Saturday, April 23, 2016

উফ্ খুব পড়েছে গরম

পাইকগাছায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরমে, জনজীবন বিপর্যস্ত

সাব স্টেশনে বিদ্যুৎ থাকলেও দেয়া হয় না, পুরস্কার লাভের আশায় !


পাইকগাছায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরমে পৌঁছেছে। মওসুমের ভয়াবহ ভ্যাপসা গরমে প্রাণীকূলের অবস্থা নাকাল। চলতি এইচএসসি, ডিগ্রী ও অনার্স পরীক্ষার্থীদের পড়া-লেখায় চলে এসেছে চরম স্থবিরতা। ব্যাহত হচ্ছে কলকারখানার স্বাভাবিক উৎপাদন। বিশেষ করে চিংড়ি উৎপাদন মওসুমে স্থানীয় বরফ কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত বরফ উৎপাদন না হওয়ায় চিংড়ি চাষি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

কিন্তু সাব স্টেশনে বিদ্যুৎ থাকলেও তা বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। সিস্টেম লস কমাতে পুরস্কার লাভের আশায় ও মোটরভ্যান চার্জ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সুবিধা লাভের আশায় দিনের বেলায় লোডশেডিং এর অজুহাত দেখিয়ে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে পাইকগাছার পল্লী বিদ্যুতের অপরিকল্পিত মেইন তার (সোর্স লাইন) “রক্ষণাবেক্ষণ কাজের” অজুহাতে পাইকগাছা-কয়রার প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকদের দিনের বেলায় বিদ্যুৎ নিয়ে দুর্ভোগে রেখেছিলেন কর্তৃপক্ষ।



সংশ্লিষ্ট নির্ভর যোগ্য সূত্র জানায়, সিস্টেম লস কমাতে পারলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তাদের সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুরস্কৃত করে। তাই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে সাব স্টেশনে বিদ্যুৎ থাকতেও দিনের বেলায় ও সন্ধ্যা থেকে রাত ১০/১১ টা পর্যন্ত ইচ্ছাকৃতভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ করে রাখছে। এসময়ের মধ্যে কমপক্ষে প্রতিদিন ১৫/২০ বার বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করে। কখনো কখনো বিদ্যুৎ গেলে অপেক্ষা করতে হয় ৩/৪ ঘণ্টা পর্যন্ত।

সূত্র জানায়, জনপদে আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে মটর চালিত ভ্যান। বিভিন্ন এলাকায় ঐ সকল ভ্যানের চার্জ দিতে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে চার্জ স্টেশন। তাদের কাছ থেকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আদায় করে থাকেন নিয়মিত সুবিধা বা বখরা।

একদিকে সিস্টেম লস কমাতে পারলে পুরস্কার, অন্যদিকে চার্জ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত নজরানা আদায়। দুইয়ের কোপানলে আটকা পড়েছে জনপদের প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ ভাগ্য।

পাইকগাছায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকলেই এনিয়ে দুর্ভোগে থাকলেও কারোর যেন কিছুই করার নেই। বিষয়টি যেন একেবারেই স্বাভাবিক !

এ ব্যাপারে এইচএসসি পরীক্ষার্থী নাজমুল, কালাম, নাদির, মিজানসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, নিয়মিত বিদ্যুৎ বিভ্রাটে তাদের স্বাভাবিক পড়া-লেখা চরমভাবে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কপিলমুনি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুল্যাহ বাহার জানান, তাদের কলেজে বর্তমানে এইচএসসি, ডিগ্রী ও অনার্সসহ ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগের পাশাপাশি বাড়িতে তাদের পড়া-লেখায় চরম ক্ষতি হচ্ছে।

স্থানীয় অন্যতম প্রধান বরফ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেয়া ফিসের ব্যবস্থাপক শওকাত হোসেন জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে তাদের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় চিংড়ি ব্যবসায়ীদের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ সমস্যায় উৎপাদন ভরা মওসুমে তাদের প্রতিদিন অতিরিক্ত দামে বরফ ক্রয় করে মাছ বাঁচাতে হচ্ছে।

এদিকে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখিয়ে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখলেও নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের কাজ চলছে পুরোদমে।

সূত্র জানায়, নতুন সংযোগে কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট দালালরা অতিরিক্ত অর্থ লাভের আশায় নিয়মিত সংযোগ প্রদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, এর কয়েক মাস আগে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন কোম্পানি লি. (জাইকা) অর্থায়নে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সোর্স লাইনের অপরিকল্পিত কাজ বাস্তবায়নের অজুহাত দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ দিনের বেলায় বিদ্যুৎ বন্ধ রেখেছিলেন দীর্ঘদিন।

এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কপিলমুনি লাইন ইনচার্জ মো. আসাদের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয়ে তাদের কোন হাত নেই। মূল লাইনে বিদ্যুৎ না থাকলে তারা বিদ্যুৎ দেবেন কোথা থেকে? তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।

এ ব্যাপারে এলাকাবাসী বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মওসুমের শুরুতেই পাইকগাছায় বাগদা চিংড়িতে ব্যাপক মড়ক

ভাইরাস নাকি জলবায়ু পরিবর্তন? হিসেব মিলছেনা মৎস্য কর্তাদেরও !


পাইকগাছায় চিংড়ি ঘের গুলোতে মওসুমের শুরুতেই ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে মড়ক। চাষীরা কারণ হিসেবে ভাইরাস সংক্রমন বললেও মৎস্য অফিস বলছে মরা চিংড়িতে তারা কোন রোগ বালাইয়ের চিহ্ন খুঁজে পাচ্ছেননা। কোন পদ্ধতিতেই রোধ করা যাচ্ছেনা বাগদা চিংড়ির এ মড়ক। জলবায়ু পরিবর্তনে অনাবৃষ্টি ও প্রচন্ড তাপদাহ চিংড়ির উপযোগী লবন পানির স্বাভাবিক পরিবেশকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করায় এমন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরাদের কেউ কেউ। এমন অবস্থায় চিংড়ির বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহতের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের ভবিষ্যত নিয়ে নানাবিধ আশংকা দেখা দিয়েছে। 

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, গোটা উপজেলায় মোট কৃষি জমির পরিমান ৩০ হাজার হেক্টর। যার মধ্যে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতেই লবন পানির চিংড়ি চাষ হয়। মৎস্য অফিস জানায়, এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার চিংড়ি ঘের রয়েছে। গত বছরও উৎপাদন ভাল হয়নি। সেবার মৎস্য অধিদপ্তর চিংড়ি উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৬ হাজার মেট্রিক টন। 

তবে গতবারের ন্যায় এবারো মওসুমের শুরুতেই ব্যাপক হারে চিংড়ি মাছ মারা যাওয়ার কারণে একদিকে যেমন লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে অন্যদিকে এবার পোনার দাম বেশি থাকলেও বাগদা চিংড়ির দাম ভাল না থাকায় আগামীতে চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন চাষীরা। 

প্রসঙ্গত ৮০’র দশক থেকে কৃষি অধ্যুষিত এ উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু হয় লবন পানির চিংড়ি চাষ। শুরুতেই উৎপাদন ও দাম ভাল পাওয়ায় মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে উপজেলার দুই তৃতীয়াংশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এর চাষাবাদ। সোনার ধান, সোনালী আঁশ, সবুজ সবজি আর শষ্যের পরিবর্তে দিগন্ত জোড়া মাঠের যে দিকেই চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। আর ফসলের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা নয়, সকাল-সন্ধ্যা ঝাঁঝালো গন্ধের চিকচিকে পানির নিচ থেকে উঠতে থাকে সোনাভরা বাগদা। কিছুদিনের মধ্যে পাইকগাছাকে চিংড়ি উৎপাদনের জন্য বিশেষায়িত করা হয় “সাদা সোনার রাজ্য” হিসেবে। রাতা-রাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যান চিংড়ি চাষের সাথে সম্পৃক্তরা। তবে প্রকৃত জমির মালিকদের অবস্থা চলে যায় আরো নীচের দিকে। ফসলও ফলেনা জমিতে আবার চিংড়ি ঘেরের হারিও (ভাড়া) কম। এক সময় ঋণের দায়ে জমিটুকু ঘের মালিকদের কাছেই বেঁচে দিতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই। 

তবে ১ থেকে দেড় দশকের মধ্যে ১৯৯৫ সালের পর থেকে চিংড়ি ঘেরে শুরু হয় “ভাইরাস” বা মড়ক রোগ সংক্রমন। ধীরে ধীরে তা বিস্তার লাভ করায় পুরোপুরি লাভের মুখে থাকা চিংড়ি শিল্পে নেমে আসে আকস্মিক ধ্বস। এভাবে সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের অনেকেই লাভের আশায় ধার-দেনা করে চাষাবাদ টিকিয়ে রেখে এক সময় চাপ সইতে না পেরে পালিয়ে গেছেন। অনেকেই সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। পরে কিছুটা ভাল হওয়ায় কোমর বেঁধে মাঠে নামেন চাষীরা। তবে মাত্র এক বছর পর মৌসুমের শুরুতেই চিংড়ি ঘেরে আবারো মড়ক অব্যাহত থাকায় নতুন করে বন্ধের উপক্রম হয়েছে সম্ভাবনাময় এ শিল্প। 

চিংড়ি চাষী প্রতাপকাটী গ্রামের আমিনুল ইসলাম, কাশিমনগরের লিটু, আশরাফ, জাহাঙ্গির শেখ জানান, এবছর তাদের চিংড়ি ঘের থেকে এ পর্যন্ত তারা কোন মাছ ধরতে পারেনি। মওসুমের শুরুতেই তাদের ঘেরে মাছ মারা যাচ্ছে। অনেক ঘেরে প্রথম ও দ্বিতীয় দফার অবমুক্ত’র সকল মাছই মরে সাবার হয়ে গেছে। ব্যাপক হারে মড়ক আসলে কি ভাইরাস না অন্য কিছুর সংক্রমন তারা বুঝতে পারছে না। 

এ প্রসঙ্গে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এ,এস,এম রাসেল জানান, যে সকল ঘেরের চিংড়ি মরছে ঐ সকল চিংড়িতে তারা কোন রোগের লক্ষণ বা চিহ্ন পাচ্ছেন না। তবে কি কারণে মরছে বিপুল পরিমান চিংড়ি? এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে না পারলেও ওই কর্তা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে অনাবৃষ্টি ও প্রচন্ড তাপদাহে চিংড়ির লবন পানির উপযুক্ত পরিবেশ বাঁধাগ্রস্থ হওয়ার ফলে মাছের মড়ক লাগতে পারে। 

এদিকে চিংড়ির মড়ক রোধে বিভিন্ন কোম্পানি বাহারি সব প্রচারে বাজারজাত করছে নানাবিধ প্রতিষেধক বা ওষুধ। অনেকে আবার পরিবেশ বান্ধবের ধুয়ো তুলে নিজেদেরকে চিংড়ি বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করলেও মূলত তাদের কারো কোন প্রেসক্রিপশনে কাজ না হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক চাষিরা।

পাইকগাছায় সজনের বাম্পার ফলন

পাইকগাছায় সজনের ব্যাপক ফলন হয়েছে। সজনে চাষিরা উচ্চ মূল্য পাওয়ায় সজনের ডাল রোপন করতে উৎসাহিত হচ্ছে। বসতবাড়ীর আশে পাশে রাস্তার ধারে ক্ষেতের আইলে লাগানো সজনে গাছ যত্ন ছাড়াই অবহেলার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে। সজনে পুষ্টি ও ভেজষ গুনে ভরা সবজি হিসাবে খুব দামী। সজনের ব্যাপক চাহিদা ও উচ্চ মুল্যে বিক্রি হওয়ায় উপজেলার কৃষকরা এখন পতিত জমিতে পরিকল্পিতভাবে সজনে গাছ লাগিয়ে লাভবান হচ্ছে।

সজনে বিশ্বের অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি বৃক্ষ। এ গাছের পাতা, ফুল, ফল, ব্যাকল ও শিকড় সবই মানুষের উপকারে আসে। সজনের পুষ্টি গুন অনেক বেশী। এ গাছের অনেক গুন থাকায় জন্যই হয় তো, এ গাছকে যাদুর গাছ বলা হয়। কাঁচা সবুজ পাতা রান্না করে, ভত্তা করে ও বড়া ভেজে খাওয়া যায়। ফল সবজির মত রান্না করে খাওয়া যায়, ফল পাকলে সে সব ফলের বীজ বাদামের মতো ভেজে খাওয়া যায়। সজনের পাতা, ফল, ফুল, বীজ, ছাল, মুলের ভেজষ গুনও আছে। তাই সজনে গাছের বিভিন্ন অংশ ভেজষ চিকিৎসায় কাজে লাগে। 

সজনের পাতার পুষ্টিগুন বেশী, যেভাবে খাওয়া হোক না কেন তা শরীরে পুষ্টি যোগাবে, আর ঔষধী গুন তো আছেই। সজনের পাতায় যে পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে তা অনেক পুষ্টিকর খাবারেও নেই। যেমন, ডিমের চেয়ে বেশী আমিষ, দুধের চেয়ে বেশী ক্যালশিয়াম, কমলার চেয়ে বেশী ভিটামিন সি, কলার চেয়ে বেশী ক্যালশিয়াম, গাজরের চেয়ে বেশী ভিটামিন এ আছে। তাছাড়া সজনের পাতা গুড়ো করে খাওয়ায় অন্তত ১৬টি উপকারী কথা জানা গেছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম দেহে রোগ প্রতিরোধ মতা বৃদ্ধি করে, বিপাকক্রিয়া ভালো রাখে, চোখ ও মস্তিস্কের পুষ্টি যোগায় প্রভৃতি। সজনে সবজি যেমন উপদেয় এর ভেজষ গুনও অসাধারণ। মৌসুমী নানা রোগব্যাধী নিরাময় ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষ করে জন্ডিস, বসন্ত, মূত্র সংক্রান্ত সমস্যা প্রাচীনকাল থেকে সজনে নানা ব্যবহার করে আসছে ইউনিয়ানী ও আয়ূর্বেদ চিকিৎসকরা।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা মিলে প্রায় ২২ হাজার ৫ শত গাছ আছে। প্রতি বাড়ীতে কমপক্ষে ৩/৪ টি গাছ রয়েছে। এসব গাছ বাড়ীর পাশে ও ক্ষেতের আইলে লাগানো। গাছে ফলনও বেশী হয়। যত্ন ছাড়াই এসব গাছ বেড়ে উঠেছে। দেশে ২টি জাত আছে সজনে ও নজনে। সজনের ফুল আসে জানুয়ারীতে আর নজনে ফুল আসে মার্চ মাস থেকে। তবে সব ফুল থেকে ফল হয় না। একটি থোকায় ১৫০টি মত ফুল হয়। ফুল ৪০ সেঃ মিঃ থেকে ৮০ সেঃ মিঃ পর্যন্ত লম্বা হয়। ফুল ফুটার ২ মাস পর ফল তোলা যায়। একটি বড় গাছে ৪’শ থেকে ৫’শ ফল ধরে। প্রতিটি ফলে ৩০-৪০ টি বীজ হয়। গাছ প্রতি সর্বোচ্চ ৩০/৭০ কেজি ফল পাওয়া যায়। মৌসুমের শুরুতে সজনের কেজি ৭০/৮০ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে ২৫/৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

দেশে সাধারণ ডাল কেটে ডাল রোপন করে সজনে গাছ লাগানো হয়। ভারত থেকে হাইব্রিড সজনের জাত এদেশে এসেছে। এ জাতের বীজ বপন করে লাগাতে হয়। হাইব্রিড জাতের সজনে গাছে দু’বার ফুল আসে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ ও জুন-জুলাই মাস। গত বছর উপজেলায় ৬ হাজার ২ শত সজনের ডাল রোপন করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৪ হাজার সজনের ডাল রোপন করা হয়েছে। 
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, উপজেলার প্রতি বাড়ীতে ২/৩টি করে সজনে গাছ আছে। সজনে পুষ্টিকর সবজি হিসাবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে সজনে ক্ষেত গড়ে তোলার জন্য উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে। প্রতি বছর উপজেলায় সজনে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কৃষকরা সজনের উচ্চমুল্য পাওয়ায় তারা লাভবানও হচ্ছে।

--প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছা।

পাইকগাছায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চরম নিরাপত্তাহীনতায় বসবাস

পাইকগাছার বোয়ালিয়া সাধুখা পাড়ায় ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ১৬০ বছরের জরাজীর্ণ ও চরম ঝুঁকিপূর্ণ একটি দ্বিতল ভবনে চরম নিরাপত্তাহীনতায় বাস করছেন ৩ পরিবারের ১২ জন সদস্য। ভূমিকম্পের চরম হুমকিতে থাকা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এ ভবনটি ধ্বসে যেকোন সময় ঘটে যেতে পারে কোন বড় ধরণের প্রাণঘাতি দূর্ঘটনা। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তদারকির অভাব ও পরিবারগুলির মানষিকতার অভাবে ভবনটি ভাঙ্গা সম্ভব হচ্ছেনা। 

যৌথ মালিকানার বাড়িটির এক শরিকের কারণে নাকি বাড়িটি ভাঙ্গা যাচ্ছেনা এমন অভিযোগ ও তার প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদন করেছেন বাড়িটির আরেক অংশীদার পিযুষ কান্তি সাধু।



অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার গদাইপুরের বোয়ালিয়া সাধুখা পাড়ায় যৌথ মালিকানার ১৬০ বছরের জরাজীর্ণ ঐ ভবনটিতে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছেন জনৈক রনজিত সাধুসহ তার দু’ভাইয়ের ৩ পরিবারের ১২জন সদস্য। স্থানীয়দের অভিযোগ, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের ফলে অন্যান্য স্থাপনার পাশাপাশি কেঁপে উঠে ঐ ভবনটিও। তবে তাতে ভবনটির বড় ধরণের কোন ক্ষতি হয়েছে কিনা তা জানা সম্ভব না হলেও ভবনটির আশপাশে বসবাসরত মানুষরাও আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ে। 

যত দ্রুত সম্ভব স্থাপনাটি ভেঙ্গে না ফেললে তাতে বসবাসরত মানুষদের পাশাপাশি নিকটবর্তী এলাকায়ও ঘটে যেতে পারে বড় ধরণের প্রাণঘাতি দূর্ঘটনা এমনটি আশংকা এলাকাবাসীর। এদিকে যৌথ মালিকানার ভবনটির অন্যতম অংশীদার ব্যবসায়ী পিযুষ কুমার সাধু প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট ঐ অভিযোগটি দাখিল করেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুল আমিন বলেন, জান মালের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশাসন সব সময় সতর্ক রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে আগাম সতর্ক করা হয়েছে। এ ধরণের অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নববর্ষের প্রার্থনা (‎কবিতা‬)

মোঃ আবুল আমিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পাইকগাছা।


নববর্ষের নতুন পূজায় উথাল পাথাল মন,
নতুন বছর নতুন করে এনে দিল শুভক্ষণ।

নতুন প্রাণে নতুন সুরে প্রার্থণা তব তরে,
বিধাতার ধন আলো হয়ে রবে শূন্য মাটির ঘরে।

বিধির বিধান পাল্টাবে জানি নতুন স্বপ্ন হয়ে,
নবজাগরণে হৃদয়ের টানে কালো মেঘ যাবে ক্ষয়ে।

এই বাংলায় বর্ষবরণে বাঙালির প্রেমগাঁথা,
বৈশাখ যেন কোটি বাঙালির নাড়ির বাঁধনে বাঁধা।

দুচোখ ভরা স্বাধীন স্বপ্ন এঁকে যাই মনে মনে,
নববর্ষের সুখ স্মৃতিখানি নাড়া দেবে ক্ষণে ক্ষণে।

নবজীবনের পরশ দিল বাংলার মাঠে ঘাটে,
রং লহরী ছড়িয়ে পড়ল গ্রাম শহরের বাটে।

নতুন আগামীর আগমনী গান; বৈশাখী হাওয়ায় দোলে,
শ্রান্ত মেঘের গর্জণ শুনি ঈশান বায়ুর কোলে।

মেঘের ফাঁকে রোদ হেঁসে যায় নতুন ছন্দ নিয়ে,
উড়ে যায় পাখি দোয়েল, চঁড়ুই নতুন গান শুনিয়ে।

জলহীন নদী ঘাটে নেই বাঁধা নৌকার সারি সারি,
কাঠফাঁটা রোদ শ্রান্ত হৃদয় প্রকৃতির আহাজারি।

তান্ডবনাচে কালবৈশাখী সব করে ভাংচুর,
তবু হেসে যায় বাঙালী হৃদয় হারালেও সব সুর।

বিষন্ন মন আর্ত হৃদয় তবু চলে পথচলা,
নববর্ষ ঝরে পড়ো হয়ে উর্বষী মেঘমালা।

স্রষ্টার আশিস বর্ষিত হোক বাঙালির শিরে শিরে,
নববার্তায় নতুন বছর আসুক আবার ফিরে।

নতুন ধানে নব অন্নে ভরে যাক অন্তর,
নতুন হাসিতে উঠুক জেগে বাংলার প্রান্তর।