পাইকগাছায় আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ঘিরে দলেরই সংসদ সদস্য শেখ মো. নুরুল হকের ছেলে মনিরুল ইসলামের তোলা সেই দেয়াল ভেঙে ফেলেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। রোববার পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফকরুল হাসানের উপস্থিতিতে এ দেয়াল অপসারণ করা হয়। এসময় স্থানীয় বিপুল সংখ্যক মানুষের ভিড় ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি দাঙ্গা পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছিল।
পাইকগাছার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফকরুল হাসান জানান, তারা এসে আবদুল আজিজের দলিলপত্র দেখেছেন এবং বিরোধীপক্ষের বক্তব্যও শুনেছেন। এরপর দেয়াল ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল আজিজের বাড়ির চারপাশে উঁচু দেয়াল তৈরি করে বাড়িটিতে যাওয়া-আসার রাস্তা বন্ধ করে দেন এমপিপুত্র মনিরুল। ফলে মই দিয়ে দেওয়াল টপকে কিংবা দেওয়ালের নিচ দিয়ে করা সুরঙ্গ দিয়ে আসা-যাওয়া করতেন ওই বাড়ির বাসিন্দারা। এর ফলে এক প্রকার বন্দিদশায় জীবন কাটাচ্ছিলেন আবদুল আজিজসহ তার পরিবারের সাত সদস্য।
খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অবরুদ্ধ দেয়াল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও বিষয়টি নজরদারি করা হয়, যে কারণে রোববার দেয়াল ভেঙে দেওয়া হয়।
পাইকগাছা থানার ওসি মারুফ আহমেদ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এমপিপুত্রের তোলা দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ভুক্তভোগী আজিজ গোলদারের শ্রমিকরা দেয়াল ভেঙে বাড়িতে প্রবেশে পথ বের করেছেন। অবৈধভাবে দেয়া পুরো দেয়াল ভেঙে ফেলার কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
পাইকগাছা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আজিজ গোলদার বলেন, এখানে তার জমির পরিমাণ ২০ দশমিক ৭৫ শতক। প্রায় ৭০ বছর ধরে বাড়িটিতে তারা বসবাস করছেন। “কিন্তু গত জানুয়ারি মাসে সংসদ সদস্য শেখ মো. নুরুল হকের ছেলে শেখ মনিরুল ইসলাম জমির মালিকানা দাবি করে জমি ছেড়ে দিতে বলেন।” তিনি বলেন, বিভিন্ন মিডিয়ায় অবরুদ্ধ থাকার খবর প্রকাশের পর রোববার দেয়াল ভেঙে দেওয়ায় তিনি স্বস্তি পেয়েছেন। এর কারণে গণমাধ্যম ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান আজিজ গোলদার।
জমির প্রকৃত মালিক ঠাকুর দাশ হালদার জানান, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তাদের দখলে ছিল। ১৯৯৬ সালের দিকে জমিটি খাস তালিকাভূক্ত হয়ে খাস খতিয়ানে যায়। এ অবস্থায় গত বছরের শুরুতে জমিটি উদ্ধার করার জন্য স্থানীয় এমপির সহযোগিতা কামনা করা হয়েছিল। সে সময় জমিটি মুক্ত করার সুবিধার্থে এমপিপুত্র শেখ মনিরুল ইসলামের নামে বিনা অর্থে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়া হয়েছিল।
সংসদ সদস্য শেখ মো. নুরুল হক জানান, প্রাচীর ভেঙে পথ বের করার বিষয়টি শুনেছি। সেখানে বিকল্প একটি পথ থাকলেও জনস্বার্থে আরও ২টি জায়গা থেকে পথ বের করলেও আমার কিছু বলার নেই।
আরও পড়ুন :: 'উঁচু দেওয়াল তুলে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন এমপি'