Thursday, November 23, 2017

দখল ও দূষণে মৃতপ্রায় শিবসা-কপোতাক্ষ

পাইকগাছার অভ্যন্তরে শিবসা আর কপোতাক্ষের একাংশে নেই কোন জোয়ার ভাটার ঢেউ। চিরচেনা সেই শিবসা-কপোতাক্ষ আজ ধীরে ধীরে পরিনত হয়েছে মরা খালে। হারিয়েছে যৌবন। এক সময়ের খরস্রোতা শিবসা নদী ও কপোতাক্ষ নদের দু’পাড়ে সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ দখল আর দূষণ ক্রমেই বাড়ছে।


শিবসা-কপোতাক্ষকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন সময় নেতা, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টরা নানান বাণী শোনালেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়নি কেউ। বরং যাদের কাধে নদী রক্ষার দায়িত্ব তারাই নদী ভরাট করে চলেছে। মাছ চাষের নামে নদীর বিভিন্ন স্থানে বাধ সৃষ্টি করে পানির স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করে দিয়েছে। কেউবা নদীর চরে ময়লার স্তুপ বানাচ্ছে।

এক সময় দক্ষিণাঞ্চলের মালামাল আনা নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের একমাত্র ভরসা ছিল নদী পথ তথা শিবসা কপোতাক্ষ। আর এখন সেই নদী যে যেভাবে পারছে দখল ও দুষণ করছে!


নদী এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কাশিমনগরের উত্তরে, কপিলমুনি বাজারের পিছনে, গোলাবাড়ি মোড়, আগড়ঘাটা, বোয়ালিয়া খেয়াঘাট, রাড়ুলী, আলোকদীপ, শিববাটী, কাঁটাখালী বাজার, মরিচচাপ খেয়াঘাট, বড়দল খেয়াঘাট, চাঁদখালী বাজার এলাকা,ও পাইকগাছা বাজার, বয়রা গেট, হাড়িয়া নদীর মুখসহ শিবসা ও কপোতাক্ষের বিভিন্ন অংশ দখল হয়ে গেছে। ভূমিদস্যুরা নদীর মাঝখান বরাবর নানা ধরনের দখলদারি চালাচ্ছে। অনেক জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে ঘর। কেউবা গড়ে তুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কেউ বা বানাচ্ছে ইটের ভাটা! 

এক সময়কার খরস্রোতা শিবসা আর কপোতাক্ষ স্থানভেদে ৫০০ থেকে ১৫০০ ফুট ও তার অধিক প্রসস্থ ছিল, যা বর্তমানে কোথাও কোথাও ১০০ থেকে ২০০ ফুটে পরিনত হয়েছে। নদীর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। এমতাবস্থায় নদী দুটি দখল ও দূষণমুক্ত করতে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী জনসাধারণ।

তথ্য ও ছবি :: মোঃ সাইফুল ইসলাম, পাইকগাছা।
(আংশিক পরিমার্জিত)

আল কায়েদা সন্দেহে কলকাতায় আটক রিয়াজুলের বাড়ি পাইকগাছার কাশিমনগরে

তথ্য নেই স্থানীয় পুলিশের কাছে


ভারতের কলকাতা চিৎপুর স্টেশন থেকে এসটিএফ’র অভিযানে আল কায়েদা জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া ৩ জনের এক জন রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজ (২৫) এর বাড়ি পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির কাশিমনগর গ্রামে। তার পিতা এক জন ক্ষুদ্র পান ব্যবসায়ী।


পারিবারিক সূত্র জানায়, বছর দুয়েক হল সে তার এক খালু শ্বশুরের সাথে ভারতে যায় কাজের সন্ধানে। এর পর হাটুর ব্যথায় মাস দুয়েক আগে বাড়ি এসেছিল। প্রায় সপ্তাহ দু’য়েক থেকে পুনরায় ডাক্তার দেখাতে ভারতে গিয়ে আর ফেরেনি। এরপর গত মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে কোলকাতা পুলিশের হাতে তার গ্রেফতারের খবরে রীতিমত মুষঢ়ে পড়েছে গোটা পরিবার।

এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোটর সাইকেল যোগে দু’জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি বুধবার দুপুরে রিয়াজুলের গ্রামের বাড়ি কাশিমনগর থেকে নিজেদের মানবাধিকার কর্মী পরিচয়ে তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ও এক প্রতিবেশী আঃ রাজ্জাক শেখের ছেলে রাসেল (২২) ডেকে নিয়ে গেছে।

তবে এব্যাপারে স্থানীয় পুলিশের কাছে নেই কোন তথ্য। কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) তদন্ত মোঃ রফিকুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি কিছুই জানেননা বলে জানান।

মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর কাছ থেকে খবর পেয়ে কোলকাতা এসটিএফ সেখানকার চিৎপুর স্টেশনে তল্লাশি করে। এক পর্যায়ে দুই জন বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের বাসিন্দা সামসাদ মিঞা ওরফে তানভির ওরফে তুষার বিশ্বাস (২৬) ও খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের কাশিমনগর গ্রামের রিয়াজ ওরফে রিয়াজুল ইসলাম ওরফে সুমন (২৫)। আর ৩য় জন ভারতের উত্তর ২৪ পরগণার বসিরহাটের খোলাপোতার মনোতোষ দে (৪৬) কে গ্রেফতার করে।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে কোলকাতা পুলিশের ডিসি মুরলিধর শর্মা জানান, ধৃতরা অস্ত্র কেনাবেচার জন্য কোলকাতা স্টেশন চত্বরে এসেছিল। প্রায় দেড় বছর ধরে বাংলায় ঘাঁটি গেড়েছিল আটক দুই বাংলাদেশি আল কায়েদা জঙ্গি। পুলিশের ঐ কর্মকর্তা আরো জানান, বসিরহাটের মনোতোষ দে’ই মূলত অস্ত্র সরবরাহ করত। আটককৃতরা এদিন কোলকাতা স্টেশনে এসেছিল অস্ত্র কেনা-বেচা নিয়ে কথা বলতে, সেই খবর আগে থেকেই ছিল এসটিএফের কাছে। সেই মতোই জাল বিস্তার করেন সেখানকার গোয়েন্দারা। শেষমেশ তাদের হাতে আটক হয় তিন জঙ্গি।


এসময় ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় অত্যাধুনিক ওয়ানশাটার-সহ একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র। উদ্ধার হয় আল কায়েদা সম্পর্কিত বই, ল্যাপটপ ও পেনড্রাইভ। আল কায়েদার লিফলেটও পাওয়া যায় তাদের কাছ থেকে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ওই বইয়ে লেখা ছিল জেহাদের কথা। কী করে তারা রেইকি করবে, কী করে বিস্ফোরক তৈরি করবে- সেসব ছিল ল্যাপটপ ও পেনড্রাইভে।


ডিসি জানান, ধৃত তিনজনই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। এই আনসার বাংলা হল আল কায়েদার শাখা সংগঠন। ধৃত দুই বাংলাদেশির কাছে কোনও পাসপোর্ট ও ভিসা ছিল না। তবে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ব্যাঙ্কের পাশবই, আধার কার্ড, প্যানকার্ড, ভিজিটিং কার্ড। এসবই ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করেছিল তারা।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর সূত্রে পুজোর সময় এ বিষয়ে এসটিএফকে সাবধান করে দেওয়া হয়েছিল কোলকাতায় জঙ্গি অনুপ্রবেশ হয়েছে বলে। সেই থেকেই নানা হোটেল, রেস্তোরা, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশনে গোপনে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন সেখানকার গোয়েন্দারা কিন্তু কিছুতেই হদিশ মিলছিল না খতরনাক জঙ্গিদের। এসটিএফের কাছে তিন-চারদিন আগে খবর আসে, কোলকাতায় লুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা আর্মস ডিলার্সদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। সেই মতোই অভিযানের গতি মুখ বদল করেন কলকাতার গোয়েন্দারা। মনোতোষ ছিল মূলত আর্মসড ডিলার। সামসাদ ও রিয়াজ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতেই কলকাতা স্টেশনে এসেছিল। ডিসি মুরলীধর শর্মা জানান, ধৃত জঙ্গিরা কখনই হোটেলে থাকত না, তাঁরা বিভিন্ন স্টেশনে, যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে রাত কাটাত। তারপর বাকি সময়টা এখানে-ওখানে ঘুরেই নাকি কাটাত তারা।

এদিকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পাইকগাছার কাশিমনগর গ্রামের রিয়াজের আটকের খবরে বুধবার তাদের বাড়িতে গেলে কথা হয় রিয়াজের পিতা মোসলেম সরদারের সাথে। তিনি জানান, তার ৩ ছেলে মফিজুল সরদার, সিরাজুল সরদার ও রিয়াজুল সরদার। এদের মধ্যে রিয়াজুল সবার ছোট। সে কয়েক বছর আগে কপিলমুনি জাফর আউলিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করার পর অর্থাভাবে আর পড়া-লেখা করেনি। এর পর সাতক্ষীরার টিকারামপুরের জনৈক আছির উদ্দিন খাঁর মেয়েকে বিয়ে করে। এরপর প্রথমত বাড়িতে পানের বরজের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। তবে বছর দুয়েক আগে তার এক খালু শ্বশুরের পরামর্শে স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে জাহিদকে বাড়িতে রেখে ভারতে ভাটায় যায় কাজ করতে। মাস দু’য়েক পূর্বে রিয়াজুল বাড়িতে আসে পায়ের ব্যাথা নিয়ে। প্রায় সপ্তাহ দু’য়েক থাকার পর ডাক্তার দেখাতে পুনরায় ভারতে গিয়ে আটক হয় সে।

রিয়াজুলের পিতা মোসলেম সরদারের ধারণা, ভিসা ও পার্সপোর্ট নাথাকায় ভুল বশত কোলকাতা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থাকতে পারে।

--শেখ দীন মাহমুদ, পাইকগাছা।