Sunday, June 7, 2015

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কবির উদ্দীন‘এর শুভ পরিণয়

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কবির উদ্দীন ও ড. সালেহা আক্তার চন্দন‘এর শুভ পরিণয় গত ২৯ মে ২০১৫ তা‌রি‌খে সম্পন্ন হয়েছে।

তাদের সুখী দাম্পত্য জীবনের কামনায় 'ভয়েস অফ পাইকগাছা' !

ছবি :: এস,এম, আলাউদ্দিন সোহাগ

সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী আর নেই

পাইকগাছার কৃতি সন্তান, খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক স্পিকার, বর্ষীয়ান পার্লামেন্টারিয়ান, রাজনীতিবিদ ও শিক্ষানুরাগী অ্যাডভোকেট শেখ রাজ্জাক আলী আর নেই। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)

রোববার দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে খুলনার ফারাজি পাড়াস্থ নিজ বাসভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি অনেকদিন ধরেই ক্যান্সারে ভুগছিলেন।

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও ৫ কন্যাসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। সোমবার বিকালে জানাজা শেষে মরহুমের গ্রামের বাড়ী হিতামপুরে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করার হবে বলে পরিবার সূত্র জানিয়েছে।


এদিকে সাবেক স্পীকার ও বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য শেখ রাজ্জাক আলীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

বর্ষীয়ান এই নেতার রাজনৈতিক‬ জীবন‬ ::

রাজনীতিতে শেখ রাজ্জাক আলীর হাতেখড়ি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর হাত ধরে। কিন্তু বিভাজনের কারণে ১৯৬৪ সালে তিনি ন্যাপ ছাড়েন। ’৭৩-এ জাতীয় নির্বাচনে খুলনা-৬ আসনে জাসদের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। 

১৯৭৮ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ১৯৭৯, ’৯১ এবং ’৯৬ সালে (ষষ্ঠ ও সপ্তম সংসদ নির্বাচন) খুলনা-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালন করেন আইন প্রতিমন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকার‪‎স্পিকারের‬। 

২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর তিনি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের এলডিপিতে যোগ দেন। নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পালন করলেও তিনি বিভিন্ন কারণে এলডিপি থেকে সরে আসেন। সেই থেকেই রাজনীতি থেকে দূরে রাজ্জাক আলী।

পর্যটনে সম্ভাবনাময় পাইকগাছার রাড়ুলীস্থ স্যার পি.সি রায়ের বসতবাড়ি

নির্মাণ আর স্থাপত্য নির্দশনের এক অপূর্ব সৃষ্টি জগদ্বীখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের বসতভিটাকে ঘিরে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলীতে গড়ে উঠতে পারে পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে পি.সি রায়ের বসতভিটা অপর সম্ভাবনাময় স্থান হওয়া সত্ত্বেও সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সঠিক উদ্যোক্তার অভাবে এতদিনেও গড়ে ওঠেনি পর্যটন কেন্দ্র। 

তবে কপোতাক্ষ নদের উপর বোয়ালিয়া-রাড়ুলী খোয়াঘাট এলাকায় নির্মাণাধীন ব্রীজের কাজ সম্পন্ন হলে পি.সি রায়ের বসতভিটাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা শুধু সময়ের ব্যাপার বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী গ্রামের কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী সম্ভ্রান্ত এক হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। স্যার পি.সি রায়ের পিতা জমিদার হরিশ্চন্দ্র রায় এবং মাতা ভূবন মোহিনী দেবী। 

আচর্য পি.সি রায়ের শিক্ষাজীবন শুরু হয় পাঁচ বছর বয়স থেকে। ১৮৬৬ থেকে ১৮৭০ সাল এ চার বছর কাটে নিজ গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে। ১৮৭১ সালে ভর্তি হন কলকাতার হেয়ার স্কুলে। তারপর ১৮৭৪ সালে অ্যালবার্ট স্কুলে। সেখান থেকেই ১৮৭৮ সালে এন্ট্রান্স, ১৮৮১ সালে এফএ পাস করেন তিনি। 

১৮৮২ সালে প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হয়ে অনার্সসহ স্নাতক শ্রেণীতে গণিতে অসাধারণ মেধার বলে তিনি গিলক্রাইষ্ট বৃত্তি নিয়ে চলে যান এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই বিএসসি ডিগ্রী নেন। রসায়নশাস্ত্রে গবেষণারত প্রফুল্ল চন্দ্র রায় মারকিউরাস নাইট্রাইট’র মত রসায়নশাস্ত্রে মৌলিক পদার্থ উদ্ভাবন করে সারা বিশ্বকে চমকে দেন। এরপর বিভিন্ন সময় সম্মানসূচক ডিগ্রী ১৮৮৬ সালে পিএইচডি, ১৮৮৭ সালে ডিএসসি, ১৯১১ সালে সিআইই, ১৯১২ সালে আবার ডিএসসি এবং ১৯১৮ সালে ফাদার অব নাইট উপাধিতে ভূষিত হন।

বহুগুণে গুণান্নিত পি.সি রায় ছিলেন একাধারে বিজ্ঞানী, দার্শনিক, শিক্ষক, শিল্পী ও সমবায়ের রূপকার। সমাজ সংস্কারে মানবতাবোধে উজ্জীবিত ছিলেন তিনি। তদানীন্তন সময়ে পল্লী গ্রামের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমবায় ব্যাংক পদ্ধতি চালু করেন। সমবায়ের পুরোধা স্যার পিসি রায় ১৯০৯ সালে নিজ জন্মভূমিতে কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৩ সালে বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায় পিতার নামে আরকেবিকে হরিশ্চন্দ্র স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। 

উল্লেখ্য, ১৮৫০ সালে রাড়ুলীতে স্যার পি.সি রায়ের পিতা উপ-মহাদেশে নারী শিক্ষার উন্নয়নকল্পে স্ত্রী ভূবন মোহিনীর নামে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান করেন। ১৯৩১ সালে খুলনার নিউ মার্কেটের পশ্চিম পার্শ্বে ২০৫.৯৯ একর জমিতে এপিসি কটন মিল স্থাপন করেন। মিলটির নাম বিভিন্ন সময় পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে খুলনা টেক্সটাইল পল্লী নামকরণ করা হয়েছে। বাগেরহাটে পিসি কলেজ স্থাপন করেন। 

দেশ-বিদেশে তার প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আজও অবিরাম মানব সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীর পদচারণা ও নিজ হাতের ছোঁয়ায় গড়ে ওঠা অসংখ্য প্রতিষ্ঠান আজও অবহেলিত রয়েছে। পি.সি রায়ের স্মৃতিবিজড়িত বসতভিটার ভবনগুলো যথাযথ রণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংস হতে চলেছে। এখনই সংরক্ষণে পদক্ষেপ না নিলে এক সময় তা কালের বিবর্তে হারিয়ে যাবে।

ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন অবিবাহিত। ১৯৪৪ সালে ১৬ জুন জীবনাবসান ঘটে বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের। ফাদার অব নাইট্রাইট খ্যাত বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞনী স্যার আচার্য পিসি রায়ের ভিটেবাড়ির ভবনগুলোও আজও অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। এখন পর্যন্ত স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের বসতভিটা প্রত্নতত্ব বিভাগের সংরক্ষণে রয়েছে। বাড়িটির স্থান বিশেষ সিমেন্ট মাটির ঘঁষামাজা ও কোথাও কোথাও চুনকামের আঁচড় ছাড়া সংরক্ষণের তেমন কোন ছোয়া লাগেনি। শ্রীহীন ভবনগুলোর কোথাও কোথাও ভেতরের ইট উঁকি দিচ্ছে খসে পড়বে বলে। স্বধীনতার পরবর্তী সময় বিভিন্ন ভাবে অপচেষ্টা চলে বিজ্ঞানী পি.সি রায়ের বসতভিটা অবৈধ দখলের। 

সর্বশেষ ২০০৯ সালে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে স্যার পি.সি রায়ের স্মৃতিবিজড়িত বসতভিটা দখল করে নেয় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। এতে ফুঁসে উঠে পিসি প্রেমী এলাকার সচেতন মানুষসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা। কঠোর আন্দোলনের মুখে যে সময় রাতের অন্ধকারে মূল্যবান অনেক সম্পদ নিয়ে পালিয়ে যায় দখলদাররা।
গত কয়েক বছর যাবৎ সরকারী উদ্যোগে পালিত হয়ে আসছে পি.সি রায়ের জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী। ওই দিন দেশ-বিদেশ থেকে অনেক অথিতি আসেন রাড়ুলীতে। যদিও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক পর্যটক আসেন না। 

জেলা শহর থেকে স্যার পি.সি রায়ের জন্ম ভূমির পর্যন্ত সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আজও গড়ে ওঠেনি। তবে কপোতাক্ষ নদের উপর বোয়ালিয়ায় নির্মাণধীন ব্রীজের নির্মাণ কাজ শেষ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন ঘটবে। স্যার পি.সি রায়ের জন্মভূমিতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং জাতীয়ভাবে তার জন্মবার্ষিকী পালন করা হোক এটাই এলাকাবাসী প্রত্যাশা করেন।

--প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছা।