Tuesday, December 26, 2017

ওসির হস্তক্ষেপে সরলো ভবনে হেলে পড়া গাছ

অবশেষে পাইকগাছা থানার অফিসার ইনচার্জের হস্তক্ষেপে স্কুল শিক্ষকের বসতবাড়ির ভবনে হেলে পড়া গাছ সরিয়ে নিয়েছে প্রতিবেশী প্রতিপক্ষ। গত সোমবার প্রতিবেশী দিপক কুমার মন্ডল গাছটি কেটে নিয়েছেন বলে স্কুল শিক্ষক মিলিজিয়াসমিন জানিয়েছেন। হেলে পড়া গাছটির কারণে শিক্ষক পরিবার গত ১০ মাস ধরে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।


জানা গেছে, উপজেলার গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিলিজিয়াসমিনের বসতবাড়ি পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের সরল গ্রামে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিবেশী দিপক কুমার মন্ডলের একটি বড় সিরিশ গাছ শিক্ষক মিলিজিয়াসমিনের বসতবাড়ির ভবনে হেলে পড়ে। ফলে একটু বাতাস হলে গাছটি ভবনে ধাক্কা দেয়। এতে পুরো ভবন কেঁপে ওঠে। এছাড়াও গাছটি যে কোন মুহূর্তে পড়ে গিয়ে ভবনের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা থেকেই যায়।

গাছটি কেটে নেওয়ার জন্য শিক্ষক মিলিজিয়াসমিন প্রথমে প্রতিবেশী পরিবারটিকে মৌখিকভাবে অনুরোধ করেন। কিন্তু এতে কোন কাজ না হওয়ায় ১০ অক্টোবর মেয়র বরাবর লিখিত আবেদন করেন। মেয়র বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর রবি শংকর মন্ডলকে দায়িত্ব দেন। কাউন্সিলর বিষয়টি নিরসন করতে ব্যর্থ হওয়ায় শিক্ষকের অনুকূলে ১৭ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। তদন্ত প্রতিবেদনের মধ্যেই বিষয়টি থমকে যায়।

পরবর্তীতে শিক্ষক মিলিজিয়াসমিন ২২ অক্টোবর থানার ওসি বরাবর অভিযোগ করেন। এরপর নভেম্বর মাসের উপজেলা আইন শৃংখলা সভায় বিষয়টি উত্থাপিত হয়। শেষমেষ গত রোববার সন্ধ্যায় ওসি আমিনুল ইসলাম বিপ্লব উভয় পক্ষকে নিয়ে  সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন। থানার বৈঠকে সিদ্ধান্ত মোতাবেক সোমবার প্রতিবেশী দিপক কুমার মন্ডল হেলে পড়া গাছটি কেটে সরিয়ে নেন।

অবশেষে ওসির হস্তক্ষেপে ঝুঁকিপূর্ণ এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ায় ওসি আমিনুল ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন শিক্ষক মিলিজিয়াসমিন ও তার পরিবার।

পাইকগাছায় দু'বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও বেতন নিচ্ছেন স্কুল শিক্ষিকা

পাইকগাছার মানিকতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারী শিক্ষক প্রতিভা মৃধা গত প্রায় ২ বছর বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। যোগদানের পর ২-১ বছর নিয়মিত থাকলেও পরবর্তীতে অনিয়মিত হয়ে পড়েন এই শিক্ষক।

কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ও বিভিন্ন ছুটি দেখিয়ে তিনি ২/৩ বছরের বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন। সর্বশেষ গত ০৩/০২/২০১৬ তারিখ থেকে তার বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।


এদিকে শিক্ষকের অনুপস্থিতির কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

সর্বশেষ উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশে প্রধান শিক্ষক খালেদা খাতুন অনুপস্থিতি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন চেয়ারম্যান বরাবর। প্রতিবেদনে যোগদানের পর হতে অদ্যাবধি উপস্থিতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, প্রতিভা মৃধা সহকারী শিক্ষক হিসাবে ১৬/০৯/২০১০ তারিখে ২৬ নং মানিকতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। প্রথম দিকে কর্মস্থলে নিয়মিত উপস্থিত থাকলেও ২০১৪ সাল থেকে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। ১৮/০৮/২০১৪ গতে ৩১/০৮/২০১৪ পর্যন্ত ১৪ দিন চিকিৎসা ছুটি নেন। এরপর ০১/০৯/২০১৪ হতে ২৪/০৭/২০১৫ পর্যন্ত বিনানুমতিতে অনুপস্থিত থাকেন। তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা অফিসার নরেন্দ্রনাথ মৈত্রের কাছ থেকে অনুপস্থিতর সময়কাল চিকিৎসা ছুটি হিসাবে পাশ করিয়ে ২৫/০৭/২০১৫ তারিখ কর্মস্থলে যোগদান করেন।

এরপর দুই দিন কর্মরত থেকে ২৭/০৭/২০১৫ হতে ২১/০১/২০১৬ পর্যন্ত মাতৃকালীন ছুটি নেন। ছুটি শেষে ২৩/০১/২০১৬ তারিখে যোগদান করেন। এরপর এক দিন মৌখিক ছুটি নেন। পরবর্তীতে ০৩/০২/২০১৬ তারিখ হতে অদ্যাবধি গত ২১ মাস যাবত শিক্ষক প্রতিভা মৃধা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন।

উল্লেখ্য, চিকিৎসা ও মাতৃকালীন ছুটির কোন কাগজপত্র তিনি বিদ্যালয়ে জমা দেননি। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক তাকে কারণ দর্শানো পত্র প্রদান করে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও শিক্ষক প্রতিভার সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি।

বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. স ম বাবর আলী প্রধান শিক্ষককে সহকারী শিক্ষক প্রতিভা মৃধার অনুপস্থিত সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেন।

এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন গত রোববার উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর দাখিল করা হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক খালেদা খাতুন নিশ্চিত করেছেন।

পাইকগাছায় পৌঁছেনি বিনামূল্যের শতভাগ বই

বই উৎসবের ৫ দিন বাকি থাকলেও পাইকগাছায় এখনো শতভাগ নতুন পাঠ্যবই পৌঁছেনি। ২০১৮ সালে মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের ২৩৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯১০টি নতুন বইয়ের চাহিদা রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী ইতোমধ্যে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৪১০টি বই পৌঁছেছে। এখনো বাকি রয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার বই।
পাইকগাছার ১৬৬টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৬১০, যার মধ্যে শতভাগ বই পৌঁছেছে বলে দাবি করেছেন প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর কর্তৃপক্ষ। আর ৫৮টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাহিদা ২ লাখ ৭১ হাজার ৩০০। বই পৌঁছেছে ২ লাখ ৬ হাজার ৮০০। এখনো প্রায় ৬৫ হাজার বই পৌছায়নি বলে জানা গেছে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শতভাগ বই পৌঁছে যাবে বলে ধারণা করছেন সংশিষ্ট মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তর কর্তৃপক্ষ।

পাইকগাছা উপজেলায় ১৬৬টি প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠানে ২০১৮ সালের নতুন বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৬১০টি। যার মধ্যে প্রথম শ্রেণির ৫ হাজার ৯০০, দ্বিতীয় শ্রেণির ৫ হাজার ৫০০, তৃতীয় শ্রেণির ৫ হাজার ২০০, চতুর্থ শ্রেণির ৫ হাজার ও পঞ্চম শ্রেণির ৪ হাজার ৫৫০টি।
চাহিদার শতভাগ বই ইতোমধ্যে এলাকায় পৌঁছেছে বলে দাবি করেছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার গাজী সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে বই সরবরাহ করা হচ্ছে এবং বই উৎসবের প্রস্তুতিও চলছে জোরেসরে। আগামী ১ জানুয়ারী বই উৎসবে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হবে বলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে পাইকগাছা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশুতোষ কুমার মন্ডল বলেন, আমরা জানতে পেরেছি শতভাগ বই ইতোমধ্যে পৌছে গেছে। আজ কালের মধ্যে চাহিদার সকল বই আমাদের হাতে আসতে পারে।
এদিকে উপজেলায় ৫৮টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানে নতুন বছরে বইয়ের চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ৭১ হাজার ৩০০টি। যার মধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ৭০ হাজার, ৭ম শ্রেণির ৬৮ হাজার ৬০০, ৮ম শ্রেণির ৬৩ হাজার ও ৯ম শ্রেণির ৬৯ হাজার ৭০০। চাহিদা অনুযায়ী ইতোমধ্যে ২ লাখ ৬ হাজার ৮০০ বই পৌছালেও এখনো বাকী রয়েছে ৬৪ হাজার ৫০০ বই। যার মধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ৪০ হাজার ও ৯ম শ্রেণির ২৪ হাজার ৫০০ বই বাকী রয়েছে।
তবে বই উৎসবের এখনো যে কয়দিন বাকি রয়েছে, তার মধ্যে চাহিদার শতভাগ বই পৌছে যাবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জয়নাল আবদীন। উপজেলা মাধ্যমিক এ শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, আশা করছি ১ জানুয়ারী বই উৎসবে সকল শিক্ষার্থীর মাঝে বই বিতরণ করা সম্ভব হবে।
--মোঃ আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা।