Sunday, June 12, 2016

বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে করণীয়

বৈশ্বিক উষ্ণতা বজ্রপাতের কম্পাঙ্ক লক্ষণযোগ্য হারে বৃদ্ধি করছে। আমাদের দেশেও এ মৌসুমে বজ্রপাতের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিবছরই বজ্রপাতে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এ থেকে রক্ষা পেতে করণীয় দিকগুলো আলোচনা করা হলো-

বজ্রপাতের আগ মুহূর্তের লক্ষণ :: বজ্রপাত হওয়ার আগ মুহূর্তে কয়েকটি লক্ষণে কোথায় তা পড়বে তা বোঝা যেতে পারে। যেমন বিদ্যুতের প্রভাবে আপনার চুল খাড়া হয়ে যাবে, ত্বক শিরশির করবে বা বিদ্যুৎ অনুভূত হবে। এ সময় আশপাশের ধাতব পদার্থ কাঁপতে পারে। অনেকেই এ পরিস্থিতিতে ‘ক্রি ক্রি’শব্দ পাওয়ার কথা জানান। আপনি যদি এমন পরিস্থিতি অনুভব করতে পারেন তাহলে বজ্রপাত হবে এমন প্রস্তুতি নিন।



খোলা বা উঁচু স্থান থেকে দূরে থাকা :: ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোনো অবস্থাতেই খোলা বা উঁচু স্থানে থাকা যাবে না। পাকা দালানের নিচে আশ্রয় নেয়াই সুরক্ষার কাজ হবে।

উঁচু গাছপালা ও বিদ্যুৎ লাইন থেকে দূরে থাকা :: কোথাও বজ্রপাত হলে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই এসব স্থানে আশ্রয় নেয়া যাবে না। যেমন- খোলা স্থানে বিচ্ছিন্ন একটি যাত্রী ছাউনি, তালগাছ বা বড় গাছ ইত্যাদি।

জানালা থেকে দূরে থাকা :: বজ্রপাতের সময় ঘরের জানালার কাছাকাছি থাকা যাবে না। জানালা বন্ধ রেখে ঘরের ভেতর থাকতে হবে।

ধাতব বস্তু স্পর্শ না করা :: বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করা যাবে না। এমনকি ল্যান্ড লাইন টেলিফোনও স্পর্শ করা যাবে না।

বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রের ব্যবহার থেকে বিরত থাকা :: বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব যন্ত্রপাতি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও ধরা যাবে না। বজ্রপাতের আভাষ পেলে প্লাগ খুলে বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। অব্যবহৃত যন্ত্রপাতির প্লাগ আগেই খুলে রাখতে হবে।

গাড়ির ভেতর থাকলে :: বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে থাকলে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেয়া যে পারে। গাড়ির ভেতরের ধাতব বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

গগণচুম্বী স্থান থেকে নিজেকে সরাতে হবে :: এমন কোনো স্থানে যাওয়া যাবে না। যে স্থানে নিজেই ভৌগলিক সীমার সবকিছুর উপরে। মানে আপনিই সবচেয়ে উঁচু। এ সময় ধানক্ষেত বা বড় মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি নিচু হয়ে যেতে হবে। বাড়ির ছাদ কিংবা উঁচু কোনো স্থানে থাকলে দ্রুত সেখান থেকে নেমে যেতে হবে।

পানি থেকে দূরে থাকা :: বজ্রপাতের সময় নদী, জলাশয় বা জলাবদ্ধ স্থান থেকে সরে যেতে হবে। পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী তাই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

পরস্পর দূরে থাকতে হবে :: বজ্রপাতে সময় কয়েকজন জড়ো হওয়া অবস্থায় থাকা যাবে না। ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যেতে হবে। কোনো বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যাওয়া যেতে পারে।

নিচু হয়ে বসা :: যদি বজ্রপাত হওয়ার উপক্রম হয় তাহলে কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে চোখ বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু এ সময় মাটিয়ে শুয়ে পড়া যাবে না। মাটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে।

রবারের বুট পরিধান :: বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। এ সময় বিদ্যুৎ অপরিবাহী রাবারের জুতা সবচেয়ে নিরাপদ।

বাড়ি সুরক্ষিত করতে হবে :: বজ্রপাত থেকে বাড়িকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য আর্থিং সংযুক্ত রড বাড়িতে স্থাপন করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নিতে হবে। ভুলভাবে স্থাপিত রড বজ্রপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।

বজ্রপাতে আহত হলে :: বজ্রপাতে আহত কাউকে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতোই চিকিৎসা করতে হবে। দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে। হাসপাতালে নিতে হবে। একই সঙ্গে আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তবে এ বিষয়ে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ জরুরি। যা সহজেই জেনে নেয়া যেতে পারে।

পাইকগাছায় রেকর্ড পরিমাণ বজ্রপাতে নিহত ১; আহত ১০

পাইকগাছায় অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে সর্বাধিক রেকর্ড পরিমাণ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে। বজ্রপাতে ১ ব্যক্তি নিহত ও কমপক্ষে ১০ ব্যক্তি আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয় ও খুমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার ভোর পৌনে ৬টার দিকে উপর্যুপরি বজ্রপাতে আতংকিত হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ।

বজ্রপাতের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে ঘরের মধ্যেও নিরাপদ মনে হয়নি অনেকের কাছে। উপর্যুপুরি বজ্রপাতে বিভিন্ন চিংড়ী ঘেরের বাসায় আশ্রয় নেয়া লোকদের মধ্যে খড়িয়া খাল পাড় গ্রামের মৃত মান্দার গাজীর ছেলে আব্দুল মালেক গাজী শ্বশুরবাড়ীস্থ পাতড়াবুনিয়া চিংড়ী ঘেরের বাসায় অবস্থানকালে নিহত হয়। এছাড়া কমপক্ষে বজ্রপাতে আরো ১০ ব্যক্তি আহত হয়।

আহতরা হলেন, পাতড়াবুনিয়া গ্রামের মৃত নওয়াব আলী সানার ছেলে রাজ্জাক সানা (৩২), আমিরুল সরদারের ছেলে মারুফ বিল্লাহ (২৫), নজরুল সানার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (১৬), মঠবাটি গ্রামের আবু তালেব গাজীর ছেলে আমিনুল ইসলাম (২৫), শ্যামনগর গ্রামের জহিরুদ্দিন শেখের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক শেখ (৪৫), রাড়ুলী গ্রামের মৃত দবির উদ্দীন গাজীর ছেলে মোজাহার গাজী (৪৫) ও মাজহারুল ইসলাম (৪২), তাছের গোলদারের ছেলে নওশের আলী (৬৫), আগড়ঘাটা গ্রামের স্বরুপ সরদারের ছেলে রেজাউল (৩৮)।

আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে মারুফ বিল্লাহর অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এদিকে সকালে আহতদের দেখতে উপজেলা হাসপাতালে যান উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. স.ম বাবর আলী।

গত ১০০ বছরেও এমন ভয়াবহ বজ্রপাত দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন এলাকার বয়জেষ্ঠ্য ব্যক্তিরা।

আহতদের দেখতে উপজেলা হাসপাতালে উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. স.ম বাবর আলী

Wednesday, June 8, 2016

তালার মেয়ে নন্দিতা ঘোষ বৃষ্টি উচ্চাঙ্গ সংগীতে দেশব্যাপী ১ম স্থান অধিকারিনী

সাতক্ষীরার তালার মেয়ে নন্দিতা ঘোষ বৃষ্টি উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পীর স্বীকৃতি হিসেবে দেশব্যাপী প্রথম স্থান অধিকার করেছে। নন্দিতা গত ২৮ মে ঢাকা ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে রাষ্ট্রপতি এ্যাড. মোহাম্মদ আব্দুল হামিদের কাছ থেকে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হয়। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ উপস্থিত ছিলেন। 

নন্দিতা ঘোষ বৃষ্টি তালার বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থা মুক্তি ফাউন্ডেশনের পরিচালক গোবিন্দ ঘোষ এবং সুনন্দা ভদ্রের প্রথম কন্যা। সে তালা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের ছাত্রী। ইতোপূর্বে সে জাতীয় পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা পদক, শিশু পুরুষ্কার’সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় একাধিক পুরষ্কার লাভ করেছে।

নন্দিতা ঘোষ বৃষ্টির বাবা গোবিন্দ ঘোষ জানান, ৫ বছর বয়স থেকে ওস্তাদ শ্যামল সরকারের নিকট থেকে সে সংগীতের তালিম নিচ্ছে। সে গণ-সাংষ্কৃতিক কেন্দ্রের একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী। বৃষ্টির এ অবদানের পিছনে মা,বাবা,ছাড়াও সংগীত গুরু শ্যামল সরকার এবং গণ-সাংষ্কৃতিক কেন্দ্র ও তার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ এনামুল ইসলামের অবদান রয়েছে। আগামীতে সে একজন গুণী শিল্পি হতে চায় সে জন্য সকলের সহযোগিতা ও আর্শিবাদ কামনা করেছে।

উল্লেখ্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত দেশব্যাপি মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায় আয়োজিত জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৬ এ প্রথমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পর উপজেলা পর্যায় থেকে শুধুমাত্র প্রথম স্থান অধিকারীকে জেলা পর্যায় এবং এরপর বিভাগীয় পর্যায়ে অনুরুপভাবে জাতীয় পর্যায়ে প্রতি বিভাগে শধুমাত্র প্রথম স্থান অধিকারীকে পুরষ্কৃত করা হয়।

Tuesday, June 7, 2016

দেশের মানুষই ছিল তাঁর রাজনীতির লক্ষ্য

গত বছরের এই দিনে (৭ জুন, ২০১৫) মৃত্যুবরণ করেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার অ্যাডভোকেট শেখ রাজ্জাক আলী। আমার বাবা। কয়েক বছর ধরে তিনি দুরারোগ্য ক্যানসারে ভুগছিলেন, সবারই জানা ছিল তাঁর পরিপূর্ণ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তারপরও বাস্তবতা মেনে নেওয়া কষ্টকর।

প্রচণ্ড পরিশ্রমী, আত্মপ্রত্যয়ী ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ ছিলেন আমার বাবা শেখ রাজ্জাক আলী। তিনি ছিলেন একাধারে সফল আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষা অনুরাগী, সমাজসেবক এবং এর পাশাপাশি একজন স্নেহময় বাবা, দায়িত্বশীল ও মঙ্গলকামী এক মানুষ। স্ত্রী ও পাঁচ মেয়েসহ পরিবারের সবার অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন তিনি। জাতীয় সংসদের তিনবার নির্বাচিত সদস্য ছিলেন তিনি (১৯৭৯, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে)। পঞ্চম জাতীয় সংসদে (১৯৯১-৯৫) প্রথমে ডেপুটি স্পিকার ও পরে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর দ্বিতীয় মেয়াদে ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ সালের জুলাই পর্যন্ত। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন সময়ে প্রশংসিত হয়েছেন একজন সুদক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে। ১৯৯০-এর দশকে লন্ডন থেকে প্রকাশিত দ্য পার্লামেন্টারিয়ান পত্রিকায় গণতন্ত্রচর্চা, সংসদ পরিচালনা ও সংবিধান সম্পর্কে তাঁর প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।

জাতীয় সংসদের স্পিকার থাকাকালীন তিনি সংবিধান ও জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালিবিধি মেনে সংসদের কার্যক্রম পরিচালনা করার ব্যাপারে সব সময় সতর্ক দৃষ্টি রেখেছেন। রাষ্ট্রীয় সংবিধান সমুন্নত রাখা ছিল তাঁর প্রধান দায়িত্ব এবং এ ক্ষেত্রে তিনি অনেকটাই সফল হয়েছিলেন। একপর্যায়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় পদ থেকে ইস্তফা দেন, যাতে তাঁর নিরপেক্ষতার বিষয়ে বিতর্ক না ওঠে। তবে তাঁর নিজের দলের অনেকের কাছেই ‘দলের স্পিকারের’ এতখানি নিরপেক্ষতা পছন্দ হয়নি। যার খেসারত স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী দিয়েছেন।

শেখ রাজ্জাক আলীর বৈচিত্র্যময় রাজনৈতিক জীবন নিয়ে কিছুটা বিতর্ক যে ছিল না, তা নয়। তাঁর সঙ্গে বহুকাল যাঁরা রাজনীতি করেছেন, তাঁদের মনে কিছুটা আক্ষেপ ছিল, প্রশ্নও ছিল—কেন তিনি বামপন্থী রাজনীতি, ভাসানীপন্থী ‘ন্যাপ’ থেকে জাসদের রাজনীতিতে জড়িত হলেন? কেনই-বা ১৯৭৯ সালে নতুন সংগঠিত বিএনপিতে যোগ দিলেন? আবার কেনই-বা তিনি ২০০৬ সালে বিএনপি ছেড়ে এলডিপিতে যোগ দেন? এর পেছনের কারণগুলো বহুবার তাঁর মুখে শুনেছি। বামপন্থী দলের ‘অবাস্তব’ পরিকল্পনা ও অন্তঃকলহ তাঁর কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন না। তবে কমিউনিস্ট পার্টির বিভিন্ন নেতা প্রায়ই তাঁর খুলনার ফারাজীপাড়া রোডের বাড়িতে যেতেন। এঁদের মধ্যে মোহাম্মদ তোয়াহা, চট্টগ্রামের সুখেন্দু দস্তিদার, যশোরের কমরেড আবদুল হক, উত্তরবঙ্গের হাজী দানেশ, খুলনার রতন সেন ও শচীন বসুসহ অনেকেই ছিলেন। এর প্রধান কারণ তাঁর সহধর্মিণী ও আমার মা ভাষাসৈনিক, সমাজসেবক, শিক্ষক বেগম মাজেদা আলী ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য।

শেখ রাজ্জাক আলী বামপন্থী চিন্তাধারায় প্রভাবিত ছিলেন, কিন্তু কিছু বিষয়ে তাঁর ভিন্নমত ছিল। তাঁদের আদর্শ ও মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ নয়, বরং কোন পথে এগোনো সঠিক হবে, সেটা নিয়েই ছিল প্রশ্ন। জাসদের উগ্রবাদিতা ও সহিংসতায় বিশ্বাস করেননি, তাই তিনি ওই পন্থা মেনে নিতে পারেননি। বিএনপিকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে দলের ভেতরের একনায়কতন্ত্রের ধারা, গঠনমূলক পদক্ষেপের পরিবর্তে ব্যক্তিস্বার্থ, সুবিধাবাদী ভূমিকা ও যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার লোভ তাঁকে পীড়িত করত। এ পরিস্থিতিতে তিনি এই দলের সঙ্গে আর সংযুক্ত থাকতে চাননি। দেশ ও দেশের মানুষই ছিল তাঁর রাজনীতির লক্ষ্য। যে কারণে কিছুটা হতাশা ও মনঃকষ্ট নিয়ে বলতেন, ‘আমার কালো গাউন আছে!’ মানে তাঁর একটি স্বাধীন ওকালতি পেশা আছে। রাজনীতি করে তাঁকে অর্থোপার্জন করতে হবে না। কারও পদলেহন করে রাজনীতি করার মতো মানুষ তিনি ছিলেন না।

ছাত্র অবস্থায় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন তিনি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতে ‘রেডক্রস’-এর সহযোগিতায় হাসনাবাদ ও বসিরহাটে শরণার্থী ক্যাম্পে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দেন। ১৯৭১ সালের ২২ জুন মধ্যরাতে আমাদের খুলনার ফারাজীপাড়া রোডের বাড়িতে পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য হানা দিয়েছিল। এর আগেই তিনি আত্মগোপনে চলে যান। জুলাই মাসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যান। মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়ার মতো বয়স তাঁর তখন ছিল না, কারণ বয়স তখন চল্লিশেও ওপরে। ভারতে সেবা দিয়েছেন আহত মুক্তিযোদ্ধাদের।

বিশ্বরাজনীতি, অর্থনীতি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কূটনীতি সম্পর্কে তাঁর ধারণা ছিল স্বচ্ছ। প্রায়ই সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা সাংসদেরা ফোন করতেন তাঁকে কোনো সংসদীয় আইন বা কার্যপ্রণালিবিধির ব্যাখ্যা বা জটিলতা বুঝতে। তাঁর জীবনের প্রথম চাকরি ও পেশা ছিল সাংবাদিকতা, সে কারণে সাংবাদিকদের প্রতি ছিল বাড়তি দুর্বলতা। ১৯৫৩-৫৪ সময়কালে তিনি দ্য ডেইলি পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় সাব-এডিটর পদে কাজ করেছেন। ১৯৫৫ সালে চীন সফরে যাওয়ার পর সেখান থেকে ফিরে চীনে সমাজতন্ত্রের উত্থান সম্পর্কে ইতিবাচক কয়েকটি প্রবন্ধ লেখেন অবজারভার পত্রিকায়, যার কারণে তাঁর চাকরি চলে যায়। তখন তিনি খুলনায় গিয়ে আইন পেশায় মনোনিবেশ করেন। তিনি অর্থনীতিতে এমএ করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সাংবাদিকতা পেশার পাশাপাশি তিনি ল পাস করেন। ১৯৬০-এর দশকে তিনি শখের বশে আর একটি এমএ করেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে।

আইন পেশা ও রাজনৈতিক কর্মব্যস্ততার মধ্যেই তিনি নানা সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত ছিলেন। আইন পেশায় তিনি যথেষ্ট সুখ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৮০-এর দশক থেকে তিনি হাইকোর্ট ও ১৯৯০-এর দশক থেকে সুপ্রিম কোর্টেই বেশির ভাগ সময় প্র্যাকটিস করেছেন।

১৯৬০-এর দশকে খুলনা ল কলেজ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন সাবেক স্পিকার আবদুল হাকিম। শেখ রাজ্জাক আলী এই কলেজটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জড়িত। বেশ কয়েক বছর তিনি এর অধ্যক্ষ ছিলেন এবং ক্লাসও নিতেন। ১৯৬৭-৬৮ সালে খুলনা শহরে তিনি ‘সুন্দরবন কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন শহরের আরও কয়েকজন গণ্যমান্য, শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের সহযোগিতায়। পরবর্তী সময়ে সবরুন্নেছা ডিগ্রি মহিলা কলেজ, বয়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম টুটপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মেয়েদের জন্য স্কুল ও মাদ্রাসা স্থাপন করেন। ২০০৭ সালের পর খুলনাতেই থাকা শুরু করেন শেখ রাজ্জাক আলী। তখন অধিকাংশ সময় ব্যয় করেন বর্তমান খুলনার লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালটি নির্মাণের পেছনে।

শেখ রাজ্জাক আলী সম্পর্কে তাঁর সহধর্মিণী ও আমার মা বেগম মাজেদা আলীর উদ্যোগে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে। ১৯৫০-এর দশক থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যে ব্যক্তি সারাক্ষণ নিষ্ঠার সঙ্গে ও শারীরিক সমস্যা উপেক্ষা করে একজন অভিভাবকের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চালনা করতে পথনির্দেশনা দিয়েছেন, তাঁকে যেন আমরা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারি এবং এ দেশের ইতিহাসে তাঁর প্রাপ্য স্থানটুকু তাঁকে দিই, এ-ই আমাদের কামনা।

--রাণা রাজ্জাক: প্রয়াত স্পিকার অ্যাডভোকেট শেখ রাজ্জাক আলীর জ্যেষ্ঠ কন্যা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক।

Sunday, June 5, 2016

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসকের করণীয় শীর্ষক কর্মশালা

আই.ডি.এম.ভি.এস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, SCORP-IFMSA, বাংলাদেশ এবং পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসকদের করণীয়’- সম্পর্কিত সেমিনার এবং কর্মশালা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে অনুষ্ঠিত হওয়া এ কর্মশালায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ১২০ জন চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থী অংশ নেন।



কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক খন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন বলেন, বিভিন্ন দুর্যোগে স্বাস্থ্য সংকট মোকাবেলায় চিকিৎসকদের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। সিডর, রানা প্লাজার মত ঘটনাগুলোতে দেশের চিকিৎসকরা প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন। এ ধরণের কর্মশালা দুর্যোগে চিকিৎসকদের কাজ সম্পর্কে ভালো একটি ধারণা দেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ ডিজাস্টারম্যানেজমেন্ট এন্ড ভালনারাবিলিটিস্টাডিজ (IDMVS) বিভাগের ডিরেক্টর অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনেকগুলো বিভাগের সম্মিলিত প্রয়াস। পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্য সেবার সম্মিলিত উদ্যোগ বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সুদূর প্রসারী ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশ রুরাল ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের ডিরেক্টর আব্দুল কাইয়ুম বলেন, দুর্যোগে আক্রান্তদের শারিরীক এবং মানসিক ক্ষতি পুরোপুরি পুষিয়ে নিতে সকলকে এক যোগে কাজ করা আবশ্যক। পাশাপাশি এ কর্মশালা থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতাকে নিজ নিজ পেশার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ড. হেলালউদ্দীনআহমেদ(সহকারীঅধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট), ড. দিলারা জাহিদ (সহকারীঅধ্যাপক, IDMVS), আবুলকালামআজাদ (সহকারীঅধ্যাপক, IDMVS), ডা. এম.তাজদিকহাসান (রিসার্সইনভেস্টিগেটর, icddr,b) এর তত্ত্বাবধায়নে চারটি পৃথক পৃথক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।