Tuesday, June 4, 2013

উপকূলীয় অঞ্চলে দু’কোটি মানুষ শরণার্থী হওয়ার আশঙ্কায়

জলবায়ু পরিবর্তের বিরূপ প্রভাব ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে হুমকির মুখে পড়েছে খাদ্য নিরাপত্তা ও জীব বৈচিত্র। চরম আকারে হ্রাস পেয়েছে কৃষি উৎপাদন, গাছপালা নেই বললেই চলে। বিলুপ্ত হয়েছে ৬০ প্রজাতির মাছ ও অসংখ্য প্রজাতির পশুপাখি। কর্মসংস্থানের অভাবে প্রায় ১০ লাখ মানুষ সুন্দরবনের সম্পদের উপর নির্ভরশীল এবং ১ লাখ শ্রমজীবী বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে।

সূত্র মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে বিবেচনা করা হচ্ছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাংলাদেশ দেশের জনগণ ও প্রান সম্পদ আজ ভয়াবহ হুমকির মুখোমুখি। বিশ্লেষকদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে আগামী ৪০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে দেশের উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলা ও কক্সবাজারের কুতুবদিয়া পুরোপুরি সাগর গর্ভে বিলিন হয়ে যাবার আশঙ্খা রয়েছে। সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা ১০০ সেঃ মিঃ বাড়লে পানির নিচে তলিয়ে যাবে ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চল, পরিবেশ শরণার্থী হবে দু'কোটি মানুষ। শতকরা ২৯ শতাংশ নিচু এলাকা বন্যার ঝুকি বাড়বে। পরিসংখ্যান মতে, গত ৩৩ বছরে বাংলাদেশের কৃষি জমি কমেছে ১ কোটি ১৯ লাখ ৫৭ হাজার হেক্টর।

এ হিসেবে প্রতি বছর গড়ে ৬৫ হাজার হেক্টর আবাদী জমি কমছে। এই হারে কমতে থাকলে আগামী ২০ বছর পর দেশে কৃষি জমির পরিমাণ দাড়াবে ৫০ হাজার হেক্টরে। এক সময়ের কৃষি অধ্যুষিত উপকুলীয় খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে ষাটের দশকে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ নির্মাণের ফলে গোটা এলাকা কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটে। সবুজ গাছপালায় উপকূলীয় এলাকা পরিণত হয় মিনি অরণ্যে। ঐ সময় প্রতিটি বাড়িতে ছিল গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ, গোলা ভরা ধান। এলাকার চাহিদা পুরণ করে উদ্বৃত খাদ্য শস্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হতো। এক পর্যায়ে ৮০’র দশকে এ অঞ্চলে শুরু হয় পরিবেশ বিধ্বংশী লবণ পানির চিংড়ি চাষ। বর্তমানে উপকূলীয় খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, রূপসা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, দেবহাটা, আশাশুনি, বাগেরহাটের শরণখোলা, রামপাল, মোড়েলগঞ্জ, মংলায় প্রায় দেড় লাখ হেক্টর কৃষি জমিতে লবণ পানি উত্তোলনের মাধ্যমে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ বিপর্যয় ও লবণ পানির আগ্রাসনে এ অঞ্চলে চরম আকারে হ্রাস পেয়েছে কৃষি জমি। গত দু’দশক ধরে রয়েছে খাদ্য ঘাটতি। ষাটের দশকে নির্মিত বাঁধগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত জোয়ারের উপচে পড়া পানিতে প্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। অসংখ্য নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।

শুধুমাত্র গত বছরেই বর্ষা মৌসুমে সাতক্ষীরা সহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়ে। সুপেয় পানির রয়েছে চরম সংকট। বিচরণ ক্ষেত্র ও গো খাদ্যের অভাবে হ্রাস পেয়েছে গবাদি পশু। গাছ-পালার অভাবে জ্বালানী সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।

আবাসস্থল সংকটের কারণে ময়না, টিয়া, ঈগল, দোয়েল, শ্যামা, ঘুঘু সহ অসংখ্য পাখি বণ্য প্রাণী এবং অনেক উভচরপ্রাণী বিলুপ্ত প্রায়। বিলুপ্ত হয়েছে শৈল, টাকি, বাইম, মলা, চেলা সহ ৬০ প্রজাতির সাধু পানির মাছ। কর্মসংস্থানের অভাবে প্রায় ১০ লাখ মানুষ ঝুকে পড়েছে সুন্দরবনের সম্পদের উপর। গত এক দশকে প্রায় ১ লাখ মানুষ পাড়ি জমিয়েছে বিদেশে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে উপকূলীয় অঞ্চল বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ও উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ সহায়ক টেকসই দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হোক এমনটাই প্রত্যাশা উপকূলবাসীর।

পাইকগাছায় সশস্ত্র ছিনতাই সংগঠিত

পাইকগাছা-কয়রা সড়কের শিববাড়ি ব্রীজের পশ্চিম পাড়ের রাস্তায় সশস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার দিনগত গভীর রাতে ৮/১০ জন যুবক অস্ত্রের মুখে আলমতলা সড়কের মাঝামাঝি ফাঁকা স্থানে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চালক তরুণকে মারধর করে তার কাছ থেকে মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। আলমতলা ও আশপাশের কিছু বখাটে যুবক উক্ত ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত এবং রাতেই ঘটনা জানাজানি হলে তারা এলাকা ছেড়ে গাঢাকা দিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।