Thursday, October 27, 2016

পাইকগাছায় ৩টি জন্মান্ধ সন্তান নিয়ে আবুল পরিবারের মানবেতর জীবনযাপন

পাইকগাছায় একটি নয়, দুটি নয়, তিন তিনটি জন্ম অন্ধ সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে আবুল হোসেন বিশ্বাসের পরিবার। সন্তানদের চিকিৎসার পিছনে প্রায় সব কিছু হারিয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারটি আজ অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছে। সরকারি কিছু ভাতার টাকা ও অন্ধ সন্তানরা বাসযাত্রীদের নিকট থেকে প্রতিদিন যা পায় তাতেই কোন রকমে খেয়ে পরে জীবন ধারণ করছে অসহায় পরিবারটি।

ডাক্তাররা বলে দিয়েছেন, কোন সন্তানের চোখ আর কোন দিন ভাল হবে না। তাই এখন আর চিকিৎসার জন্য নয়, একটু ভাল ভাবেই বেঁচে থাকার তাগিদেই সরকারসহ সমাজের স্বহৃদয়বান ব্যক্তিদের নিকট আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেছে পরিবারটি।

সূত্রমতে, পাইকগাছা উপজেলা গদাইপুর ইউনিয়নের তোঁকিয়া গ্রামের মৃত ফুল চাঁদ আলী বিশ্বাসের ছেলে আবুল হোসেন বিশ্বাস (৭০) ও স্ত্রী জামিলা বেগম ব্যক্তিগত জীবনে ৪ সন্তানের পিতা-মাতা। কিন্তু আবুল-জামিলা দম্পত্তি এতটাই হতভাগ্য যে ৪ সন্তানের মধ্যে ৩টি সন্তানই তাদের জন্মান্ধ। বড় মেয়ে শিউলি খাতুন (৪০) একমাত্রই সুস্থ্য এবং স্বাভাবিক। ছেলে জাকির হোসেন (৩৮), ফারুক হোসেন (৩৬) ও ছোট মেয়ে শেফালি খাতুন (২৫) জন্ম থেকেই অন্ধ। ছোট মেয়ে শেফালি শুধু জন্ম অন্ধই নয় মানসিক ভারসাম্যহীনও।

আবুল হোসেনের দাদা খাতের আলী বিশ্বাস হাজার বিঘা সম্পতির মালিক ছিল। তবে পৈত্রিক সূত্রে ১৫ বিঘা জমির মালিক হন আবুল। ১৫ বিঘা জমির মধ্যে ইতোমধ্যে সন্তানদের চিকিৎসার পিছনে ১২ বিঘা জমি বিক্রি করে দিয়েছেন আবুল।

হতভাগ্য পিতা আবুল জানান, সন্তানদের জন্মের পরপরই বিল্ডিং বাড়ির একটি অংশ বিক্রি করে চিকিৎসা শুরু করি। দেশের অনেক নামীদামি বিদেশী চক্ষু বিশেষজ্ঞদের দেখিয়েছি। কিন্তু প্রত্যেকটি ডাক্তার বলেছেন ওদের চোখ আর কখনো ভাল হবে না।

অন্ধ সন্তানদের হতভাগী মা জামিলা বেগম জানান, সন্তানদের জন্য আমি নিজের চোখ দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু ডাক্তাররা বলেছেন অন্যের চোখ দিলেও তাদের চোখ আর ভাল হওয়ার নয়। চিকিৎসার পিছনে সর্বস্ব হারিয়ে বর্তমানে ৩ অন্ধ সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে আবুল হোসেনের পরিবার।

অন্ধ জাকির ও ফারুক গদাইপুর মোড়ে পাইকগাছা-খুলনাগামী বাসের যাত্রীদের নিকট থেকে প্রতিদিন প্রত্যেকে সংগ্রহ করে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। আর সরকারের সমাজসেবা দপ্তর থেকে প্রতিমাসে প্রত্যেকে পায় ৫০০ টাকা করে ভাতা। এতেই কোন রকমেই চলছে অন্ধ পরিবারের জীবন-জীবিকা।

অন্ধ হলেও জাকির ও ফারুকের অনুভূতির শক্তি অনেক বেশি। মানুষের কণ্ঠ শুনেই বলে দিতে পারে লোকটি কে বা কি তার নাম। এমনকি যে কোন পরিমানের টাকার নোটের ঘ্রাণ দিয়েই বলতে পারে সেটা কত টাকার নোট।

অন্ধ ৩ ভাই বোনের মধ্যে প্রায় ৮ বছর আগে বিয়ে করেন ফারুক হোসেন। বর্তমানে ২টি সন্তান নিয়ে পৃথক রয়েছে ফারুক দম্পত্তি। ফারুকের স্ত্রী সুমি বেগম জানান, জেনে শুনেই বিয়ে করেছি, অন্ধ স্বামীর প্রতি আমার কোন ক্ষোভ কিংবা দুঃখ নেই। এক সময় রোজগারের জন্য আমি স্বামীর সাথে যেতাম। কিন্তু আরআরএফ নামে একটি সংস্থা একটি গাভী সহায়তা প্রদান করায় এখন আর আমি বাইরে যায় না। বাড়িতেই গাভীটার পরিচর্যা করি।

সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসের দৃষ্টি আকর্ষন করে অসহায় পরিবারটি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, সমাজসেবা দপ্তর থেকে সামান্য কিছু ভাতা দেয়া হয় বলে সরকারের সকল সহায়তা থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত রাখা হয়। ভিজিডি, ভিজিএফ এমনকি সদ্যগৃহিত সরকারের ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির সহায়তা থেকেও আমাদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

৩টি সন্তানের চোখ হয়তো আর কোন দিন ভাল হবে না কিন্তু একটু ভাল ভাবে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার তাগিদেই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সমাজের বিত্তবানদের নিকট সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছে অসহায় পরিবারটি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ-উল-মোস্তাক জানান, উপজেলায় এ ধরণের একটি পরিবার রয়েছে এটা আমার জানা ছিল না। পরিবারের ৩টি সন্তানের জন্মান্ধর কথা জেনে আমি নিজেই মর্মাহত হয়েছি। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রতিবন্ধী ভাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, সরকারের গৃহিত সকল সহায়তা কর্মসূচির আওতায় অসহায় পরিবারটিকে অর্ন্তভূক্ত করা হবে। পাশাপাশি পরিবারটিকে যাতে বিশেষ সহায়তা করা যায় এ ব্যাপারেও উদ্যোগ নেয়া হবে বলে এ কর্মকর্তা জানান।