Monday, August 21, 2017

নদীর পানি বৃদ্ধি : ঝুঁকিতে খুলনার নিম্নাঞ্চলের বেড়িবাঁধ

নদীতে বিপদ সীমার ওপরে পানির বৃদ্ধির চাপে ঝুঁকিতে খুলনার নিম্নাঞ্চলের ভেড়িবাঁধ। আজ থেকে শুরু অমাবশ্যা, ফলে আগামী তিন দিন অতিরিক্ত পানির চাপে আশঙ্কায় দিনাতিপাত করছে উপকূলবাসী। আজ থেকে খুলনা অঞ্চলের দশ নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাবে।

এমনি পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। উপকূলীয় এলাকা  কয়রা ,বটিয়াঘাটা, দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। জান-মালের রক্ষার্থে রবিবার জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বাঁধ সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।


পাউবো’র হাইড্রোলজি উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল আলিম খান বলেন, গতকাল রবিবার রূপসা নদীতে পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ৩ দশমিক ৪১ মিটার, শনিবার ছিল ৩ দশমিক ২৩ মিটার। চলতি বছর পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ৩ দশমিক ৪৩ মিটার। চলতি আমাবশ্যায় এ রেকর্ড ভাঙবে। সাধারণত ২ দশমিক ৫৯ মিটারকে বিপদসীমা ধরা হয়। 

তিনি জানান, আজ সোমবার থেকে পানির উচ্চতা দেড় থেকে দুই মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। উপকূলীয় বাঁধগুলোর গড় উচ্চতা সাড়ে তিন মিটার হওয়ায় ওই সময় জোয়ারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

এছাড়া উপকূলের নদীগুলোতে পানি বাড়বে বলে জানান তিনি। রূপসা নদীতে পানির স্বাভাবিক উচ্চতা ২ দশমিক ৫০ মিটার। নদীর ঢেউয়ের গড় উচ্চতাকে শূন্য ধরে নদীর পানি পরিমাপ করা হয় পাউবো। বিপদসীমার ওই মাপ পাকিস্তান আমলের, বর্তমানে ভেড়িবাঁধ তখনকার চেয়ে অনেক উঁচু। সে জন্য দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে তিনি জানান।

পাউবো’র তথ্য অনুযায়ী, রূপসা, ভৈরব, পশুর ও সিবসা নদীতে পানির চাপ বেড়েছে  তবে মংলার মিটারগেজ দু’টি দীর্ঘদিন বিকল থাকায় সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের নদীর পানি বৃদ্ধির পরিমাণ পরিমাপ করা সম্ভব হচ্ছে না। এবার অমাবশ্যার জোয়ারে পানির চাপ বাড়বে এমনি আশঙ্কা উপকুলবাসীর।

সূত্র জানায়, পাউবো’র খুলনা-১-এর অধীনে ৩৬৫ দশমিক ২৪ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধের ১০৯ কিলোমিটার সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ। পাউবো খুলনা-২ এর অধীনে ৫১০ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধের মধ্যে ৪৫ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। বাগেরহাটের ৩১৮ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ৬০ কিলোমিটার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া প্রায় ৪০ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ নিচু হয়ে গেছে। ভরা জোয়ারের সময় বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। সাতক্ষীরা পাউবো’র ৭৯৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধের মধ্যে ২১০ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধই ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোন সময়ে ভেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে বিশাল এলাকা। দেখা দিতে পারে মারাত্মক বিপর্যয়।

বন্যা পুর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেনের দেওয়া তথ্য মতে, গতকাল রবিবার সকাল ৯টায় জোয়ারের সময় পশুর নদীর পানি এক দশমিক ২৫ মিলিমিটার উচ্চতা ছিল। মঙ্গলবারের অমাবশ্যার প্রভাব আজ সোমবার পড়তে শুরু করবে। ফলে ভৈরব, রূপসা, শিবসা, পশুর, কপোতাক্ষ, ইছামতি, কালিন্দি, শাকবাড়িয়া, নবগঙ্গা নদীর পানি জোয়ারের সময় বৃদ্ধি পাবে। 

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পানি পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল কাইয়ূমের কাছে জানতে চাইলে বলেন, সোমবার দুপুর থেকে অমাবশ্যার প্রভাব পড়বে, জোয়ারের উচ্চতা বড় হবে। এসব নদ-নদীতে এক দশমিক পাঁচ মিটারের পরিবর্তে সোম, মঙ্গল ও বুধবার এক দশমিক ৩৫ মিলিমিটার বাড়তে পারে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে বলে তিনি পূর্বাভাস দিয়েছেন।

সাতক্ষীরা পাউবো’র আওতাধীন খুলনা জেলার কয়রার গোলখালী গ্রামের মোঃ তসলিম মোল্লা বলেন, “বসবাস করি খুলনা জেলার মধ্যে, কিন্তু আমাদের ভেড়িবাঁধ সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায়। তারা আমাদের ভেড়িবাঁধ সংস্কারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ ৫ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে একটু সংস্কার করেছি। যে কোন মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে আমাদের বিশাল এলাকা। মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে!”

পাউবো খুলনা-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী পীযুষ কৃষ্ণ কুন্ডু বলেন, জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির পর পর কয়েকটি সভায় কয়রার ওই অংশটা সাতক্ষীরা পাউবো থেকে খুলনার মধ্যে নিয়ে আসার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক উদ্যোগ নিয়েছেন। পাউবো খুলনা-২ এর মধ্যে ৩১নং পোল্ডারটা ঝুঁকিপূর্ণ; এছাড়া ৩২নং পোল্ডারে কাজ চলছে। অর্থ অভাবে ভেড়িবাঁধ সংস্কারের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।

কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ভেড়িবাঁধ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতা থেকে কয়রা উপজেলার অংশটা খুলনার (পাউবো’র) মধ্যে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে গতকাল রবিবার খুলনায় অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা আ খ ম তমিজ উদ্দিন ও পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান স ম বাবর আলী ভাঙন কবলিত এলাকায় ভেড়িবাঁধের সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায়। 

চালনা পৌরসভা রক্ষায় শহর রক্ষা বাঁধ, দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য বটিয়াঘাটার সুরখালি ইউনিয়নে অবৈধভাবে বহুতল বভন নির্মাণের বিষয়ে সতর্কীকরণ, পাইকগাছার দেলুটি, বরেঙ্গা, বাইনতলা, হাটবাটি, কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশির চরামুখা, মাটিয়াভাঙ্গা, উত্তর বেদকাশির গাববুনিয়া, গাজীপাড়া, কয়রা সদরের ৬নং কয়রা লঞ্চঘাট, হরিণখোলা, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া, পূর্ব মটবাড়ি, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের নয়ানি এলাকা ভাঙন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা নামক দুর্যোগে খুলনার বটিয়াঘাটা, দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা বিধ্বস্ত হয়। এতে ৬৫ জন নারী-পুরুষের মৃত্যু হয়।

--মাওলা বকস