Saturday, December 9, 2017

পাইকগাছায় সহকারী শিক্ষা অফিসারের উপর প্রতিপক্ষের হামলা

পাইকগাছায় জায়গা-জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। আহত শিক্ষা অফিসার বিদ্যুৎ রঞ্জন সাহাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিক্ষা অফিসারের স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা ললিতা নাথ বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ প্রতিবেশী দম্পতিকে আসামি করে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন।


প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড বাতিখালী গ্রামের মৃত বিমল কৃষ্ণ সাহার ছেলে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিদ্যুৎ রঞ্জন সাহার সাথে প্রতিবেশী এক পরিবারের জায়গা-জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিরোধের জের ধরে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিদ্যুৎ রঞ্জন সাহা বাজার থেকে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে বাড়ির সামনে পৌছালে প্রতিপক্ষ প্রতিবেশী পরিবারের সদস্যসহ অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জন সহকারী শিক্ষা অফিসার বিদ্যুৎ রঞ্জন সাহাকে পিটিয়ে জখম করে।

পরে স্থানীয় লোকজন আহত বিদ্যুৎ রঞ্জনকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে খুলনায় প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে তিনি খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

কপিলমুনি বধ্যভূমিতে মাছের হাট

পাইকগাছার কপিলমুনি বধ্যভূমিতে ২০১৩ সালে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ শুরু হলেও অর্থাভাবে মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছর ২৫ মার্চ এমপি আলহাজ্ব শেখ মোঃ নূরুল হক পুনরায় বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। তারপর আজও সংস্কার বা পুনঃনির্মাণ শুরু হয়নি।

এদিকে কপিলমুনি বধ্যভূমির এই অসম্পূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভের উপর প্রতিদিন বসছে মাছের হাট।

ছবি তুলেছেন :: মহানন্দ অধিকারী মিন্টু

যুগপূর্তি অনুষ্ঠান আজ বিকেলে

সময়ের পরিক্রমায় দীর্ঘ এক যুগ পার করেছে ঢাকাস্থ পাইকগাছা সমিতি। যুগপূর্তি ও প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আজ ৯ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় ঢাকার তোপখানা রোডের বিএমএ অ‌ডি‌টো‌রিয়ামে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সংগঠনটি।


উল্লেখ্য, 'পাইকগাছার উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ' - এমন স্লোগান নিয়ে ১২ বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিল ঢাকায় বসবাসকারী পাইকগাছা উপজেলার সন্তানদের নিয়ে গঠিত সংগঠনটি।

যুগপূর্তি অনুষ্ঠান সম্পর্কিত কোন প্রয়োজনে নিন্মোক্ত নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন পাইকগাছা সমিতির সভাপতি জিএম কেরামত আলী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী আব্দুস সাত্তার।

০১৭১৬-৬০১৪৫৮ || ০১৭২৭-৫৪৯৫৯৭
০১৯১৬-০৩৯৭৬৬ || ০১৭১৩-২৪৩৫৬৫

কপিলমুনি যুদ্ধে পরাজিত ১৫১ রাজাকারের মৃত্যুদণ্ডের দিন আজ

স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও সংরক্ষণ করা হয়নি পাইকগাছার ঐতিহাসিক কপিলমুনি যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান। অরক্ষিত রয়েছে রাজাকারদের ব্যবহৃত রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর বসতবাড়ী, এমনকি  গণ আদালতের মাধ্যমে কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দিরের সামনে যেখানে একসাথে ১৫১ রাজাকারকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়, সেখানে আজও স্থাপন করা হয়নি কোন স্মৃতিস্তম্ভ।


১৯৭১ সালের কপিলমুনির ঐতিহাসিক যুদ্ধের সকল স্মৃতি বিজড়িত স্থান স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের মাধ্যমে সংরণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকাবাসী। ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজাকারদের আত্মসমর্পণ ও তাদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার মধ্যদিয়ে রাজাকার মুক্ত হয় বাণিজ্যিক শহর কপিলমুনি।

আজকের এ দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে কপিলমুনি আঞ্চলিক মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতি কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। আয়োজন করেছে নানান অনুষ্ঠানের। আজ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সমিতি কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৮টায় বিজয় র‌্যালি, সাড়ে ৯টায় পথসভা অনুষ্ঠিত হবে।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণারপর দেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যায় দণিাঞ্চলেও হত্যা, নির্যাতন ও লুটপাটে মরিয়া হয়ে ওঠে রাজাকাররা। দণিাঞ্চল পাইকগাছার অন্যতম ঘাঁটি হিসাবে রাজাকাররা ব্যবহার করেন বাণিজ্যিক শহর কপিলমুনির প্রাণ কেন্দ্রেই রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুদের বসতবাড়ী।

বিনোদ বিহারী সাধু ও তার ভাই কুঞ্জু বিহারী সাধু বসতবাড়ীটি ১৯১৬ সালে নির্মাণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর বিনোদ বিহারী সাধু ও তার পরিবার ভারতের কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। আর কপিলমুনির এ বাড়ীতে বসবাস করেন বিনোদের ভাই কুঞ্জু বিহারী সাধু ও তার পরিবার। এলাকার সংখ্যালঘুদের উপর যখন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের অত্যাচর-নির্যাতন ও ধর্মান্তরিত করার প্রবনতা বৃদ্ধি পায় তখন নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য কুঞ্জু বিহারী সাধু ও তার পরিবার এপ্রিল মাসের দিকে পাড়ি জমান ভারতে। স্মরণার্থী হিসাবে তখন তারা আশ্রয় নেন ভারতে।


এদিকে কপিলমুনি ও তার আশপাশ এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার ও কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য পাকিস্তানের মিলিশিয়া বাহিনী ও রাজাকাররা তাদের ঘাঁটি হিসাবে দখল করে রায় সাহেবদের সু-উচ্চ ও সু-প্রশস্থ দেওয়াল বিশিষ্ট বসতবাড়ীটি। রাজাকাররা এ বাড়িটি অন্যতম ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে কপিলমুনি ও আশপাশ এলাকায় তাদের কর্মকান্ড। প্রায় ২০০ জন রাজাকার ও মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যরা সশস্ত্র অবস্থান নেয় ঘাঁটিতে। এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে এলাকার সাধারণ মানুষ। অন্যের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী জোর পূর্বক আনা, তাদের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল।

হিন্দুদের উপর অমানবিক অত্যাচার ও তাদের ধন-সম্পদ লুটসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল রাজাকাররা। রাজাকাররা জোর পূর্বক মনি সিং, জ্ঞান সিং, নরেন সিং, কানু পোদ্দার, তারাপদ ডাক্তার, জিতেন্দ্রনাথ সিং, শান্তিরাম সাধু সহ অসংখ্য হিন্দুকে তাদের নিজস্ব ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হতে বাধ্য করে।

অত্যাচার ও নির্যাতনের ঘাঁটি হিসাবে কপিলমুনি রাজাকার ক্যাম্পটি পরিচিতি লাভ করে। রাজাকারের এ ঘাঁটিটি ধ্বংস করা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক কঠিন ছিল। ১১ জুলাই লেঃ আরেফিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ঘাঁটিতে আক্রমন চালায়। কিন্তু প্রথম আক্রমনটি ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে তালা থানার নকশালদের সমবেত চেষ্টায় রাজাকার ঘাঁটির উপর যে আক্রমন হয় সেটিও ব্যর্থ হয়। এতে রাজাকারদের মনবল বেড়ে যায়। যার কারণে এলাকার স্থানীয় লোকজন রাজাকারদের ভয়ে মুক্তিবাহিনীকে সহযোগিতা করতে ভয় পেতো।

এরপর চূড়ান্ত আক্রমনের জন্য পরিকল্পনা তৈরীতে অংশ নেন, রহমত উলাহ দাদু, স.ম. বাবর আলী, ইউনুছ আলী ইনু, সাহিদুর রহমান কুটু, আবুল কালাম আজাদ ও গাজী রফিকুল ইসলাম। কামরুজ্জামান টুকুর পরামর্শে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সদর দপ্তরে বসে কপিলমুনি রাজাকার ক্যাম্প চূড়ান্ত আক্রমের সিদ্ধান্ত হয়। ৩ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর সব কমান্ডার গণ রাড়ুলীতে মিলিত হন এবং ৪ ডিসেম্বর রাত ৩টায় রাজাকার ঘাঁটিতে আক্রমনের সিদ্ধান্ত নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী পৃথক পৃথক ভাবে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে রাজাকার ঘাঁটি। ৫ ও ৬ ডিসেম্বরের পর রাজাকারদের তেজ কমে আসে।

৭ ডিসেম্বর সকাল থেকে মুক্তিবাহিনী নতুন উদ্যামে যুদ্ধ শুরু করে। মাইকের মাধ্যমে রাজাকারদের আত্মসমর্পনের জন্য বলা হয়। ওদের সব পালানোর পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় তখন তারা স ম বাবর আলীর সাথে আলোচনা করার জন্য প্রস্তাব দেয়। বটিয়াঘাটার ওমর ফারুক কৌশলে বাবর আলী সেজে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। অবাস্তব শর্ত দিলে ব্যর্থ হয় আলোচনা। পুনরায় শুরু হয় প্রাণপণ যুদ্ধ। প্রায় ২ ঘন্টা প্রচন্ড গোলাগুলি হয়। এতে গোলাবারুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় কাবু হয়ে পড়ে রাজাকাররা। এমন সময় কপিলমুনির আকাশে একটি জঙ্গি বিমান উড়তে দেখে ভিতু সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে রাজাকাররা। শেষমেষ বিনা শর্তে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয় রাজাকাররা। তারা দল বেঁধে হাত উঁচু করে আত্মসমর্পন করতে থাকে। কপিলমুনি হাইস্কুল মাঠে রাজাকারদের আত্মসমর্পন দেখতে হাজার হাজার লোক জড়ো হয়।


মোট ১৫৫ জন রাজাকারকে বন্দি করে দড়ি দিয়ে বেঁধে কপিলমুনি হাইস্কুল মাঠে রাখা হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা রাজাকারদের ইচ্ছেমত মারপিট করতে থাকে। স্থানীয় লোকজনের দাবির প্রেক্ষিতে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, গাজী রহমত উলাহ দাদু, ইউনুছ আলী, স ম বাবর আলী, মোড়ল আব্দুস সালাম, শেখ আব্দুল কাইয়ুম সহ কয়েকজনকে নিয়ে গঠন করা হয় গণ আদালত। গণআদালতে সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। 

আটক ১৫৫ জন রাজাকারের মধ্যে দুই জন পালিয়ে এবং দু’জনের বয়স কম হওয়ায় মুক্তি দেওয়া হয়। বাকী ১৫১ জন রাজাকারকে কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির হাইস্কুলের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে গুলি করে গণ  আদালতের রায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। গণ আদালতের এ রায় কার্যকর করার মধ্যদিয়ে পতন হয় রাজাকার ঘাঁটি, রাজাকার মুক্ত হয় কপিলমুনি। 

ঐতিহাসিক এ যুদ্ধে নিহত হন ২ জন, এরা হলেন- ফুলতলার আনোয়ার ও আশাশুনির গোয়ালডাঙ্গার আনসার আলী। আহত হন অনেকেই। যাদের মধ্যে, আগড়ঘাটার তোরাব আলী, গড়ইখালীর রুহুল আমিন, খড়িয়ার আব্দুল খালেক, খুলনার জহুরুল হক বড়খোকা অন্যতম।

১৯৭২ সালের জানুয়ারী মাসে ভারতের স্মরণার্থী শিবির থেকে ফিরে আসেন কুঞ্জু বিহারী সাধুর পরিবার বর্গ। দেশে এসেই ফিরে পান তাদের বসতবাড়ী। বর্তমানে কুঞ্জু বিহারী সাধুর ৪ ছেলের মধ্যে বেঁচে আছেন একমাত্র তপন সাধু। মারা গেছেন ছেলে সাধন, সত্যেন ও তুষার কান্তি সাধু। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহৃত বাড়িটি কুঞ্জু বিহারী সাধুর পরিবার সংস্কার করে বসবাস করছেন।

ছেলে তপন সাধু জানান, নিজেদের এ বাড়ীটি ফিরে পাবো এমন আশা ছিলনা। দেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই নিজেদের বাড়িটি ফিরে পেয়েছি, পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছি এটাই স্বাধীনতার সুফল।

এদিকে স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও ঐতিহাসিক কপিলমুনি যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান সমূহ সংরণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. স ম বাবর আলী জানান, দক্ষিণ খুলনার সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী রাজাকার ঘাঁটি ছিল কপিলমুনি। এই ঘাঁটি পতনের পর পুরো দক্ষিণ খুলনা মুক্ত হয়। একবারে ১৫১ রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড দেশের আর কোথাও নাই বললেই চলে। এ জন্য কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দিরের সামনে যেখানে রাজাকারদের মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হয় সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করার মাধ্যমে ঐতিহাসিক ওই স্থানটি সংরক্ষণ করা উচিত। তা না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একসময় ঐতিহাসিক এ যুদ্ধ এবং কপিলমুনি মুক্ত হওয়ার ইতিহাস ভুলে যাবে।

--মোঃ আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা।

আজ ঐতিহাসিক কপিলমুনি মুক্ত দিবস

জনতার রায়ে প্রকাশ্য দিবালোকে ১৫১ রাজাকারের মৃত্যুদণ্ডের দিন


আজ ৯ ডিসেম্বর, ঐতিহাসিক কপিলমুনি মুক্ত দিবস। পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নবাসীর জন্য এক গৌরবময় আনন্দের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে কপিলমুনির মুক্তিকামী দামাল ছেলেরা পাকহানাদের পরাজিত করে এলাকাটি শত্রুমুক্ত করে। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ও মার্তৃভুমির টানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার অকুতভয় দামাল ছেলেরা।


এই মাঠেই ১৫১ রাজাকারের মৃত্যুদন্ড কার্যকর কারা হয়
যুদ্ধকালীন সময়ে ও তার পুর্বে পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি'সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস্ এবং শান্তি কমিটির দালালরা লুটপাট থেকে শুরু করে ধর্ষণ ও নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় নিরীহ মানুষের উপর। 


সেদিনের লোমহর্ষক ও বর্বোরোচিত ঘটনার কথা আজও ভুলিনি এলাকার মানুষ। ভয়ংকর রাতের স্মৃতি আর হানাদার বাহিনীর তান্ডবলীলা এখনও প্রবীনদেরকে শিউরে তোলে। উপজেলা সদর হতে ১২ কিঃমিঃ উত্তরে কপোতাক্ষের তীরবর্তী ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনির অবস্থিত। প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু। সে সময় রায় সাহেবের বিশালাকৃতির বাড়ীটি রাজাকাররা সুরক্ষিত দুর্গ হিসাবে বেঁছে নিয়েছিল। মান্দাতা আমলের ঐতিহ্যবাহী এ বাড়িটিকে ঘিরে যুদ্ধের অনেক স্মৃতিচিহ্ন আজও বহন করে চলেছে।

রাজাকাররা তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রাচীর বেষ্টিত দ্বিতল এ ভবনটি তাদের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত মনে করে গড়ে তুলেছিল রাজাকার ঘাঁটি। প্রায় ২০০ জন রাজাকার সর্বদা নিয়োজিত থেকে যুদ্ধ করেছিল। এলাকার হিন্দু ও নিরীহ লোকদের ধরে এনে নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে আজও শিহরিত হন প্রবীনরা।

১৯৭১ সালে ১১ জুলাই লেঃ আরিফিনের নের্তৃত্বে সরদার ফারুক আহমেদ, আবুবক্কার, শাহজাহান, মাহতাব, লতিফ, আনোয়ার, মনোরঞ্জনসহ আরোও অনেকে কপিলমুনি রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমন চালায়। রাত ৩টা থেকে পরদিন বেলা ৩টা পর্যন্ত চলে একটানা যুদ্ধ।

ঐ সময় খাদ্য, পানীয় ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতার অভাবে প্রথমবারের অভিযানে রাজাকার ঘাটির পতন ঘটানো সম্ভব হয়নি। এরপর সমন্বিত মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যমতে শুরু হয় নতুন পরিকল্পনা। আর এরই মধ্যে রাজাকারদের নিষ্ঠুর নির্যাতনের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। কথিত আছে, কপিলমুনি বাজারের কৃষ্ণচুড়া বৃক্ষের নীচে জবাই করে নির্মমভাবে হত্যা করা হতো নিরীহদেরকে। 

রায় সাহেবের বিশালাকৃতির বাড়ীটি রাজাকাররা সুরক্ষিত দুর্গ হিসাবে বেঁছে নিয়েছিল
এদিকে যুদ্ধের নতুন পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর মুক্তি বাহিনীর দক্ষিণ খুলনার সমস্ত ক্যাম্প কমান্ডারদের একত্রিত করে তাদের মতামত ও যুদ্ধের কলাকৌশল নির্ধারণ করে পুনরায় শুরু হয় যুদ্ধ। ঐ সময় চুড়ান্ত পরিকল্পনায় অংশ নেন গাজী রহমত উল্লাহ দাদু, স. ম. বাবর আলী, ইউনুচ আলী, শাহাদাৎ হোসেন বাচ্ছু, আঃ সালাম মোড়ল, আবুল কালাম আজাদসহ আরোও অনেকে।

৬ ডিসেম্বর রাতে আক্রমণ করা হয় কপিলমুনি রাজাকার ঘাটি। দফায় দফায় চলে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ। স্থানীয় প্রতাপকাটি কাঠের ব্রীজের উপর ৮ জন রাজাকার, তার একটু পেছনে আরো ৫ জন রাজাকার যুদ্ধে মারা যায়। একেরপর এক মরতে থাকে পাক দোসর রাজাকারদলের সদস্যরা। ৭ ও ৮ ডিসেম্বর একটানা যুদ্ধের পর ৯ ডিসেম্বর সকাল ১১ ঘটিকায় ১৫৫ জন রাজাকার আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। 


রাজাকারদের পতন ও কপিলমুনি হাইস্কুল মাঠে আত্মসমর্পন এর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে চতুর্দিক থেকে জড়ো হতে থাকে জনতা। উপস্থিত জনতার সমন্বয়ে একটি গন আদালত গঠন করে ১৫৫ জন রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়। কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দিরের মাঠে দুপুর ২টায় প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে ১৫১ রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর কারার মধ্যদিয়ে মুক্ত হয় পাইকগাছার কপিলমুনি।

উল্লেখ্য, কপিলমুনি মুক্ত দিবসের সঠিক তারিখ ৭ ডিসেম্বর না ৯ ডিসেম্বর এই বির্তক রয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের এক অংশ এতদিন বলেছে ৭ ডিসেম্বর কপিলমুনি মুক্ত দিবস। জানা যায়, ১৯৯২ সালে কপিলমুনি মক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনকারী সহ-অধিনায়ক প্রয়াত মোড়ল আব্দুস সালাম প্রথম এই মুক্ত দিবস পালনের উদ্যোগ নেন এবং ৭ ডিসেম্বর সাড়ম্বরে পালিত হয় ঐতিহাসিক কপিলমুনি মুক্ত দিবস। 

এই মাঠেই জনতার রায়ে প্রকাশ্য দিবালোকে ১৫১ রাজাকারের মৃত্যুদন্ড কার্যকর কারা হয়

পরবর্তীতে কপিলমুনি মুক্ত দিবসের তারিখ নিয়ে তৎকালীন পাইকগাছা থানা আ‘লীগের সাধারন সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত এ্যাড. স,ম ইউসুফ আলী পত্রিকায় বিবৃতি দেন কপিলমুনির মুক্ত দিবসের সঠিক তারিখ ৯ ডিসেম্বর। ফলে বির্তকের সৃষ্টি হয় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। ফলে দু’টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েন মুক্তিযোদ্ধারা। স্ব স্ব কর্র্মসূচি নিয়ে ৭ ও ৯ ডিসেম্বর কপিলমুনি মুক্ত দিবস পালিত হয় কয়েকবার।

ঐ সময় মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনকারী এক পক্ষের দাবী ছিল, ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর শনিবার রাত ৩ ঘটিকায় অতর্কিতে কপিলমুনি রাজাকারদের এই শক্ত ঘাটিতে আক্রমণ শুরু হয়। ৫ ও ৬ ডিসেম্বর যুদ্ধ চলে। ৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজাকাররা আত্মসমর্পনে বাধ্য হয়।

তবে মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম জানান, মুক্ত দিবসের তারিখ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এতদিন যে বিরোধ ছিল তার অবসান ঘটেছে। সবাই বসে তারিখ ঠিক করেছেন ৯ ডিসেম্বর কপিলমুনি মুক্ত দিবস।