কপোতাক্ষের অব্যাহত ভয়াভহ ভাঙ্গনে পর্যায়ক্রমে পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির ৬টি গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে সম্পূর্ণ দরগামহল গ্রামটি। শুধু বাপ-দাদার ভিটা মাটিই নয়, ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে কবরস্থান, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এককালে প্রচুর জমিজমার মালিক ছিল এমন পরিবারও আজ পরিবেশ উদ্বাস্তু হয়ে আশ্রয় নিয়েছে রাস্তার পাশে, ওয়াপদার উপর কিংবা কারো বসত ভিটায়।
গত প্রায় এক দশকে কপোতাক্ষের অব্যাহত চোখ রাঙানিতে নদী উপকূলের এমন করুণ পরিণতিতে ক্ষতিগ্রস্থরা সরকারের বিভিন্ন দফতরে একের পর এক আবেদন-নিবেদন করলেও সমস্যা সমাধানে তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি কেউ।
কপোতাক্ষের ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় সরেজমিনে গেলে কথা হয়, দরগা মহলের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ সালাম উল্লাহর সাথে। তিনি জানান, বসত ভিটাসহ তিনি প্রায় আড়াই বিঘা সম্পত্তি হারিয়েছেন কপোতাক্ষের ভাঙ্গনে।
প্রায় ২৫ বিঘা জমির মালিক ছিলেন শেখ আবু বক্কর। বসত ভিটা সহ সমুদয় সম্পত্তি আগ্রাসী কপোতাক্ষ গিলে খেয়েছে। বাস্তু-ভিটা, ফসলিসহ প্রায় ১২ বিঘা জমির মালিক ছিলেন শেখ আঃ মান্নান। গত প্রায় ১ দশকে চোখের সামনেই কপোতাক্ষ সব কিছু গ্রাস করেছে।
শুধু তাদেরই নয়, উপজেলার হরিঢালীর সোনাতনকাটি, মাহমুদকাটি, রামনাথপুর, কপিলমুনির শিলেমানপুর, মালথ, হাবিবনগর, দরগাহমহলের বিস্তীর্ণ এলাকা ইতোমধ্যে কপোতাক্ষ’র ভয়াবহ ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে।
বিশেষ করে মানচিত্র থেকে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে দরগাহমহল গ্রামটি। আজ আর কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই সেখানে। বিদ্যুতের খুঁটি গুলোও দাঁড়িয়ে রয়েছে পড়ে যাওয়ার অপেক্ষায়। অথচ কারোরই যেন কিছু করার নেই।
প্রসঙ্গত, এর আগে পাইকগাছা-খুলনা প্রধান সড়ক ভাঙ্গনে নিপতিত হলে পার্শ্ববর্তী এলাকা অধিগ্রহন করে সড়কটি পূণঃনির্মাণ করা হলেও সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে ফিওে তাকায়নি কেউ।
ভূক্তভোগীরা জানান, বিষয়টি নিয়ে ইতোপূর্বে তারা সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় সহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করলেও কোন কাজ হয়নি।
সর্বশেষ এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষরিত একটি আবেদন মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) এবং তার অনুলিপি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল প্রধান প্রকৌশলী, বাপাউবোর খুলনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, বাপাউবোর যশোর ক খ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকেীশলী সহ বিভিন্ন দফতরে প্রেরণ করা হয়েছে।
এলাকাবাসীর দাবি তাদের স্থায়ী সমস্যা সমাধানে চলমান কপোতাক্ষ খনন প্রকল্প মূল ম্যাপ অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হোক।
--শেখ দীন মাহমুদ, কপিলমুনি, পাইকগাছা।