লোকজনও। তারা আসা যাওয়ার মধ্যেই
সীমাবদ্ধ রাখেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
নদী তীরের খলিলনগর
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা প্রনব ঘোষ বাবলু জানান, বর্ষা মৌসুম
এলে যারা একটু নিশ্চিন্তে ঘরে ঘুমাতে পারে না, তাদের অবস্থা কি? শালতা
নদীতে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন আর জোয়ার ভাটাও হয়না। ফলে প্রাকৃতিক
দূর্যোাগ বন্যার কারণে প্রতি বছর প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। এতে
চাষীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, তেমনি কৃষি পণ্য উৎপাদন না হওয়ায় বিপাকে
পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
জেয়ালানলতা গ্রামের জেলে সম্প্রদয়ের বাসিন্দা
আনসার নিকারী জানান, তাদের হাতে কোন কাজ নেই। বেকার হয়ে আছেন। একসময় এ
নদীতে মাছ ধরেই তার মতো অনেকের সংসার চলতো। সবমিলিয়ে নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ায়
তাদের এখন অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাঁটাতে হচ্ছে।
তালা উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান জানান, শালতা নদীর বিষয়টি নিয়ে তিনি
উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষেরর সঙ্গে আলাপ করবেন। কারন নদীটি আমার সীমানা এলাকায়।
সবার সঙ্গে আলাপ করে খননের ব্যবস্থা করতে হবে বলে তিনি জানান।
পানি
উন্নয়ন বোর্ডের পাইকগাছা উপজেলা কর্মকর্তা মো. শহিদুল্লাহ মজুমদার জানান,
নদী টি পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। উর্দ্ধতন মহলের কাছে1 কালের বিবর্তনে হারিয়ে
যাচ্ছে শালতা নদী বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোন বরাদ্ধ
আসেনি।
তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার জানান, নদীটি খননের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। যে কোন মূল্যে শালতা খনন করতে হবে।