Wednesday, November 30, 2016

পাইকগাছায় এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা; পিতা-পুত্রসহ আটক ৩

পাইকগাছায় পুর্ব শত্রুতার জের ধরে পুষ্পেন্দু বিকাশ মন্ডল নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পিতা-পুত্রসহ ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পাতড়াবুনিয়া এলাকায় হত্যার এ ঘটনা ঘটে। লাশ ময়না তদন্ত শেষে বুধবার বিকালে গ্রামের বাড়িতে মৃতদেহের সৎকার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। 

মৃত পুষ্পেন্দু বিকাশ মন্ডল
থানা পুলিশ ও নিহতের পরিবার সুত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জেলার পাইকগাছা উপজেলার গড়ইখালি ইউপির বগুড়ার চক গ্রামের মৃত মৃনাল কান্তি মন্ডলের ছেলে পুষ্পেন্দু বিকাশ মন্ডল (৪০) সুড়িখালী বাজার থেকে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার সময় পথিমধ্যে পাতড়াবুনিয়া এলাকায় জনৈক রজব আলীর বাড়ির সন্নিকটে পৌছালে পুর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা দুর্বৃত্তরা পুষ্পেনকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন পুষ্পেন্দুকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

এদিকে ওই রাতেই ওসি মোঃ মারুফ আহম্মদ অভিযান চালিয়ে ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে এবং ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক কয়রার চান্নিরচক গ্রামের শাহাজান গাজীর ছেলে শামীম গাজী (৩২) আটক করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বগুলারচক গ্রামের মৃত বল্বব চন্দ্র মন্ডলের ছেলে বিধান চন্দ্র মন্ডল (৬০) ও তার ছেলে বিশ্বজিত মন্ডল (২৮) কে আটক করা হয়।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী অনুভা রানী মন্ডল বাদী হয়ে আটক শামীম সহ ২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আসামী করে থানায় হত্যা মামলা করেছে। যার নং- ২১, তাং- ৩০/১১/১৬ইং।

এ ব্যাপারে ওসি মারুফ আহম্মেদ জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে জায়গা-জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে কিংবা পরকীয়া প্রেমের কারনে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে সঠিক তদন্ত না করে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।

Tuesday, November 29, 2016

পাইকগাছা কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন সম্পন্ন

ঐতিহ্যবাহি পাইকগাছা কলেজের পরিচালনা পর্ষদের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী কোন প্রার্থী না থাকায় ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিনয় কুমার মন্ডল, ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক মাসুদুর রহমান মন্টু ও প্রভাষক লিলিমা খাতুন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিহির বরণ মন্ডল জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মনোনিত হবেন। যার মধ্যে ২ জন পুরুষ শিক্ষক এবং একজন মহিলা শিক্ষক।

Monday, November 28, 2016

পাইকগাছার কৃতি সন্তান উপসচিব ড. শেখ মনিরুজ্জামান

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কৃতি সন্তান সিনিয়র সহকারী সচিব ড. শেখ মনিরুজ্জামান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেছেন। তিনি বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আছেন।
 
ইতিপূর্বে তিনি বিশ্বখ্যাত ‘লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স’ থেকে অর্থনীতি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। এরপর ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া নিউইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত জাতিসংঘের সদর দপ্তরে মহাসচিবের ক্লাইমেট চেন্জ সাপোর্ট টিমের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।
 
উল্লেখ্য, ড. শেখ মনিরুজ্জামান পাইকগাছা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মরহুম শেখ ছানারউদ্দীন স্যারের জেষ্ঠ্য পুত্র।
 
'ভয়েস অফ পাইকগাছা'র পক্ষ থেকে এই কৃতি সন্তানকে অভিনন্দন !

Saturday, November 26, 2016

আদৌ কি সুন্দরবন জেলা বাস্তবায়ন হবে?

প্রতিশ্রুতির ৩৪ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি প্রস্তাবিত সুন্দরবন জেলা


প্রতিশ্রুতির ৩৪ বছরেও বাস্তবায়ন হলো না সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপত আব্দুস ছাত্তারের ঘোষণার সুন্দরবন জেলা। একে একে পার হতে যাচ্ছে প্রতিশ্রুতির ৩৪ বছর। আজও বাস্তবায়ন হয়নি প্রস্তাবিত সুন্দরবন জেলা। অবহেলিত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সুন্দরবন জেলা দাবী নিষ্ফল ক্রোন্দনে পরিণত হতে চলেছে। প্রত্যেক জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা এ ব্যাপারে জনগণকে বারবার মিথ্যা আশ্বাস দিলেও পরে বেমালুম ভুলে যান। এবারও তার ব্যাতিক্রম হচ্ছে না। সর্বমহলের একটাই প্রশ্ন আদৌও কি সুন্দরবন জেলা বাস্তবায়ন হবে? না কি সহজ সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে ভোট ব্যাংক মজবুত করা কৌশল মাত্র।

খুলনা জেলা শহর থেকে ১০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে সুন্দরবন কোল ঘেসে পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা অবস্থিত। ১৯৮২ সালে কয়রা থানার জায়গীর মহলে এক বিশাল জনসভায় সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সাবেক প্রধান বিচারপতি আব্দুস ছাত্তার জনগণের দাবিরমুখে দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি থানা ও পার্শ্ববর্তী থানার কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে সুন্দরবন জেলা ঘোষণা দেন। যা আজও প্রস্তাবিত হয়ে আছে। এর মধ্যে রয়েছে পাইকগাছা, কয়রা, দাকোপ থানা এবং আশাশুনি ও তালা থানার কয়েকটি ইউনিয়ন। ততকালিন সময় দক্ষিণ অঞ্চলের সর্ব সাধারণ জেলা বাস্তবায়নের ব্যাপারে ব্যাপক আশাবাদী হয়েছিল। দীর্ঘ ৩৪ বছর যাবত সকলই আশাহত হয়ে আছে। তবে প্রতিটা জাতীয় নির্বাচনের সময় বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বা জোটের প্রার্থীদের সুন্দরবন জেলা বাস্তবায়ন করা হবে এমন প্রতিশ্রুতির অন্ত থাকে না।

অপার সম্ভবনাময় সুন্দরবন কোল ঘেষা এ অঞ্চল। উপজেলাবাসীর সুন্দরবন জেলার দাবী কেনো সঠিক এ ব্যপারে যৌতিকতা দেখিয়ে সুন্দরবন জেলা বাস্তবায়ন কমিটির ও অন্যান্য সামাজিক কমিটি আন্দোলন করে যাচ্ছে। যার মধ্য পাইকগাছা কয়রায় পৃথক আদালত রয়েছে, ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের বিশাল অংশ এ এলাকায় অবস্থিত, হিমায়িত চিংড়িজাত দ্রব্য রপ্তানি করে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব উপার্জন করছে সরকার, পাইকগাছা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম লোনা পানি কেন্দ্র বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, লোনা সহিষ্ণু বীজ উৎপাদন খামার এবং “ক” শ্রেণীর
পাইকগাছা পৌরসভা ও দাকোপ পৌরসভা।

এখানে আরও রয়েছে দেশের ১৮টি বৃহত্তম পাইকারী বাজারের মধ্যে একটি বাণিজ্যিক শহর কপিলমুনি। কয়রায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের সুযোগ। নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে ১৫/২০ লক্ষ মানুষের বসবাস। যোগাযোগ ব্যবস্তার মধ্যে নৌপথ, সড়ক পথ অন্যতম।

জেলার দাবীতে ৮০’র দশক থেকে সর্ব দক্ষিণে গঠিত হয় সুন্দরবন জেলা বাস্তবায়ন কমিটি ও সুন্দরবন জেলা বাস্তবায়ন ছাত্র সংগ্রাম কমিটি। সুন্দরবনজেলা বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। উন্নয়নের পথ প্রদশক ও আধুনিক দেশ গঠনে অগ্রদ্রুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি মেয়াদে সুন্দরবন জেলা ঘোষণা করবেন এমনটি প্রত্যাশা সুধিজনের।

Tuesday, November 22, 2016

পাইকগাছা কে.জি স্কুল এলাকায় বখাটেদের দৌরাত্ম্য; মেয়রের কাছে লিখিত অভিযোগ

পাইকগাছা পৌরসভা পরিচালিত আদর্শ শিশু বিদ্যালয়ের (কিন্ডার গার্টেন) আশপাশ এলাকায় বখাটেদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিএম হুমায়ুন কবির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীরের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, পাইকগাছা পৌর সদরের প্রাণ কেন্দ্রেই রয়েছে আদর্শ শিশু বিদ্যালয়। আর বিদ্যালয়ের মাঠেই রয়েছে শিশু পার্ক। পার্কের পাশেই রয়েছে পাবলিক লাইব্রেরী। লাইব্রেরীর সামনে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। যার কারণে স্থানটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও সম্প্রতি বখাটে ছেলেরা উক্ত এলাকায় অবস্থান করে মাদকদ্রব্য সেবনসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবক মহল।

Saturday, November 19, 2016

তেলের ঘানি টেনেই সন্তানকে মেডিকেলে পড়াচ্ছেন পাইকগাছার নুরুল-পারুল দম্পতি

গরুর অভাবে তেলের ঘানি টানা সংসার আর ছেলের মেডিকেলের পড়াশুনার খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে পাইকগাছার নুরুল-পারুল দম্পতি। তবে অদম্য উৎসাহী এ দম্পতি অভাবের কাছে মাথা নোয়াতে নারাজ। নিজেদের ইচ্ছা শক্তিই যথেষ্ট সেটা প্রমাণ করেছেন পাইকগাছা উপজেলার সরল গ্রামের নূরুল-পারুল দম্পতি



গর্বিত এ দম্পতি এক ছেলে ও এক মেয়ের পিতা-মাতা। চরম দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেও নুরুল দম্পতি ঘানি (তেল) টেনে ছেলেকে পড়াচ্ছেন বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজে। আর মেয়েটি পড়ছে স্থানীয় উচ্চ মাধ্যমিকে। ছেলে ও মেয়ে উভয়ই ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভ করে। এরপর ছেলেটি ২০০৯ সালে গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১১ সালে পাইকগাছা কলেজ থেকে জিপিএ ৫ নিয়ে এইচএসসি পাস করে প্রথমে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিসারিজ বিভাগে ভর্তি হয়। এরপর খুলনার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুযোগ হওয়ায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যহতি নিয়ে গরীব ও মেধাবী কোটায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। বর্তমানে সে মেডিকেলের শেষ বর্ষের ছাত্র।

পাইকগাছা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সরল গ্রামের মৃত জাহান আলী গাজীর ছেলে গর্বিত পিতা নূরুল হক গাজী জানান, সহায়সম্বল বলতে মাত্র দুই শতক জমির উপর বসতবাড়ি ছাড়া আর কোন কিছু নেই। দিন মজুর ও ঘানি টেনে চালাতে হয় সংসার। এরপর রয়েছে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া। ঘানি টানা হচ্ছে পিতা-মাতার পেশা। তবে পিতা-মাতা যখন বেঁচে ছিল তারা গরু দিয়েই ঘানি টানতো। কিন্তু অভাব অনটনের কারণে আমার একটি গরু কেনারও সামর্থ নাই। তাই বাধ্য হয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনই গত ১৫ বছর যাবৎ ঘানি টানার কাজ করে আসছি। বাজার থেকে সরিষা কিনে এনে প্রতি ২/৩ দিন পরপর সরিষা মাড়াই করে তেল তৈরী করি। এ ছাড়া সময় পেলেই করা হয় দিন মজুরের কাজ। এভাবেই অভাব অনটনের মধ্যদিয়েই সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হয়। সংসার কোন রকমে চললেও ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক সময় ধার দেনা করে খরচ যোগাতে হয়।

এমন অভাব অনটনের মধ্যদিয়ে ছেলে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা প্রসঙ্গে নুরুল-পারুল দম্পতি জানান, ইচ্ছে ছিল ছেলে মেয়েকে মানুষের মত মানুষ করবো। শত অভাব অনটনের মাঝেও আল্লাহ সেই ইচ্ছা পুরণ করছে। প্রথম দিকে সংশয় প্রকাশ করলেও এখন মনে হয় সন্তানের লেখাপড়ার জন্য দারিদ্রতা কোন বাঁধা নয়। ইচ্ছা শক্তিটাই যথেষ্ট। জীবন সংগ্রাম অনেক কষ্টের হলেও ছেলে মেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে জেনে নিজেদেরকে গর্বিত পিতা-মাতা মনে হয়। সন্তানরা যখন লেখাপড়া শেষ করে দেশ জাতির ও সমাজের জন্য উপকারে আসবে তখন আমাদের সারা জীবনের ত্যাগ ও কষ্ট সার্থক হবে। আমরা চাই, দারিদ্রতার কারণে যেনো কোন পরিবারের মেধাবী সন্তানরা ঝরে না পড়ে। এ জন্য প্রত্যেক পিতা-মাতাকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে।

এদিকে হতদরিদ্র নুরুল পরিবারের পাশে এসে সমাজের স্বহৃদয়বান ব্যক্তিরা সহযোগিতার হাত বাড়াবেন এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

সাহায্য পাঠাবার ঠিকানা ::
পারুল, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, পাইকগাছা শাখা
সঞ্চয়ী হিসাব নং- ৯৪৬০

Sunday, November 13, 2016

প্রতি ৭ সেকেন্ডে একজন মানুষ মৃত্যুবরণ করছে ডায়াবেটিসে

আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস


দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রতি দুইজনের মধ্যে একজন জানেন না যে তিনি এ রোগে আক্রান্ত অথচ বিশ্বে প্রতি ৭ সেকেন্ডে একজন মানুষ ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুবরণ করছে এবং প্রতি ১২ জনে একজন ডায়বেটিসে আক্রান্ত। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন-আইডিএফ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫’র ডিসেম্বরে বাংলাদেশে মোট ৭১ লাখ শনাক্তকৃত ডায়াবেটিসের রোগী ছিল। এছাড়া আরো প্রায় ৭১ লাখ (মোট প্রায় ১ কোটি ৪২ লাখ) মানুষ ডায়াবেটিস নিয়ে বসবাস করছে। যাদেরকে এখনও শনাক্ত কার হয়নি। ওই সময় পৃথিবীতে মোট ৪১ কোটি ৫০ লখ শনাক্তকৃত ডায়াবেটিসের রোগী ছিল। তারা আরও আশঙ্কা করছে যে, ২০৪০ সালে পৃথিবীতে মোট ৬৪ কোটি ২০ লক্ষ ডায়াবেটিসের রোগী থাকবে। 
 
২০১৫ সনে ডায়াবেটিসের রোগীর মোট সংখ্যা অনুসারে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ দশম অবস্থানে ছিল। কিন্তু ২০৪০ সনে গিয়ে মোট রোগীর সংখ্যা অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান হবে নবম। ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞরা জানান, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ঠ উদ্যোগী এবং বিভিন্নমাত্রায় সফল। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। অর্থাৎ বাংলাদেশের ডায়াবেটিস রোগীরা তুলানমূলক খারাপ অবস্থায় জীবন যাপন করছে।

এ যাবৎ কালে প্রকাশিত দু’টি গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের বিশ শতাংশের কম রোগী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সফল। এটিই বর্তমান বিশ্বের যে কোন দেশের ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাত্রার তূলনায় খারাপ অবস্থা। ডায়াবেটিসের দীর্ঘকালীন জটিলতাগুলোতেও বাংলাদেশী রোগীরা বেশি ভুগছে। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি হলো, এখানে অতি অল্প বয়সে মানুষ (ছেলে-মেয়েরা) টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী কিশোর-কিশোরী ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে। বাংলাদেশের আরও একটি বড় ঝুঁকি হলো- বিপুল সংখ্যক গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগী, পৃথিবীতে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হার বাংলাদেশে তুলনামূলক বেশি।

ডায়াবেটিসের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রতি বছর নভেম্বর মাসের ১৪ তারিখ সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস দিবস পালিত হয়ে থাকে। এ রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) দিবসটি উদযাপন করে থাকে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে-‘ডায়াবেটিসের উপর নজর রাখুন’।

এতে যে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হলো- ডায়াবেটিসের লক্ষণ নেই এমন প্রাপ্ত বয়স্ক লোককেও ডায়াবেটিস আছে কিনা তা পরীক্ষা করে জেনে নেওয়া। যাতে ডায়াবেটিসের জটিলতা দেখা দেবার আগে তাকে সঠিক চিকিৎসার আওতায় আনা যায়। একই সঙ্গে ডায়াবেটিসের লক্ষণ বিহীণ সকল মানুষকে সচেতন করা। এছাড়া যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদেরকে সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা, তাদের ইতোমধ্যেই ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিয়েছে কিনা তা দেখা, চিকিৎসা সংক্রান্ত পদক্ষেপ সঠিকভাবে নেওয়া হয়েছে কিনা, তা নজরে রাখা।

Tuesday, November 8, 2016

স্বপ্নের আরও কাছে আবুল বাজনদার

দুই হাতে গাছের শাখা-প্রশাখার মতো আঁচিলের ভার থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে আর মাস খানেকের অপেক্ষা। ছোট কয়েকটি অস্ত্রোপচারের পরই স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন ছুঁতে পারবেন ‘বৃক্ষমানব’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া পাইকগাছার আবুল বাজনদার। ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন জানান, বাজনদারের দুই হাতে পাঁচ বার করে দশটি আর দুই পায়ে দুইবার করে চারটি অস্ত্রোপচার হয়েছে।
 
দুই হাতে গাছের শাখা-প্রশাখার মতো আঁচিল নিয়ে জানুয়ারিতে ভর্তি হয়েছিলেন আবুল বাজনদার । অস্ত্রোপচারের পর অগাস্টে আঁচিলমুক্ত।
চিকিৎসক সামন্ত লাল বলেন, “আবুল এখন ৯৫ শতাংশ সুস্থ আর দুই হাতে চারটি ও দুই পায়ে দুটি ছোট অপারেশন করলেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে বলে আশা করছি। এক মাসের মধ্যে আবুল ‍পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তারপর তাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেনেওয়ার চেষ্টা করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব সময় আবুলের খোঁজ রেখেছেন।”

বিরল ‘এপিডারমোডাইসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’ রোগে আক্রান্ত হয়ে ১০ কেজি ওজনের আঁচিল নিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে ভর্তি হন খুলনার ২৫ বছর বয়সী এই যুবক। এরপর থেকে সরকারি খরচে চলে তার চিকিৎসা। ১৪ বার অস্ত্রোপচারের পর এখন তার হাত-পায়ে আর কোনো আঁচিল নেই।

রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেলে কথা হয় আবুল বাজনদারের সঙ্গে। স্ত্রী হালিমা বেগম আর তিন বছর বয়সী মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস পাশেই ছিলেন এসময়। হাসিমুখে আবুল জানালেন, অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন বাড়ি ফেরার। শৈশবের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফেরার। হালিমা বলেন, “ওর জীবন এভাবে ফিরে পাব কোনোদিন ভাবতে পারিনি। সত্যি এতো ভালোলাগার কথা প্রকাশ করতে পারব না।”

ছোট বেলায় খালাতো ভাই সাদেক ও এরশাদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর স্মৃতিটাই বেশি টানে আবুলকে। “সুস্থ্ হয়ে বাড়ি ফিরে তাদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে ঘুরতে-ফিরতে পারব- এটা ভাবতেই কেমন জানি ভালো লাগছে।” নিজের দুই হাত দেখিয়ে বলেন, “আমি যখন এখানে এসেছিলাম তখন কেমন ছিলাম আর এখন দেখেন কত পরিবর্তন হয়েছে। মনে হয়ে দুই হাত, পায়ে কিছুই নাই।”
 
আবুল বাজনদারের সঙ্গে স্ত্রী হালিমা বেগম আর তিন বছর বয়সী মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস
প্রায় দশ মাস ধরে হাসপাতালে থাকায় চিকিৎসক, নার্স, দর্শনার্থী, সাংবাদিক- সবার পরিচিত এই দম্পতি। আর কিছুদিন পর হাসপাতাল ছেড়ে যেতে হবে, ভাবতেই কিছুটা যেন মন খারাপ হয় আবুলের। “প্রায় দশ মাস এই ঘরে আছি। এখানকার ডাক্তার, আপনারা সবাই আমাকে ভালোবাসা দিয়েছেন। অনেক দেখেছেন।ছেড়ে যেতে আমার কষ্ট হবে। কিন্তু সুস্থ্ হয়ে বাড়ি যাব; রাস্তায় স্বাভাবিক মানুষের মতো হাঁটতে পারব-সেই অপেক্ষা অনেক বড়।”

বলতে বলতে বাষ্পরুদ্ধ হয়ে আসে আবুলের কণ্ঠ- “এখানে শুধু আমি চিকিৎসাই পাইনি, পড়াশোনাও পেয়েছি।” একটি স্কুল ব্যাগ দেখিয়ে বললেন, “আমার মেয়ে জান্নাত অ, আ, ক, খ আর ছড়া, কবিতা বলতে পারে। এখানে বসে আমার স্ত্রী জান্নাতকে এগুলো শিখিয়েছে। বাড়িতে থাকলে কী এসব হতো?”

সরকারি খরচে চিকিৎসার সঙ্গে বাড়ি ও চাষাবাদের জমি কিনতে এক চিকিৎসকের কাছ থেকে টাকা পেয়েছেন আবুল।

কৈশোরে বাবার সঙ্গে ভ্যান চালিয়ে সংসারের ঘানি টানার মধ্যেই রোগের সঙ্গে লড়াইয়ের শুরু। এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে ব্যবসা করার পরিকল্পনার কথা আগেই জানিয়েছিলেন আবুল বাজনদার। রোববার আবারও মনে করিয়ে দিলেন সেই স্বপ্নের কথা।
 
--কামাল হোসেন তালুকদার

Friday, November 4, 2016

পাইকগাছায় দারিদ্র বিমোচনে ভূমিকা রাখছে ৩৭৩ সমবায় সমিতি

নারীর ক্ষমতায়ন, বেকারত্ব দূরীকরণ, স্বনির্ভরতা অর্জন ও আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে দেশের সমবায় সংগঠনগুলো। সমবায়ের তীর্থস্থান হিসাবে খ্যাত খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় রয়েছে একটি সমবায় ব্যাংকসহ ৩৭৩ টি সমবায় সমিতি। যার সমবায়ীর সংখ্যা ২০ হাজার ৬৮৫ জন। ইতোপূর্বে এ উপজেলা থেকে ২ ব্যক্তি ও ২টি প্রতিষ্ঠান জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছে। সংগঠনের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে এ অঞ্চলের অর্ধেক জনগোষ্ঠি। সমবায়ের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যাতে এ অঞ্চলে সমবায়ের কাছে দারিদ্রতা পরাজিত হবে বলে ধারনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেকেই মনে করেন সমবায় হতে পারে দারিদ্র বিমোচনের মূল চাবিকাঠি। 

৫ নভেম্বর সারাদেশে পালিত হচ্ছে ৪৫তম জাতীয় সমবায় দিবস। দিবসটি উপলক্ষ্যে পাইকগাছা উপজেলা সমবায় বিভাগ ও সমবায়ীবৃন্দ র‌্যালী, আলোচনা সভাসহ আয়োজন করেছেন নানা অনুষ্ঠানের।



১৯০৪ সালে কো-অপারেটিভ ব্যাংকের মাধ্যমে সুন্দরবন সংলগ্ন এ অঞ্চলে সর্বপ্রথম শুরু হয় সমবায় কার্যক্রম। এরপর ১৯০৯ সালে জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানি আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (পিসি রায়) তার জন্মস্থান উপজেলার রাড়ুলীতে প্রতিষ্ঠা করেন রাড়ুলী কো-অপারেটিভ ব্যাংক। এরপর ধীরে ধীরে এলাকার মানুষ ঝুঁকে পড়ে সমবায় আন্দোলনে।

বর্তমানে সমবায় কার্যক্রম এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, এমন কোন পাড়া মহল্লা নেই যেখানে সমবায় সংগঠন নেই। বর্তমানে উপজেলায় সমবায় সমিতির সংখ্যা ৩৭৩টি। এসব সমবায়ের শেয়ার ও সঞ্চয় আমানতের পরিমাণ ১০ কোটিরও বেশি। এলাকার মোট জনসংখ্যার অর্ধেক জনগোষ্ঠি সমবায়ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। যার মধ্যে ৪০ ভাগই হচ্ছে নারী।

সমবায়ের মাধ্যমে সঞ্চয় গচ্ছিত করে আর্তনির্ভরশীল হয়েছে হাজারো মানুষ। সমবায় থেকে ঋণ নিয়ে অনেকেই কিনছে ভ্যান, নসিমন, করিমন, মোটরসাইকেল, মাহেন্দ্রসহ বিভিন্ন যানবাহন। এতে করে অনেক বেকার যুবকের সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান। কৃষি, মৎস্য ও ব্যবসা বানিজ্যের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন অসংখ্য নারী-পুরুষ।

সমবায়ের নানামুখী এসব পদক্ষেপের কারনে প্রতিনিয়ত কমছে বেকারত্বের সংখ্যা। হ্রাস পেয়েছে সামাজিক অপরাধের প্রবনতা। নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তায় ইতিবাচক ভূমিকায় সমবায়ে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে ধনী, গরীব, মধ্যবিত্তসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।

আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সুবাদে ইতোপূর্বে এ উপজেলা থেকে দু’ব্যক্তি ও দু’টি প্রতিষ্ঠান জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে। সমবায়ী হিসাবে ২০০০ সালে ষোলআনা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি প্রয়াত মেয়র আলহাজ্ব মাহাবুবুর রহমান এবং ২০০৩ সালে ফসিয়ার রহমান কৃষি ও জনকল্যাণ সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব ফসিয়ার রহমান এবং প্রতিষ্ঠান হিসাবে ১৯৯৫ সালে ষোলআনা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি ও ২০১১ সালে ফসিয়ার রহমান কৃষি ও জনকল্যান সমবায় সমিতি এ পুরস্কার অর্জন করেন।

এ দু’টি সংগঠনের পাশাপাশি খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমাবায় সমিতি, জিরবুনিয়া সমবায় সমিতি, জোনাকি গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি ও সলুয়া পল্লী দুগ্ধ সমবায় সমিতিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন সুনাম অর্জন করেছে। ২০১৪ সালে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জাতীয় সমবায় মেলায় স্থান করে নেয় কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি।

সলুয়া পল্লী দুগ্ধ সমবায় সমিতির কথা না বললেই নয়, দু’বছর পূর্বে সমবায় বিভাগের প্রাক্তন সচিব মিহির কান্তি মজুমদারের প্রচেষ্ঠায় প্রতিষ্ঠা হয় এ সংগঠনটি। সংগঠনের ১২৫ দলিত সম্প্রদায়কে বিনাসুদে প্রদান করা হয় ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ঋন। ঋনের টাকায় সংগঠনের সদস্যরা শুরু করেন গাভী পালন। বর্তমানে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ১ হাজার লিটার দুধ। উৎপাদিত দুধ সরবরাহ করা হয় মিল্কভিটাসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে। এভাবেই এলাকার প্রতিটি পাড়া মহল্লায় গড়ে ওঠা সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সামাজিক নিরাপত্তায়।

উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মুকুন্দ বিশ্বাস জানান, এলাকার সমবায় সমিতিগুলো এতটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ যে, এখানে তেমন কোন ক্রেডিট নির্ভর এনজিও’র কার্যক্রম নাই। সমবায়ের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যাতে সমবায়ের কাছে দারিদ্রতা পরাজিত হবে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ-উল-মোস্তাক মন্তব্য করেন।

--মোঃ আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা।

Thursday, November 3, 2016

সু-সাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হকের ১৩৪তম জন্মজয়ন্তী

বিংশ শতাব্দীর সূচনা লগ্নে যেসকল বাঙ্গালী মুসলমান মননশীল গদ্য লেখক বিশিষ্টতা অর্জন করেন কাজী ইমদাদুল হক তাদের মধ্যে অন্যতম। শিক্ষা-দীক্ষায় অনগ্রসর তৎকালীন মুসলমান সমাজে তিনি এক ব্যাতিক্রমধর্মী প্রতিভার অধিকারী হয়ে সাহিত্য অঙ্গনে আবির্ভূত হন। স্বল্প সংখ্যক গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন লাভ করতে সক্ষম হন। তিনি ছিলেন এক ধারার কবি, প্রবন্ধকার, উপন্যাসিক, ছোট গল্পকার ও শিশু সাহিত্যিক। তাঁর অন্যতম রচনা থাকলেও একটি মাত্র অসমাপ্ত উপন্যাস “আব্দুল্লাহ” রচনা করে তিনি যে কৃতিত্বের নির্দেশনা রেখে গেছেন তাই তাঁকে বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয় করে রেখেছে। 

সু-সাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হক ১৮৮২ সালের ৪ নভেম্বর খুলনা জেলার পাইকগাছা থানার গদাইপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী ইমদাদুল হকের পিতামহ ছিলেন কাজী আজিজুল হক। পিতা কাজী আতাউল হক। তিনি ১৮৪৪ সালে গদাইপুরে জন্মগ্রহণ করেন।

মেলেক পুরাইকাটী গ্রামে তাঁর নিবাস ছিল। কাজী আতাউল হক প্রথমে আসামে জরীপ বিভাগে চাকরী করতেন। পরে তিনি মুক্তরী পাস করে খুলনা ফৌজদারী আদালতে আইনজীবী ছিলেন। কাজী ইমদাদুল হক ছিলেন পিতার একমাত্র সন্তান। কাজী আতাউল হক একমাত্র সন্তানের শিক্ষার বিষয় ছিলেন তৎপর। ইমদাদুল হকের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় গ্রামের স্কুল ও পারিবারিক পরিবেশে।

গ্রামে থাকাকালীন সময়কালীন সময় কাজী আতাউল হক বই পড়ার আগ্রহে কপোতাক্ষ নদের উপর রাড়ুলী গ্রামের রায় পরিবারের সঙ্গে পরিচিত হন এবং বিভিন্ন বই পড়ার সুযোগ লাভ করেন। ঐ পরিবারের সদস্য জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এ সময় তিনি পুত্রকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার মনোস্ত করেন। বন্ধুবর প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের উৎসাহ ও পরামর্শে কাজী ইমদাদুল হককে ১৮৯০ সালে খুলনা জিলা স্কুলে ৫ম শ্রেণীতে ভর্তি করেন। ১৮৯৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাস করেন। ১৮৯৮ সালে কলকাতা মাদ্রাসা থেকে এফএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন তিনি পদার্থ বিদ্যা ও রসায়ন শাস্ত্রে অনার্স নিয়ে ডিগ্রী ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু পরীক্ষার আগে অসুস্থতার কারণে অনার্স পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হয়নি। এরপর তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিষয়ে এম,এ ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু তিনি পরীক্ষার আগেই বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে নির্বাচিত হয়ে ১৯০৩ সালে কলকাতা মাদ্রাসার অস্থায়ী শিক্ষক পদে নির্বাচিত হন। এরপর পূর্ব বঙ্গ ও আসাম প্রদেশ গঠিত হওয়ায় ১৯০৬ সালে আসামে শিলংয়ে শিক্ষা বিভাগে ডিরেক্টরের অফিসে উচ্চমান সহকারী পদে চাকুরী গ্রহণ করেন।

আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে সুদুর প্রবাসে তিনি নিজেকে খাপখাওয়াতে না পেরে এবং স্বাস্থ্যহানীর কারণে দেশে ফিরে আসেন। এ সময় পূর্ব বঙ্গ ও আসাম প্রদেশের শিক্ষা বিভাগে ডিরেক্টর ছিলেন মিঃ সার্প। কাজী ইমদাদুল হক সার্প সাহেবের স্নেহ দৃষ্টি লাভ করেন এবং ১৯০৭ সালে ঢাকা মাদ্রাসার শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন। তখন তাঁর মাসিক বেতন ছিল ৫০ টাকা। পূর্ব বঙ্গ আসাম প্রদেশের শিক্ষা বিভাগে শিক্ষা ব্যবস্থার আমল সংস্কার সাধনে নতুন শিক্ষা প্রণালী প্রবর্তনে উদ্যোগী হন। শিক্ষার্থীদের কাছে ভূগোল শিক্ষা কিভাবে আকর্ষণীয় করা যায় সে বিষয়ে কাজী ইমদাদুল হকও বিশেষ চিন্তা ভাবনা করেন। তার ভূগোল শিক্ষার একটি আদর্শ শিক্ষা প্রণালী। শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক প্রশংসিত হয়। সেখানে ভূগোল বিষয়ে শিক্ষাদানে বিশেষ দক্ষতা দেখান এবং ভূগোল বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেন। কিছুকাল করে এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ১৯১১ সালে ঢাকা টিসার্স ট্রেনিং সেন্টারে ভূগোলের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। টিসার্স ট্রেণিং কলেজের অধ্যক্ষ মিঃ বিন-এর আগ্রহে বিটি পরীক্ষা অংশগ্রহণ করেন এবং ১ম শ্রেণীতে ১ম স্থান অধিকার করে বিটি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯১৪ সালে তিনি প্রাদেশিক এডুকেশন সার্ভিসে উন্নীত হয়ে ঢাকা বিভাগের মুসলিম শিক্ষার সহকারী স্কুল ইনসপেক্টরের পদে ময়মনসিংহে অবস্থিত প্রধান কার্যালয়ে নিযুক্ত হন। ১৯১৭ সালে কলকাতার টিসার্স ট্রেনিং স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি প্রথম কর্মদক্ষ পদে নিযুক্ত হন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন।

সাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হকের পূর্ব পুরুষ শেখ মোহাম্মদ দায়েসউল্লাহ স্ব-পরিবারে ইরাকের বাগদাদ থেকে দিল্লীলকে ষ্টোরিয়া এসে বসতি স্থাপন করেন। শেখ মোহাম্মদ দায়েস উল্লাহ সুলতানী আমলে প্রধান বিচারপ্রতি নিযুক্ত হন। বিচার কার্য্যে অসামান্য অবদান রাখার জন্য তৎকালীন সম্রাট তাঁকে কাজী উল-কুজ্জাতা উপাধিতে ভূষিত করেন। সে সময় ভারতে তুর্ক আফগান শাসনের দেশবাসীর জাতীয় সমর্থন ছিল না। সমগ্র দেশব্যাপী ছিল না কোন সার্বভৌম শক্তি। ক্ষমতা লাভের জন্য বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে কলহ বিবাদে জর্জরিত ছিল। এমন নাজুক অবস্থায় দেশব্যাপী শুরু হয় বিদ্রোহ। মোঘল আমলে বিদ্রোহের সময় ভারতের দিল্লী থেকে তিনটি পরিবার দক্ষিণ বাংলার খুলনা জেলার অন্তর্গত বর্তমান পাইকগাছায় চলে আসেন এবং জঙ্গল কেটে বসবাস শুরু করেন। পরিবার তিনটি হলো- দেওয়ান মানিক রায়ের পূর্ব পুরুষ শেখ মোহাম্মদ দায়েস উল্লাহর বংশধর মুফিজউল্লাহ এবং ঘোষ নবিস পরিবার এবং পূর্ব পুরুষ। জগৎ বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক স্যার আচার্য্য প্রফুল্ল রায়ের পূর্বপুরুষ দেওয়ান মানিক রায়।

কাজী ইমদাদুল হকের পূর্বপুরুষ মুফিজ উল্লাহ ও ঘোষ নবিসের পূর্ব পুরুষ শিক্ষা-দীক্ষা ও প্রকৃতশীল চিন্তা চেতনায় খ্যাত ছিলেন। তাদের সুচিন্তিত ভাব ধারায় দক্ষিণ বঙ্গে গড়ে ওঠে নতুন সভ্যতা। ঐ সভ্যতার উর্বর ভূমিতে বংশানুক্রমে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নাসির উল্লাহ। তাঁর দুই পুত্র কাজী হামিদউল্লাহ ও কাজী মহিবুল্লাহ। কাজী হামিদউল্লাহর তিনপুত্র কাজী সরুর আহমেদ, কাজী আজিজুল হক ও কাজী হামিদুল ইসলাম। কাজী মহিবুল্লাহর একপুত্র কাজী বাশারতউল্লাহ। কাজী সরুর আহমেদের পুত্র কাজী সৈয়েদুল ইসলাম। কাজী আজিজুল হকের পুত্র কাজী আতাউল হক। প্রকৃতশীল চিন্তা ও চেনতায় ধারক কাজী ইমদাদুল হক ১৯০৪ সালে এলাচীপুরের মৌলুভী আব্দুল মকসুদ সাহেবের জ্যৈষ্ঠ কন্যাকে বিয়ে করেন। কাজী ইমদাদুল হকের চারপুত্র ও দুইকন্যা। কাজী আনারুল হক, কাজী সামছুল হক, কাজী আতাউল হক, কাজী নুরুল হক এবং দুই কন্যা জেবুন্নেছা ও লতিফুন্নেছা। বিংশ শতাব্দীর সু-সাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হকের জন্ম ১৮৮২ সালে খুলনা জেলার পাইকগাছার গদাইপুর গ্রামে। পুত্র কাজী আনারুল হক (১৯০৯-২০০১) আমলা টেনকোক্র্যাট উপদেষ্টা মন্ত্রী ও লেখক। বিচারপতি সায়ে, জিয়াউর রহমান এবং বিচারপতি আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি থাকাকালে তিনি ছয় বছর কাল উপদেষ্টা মন্ত্রী পদে বহাল ছিলেন।

কাজী ইমদাদুল হক ছাত্রজীবনে সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। তার সাহিত্য জীবনে সূতপাত ঘটে কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে। তার প্রথম সাহিত্যকর্ম ৯টি কবিতা সংগ্রহ আঁখিজল ১৯০০ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯০৩ সালের সূচনা লগ্ন থেকে নবনূর, প্রবাসী ও ভারতী পত্রিকাসহ প্রভৃতি পত্রিকায় তার কবিতা ও প্রবন্ধ নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। তার প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত বিভিন্ন কবিতা নিয়ে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ লতিকার পান্ডুলিপি রচিত হলেও তা অপ্রকাশিত থেকে যায়। পরে কাজী ইমদাদুল হক রচনাবলীতে কবিতা গুলো স্থান পায়। সরলা দেবী চৌধু রাণী সম্পাদিত ভারতী পত্রিকায় কাজী ইমদাদুল হকের মোসলেম জগতের বিজ্ঞান চর্চা শীর্ষক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। প্রথমে এ প্রবন্ধনের নাম লেখা ঐসিলামিক জগতের বিজ্ঞান চর্চা। পরে নব নূর সম্পাদন সৈয়দ ইমদাদ আলী পরামর্শক্রমে কাজী ইমদাদুল হক নাম পরিবর্তন করে রাখেন মোসলেম জগতের বিজ্ঞান চর্চা। ১৯০৪ সালে মোসলেম জগতের বিজ্ঞান চর্চা পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়। কাজী ইমদাদুল হক যে নিজে সমাজ সম্পর্কে উদ্বীগ্ন হয়ে সাহিত্য সাধনা করেছিলেন সে সম্পর্কের ড. আনিচুর জামান মন্তব্য করেছেন। মুসলমান সমাজের অভ্যান্তরিন দূর্বলতা এবং হিন্দু মুসলমান সম্পর্কে তিক্ততা তাকে প্রথম থেকেই চিন্তিত করে তুলেছিল। তবে সে কালের মুসলমান লেখকদের মত ঐতিহ্য গর্ভ এবং সাহিত্য ক্ষেত্রে হিন্দু মুসলমানের মনোলিন্যের প্রভাব তাকে স্পর্ম করেছিল। এটা সে যুগের পরিবেশনের ফল বলতে হবে।

১৯৯১ সালে কাজী ইমদাদুল হক ঢাকা ট্রেনিং কলেজের ভূগোল বিষয়ে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। এ সময় তিনি ভূগোল বিষয়ে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। আে সনময় তিনি ভূগোল শিক্ষা বিষয়ক গ্রন্থ (দ্বিতীয় ভাগ ১৯১৩ প্রথম ভাগ ১৯১৬) রচনা করেন। ১৯১৭ সালে কাজী ইমদাদুল হক কলকাতা ট্রেনিং স্কুলে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। এ সময় তার শিশু পাঠ্য গ্রন্থ নবী কাহিনী প্রকাশিত হয়। ১৯১৮ সালে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি এ সমিতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সমিতির মূখোপত্র বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। বঙ্গী মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায় তার চারটি রচনা প্রকাশিত হয় স্বর্গের জ্যোতি, আবর্জনা, সুলমান সালাউদ্দীনও কুরুস্ডে এবং অদ্ভুত চা খোর। ঐ বছরই (১৯১৮) সাল তার প্রথম প্রবন্ধ গ্রন্থ প্রবন্ধ মালার প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয়। মুসলিম জগতের বিজ্ঞান চর্চাসহ মোট ৬টি প্রবন্ধ এই গ্রন্থে সংকলিত হয়। তাঁর অন্যান্য প্রবন্ধ নিয়ে দ্বিতীয় ভাগ সংকলনে অভিপ্রায় ছিল বলেই এই গ্রন্থের শিরোনামে প্রথম ভাগ সংযুক্ত হয়। পরবর্তীকালে আব্দুল কাদির সম্পাদিত কাজী ইমদাদুল হক রচনাবলী গ্রন্থে অপ্রকাশিত প্রবন্ধবলী সংযোজিত হয়।

১৯১৮ সালে মুত্রাশয় পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে কলিকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তাঁর একটি কঠিন অস্ত্র পাচারের ফলে কাজী ইমদাদুল হককে দীর্ঘ ৬ মাস হাসপাতালে থাকতে হয়। সে সময় তিনি আব্দুল্লাহ উপন্যাস রচনা শুরু করেন। এর ২ বছর পর মোজাম্মেল হক ও আফজালুল হক মুসলিম ভারত পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই পত্রিকায় “আব্দুল্লাহ” উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। প্রায় দেড় বছরকাল মুসলিম ভারতে “আব্দুল্লাহ” প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি আকস্মিক বন্ধ হয়ে যাওয়া উপন্যাসটি অসমাপ্ত থেকে যায়। এর ইমদাদুল হকের স্বাস্থ্য ক্রমাগত ভেঙ্গে পড়তে থাকায় উপন্যাসটি তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। উপন্যাসের ৩০টি পরিচ্ছেদ কাজী ইমদাদুল হক রচনা করেন এবং অবশিষ্ট অংশ টুকু তিনি খসড়া রেখে গিয়েছিলেন। ৩১ থেকে শেষ ৪১ পর্যন্ত অংশের খসড়া কাজী ইমদাদুল হক রেখে গিয়েছিলেন তা অবলম্বনে উপন্যাসটি সম্পন্ন করার দায়িত্বপান কাজী আনারুল কাদির। রেখে যাওয়া ১১টি পরিচ্ছেদের খসড়া অবলম্বন করে কাজী আনারুল কাদির উপন্যাসটি শেষ করেন। আনারুল কাদিরের রচিত অংশের পরিমার্জনা করে কাজী শাহদাত হোসেন। কাজী ইমদাদুল হকের মৃত্যুর পর ১৯৩৩ সালে “আব্দুল্লাহ” উপন্যাস প্রথম গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয়। ১৯৬৮ সালে কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড থেকে আব্দুল কাদিরের সম্পাদনায় কাজী ইমদাদুল হক রচনাবলী প্রকাশিত হয়।

কাজী ইমদাদুল হক আব্দুল্লাহ উপন্যাসে যে বিষয় বস্তু উপস্থাপনা করেছেন সে সম্পর্কে আব্দুল কাদির মন্তব্য করেছেন বিংশ শতাব্দির গোড়ার দিকে বাঙালী মুসলমান সমাজে যে অবস্থা ছিল তার একটি নিখুঁত চিত্র আব্দুল্লাহ উপন্যাসে বিধৃত হয়েছে। কাজী ইমদাদুল হক বৈচিত্রপূর্ণ সাহিত্য সৃষ্টির অধিকারী হলেও তাঁর প্রধান কৃত্বি “আব্দুল্লাহ” উপন্যাস। তাঁর অপরাপর রচনার গুরুত্ব কালের আবর্তে নিঃশেষ হলে গেলেও “আব্দুল্লাহ” উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয় করে রেখেছে। ১৯২০ সালে কাজী ইমদাদুল হক শিক্ষক ও শিক্ষা বিষয়ক মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। সম্পাদক হিসেবে তিনি এ পত্রিকায় বিভিন্ন ধরণের লেখা প্রকাশ করেন। শিক্ষক পত্রিকাটি ৩ বছর চালু ছিল। এই পত্রিকায় শিক্ষা বিষয়ক কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। কাজী ইমদাদুল হকের কতিপয় পাঠ্যপুস্তক ও রচনাগুলি হল- কবিতা ১। আখিঁজল (১৯৯০), ২। লতিকা (১৯০৩-অপ্রকাশিত), ৩। উপন্যাস আব্দুল্লাহ (১৯৩৩), ৪। প্রবন্ধ- মুসলিম জগতের বিজ্ঞান চর্চা (১৯০৪), ৫। প্রবন্ধ মালা ১ম খন্ড (১৯১৮), ৬। প্রবন্ধমালা ২য় খন্ড (১৯১৬), ৭। শিশু সাহিত্য নবী কাহিনী, ৮। কামারের কান্ড (১৯১৯), ৯। পাঠ্যপুস্তক ভূগোল শিক্ষা প্রণালী (১ম ও ২য় ভাগ-১৯১০) সরল সাহিত্য।

কাজী ইমদাদুল হকের সমগ্র কর্মজীবনই কেটেছে সরকারী চাকুরীতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন কাজে অসামান্য দক্ষ, গভীর দায়িত্ববোধ ও উদ্বোধনী শক্তির স্বীকৃতি স্বরূপ তৎকালীন বৃটিশ সরকার তাঁকে ১৯১৯ সালে খানসাহেব উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯২৬ সালে পুনঃরায় তাঁকে খাঁনবাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করে সম্মানিত করা হয়।

বিংশ শতকের প্রথম ভাগে বাংলার মুসলিম সমাজে যেসব সমস্যা, কুসংস্কার পুঞ্জিভূত দেখা যায় আব্দুল্লাহ উপন্যাসখানি তাঁর দুঃসাহসী প্রতিবাদ। এ সময় বাংলার মুসলিম সমাজে আশরাফ-আতরাফ ভেদ, পীর মুরিদী। কঠোর পর্দা প্রন্থা, আধুনিক ইংরেজী শিক্ষার বিরোধিতা, অহেতুক ধর্মীয় গোড়ামি, বিজ্ঞান সম্মত আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির প্রতি বিরূপতা, বংশ গরিমার নামে ব্যয়বহুল অর্থহীন আচার অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য কুসংস্কার সমাজকে ধ্বংসের প্রান্তে নিয়েগিয়েছিল। হিন্দু মুসলমান সম্পর্কের মধ্যেও তিক্ততা বিরাজ করেছিল। কাজী ইমদাদুল হক ছিলেন প্রগতিশীল চিন্তাবীদ। সমাজের বিরাজমান সমস্যা তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছিল। তাই আব্দুল্লাহ উপনস্যাসে তিনি সামাহিক ব্যাধির একজন নিপুন চিকিৎসকের মত সমাজ বিশ্লেষণ করেছেন এবং রোগ নিরাময়ের চেষ্টা করেছেন। তিনি কেবল সমস্যা তুলে ধরে ক্ষান্ত হননি সাথে সাথে বিজ্ঞান সম্মত সমাধান দেয়ার চেষ্টা করেছেন। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আব্দুল্লাহ উপন্যাস পাঠ করে মন্তব্যে লিখেছিলেন, আব্দুল্লাহ বইখানি পড়ে আমি খুশি হয়েছি। বিশেষ কারণে এই বই থেকে মুসলমানদের ঘরের কথা জানা গেল।

কাজী ইমদাদুল হক কখনো সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন না। সারা বছর কোন না কোন অসুখ-বিসুখ লেগে থাকতো। ১৯২৬ সালে তিনি কিডনী রোগে আবারও আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় চিকিৎসায় কোন প্রতিকার না হলে হেকিমী চিকিৎসার জন্য দিল্লির উদ্দেশ্যে কলকাতা গমন করেন। কলকাতায় অবস্থান করাকালীন ১৯২৬ সালে ৪৪ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন। কাজী ইমদাদুল হককে গোবরা কবরস্থানে তার মাতার কবরের পাশে দাফন করা হয়।

এদিকে কাজী ইমদাদুল হকের ১৩৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কাজী ইমদাদুল হক স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে শুক্রবার সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রতিকৃতিকে পূষ্পমাল্য অর্পন, আলোচনা সভা, পদক বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।