পাইকগাছায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের অভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে উপজেলা জাদুঘর। জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠার পর মূল্যবান জিনিসপত্র সংরক্ষণ করা হলেও গত কয়েক বছরের ব্যবধানে হদিস নেই জাদুঘরে সংরক্ষিত মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত জিনিসপত্রসহ অনেক কিছুরই। নামে মাত্র কিছু জিনিসপত্র থাকলেও অযত্ন অবহেলায় ময়লার মধ্যে পড়ে রয়েছে সেগুলো।
এক সময় জাদুঘরে সংরক্ষিত জিনিসপত্র দেখতে শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য মানুষের সমাগম ঘটলেও জাদুঘরের নামটি ভুলতে বসেছে এলাকার মানুষ। এতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকার সচেতন মহল। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জাদুঘরটি পরিচালনা ও যেসব জিনিসপত্রের হদিস নেই তা উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. স ম বাবর আলী তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে ১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদের তত্তাবধায়নে উপজেলা সদরের প্রাণ কেন্দ্রেই ১৪ শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠা করেন জাদুঘর ও লাইব্রেরি। দ্বিতল ভবনের উপরের তলায় ব্যবহৃত হচ্ছে শিল্পকলা একাডেমীর কার্যক্রম। আর নীচ তলার একটি কক্ষে লাইব্রেরি ও অপর একটি কক্ষ জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠার পর সেখানে সংরক্ষণ করা হয় মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত অস্ত্র, গোলাবারুদ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তাক্ত পোশাকসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। সংরক্ষণ করা হয়, বিশ্ববরেণ্য বৈজ্ঞানী আচার্য প্রফুল চন্দ্র রায়ের রানী ভিক্টোরিয়ার দেওয়া (স্যার উপাধি প্রাপ্তির) ১টি তরবারী, ২টি খড়গ, নলিনী কান্ত রায় চৌধুরীর রায় সাহেব উপাধি প্রাপ্তির ১টি তরবারী, বঙ্গবন্ধু শিবিরে ব্যবহৃত জাতীয় পতাকা, সমুদ্রের ফেনা থেকে তৈরী পেট, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও হরিণসহ বিভিন্ন জীব-জন্তুর কঙ্কাল, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মাওঃ আব্দুল হামিদ খান ভাষানী, জেনারেল এমজি ওসমানী, বিজ্ঞানী পিসি রায়, সু-সাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী, রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু, দানবীর মেহের মুছুলী, শহীদ এমএ গফুর, দেশের সকল বীর শ্রেষ্ঠসহ বরেণ্য ব্যক্তিদের ছবি। এমনকি বৃটেন, ইন্ডিয়া, পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক দেশের ধাতব মুদ্রা সংরক্ষিত ছিল। সংরক্ষিত ছিল এলাকার শত শত বছর পূর্বের ব্যবহৃত মাটির জিনিসপত্র।
এক সময় জাদুঘরে সংরক্ষিত এ সব মূল্যবান জিনিসপত্র অসংখ্য মানুষ দূর দূরান্ত দেখতে আসতেন। স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জাদুঘর পরিদর্শন করে জানতে পারতেন মুক্তিযুদ্ধসহ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নানা অজানা তথ্য।
এদিকে জাদুঘরটি ১৯৮৮ সাল থেকে পৌরসভার তত্তাবধায়নে পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের অভাবে অযত্ন অবহেলায় বর্তমানে পড়ে রয়েছে জাদুঘরটি। জাদুঘরের কক্ষটি ভরে আছে ময়লা-আবর্জনায়। অন্ধকার ভুতড়ে পরিবেশ দেখে মনে হবে না জাদুঘরের ওই কক্ষে কেউ কখনো যায়। এমনকি রেজিস্টারে সংরক্ষিত জিনিসপত্রের তালিকা থাকলেও কক্ষে তার অধিকাংশ কিছুই নেই।
জাদুঘরে দায়িত্বরত কর্মচারী আবুল কালাম আজাদ জানান, আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেছি তখন থেকেই রেজিস্টারে তালিকাভূক্ত মূল্যবান অনেক জিনিসপত্র হদিস ছিল না। তবে পিসি রায়ের তরবারীটি নিরাপত্তার জন্য পৌরসভায় সংরক্ষিত আছে বলে তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. স ম বাবর আলী বলেন, অনেক আশা নিয়ে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। ওই সময় অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র সংরক্ষণও করেছিলাম কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মূল্যবান জিনিসপত্রের এখন আর কোন হদিস নেই। এ গুলো নিয়ে কেউ ভাবেই না। অথচ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জাদুঘরে সংরক্ষিত জিনিসপত্র গুলো অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত জিনিনপত্র দেখে মুক্তিযুদ্ধের নানা দিক জানতে পারতো।
তবে এখনো যেসব জিনিসপত্রের হদিস নেই, তা উদ্ধার করে জাদুঘরটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালিত করতে পারলে আবারও জাদুঘরের পূর্বের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন স ম বাবর আলী।
--মোঃ আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা।