Tuesday, December 10, 2013

কাদের মোল্লার ফাঁসি ‘স্থগিত’

কারা কর্তৃপক্ষ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর আব্দুল কাদের মোল্লার আইনজীবীদের আবেদনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিত করেছে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমদু হোসেন।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত স্থগিত রাখার আদেশ পেয়েছেন তারা।

সন্ধ্যায় কারা কর্তৃপক্ষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি নেয়ার পর কাদের মোল্লার আইনজীবীরা তা স্থগিতের আবেদন নিয়ে কাকরাইলে চেম্বার বিচারপতির বাড়িতে যান।

রাত ১২টা ১ মিনিটে কাদের মোল্লার ফাঁসি

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কাদের মোল্লাকে ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হচ্ছে মঙ্গলবার রাতেই। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে রাখা এ আসামিকে ফাঁসিতে ঝোলানোর সব প্রস্তুতিও শেষ করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার রাত ৮টায় সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজই রাত ১২টা ১ মিনিটে আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হবে। ইতিমধ্যে ২৩ জন স্বজন তার সঙ্গে দেখা করে গেছেন। রাতে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর স্বাভাবিক খাবার দেয়া হবে। এরপর জেলকোড অনুযায়ী বিধি মেনে তাকে নির্দিষ্ট সময়ে ফাঁসিমঞ্চে নেয়া হবে। সেখানে তার জন্য নির্দিষ্ট জল্লাদের মাধ্যমে ফাঁসি কার্যকর করা হবে।’

এর আগে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু রাত ১২টা ১ মিনিটে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।

সন্ধ্যায় কাদের মোল্লার পরিবারকে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য চিঠি পাঠানো হয়। রাত ৮টার মধ্যেই কনডেম সেলে তার সঙ্গে পরিবারের দেখা হয়।

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, মঙ্গলবার রাত ১২টার পরেই কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। আর সে কারণেই কাদের মোল্লার পরিবারকে রাত ৮টার মধ্যে দেখা করতে বলা হয়েছে।

প্রস্তুত মঞ্চ:
কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দু’দিন আগেই ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। কারাগারের দুটি ফাঁসির মঞ্চের একটিকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। ফাঁসির দড়িও ঠিক করে রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার রাতে ফাঁসির মঞ্চে জ্বালানো হয়েছে বিশেষ আলো। এরই মধ্যে কারাগারের অভ্যন্তরে ফাঁসির মহড়াও দেয়া শেষ।

কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে গেছে, যে দড়িতে কাদের মোল্লাকে ঝোলানো হবে সে দড়িতে কাদের মোল্লার সমান ওজনের ইটসহ বস্তা বেঁধে এ মহড়া দেয়া হয়।

ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফাঁসির মঞ্চ পরিদর্শন করেছেন বলেও জানা গেছে।

জল্লাদ যারা:
কাদের মোল্লাকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানোর জন্য জল্লাদের তালিকা চূড়ান্ত করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এ তালিকায় ছয় জল্লাদের নাম এসেছে বলে জানা যায়। কারা সূত্র জানায়, প্রধান জল্লাদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৬০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি শাহজাহান মোল্লা। এ জল্লাদ ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পাঁচ আসামিকে ফাঁসিতে ঝোলানোর দায়িত্ব পালন করেন।

ফাঁসিতে কাদের মোল্লাকে ঝোলানোর সময় আরও পাঁচ সহকারী জল্লাদকে সঙ্গে রাখা হবে। তাদের সঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক ও একজন ম্যাজিস্ট্রেটও উপস্থিত থাকবেন। ফাঁসির আগে কাদের মোল্লাকে ইসলাম ধর্মের রীতি অনুযায়ী ‘তওবা’ পড়ানোর কথা রয়েছে।

যেভাবে কার্যকর হবে রায়:
কারাগার সূত্রে জানা যায়, নির্দিষ্ট সময়ে কাদের মোল্লাকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হবে। কারাগারের তত্ত্বাবধায়কের হাতে এসময় একটা লাল রুমাল থাকবে। তার হাত থেকে রুমালটি মাটিতে পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফাঁসি কার্যকর হবে। এসময় জল্লাদ মঞ্চে লোহার তৈরি বিশেষ হাতল (লিভার) টেনে ধরবেন। ফলে কাদের মোল্লার পায়ের তলা থেকে মঞ্চের কাঠ সরে যাবে। ফাঁসিতে ঝোলানোর পর আধাঘণ্টা পর্যন্ত কাদের মোল্লার লাশ দড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হবে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য।

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

গত ৩-১২-২০১৩ তারিখ ''দৈনিক প্রবর্তন'' পত্রিকায় শেষ পৃষ্ঠার ৫ম কলামে পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষায় ৪ জন ছাত্রের বিলম্বে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে ''পাইকগাছায় ৪ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা থেকে বিরত রাখার অভিযোগ'' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও কল্পনা প্রসূত।

এ ধরনের সংবাদ একটি স্বনামধন্য বিদ্যালয়ের সুনামকে ধ্বংস করে, শিক্ষার্থীদের নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে না চলতে উৎসাহিত করে, যা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি।

সৌমেন্দ্র নাথ মজুমদার একজন আদর্শবান শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অবাস্তব, বানোয়াট, ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশে এলাকার সুধীজনসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ ভীষন ভাবে ক্ষুদ্ধ। এ সংবাদকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।

একজন সাংবাদিকের মূল্যবোধ হীন ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থে কতটা ঘৃণিত পর্যায়ে নামলে এ ধরনের অবাস্তব, বানোয়াট, ভিত্তিহীন কল্পনা প্রসূত সংবাদ প্রচার করতে পারে তা ভেবে আমরা বিষ্মিত হচ্ছি পাশাপাশি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত)
পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
 
তারিখ: ১০-১২-২০১৩

পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় থেকে পাঠানো প্রতিবাদলিপিটি হুবহু সংযুক্ত করা হল।


ম্যাজিক ডেতে চমকে দিন চারপাশ

১১.১২.১৩ হচ্ছে ম্যাজিক ডে। ম্যাজিক ডে হিসেবে বিশ্ববাসীর মধ্যে নানা উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। সারা বছরের বিভিন্ন ব্যস্ততায় হয়তো আমরা নিজেকেই নিজে সময় দিতে পারি না। 


আসুন না এবারের ম্যাজিক ডেতে নিজেকে চমকে দেয়ার পাশাপাশি হাসি-আনন্দ আর ভালো কাজে চমকে দেই চারপাশ। অনেকেই হয়তো এরই মধ্যে পরিকল্পনা করে ফেলেছেন ম্যাজিক ডে কিভাবে স্মরণীয় করে রাখবেন।

আর যাদের কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের জন্য
Voice of Paikgacha'র পক্ষ থেকে রইল কিছু টিপস। এসব টিপস দেখে এখনই ঠিক করে ফেলতে পারেন ম্যাজিক ডে কিভাবে স্মরণীয় করে রাখবেন।

নিজের শরীরকে সুস্থ রাখতে ধূমপান কিংবা অন্য কোনো নেশা থাকলে তা ছেড়ে দিন। আপনার চারপাশকে সুন্দর রাখতে পরিবেশ সচেতন করতে লাগাতে পারেন গাছ।

আর কিছু না হোক ‘সত্য কথা বলবো’ কিংবা ‘অন্যের উপকার করতে না পারলেও যেন ক্ষতি না করি’ অথবা ‘লোভ-লালসাকে দূরে রেখে দেশ ও দশের কল্যান হয় এমন কাজ করবো’ ‘দুর্নীতি থেকে দূরে থাকবো’ এমন প্রতিজ্ঞাতো আমরা করতেই পারি।

অন্তত একটি শিশুর মুখে হাসি ফুঁটিয়ে তুলুন এবং শীর্তাত ব্যক্তিকে শীতের কাপড় দিয়ে সাহায্য করুন। নারী নির্যাতনের প্রতিরোধে কাজ করতে পারেন।

আপনার একটি ভালো কাজ হয়তো হাজারো মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তাহলে সেই ভালো কাজটি এরকম একটি ম্যাজিকাল ভালো দিনে আপনিই বা কেন করবেন না।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, সুন্দরবন আর জনকূটনীতি

সুন্দরবন থেকে মাত্র নয় কিলোমিটার দূরে বাগেরহাটের রামপালে হতে যাচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সুন্দরবনকে হুমকিতে ফেলে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির এ পরিকল্পনা অর্থনৈতিক উন্নয়ন বনাম প্রকৃতি বা পরিবেশ সংরক্ষণের পুরোনো বিতর্ককে সামনে নিয়ে এসেছে স্বাভাবিকভাবেই।

যাঁরা পক্ষদলে আছেন, তাঁরা দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-ঘাটতি কমানোটাকে অনেক বেশি জরুরি বলে মনে করছেন। তাঁরা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে এই মুহূর্তে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এবং কারিগরি দক্ষতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁরা যুক্তি দেখাচ্ছেন, ‘সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি’র সর্বোচ্চ প্রয়োগ সুন্দরবনকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবে।

বিরোধী পক্ষের দাবি, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প শুরুর প্রক্রিয়াগত ত্রুটি, অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় স্থান নির্বাচন, জমি অধিগ্রহণ, দুর্বল এবং পক্ষপাতমূলক পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ), নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পরিবেশগত ছাড়পত্র সংগ্রহ, প্রকল্পের দূরত্বভিত্তিক অবস্থানের বিতর্ক প্রভৃতির পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রকল্প নিশ্চিতভাবে সুন্দরবনের বিনাশ করবে।

তবে দুই পক্ষের তর্ক-বিতর্ক ছাড়িয়ে এখন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে একটা নতুন প্রবণতা খুব লক্ষণীয়। তা হলো স্যাটেলাইট চিত্রের জনকূটনীতি। এর অংশ হিসেবে সংসদে প্রদর্শন করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন লোকালয়ে অবস্থিত গুগলের তোলা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচ-ছয়টি স্যাটেলাইট চিত্র। মহাশূন্য থেকে তোলা এসব স্যাটেলাইট চিত্রের মাধ্যমে সরকারপক্ষ রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, লোকালয়ে অবস্থিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অনেক দূরবর্তী স্যাটেলাইট চিত্রের মাধ্যমে কি ভূমিতে ঘটে যাওয়া পরিবেশগত বিপর্যয়ের আসল চিত্র জনসাধারণের পক্ষে বোঝা সম্ভব ?

এখানে স্যাটেলাইট চিত্রের অন্তত একটি, তথা বিজ্ঞান ও কারিগরি দক্ষতায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এগিয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্রকেই বেছে নেয়। যদিও অস্ট্রেলিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলসের যেসব উন্মুক্ত খনি থেকে কয়লা সংগ্রহ করা হয়, সেগুলোর পরিবেশগত বিপর্যয় এবং তার রাজনৈতিক অর্থনীতির বিশদ বিবরণ পাওয়া যাবে ২০১২ সালে প্রকাশিত শ্যারিন মানরো কর্তৃক রচিত ম্যাকমিলান পাবলিশারের রিচ ল্যান্ড, ওয়্যাস্ট ল্যান্ড: হাউ কোল ইজ কিলিং অস্ট্রেলিয়া গ্রন্থটিতে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং পরিবেশগত ভূমিস্থ বাস্তবতা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এই ‘ফটো-কূটনীতি’র আওতাভুক্ত হয়েছে, সেটির নাম হলো ‘কিংস্টন ফসিল পাওয়ার প্ল্যান্ট’। টিনেসি রাজ্যের রোন কাউন্টিতে ১৯৫৫ সালে ১ দশমিক ৭ গিগাওয়াট বা এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হয়। এটি মূলত এমোরি ও ক্লিঞ্চ নদীর মোহনায় অবস্থিত। এর অবস্থানগত বৈশিষ্ট্য অনেকটাই মেলে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে।

বাংলাদেশের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রও পশুর নদ ও শিবসা নদীর মোহনায় অবস্থিত। এমনকি রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রস্তাবিত অবকাঠামোগত নকশায় ছাই ব্যবস্থাপনার জন্য প্রস্তাবিত পুকুরের অবস্থানগত আদল অনেকটাই কিংস্টন বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুকুরের মতো। উভয় ক্ষেত্রে পুকুর দুটি নদীর মোহনাসংলগ্ন। ৮৪ একরের কিংস্টন বিদ্যুৎকেন্দ্রের এই পুকুরটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপজাত হিসেবে ছাইয়ের কাদা নিঃসরিত হতো। এই ছাই-কাদা পুকুর থেকে আস্তে আস্তে চুইয়ে এমোরি ও ক্লিঞ্চ নদীতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এই চুইয়ে পড়া ছাই-কাদা শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বর নাগাদ। চার মিলিয়ন ঘনমিটার পরিমাণ এই ছাই-কাদা প্রায় ১ দশমিক ২ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। এতে নদীর দুই তীরের লোকালয়েও পরিবেশগত বিপর্যয় নেমে আসে। মৎস্যসম্পদ ধ্বংস হওয়াসহ প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে নদীর পানিও দূষিত হয়ে পড়ে। এর ক্ষতিকর প্রভাব স্থানীয় মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহার্য পানির ওপরও পড়েছিল। এই পানিতে লেড, থ্যালিয়াম, পারদ ও আর্সেনিকের মাত্রাও সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক ওপরে উঠে গিয়েছিল। ছাই-কাদায় ঢেকে যাওয়া এমোরি নদী। (উৎস: উইকিপিডিয়া)

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিষ্ঠান এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি জানিয়েছিল, নদীগুলো দূষণমুক্ত করতে চার-ছয় সপ্তাহ লাগবে। কিন্তু ছয় মাস পরে দেখা গেল, নিঃসরিত ছাই-কাদার মাত্র ৩ শতাংশ সরানো সম্ভব হয়েছে।

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, কিংস্টন বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা টিনেসি ভ্যালি অথরিটি ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত একটি প্রচারপত্রের মাধ্যমে দাবি করে যে নদীতে নিঃসরিত এই ছাই-কাদা ‘দূষণ-সম্ভাবী নয়’। এই কিংস্টন ফসিল পাওয়ার প্ল্যান্ট দূষণের তিক্ত অভিজ্ঞতা ২০০৯ সালে মার্কিন সিনেটে আলোচিত হয় এবং দেশজুড়ে অবস্থিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাই ব্যবস্থাপনার পুনর্মূল্যায়নের দাবিও কংগ্রেসে উঠে আসে। পরবর্তী সময়ে মার্কিন কংগ্রেসের প্রাকৃতিক সম্পদসংক্রান্ত পর্ষদ ছাই ব্যবস্থাপনার পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত একটি বিলও পাস করতে বাধ্য হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে সরকারপক্ষ থেকে দূরবর্তী স্যাটেলাইট চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে যে জনকূটনীতির সূচনা ঘটানো হলো, অন্তত তা কিংস্টন ফসিল পাওয়ার প্ল্যান্টের অভিজ্ঞতায় কোনো সততার প্রমাণ দেয় না; বরং এটা নিশ্চিত করে, যে তারা মননে জনবিচ্ছিন্ন এবং তাদের কাছে জনস্বার্থের চেয়ে অন্য কিছু এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই সরকারপক্ষের জনকূটনীতি জনকূটচালে আটকা পড়ে গেছে। এ সবকিছুই সুন্দরবনকে ঘিরে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে যাঁরা বলছেন, তাঁদের নৈতিক পরাজয়ের প্রকাশ ছাড়া অন্য কিছু নয়। তাই জনবিক্ষোভের আশঙ্কায় বাগেরহাটের রামপালে অবস্থিত তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে হয় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায়!

মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান: শিক্ষক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

পাইকগাছায় নারী নির্যাতন নির্মূলে ব্র্যাকের মানববন্ধন

পাইকগাছায় নারী নির্যাতন নির্মূল করনে আর্ন্তজাতিক প্রচারাভিযানের অংশ হিসাবে ব্র্যাকের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। 

মঙ্গলবার সকালে সরলস্থ প্রধান সড়কে ব্র্যাক কৃষি, খাদ্য ও নিরাপত্তা কর্মসূচী প্রকল্পের উপজেলা ব্যবস্থাপক একেএম শাহীন আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মসূচীতে প্রধান অতিথি ছিলেন কাউন্সিলর এসএম তৈয়েবুর রহমান।

বিশেষ অতিথি ছিলেন পাইকগাছা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি আব্দুল আজিজ, সাধারণ সম্পাদক এসএম আলাউদ্দিন সোহাগ, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচী খুলনা অঞ্চলের কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুর রহমান, আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মোঃ আব্দুল আওয়াল চৌধুরি, উপজেলা ব্যবস্থাপক (স্বাস্থ্য কর্মসূচী) প্রশান্ত কুমার রায়, সুজয় কুমার সাহা।

বক্তব্য রাখেন, আসমা আক্তার, আবু সাঈদ, শামীমা ইয়াসমিন, সীমা দাশ, কমলা রাণী মন্ডল ও দীপালি রাণী। কর্মসূচীতে বক্তারা শান্তি ও ন্যায্যতা অর্জনে নারী নির্যাতনমুক্ত পরিবার ও সমাজ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

''শ্রেষ্ঠ জয়িতা'' মুক্তিযোদ্ধা কন্যা সাবিনা ইয়াসমিন

শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরষ্কার অর্জন করেছেন পাইকগাছার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কন্যা সাবিনা ইয়াসমিন। আর্ন্তজাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষ্যে রোববার খুলনা জেলা প্রশাসন, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও সোমবার পাইকগাছা উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর আয়োজিত “জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ” শির্ষক পৃথক অনুষ্ঠানে নারী হিসাবে শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় শ্রেষ্ঠ জয়িতার স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ক্রেষ্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। শ্রেষ্ঠ এ জয়িতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জন্মস্থান পাইকগাছার বিভিন্ন মহল।

এ বছর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে গুরুত্ব পূর্ণ অবদান রাখায় শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরুষ্কার অর্জন করেছেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কন্যা সাবিনা ইয়াসমিন। এলাকায় তাকে অনেকেই সাবিনা ইয়াসমিন মালা নামে চেনেন। শ্রেষ্ঠ এ জয়িতার জন্ম পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নে (বর্তমান সরল গ্রাম)।

সাবিনা জন্ম থেকেই অনেকটাই হতভাগী কারণ মা সালমা বেগম এর গর্ভে থাকাবস্থায় ১৯৭১ সালের ২৮ জুলাই পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মম ভাবে শহীদ হন পিতা শেখ মাহতাব উদ্দীন মনি মিয়া (সাবেক চেয়ারম্যান)।

এতিম সাবিনা ভেঙ্গে না পড়ে দেশ প্রেম পিতার আদর্শকে ধারণ করে এগিয়ে চলেন সামনের দিকে। তিনি ১৯৮৭ সালে পাইকগাছা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেধা তালিকায় এসএসসি, ৮৯'তে পাইকগাছা কলেজ থেকে এইচএসসি, ৯২'তে বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও ১৯৯৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ (ইংরেজি) পাস করে।

লেখাপড়া শেষ করে তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ফসিয়ার রহমান মহিলা মহাবিদ্যালয়ে ইংরেজি প্রভাষক হিসাবে চাকুরী করেন। এখানে কর্মরত থাকাবস্থায় তিনি শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন।

এরপর তিনি ২১তম বিসিএসএ উত্তির্ণ হওয়ার মাধ্যমে ২০০৩ সালে সহকারী কমিশনার (ম্যাজিষ্ট্রেট) হিসাবে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন। এ পদে তিনি ঢাকা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর কর্মরত থাকার পর ২০০৭ সালে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসাবে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ী, ময়মনসিংহ সদর এবং ২০০৯ সালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসাবে গাজীপুরের শেরপুর, গাজীপুর সদর, ময়মনসিংহের গফরগাঁও ও নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁ কর্মরত ছিলেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩ হতে তিনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হিসাবে যশোরে কর্মরত রয়েছেন।

বর্তমানে তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশিক্ষণ বিভাগে পিএইচডি করছেন। তাহার গবেষনার বিষয় ''পাবলিক হেল্থ সার্ভিস ডেলিভারী সিষ্টেম ইন দি কমিউনিটি হেল্থ অব বাংলাদেশ''।

ইতোমধ্যে তিনি এমআইডি ক্যারিয়ার প্রশিক্ষণের আওতায় ভারত সফর করেছেন। শিক্ষক ও প্রশাসকের শ্রেষ্ঠ এ জয়িতার লেখক হিসাবে রয়েছে একটা পরিচিতি। ইতোমধ্যে তাহার রচিত লোভ দেখালেও জুঁই-চন্দন, বলিতে ব্যাকুল, পূর্ণিমার পরদিন ও জলে জ্যোৎস্নায় এই অবেলায় সহ ৪টি কাব্যগ্রস্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও ২০১৪ সালের ২১'শে বই মেলায় তাহার ৫ম কাব্য গ্রস্থ প্রকাশিত হবে বলে জানা গেছে।

শত ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে সাবিনা ব্যক্তিগত জীবনে বিচার বিভাগে কর্মরত স্বামী মোঃ শরীফ হোসেন হায়দার, পুত্র রূবাইয়াৎ ইশম্মাম প্রিয়ন্ত ও কন্যা পুষ্পিতা পরিজাত টিপ কে নিয়ে সুখেই রয়েছেন।

নারী উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত ও শ্রেষ্ঠ এ জয়িতাকে অভিনন্দ জানিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রশীদুজ্জামান, পৌর মেয়র মোঃ সেলিম জাহাঙ্গীর, নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর, পাইকগাছা প্রেসক্লাবের সভাপতি গাজী সালাম, নন্দিনী সাহিত্য পাঠ চক্রের সভানেত্রী ও প্রধান শিক্ষক সুরাইয়া বানু ডলী।