Sunday, July 2, 2017

১৩ বছরেও সম্মেলন হয়নি পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামীলীগসহ সহযোগী সংগঠনের

গত ১৩ বছরেও সম্মেলন হয়নি পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামীলীগসহ সহযোগী সংগঠনের। ফলে একদিকে ঝিমিয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। অপরদিকে দিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছে মূল দল সহ প্রায় সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। সম্মেলন না হওয়ার অন্যতম কারণ হিসাবে দলীয় গ্রুপিংকে দায়ী করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

দলীয় একাংশ বর্তমান সংসদ সদস্য এ্যাডঃ শেখ মোঃ নূরুল হকের নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মসূচি পালন করছেন। অপর অংশ সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডঃ সোহরাব আলী সানা, উপজেলা আ’লীগের আহবায়ক গাজী মোহাম্মদ আলী ও সদস্য সচিব মোঃ রশিদুজ্জামানের নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মসূচি পালন করছেন। ফলে অনেকটাই যেনতেন ভাবে দলীয় কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে বলে ধারণা করা হয়। গ্রুপিং এর কারণে ইতোপূর্বে দলের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ক্ষমতাসীন দল হওয়া সত্ত্বেও মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী।

সূত্রমতে, পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামীলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৪ সালে। সম্মেলনে প্রয়াত শেখ বেলাল উদ্দীন বিলুকে সভাপতি ও প্রয়াত মেয়র এসএম মাহবুবর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। পথিমধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুবরণ করলে গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি পদ ভারপ্রাপ্ত দিয়ে পরিচালিত হয়। সম্মেলনের ১০ বছর পর ২০১৪ সালে গাজী মোহাম্মদ আলীকে আহবায়ক ও মোঃ রশিদুজ্জামানকে সদস্য সচিব করে উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। অভিযোগ ওঠে কমিটিতে এমপি নূরুল হক অনুসারী ও সক্রীয় এবং ত্যাগী নেতাদেরকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে এমপি সমর্থিত ও পদ পদবী বঞ্চিত নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এনিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উভয়ের মধ্যে পাল্টা-পাল্টি মামলাও হয়। আহবায়ক কমিটি গঠনের ৫ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো সম্মেলন হয়নি ক্ষমতাসীন দলের অভিভাবক সংগঠনটির। বর্তমানে একদিকে আহবায়ক কমিটির ব্যানারে ও বর্তমান এমপি’র সমর্থিতদের আহ্বানে পৃথক পৃথক ভাবে চলছে দলীয় কার্যক্রম।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা আ’লীগের সদস্য সচিব মোঃ রশিদুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জেলা কমিটির মিটিংএ রয়েছি। এই মুহূর্তে কোন কিছু বলা সম্ভব নয়।

অনুরূপভাবে, ২০০৪ সালের ২৭ জানুয়ারী সর্বশেষ সম্মেলন হয় উপজেলা যুবলীগের। সম্মেলনে এসএম শামছুর রহমানকে সভাপতি ও কাজল কান্তি বিশ্বাসকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। দলীয় গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী এ সংগঠনেরও গত ১৩ বছরে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। মূলদলের দলীয় কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেলেও যুবলীগের তেমন কোন কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায় না। মূল দলের ন্যায় এ সংগঠনটিরও নেতাকর্মীরা রয়েছে দিধা-বিভক্ত।

উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এসএম শামছুর রহমান সংগঠনের নাজুক অবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, সম্মেলন না হওয়ার পিছনে অনেক কারণ করেছে। যার মধ্যে জেলার মূলদল সহ যুবলীগের দলীয় গ্রুপিং অন্যতম কারণ। আর এ কারণে উপজেলা পর্যায়ের সংগঠনেও বিভিন্ন গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। সংগঠনের কোন কর্মসূচি আহ্বান করলে খোদ সংগঠনের অনেকেই কর্মসূচি বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগে যায়। যার কারণে এখন অনেকটাই নিরাবতা পালন করছি বলে উপজেলা যুবলীগের এ নেতা জানিয়েছেন।

একই ভাবে উপজেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১০ সালে। সম্মেলনে শেখ আবুল কালাম আজাদকে সভাপতি ও এসএম আমিনুর রহমান লিটুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। গত ৭ বছরেও দলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ এ অঙ্গ সংগঠনের সম্মেলন না হওয়ায় ঝিমিয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। অপরদিকে বেড়েছে নামধারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। এতে একদিকে সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে নেতাকর্মীরা। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে ছাত্রলীগ এবং নামধারী ছাত্রলীগের মধ্যে কয়েকটি সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ফলে সংগঠনের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে।

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ আবুল কালাম আজাদ জানান, আমিও চাই সংগঠনের সম্মেলন হোক এবং সম্মেলনে নতুন নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসুক। সংগঠনে নতুনদের দরকার রয়েছে, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠনের মধ্যে নামধারী ছাত্রলীগের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আর এরাই সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে।

সবমিলিয়েই যেনতেন ভাবে চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের কার্যক্রম। অনেকেই মনে করছেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে সম্মেলন জরুরী হয়ে পড়েছে। মূলদল সহ সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন সম্পন্ন করতে না পারলে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

--মোঃ আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা।