Thursday, February 9, 2017

এক বছরে বাজনদারের বদলে যাওয়া জীবন

আবুল বাজনদার ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। এরপর কেটেছে দীর্ঘ এক বছর। এই এক বছরে তার জীবনে ঘটেছে বিশাল পরির্বতন। হতাশাভরা জীবনকে পেছনে ফেলে তিনি এখন দেখছেন নতুন জীবনের স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখছে তার পরিবারও। জীবনটা যে এভাবে বদলে যাবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি ‘বৃক্ষমানব’ নামে পরিচিত বাজনদার।



প্রসঙ্গত, বিরল রোগ ইপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভ্যারুসিফরমিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৭ বছর বয়সী বাজনদার। তার চিকিৎসায় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে নয় সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়। বাংলাদেশে বাজনদারই এই রোগের প্রথম রোগী, আর বিশ্বে তৃতীয়। তার চিকিৎসার পুরো খরচ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বহন করছে। ১৫ বছর বয়সে বাজনদারের হাতে ও পায়ে গাছের শেকড়ের মতো মাংসপিণ্ড তৈরি হয়। যে কারণে তিনি পরিচিতি পান ‘বৃক্ষমানব’ হিসেবে।

ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বাজনদারের দুই হাত এবং দুই পায়ে মোট ১৮ বার অস্ত্রোপচার করে সাফল্যের সঙ্গে মাংসপিণ্ডগুলো অপসারণ করা হয়েছে। বার্ন ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, তার হাতে-পায়ে আর চার কিংবা পাঁচটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন।



ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সম্বন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, “এ অস্ত্রোপচারগুলো হলো ‘বিউটিফিকেশন অপারেশন’। এ অপারেশনগুলো শেষ হলে মাস কয়েকের মধ্যে আমরা আবুলকে ছেড়ে দেব।”

খুলনার পাইকগাছা থেকে আসা বাজনদারকে সুস্থ করে তুলতে পেরে আনন্দিত ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, ‘গত বছর আজকের দিনে বাজনদার যখন আমার রুমে এসেছিল, তখন এক অসহায় তরুণকে দেখেছিলাম। সেদিন সে আর তার মা চারদিকে তাকাচ্ছিল আর কাঁদছিল। তার সামনে ছিল অনিশ্চয়তা, অন্ধকার ভবিষ্যত। সে কোনও ভরসা পাচ্ছিল না। এখানে কোথায় থাকবে, কত টাকা খরচ হবে, টাকা কোথায় পাবে- এসব বারবার বলছিল। এরপর আমরা তাকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করিয়ে বললাম যে, তুমি এখানে থাকবে এবং তোমার সব খরচ সরকার বহন করবে। তখন সে কিছুটা ভরসা পায়, তার চিকিৎসা শুরু হয়। আর তারপর তো ইতিহাস।’

ডা. সামন্ত লাল সেন আরও বলেন, ‘এক বছরে তার চেহারার পাশাপাশি মানসিক পরিবর্তনও সম্ভব হয়েছে এই হাসপাতালের সবার একান্ত সহযোগিতায়। সবার সম্মিলিত প্রয়াসে বাজনদার নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে।’

বাজনদারের হাত-পায়ের অপসারিত মাংসপিণ্ডগুলো ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সেগুলো ফিরে আসার সম্ভাবনা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।’



সরেজমিনে দেখা যায়, বাজনদার এখন একজন স্বাভাবিক মানুষের মতোই হাত দিয়ে কলম ধরতে পারেন। নিজ হাতে ধরে পত্রিকা পড়া এবং একমাত্র মেয়েকে কোলেও নিতে পারেন। বাজনদার বলেন, ‘এক বছর আগেও হাত ছিল ভারী, কিছু ধরতে পারতাম না, নিজে নিজে চলাফেরাও করতে পারতাম না। কিন্তু সময় বদলে গেছে, এক বছর আগের বাজনদারের সঙ্গে আজকের বাজনদারের বিস্তর ফারাক।’

বাজনদারের চোখে এখন একমাত্র মেয়েকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন। মেয়ে চিকিৎসক হয়ে তার মতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে, তাদের সেবা করবে এটাই তার জীবনের একমাত্র ব্রত। তিনি বলেন, ‘আমার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়, পৃথিবীর কোনও কিছুর সঙ্গে এর তুলনা হয় না। যারা আমাকে আজকের জীবন দিয়েছেন, তাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই, সবাইকে আমার সালাম জানাই।’

বাজনদারের দিন কাটছে বার্ন ইউনিটের পাঁচ তলার একটি কেবিনে। সেখানে তার সব সময়ের সঙ্গী স্ত্রী হালিমা খাতুন এবং সাড়ে তিন বছরের মেয়ে তাহিরা। বাজনদার জানান, গত বছর ঈদের দিনে তিনি এই কেবিনের বাইরে গিয়েছেন, নতুন পোশাক পরে ঘুরেছেন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে। সেরে ওঠার জন্য সার্বক্ষণিক সঙ্গী কাজী বাহারের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাজনদার বলেন, ‘বাহার ভাই না থাকলে আমাদের দিন কাটানো খুব কষ্টের হতো।’ প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারী সহ এক বছর ধরে যারা পাশে ছিলেন, তাদের সবার কাছেও তিনি কৃতজ্ঞ।

বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর রিকশা চালানো ছেড়ে দিতে বাধ্য হওয়া বাজনদারের ইচ্ছা, বাড়ি ফিরে একটি চালের দোকান দেওয়ার। চিকিৎসক কবীর চৌধুরীর দেওয়া জমিতে একটি বাসা বানাতেও চান তিনি। বাড়ি ফেরার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে কৃতজ্ঞতাও জানাতে চান ‘বৃক্ষমানব’ আবুল বাজনদার।

--জাকিয়া আহমেদ

পাইকগাছার সাম্য চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে সেরা

আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় খুলনা জেলা পর্যায়ে চিত্রাংকনে সেরা হয়েছে পাইকগাছা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাম্য সরকার। মঙ্গলবার খুলনা সদর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় গ্রাম্যদৃশ্য অংকন করে ৯টি উপজেলার মধ্যে জেলা পর্যায়ে সেরা নির্বাচিত হয় সাম্য সরকার।



সে পাইকগাছা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের সরল গ্রামের স্কুল শিক্ষক বিমল কুমার সরকার ও পুষ্প রানী সরকারের একমাত্র ছেলে। সাম্য একজন ক্ষুদে শিক্ষার্থী হলেও চিত্রাংকনে তার অসাধারণ প্রতিভা রয়েছে। 

মাতা পুষ্প রানী সরকার জানান, জন্মের পর যখন সে কলম ধরতে শিখেছে সেখান থেকে সে নিজে থেকেই অংকন করে আসছে। পরবর্তীতে শিক্ষক নিহার ভদ্রের নিকট অংকন শিক্ষা গ্রহণ করে। 

পাইকগাছা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশুতোষ কুমার মন্ডল জানান, সাম্য একজন  মেধাবী শিক্ষার্থী। পাশাপাশি অংকনে তার অসাধারণ প্রতিভা রয়েছে। তার আঁকা মুক্তিযুদ্ধ ও গ্রাম বাংলার রূপবৈচিত্র সম্বলিত অসংখ্য ছবি অফিসে সংরক্ষণ করা হয়েছে। 

পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর জানান, সাম্যের আঁকা ছবি দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে তাকে পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা করি। 

উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. স ম বাবর আলী জানান, সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে সাম্যের আঁকা ছবি দেখে আমি মুগ্ধ হই এবং তার মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক কয়েকটি ছবি আমি উপজেলা পরিষদে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেই। 

উপজেলা শিক্ষা অফিসার গাজী সাইফুল ইসলাম জানান, জেলা পর্যায়ে সেরা হওয়ায় সাম্যকে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে। 

এদিকে আগামী প্রতিযোগিতায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হতে পারে এ জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছে সাম্য ও তার পরিবার।