পাইকগাছায় বানিজ্যিক ভিত্তিতে চুইঝাল চাষ করে সফলতা লাভ করেছেন এলাকার
চাষী আব্দুর সবুর মোড়ল। লবণাক্ত উপকূল এলাকা পাইকগাছার গোপালপুরে এই প্রথম
বানিজ্যিক ভিত্তিতে চুইঝাল চাষ করে সফল হয়েছেন।

এই চুইঝাল তরকারিতে মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়। মাংস রান্নায় এই চুইঝালের
ব্যাপক চাহিদা। চুইঝাল মাংসে না দিলে রান্না যেন সম্পন্ন হয় না। চুইতে
হালকা ঝাল এবং খুব সুস্বাদু। ডাল ছাড়া যে কোন তরকারিতে ব্যবহার করা যায়।
তরকারি হিসেবে চুই এর ডাটা রান্না করে খাওয়া যায়। কাচা ঝাল ও গোল মরিচের
বিকল্প হিসেবে চুইঝাল রান্নায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
খুলনা, যশোর,
বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলায় চুইঝাল ব্যাপক জনপ্রিয়। চুই লতা
জাতীয় গাছ। এ এলাকার প্রতিটি গ্রামে কোননা কোন বাড়িতে চুইঝাল গাছ রয়েছে। এ
চুইঝাল গাছ আম গাছ, সুপারী গাছসহ বিভিন্ন গাছের গোড়ায় রোপন করে দেওয়ার পর
লতার মত গাছে উঠে যায়। গাছ রোপন করার পর ৪/৫ বছর পরে এক একটি চুই গাছ ২/৩
হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
এলাকার সফল চাষী আব্দুস সবুর মোড়ল
পরীক্ষামূলক ১৩ সালের নভেম্বরে ৬৪টি চারা নিয়ে বানিজ্যিক ভিত্তিতে চুই চাষ
শুরু করেন। তিনি চারা কাটিং করে ৬৪টি চারা করে বেড করে আবাদ শুরু করেন। ৩/৪
কাঠা জমিতে ১ মিটার দুরে দুরে চারা রোপন করেন। প্রতিটি বেডের উপরে তিনি
পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করেছেন যাতে অতিরিক্ত রৌদ্র তাপে চারা মরে
না যায়। ৬ মাস পরে এ লাগানো চারা থেকে ডাল কেটে তিনি চারা তৈরি শুরু করেন।
এভাবে তিনি প্রায় ৫ হাজার চারা ক্ষেতে রোপন করেছেন। তিনি কাটিং
পদ্ধতিতে টপে লাগানো এক একটি চারা ১৫০/২০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তাছাড়া
কাটিং করা চারা ৪০/৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি এ পর্যন্ত চুই গাছের
চারা ও ডাটা বিক্রি করে প্রায় ১০/১২ হাজার টাকা আয় করেছেন। বাজারে চুই এর
মোথা ৮০০ থেকে ১ হাজার ও ডাটা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চুই গাছের প্রতিটি গিট থেকে চারা উৎপাদন করা যায়। উঁচু জমিতে চাষ করলে চুই
এর আবাদ ভাল হয়। গোবর সার এর জন্য উপযুক্ত। অতিবৃষ্টি হলে চুই গাছের গোড়ায়
পানি জমে গেলে গাছের গোড়া পচে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। সে জন্য গাছের গোড়ায়
যাতে পানি না জমে সে জন্য সব সময় খেয়াল রাখতে হবে।
এ ব্যাপারে
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, চুইঝাল পাইকগাছায়
ব্যাপক জনপ্রিয় ও এলাকায় চাহিদা খুব বেশি। এলাকায় কিছু কিছু বাড়িতে গাছে
চুইঝাল চাষ করা হয়। এবার কৃষি অধিদপ্তর থেকে চুই ঝালের চাষ সম্প্রসারণ করার
জন্য উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাতে ১১’শ চুইঝালের চারা বিতরণ করা হবে।
চুইঝাল রান্নায় মসলা হিসাবে ব্যবহারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এলাকায় চাহিদা
মিটিয়ে চুইঝাল দেশে বিভিন্ন এলাকায় রপ্তানী করাও সম্ভব।
সে জন্য
উপজেলার বিভিন্ন ব্লকে কৃষকদের নিয়ে চুইঝাল চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
পাইকগাছায় চুইঝাল আবাদে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকায় চাহিদা মিটিয়ে
ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানী করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ
ব্যক্ত করেছেন।