Wednesday, August 2, 2017

পাইকগাছায় আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী পালিত

বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, বিজ্ঞানী পিসি রায় আমাদের গর্ব। একাধারে তিনি শিক্ষাবিদ, শিল্পপতি, রসায়নবিদ, সমাজসেবক, সমবায় আন্দোলনের পুরোধা ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। রসায়ন শাস্ত্রের উপর তার গবেষণা সারা বিশ্বে প্রসংশিত হয়েছে। চিরকুমার এ বিজ্ঞানী তার অর্জিত সকল সম্পত্তি জনকল্যাণে দান করে মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি বাঙালি জাতির অহংকার ও গর্ব। বক্তারা বরেণ্য এ বিজ্ঞানীর জীবন দর্শন ও কর্মময় জীবন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরা সহ বিজ্ঞানীর স্মৃতি বিজড়িত বসতবাড়ীসহ সকল প্রতিষ্ঠান দৃষ্টি নন্দন ও সংরক্ষণ করার আহ্বান জানান। 

বুধবার সকালে পাইকগাছার রাড়ুলীস্থ বিজ্ঞানীর বসতবাড়িতে জেলা প্রশাসন আয়োজিত স্যার পিসি রায়ের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। 

খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ আমিন উল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এলাকাবাসী বিজ্ঞানীর বসতবাড়িকে পর্যটন কেন্দ্র, তার নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও বোয়ালিয়া ব্রীজের নামকরণ, প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ ও পাঠ্যপুস্তকে বিজ্ঞানীর জীবনী সম্পর্কিত অধ্যায় চালুকরার জন্য দাবী জানান। 


অনুষ্ঠানে বিজ্ঞানীর জীবন সম্পর্কিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করেন সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম, মানপত্র পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সবুর। এর আগে অতিথিবৃন্দ বিজ্ঞানীর প্রতিকৃতিত্বে পুষ্পমাল্য অর্পন করেন। সবশেষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।




অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আ’লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডঃ স ম বাবর আলী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব খান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ ইব্রাহিম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফকরুল হাসান, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহানারা খাতুন, জেলা পরিষদ সদস্য নাহার আক্তার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চু, উপজেলা স্বাস্থ্য ও প প কর্মকর্তা ডাঃ প্রভাত কুমার দাশ, জেলা আ’লীগের সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ শেখ মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ গোলদার, কওছার আলী জোয়াদ্দার, সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম, গোপাল চন্দ্র ঘোষ, উপাধ্যক্ষ সরদার মোহাম্মদ আলী। 

প্রভাষক ময়নুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষা অফিসার শোভা রায়ের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম, মানবাধিকারকর্মী শেখ আমজাদ হোসেন, শংকর দেবনাথ, উত্তম কুমার দাশ, শাহিনা বাবর, এড. শফিকুল ইসলাম কচি, জিএমএম আজাহারুল ইসলাম, আহাদ আলী গোলদার, আরশাদ আলী বিশ্বাস, ইমান আলী ও আমিরুল ইসলাম। 

পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ লাখ মানুষের সেবায় ডাক্তার মাত্র ৩ জন

পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চরম জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। ২৩ জন ডাক্তারের স্থলে ৩ জন ডাক্তার দিয়ে চলছে সকল কার্যক্রম। ফলে একদিকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে সেবা কার্যক্রম। অপরদিকে গুরুত্বপূর্ণ এনেস্থেসিয়া (অজ্ঞান) ডাক্তার না থাকায় বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার অপারেশন (সিজারিয়ান) কার্যক্রম। হাসপাতালে প্রসুতি রোগীর সংখ্যা এখন শূন্যের কোটায়। জনবল সমস্যার কারণে অতিতের সকল অর্জন ও সুনাম হারাতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী সেবা প্রদানকারী এ প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানের বেহাল এ অবস্থার কথা স্বীকার করে দ্রুত জনবল বৃদ্ধির দাবী জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।


সূত্রমতে, পাইকগাছা উপজেলার ৩ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার অন্যতম মাধ্যম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৩ লাখ মানুষের সেবায় ৫০ শয্যার হাসপাতালে ২২৭টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছে ১৪৮, শূন্য রয়েছে ৭৯টি পদ। ২৩ জন ডাক্তারের স্থলে কর্মরত রয়েছে ৩জন ডাক্তার। দ্বিতীয় শ্রেণির ২০ পদের বিপরীতে কর্মরত ১৭, তৃতীয় শ্রেণির ১৪৩ পদের বিপরীতে রয়েছে ১০৩, অনুরূপভাবে চতুর্থ শ্রেণির ১৮ পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছে ৫ জন কর্মচারী। ফলে চরম জনবল সংকটের মধ্যদিয়ে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন ভর্তি থাকেন ১ থেকে দেড়’শ রোগী, অপরদিকে প্রতিদিন শত শত রোগী আসেন বহিরাগত বিভাগে। যেখানে অসংখ্য ডাক্তারের প্রয়োজন, সেখানে মাত্র ৩ জন ডাক্তার দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে কর্তৃপক্ষের। 

শিশু ও মাতৃ মৃত্যু রোধসহ অনেক অর্জন রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। এমনকি হাসপাতালের একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স ইতোমধ্যে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন। গর্ভবতী ও প্রসুতি রোগীদের সেবায় হাসপাতালের সুনাম দীর্ঘদিনের। শুধু অত্র উপজেলা নয়, পার্শ্ববর্তী অনেক উপজেলা থেকে সেবা নিতে আসতেন এখানে। প্রতিমাসে কমপক্ষে ২০০ নরমাল ডেলিভারী ও প্রায় অর্ধশতাধিক সিজারিয়ান করা হতো। গত ১ মাস যাবৎ এনেস্থেশিয়া (অজ্ঞান) করা কোন ডাক্তার না থাকায় স্থুবির হয়ে পড়েছে ডেলিভারী ও সিজারিয়ান কার্যক্রম। সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন সবাই। মহিলা ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা এখন শূন্যের কোটায়। বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে ডিএসএফ কার্যক্রম। চাঁদখালী গ্রামের গৃহবধু ফাতেমা খাতুন জানান, গত দুই দিন যাবৎ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছি। কিন্তু দিনে একবার ডাক্তারদের দেখা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

সেভ দ্যা চিলড্রেনের মিড ওয়াইফ প্রকল্পের জেলা কো-অর্ডিনেটর ডাঃ মাকসুদা রহমান কাকন জানান, মডেল কেয়ার হাসপাতাল করার লক্ষ্যে মিড ওয়াইফ প্রকল্প দেশের ২৭টি উপজেলায় কাজ করছে। আমাদের জানামতে, অত্র এলাকার মধ্যে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সবচেয়ে বেশি ডেলিভারী হয়ে থাকে। কিন্তু গতকাল হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ড পরিদর্শন করে ভিন্নতা দেখলাম। সেখানে কোন রোগী নেই বললেই চলে। পরে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারলাম এনেস্থেশিয়া (অজ্ঞান) ডাক্তার না থাকায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার রোধ সহ নিরাপদ ডেলিভারীর জন্য হাসপাতালে অজ্ঞান করা ডাক্তার জরুরী হয়ে পড়েছে। 

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রেহেনা পারভীন জানান, রোগীদের সাথে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তাদের সেবা করার মাধ্যমে আমরা এক ধরণের আত্মতৃপ্তি পায়। কিন্তু বর্তমানে তেমন কোন রোগী না থাকায় আমরা অনেকটাই একাকিত্ব অনুভব করছি। 

নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর জানান, স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে এলাকার মানুষ মৌলিক এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষ করে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে গর্ভবতী মহিলাদের উপর। নিরাপদ ডেলিভারীর আশায় হাসপাতালে যাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ যখন তাদেরকে ফিরিয়ে দিচ্ছে তখন তারা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ছে। অনুরূপভাবে নিরুপায় হয়ে এ সকল রোগী যখন বেসরকারী কোন প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে, তখন সেখানে আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও প প কর্মকর্তা ডাঃ প্রভাত কুমার দাশ জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, যেখানে ২৩ জন ডাক্তারের প্রয়োজন সেখানে আছে মাত্র ৩জন ডাক্তার। এই ৩ জন ডাক্তার ২৪ ঘন্টা সবখানেই সার্ভিস করছে। এমনকি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় এনেস্থেশিয়া (অজ্ঞান) ডাক্তারও নাই। এ কারণে সিজারিয়ান সহ সবধরণের অপারেশন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। কপিলমুনি ১০ শয্যা হাসপাতালে ১ জনও ডাক্তার নেই। নেই স্যাকমো, পিয়ন সহ প্রয়োজনীয় কোন জনবল। এ ভাবে এতো বড় একটি প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে প্রতিটা মূহুর্তে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এনেস্থেসিয়া ডাক্তার সহ প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত ভাবে আবেদন করা হয়েছে বলে স্থানীয় এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। 

এলাকার লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে জনবল বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ, এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন এলাকাবাসীর।

--মোঃ আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা।