Friday, April 22, 2016

পাইকগাছায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি

বেড়েছে চুরি-ডাকাতি; দখল-পাল্টা দখল মহড়া অব্যাহত


পাইকগাছায় দু’টি প্রভাবশালী গ্রুপের দখল-পাল্টা দখলের মহড়া, পৌর সদর'সহ ১০টি ইউনিয়নের প্রায় সব ক’টিতে চুরি-ডাকাতির ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে একরকম অস্থিরতা। বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে দোকান-পাটে একের পর ঘটে চলেছে চুরি-ডাকাতির ঘটনা। পাইকগাছায় আইন-শৃক্সখলা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনি সহিংসতার রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন করে শুরু হয়েছে সরকার দলীয় ব্যানারে দখল-পাল্টা দখলের মহড়া।

এলাকাবাসীর মধ্যে এনিয়ে রীতিমত উদ্বিগ্নতা ও আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ এজন্য মূলত একটি রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীন কোন্দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদাসিনতাকেই দায়ি করছেন। যা পুলিশের ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে সাধারণের কাছে। পছন্দমত ব্যক্তির মামলা রেকর্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে পক্ষপাতিত্ব সহ বহুবিধ অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় পুলিশের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি পাইকগাছায় পৌর সদরের ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দরজা ভেঙ্গে দূধর্ষ চুরির ঘটনায় এ পর্যন্ত কাউকে আটক কিংবা তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। ২৭ জানুয়ারি পৌর সদরের ৪, ৬ ও ৮ নং ওয়ার্ডে চুরি সংঘটিত হয়। এরপর গত ৭ ফেব্রুয়ারী পাইকগাছা পৌর সদরের এক প্রকৌশলীর বাড়িতে দুধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সঙ্গবদ্ধ ডাকাতরা নগদ অর্থ ও স্বর্নালন্কার’সহ প্রায় ১১ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়।

পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রকৌশলী হরেন্দ্রনাথ মন্ডলের বাড়িতে দুধর্ষ এ ডাকাতি সংঘঠিত হয়। প্রকৌশলীর বাড়িতে ডাকাতির ৩ দিন পর ১০ ফেব্রুয়ারি পাইকগাছায় একই রাতে ৩ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে দূধর্ষ চুরি ও ডাকাতি সংগঠিত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ডাকাতদের ফেলে যাওয়া একটি ছুরি উদ্ধার করে। ওইদিন গদাইপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া মোড় নামক স্থানে এ ডাকাতি সংগঠিত হয়। বোয়ালিয়া মোড়ের তপন দাশের তন্ময় ফার্মেসী, আবুল কালাম আজাদের সেবা ফার্মেসী ও অজিয়ার রহমানের টেইলর্সের দোকান থেকে নগদ ৭ হাজার টাকা ও ঔষধ সামগ্রী এবং সিট কাপড় নিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা। অনূরুপ ভাবে একই রাতে গদাইপুর গ্রামের মৃত শৈলেন্দ্র নাথের ছেলে স্বর্ন ব্যবসায়ী শ্যাম সুন্দর ভদ্রের বাড়িতে দূধর্ষ ডাকাতির সময় বাড়ির লোকজনের আর্তচিৎকারে ডাকাতরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় বলে জানায় পারিবারিক সূত্র।

এরপর গত ২০ মার্চ ইউপি নির্বাচন মুহুর্তে বর্তমান চেয়ারম্যান এসএম এনামুল হক এর পৌর সদরের বাড়িতে দুধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। চেয়ারম্যানের পৌরসভাস্থ বাসভবনে ৮/১০ জনের মুখোশধারী ডাকাতদল গভীর রাতে বাড়িতে প্রবেশ করে প্রায় ৩০লক্ষ টাকার মালামাল (নগদ ২৫ হাজার টাকা এবং স্বর্ণালংকার) নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থীকে বেদম মারপিট করে পালিয়ে যায় তারা। সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল পাইকগাছায় অবসর প্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তার বাড়িতে দূধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদের হামলায় সেনা দম্পতি সহ ৩ জন আহত হয়ে এখনো খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩ টার দিকে সংঘবদ্ধ ডাকাতরা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আলহাজ্ব লিয়াকত আলী গোলদারের বাড়ির গেট ও বারান্দার গ্রীল কেটে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন মালামাল তছনছ করে। এ সময় ডাকাতদের উপস্থিতি টের পেয়ে লিয়াকত আলী বের হওয়ার চেষ্টা করলে ডাকাতদের সাথে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে ডাকাতরা লিয়াকত (৫৫) ও তার স্ত্রী নার্গিস পারভীন (৩৮) কে কুপিয়ে জখম করে। সেনা দম্পত্তির আত্মচিৎকারে সিরাজুল ইসলাম নামে এক প্রতিবেশী এগিয়ে আসেলে তাকেও কুপিয়ে আহত করে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। এসব ডাকাতির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪ জনকে আটক করলেও ডাকাতি হওয়া কোন মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি থানা পুলিশ। 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুল আমিন বলেন, কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা সত্যিই মর্মান্তিক।

এছাড়া গত ২২ মার্চ প্রথম দফার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন পূর্ব ও পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার এড়াতে কয়েকটি ইউনিয়নের অনেকগুলো গ্রাম প্রায় পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়ে। ঐ সকল ঘটনায় থানায় ৭/৮ টি মামলা দায়ের হয়। 

এর আগে সরকার দলীয় এক নেতার বাড়ি দখল নেয় সরকারেরই স্থানীয় সাংসদের নেতৃত্বে তার লোকজন। ঐ ঘটনায় পাল্টা-পাল্টি মামলার ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ স্থানীয় সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে বেদখল হওয়া একটি ইট-ভাটা উদ্ধারের নামে পাল্টা দখলের ঘটনা ঘটে। নানাবিধ ঘটনায় সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও তার ছেলে শেখ মনিরুল ইসলামের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ !

--আমিনুল ইসলাম বজলু, পাইকগাছা।