Monday, November 11, 2013

পাইকগাছা প্রেসক্লাবের জরুরী সভায় পুলিশ কর্মকর্তার অপসারণ দাবী

পাইকগাছায় পুলিশ কর্মকর্তা এসআই হারুন কর্তৃক সাংবাদিকদের সাথে বার বার অসাদাচারণ ও কটুক্তি করার প্রতিবাদে পাইকগাছা প্রেসক্লাবের এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার বিকালে প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয়ে সভাপতি গাজী সালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর, এফএমএ রাজ্জাক, এসএম আলাউদ্দিন সোহাগ, জিএম মিজানুর রহমান, জিএগফুর, রবিউল ইসলাম, বি.সরকার, হাফিজুর রহমান রিন্টু, আলাউদ্দিন রাজা, এসএম বাবুল আক্তার, এম আর মন্টু, এসএম ইমদাদুল হক, তৃপ্তিরঞ্জন সেন, স্নেহেন্দু বিকাশ, আব্দুল আজিজ ও প্রমোথ রঞ্জন সানা।

সভায় সাংবাদিক সম্পর্কে কটুক্তিকারী এসআই হারুনকে দ্রুত অপসারনের দাবীতে মঙ্গলবার বিকাল ৩ টায় বাজার চৌরাস্তা মোড়ে পাইকগাছা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।

কপিলমুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্যহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম

পাইকগাছা ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনি ৮নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যহত হচ্ছে। ৭ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী এই বিদ্যালয়ে লেখা পড়া করলেও শ্রেণী কক্ষের অভাবে দুই শিফটে ক্লাস নিতে গিয়ে শিক্ষকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারা পারছে না ছাত্র-ছাত্রীদের সঠিকভাবে পাঠ দান করতে। অথচ জনগুরুত্বপূর্ন এই বিষয়টির প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃকপাত নেই।

জানা যায়, এক অবরুদ্ধ পরিবেশে মাত্র কয়েক শতক জায়গার উপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। চারিদিকে উচু দেওয়াল ঘেরা স্কুলটিতে সরু রাস্তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে হয়। স্কুলের মুল ভবনটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। দেওয়ালের আস্তরন খসে খসে পড়ছে। পাশে রয়েছে একটি সাইক্লোন সেন্টার। সেখানেই নিতে হচ্ছে দুই শিফটে ক্লাস। পাশে লেট্রিন এর দূর্গন্ধে পরিবেশ হচ্ছে দুষিত।

শিক্ষা জীবনের ভিত প্রস্তুতকারী এই প্রতিষ্ঠানে দন্যদশা দর্শনে যে কোন সচেতন মানুষের বিবেক হবে দংশিত। শুরু মাত্র টনক নড়ছেনা যাদের দেখার কথা সেইসব কর্তাদের।

এ ব্যপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল হোসেন জানান, দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভূত প্রকট এই সমস্যা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেও কোন সুরাহ হয়নি। এতে করে শিশু শ্রেণী সহ পঞ্চম শ্রেণীর ৭ শতাধিক শিক্ষার্থীরা পারছে না ঠিকমত লেখা পড়া করতে। তদুপরি রয়েছে শিক্ষক সংকট। ৮ জন শিক্ষক থাকলেও ১ জন রয়েছে ডেপুটেশনে। সব মিলিয়ে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি অবস্থা এমন এক পর্যায়ে পৌছে গেছে শিক্ষা দান রিতিমত কঠিন হয়ে পড়েছে।

একইভাবে শিশুদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে এনে দাঁড়িয়ে থাকেন রাস্তার উপর। নেই বসার কোন ব্যবস্থা। বর্ষা হলে অভিভাবকরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের সন্তানকে পাঠাননা স্কুলে। সব মিলিয়ে বড় যন্ত্রনায় আছে কপিলমুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি নির্দেশনা

২০-১১-২০১৩ তারিখ থেকে ৫-১২-২০১৩ তারিখের মধ্যে অনলাইনে www.nu.edu.bd/admissions এ ভর্তি পরীক্ষার আবেদন পত্র প্রিন্ট করে ৫-১২-২০১৩ তারিখে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কলেজে জমা দিতে হবে।
 
ভর্তি পরীক্ষা : ২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার ২০১৩, সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১২ টা।

পাইকগাছায় সুশীলনের কর্মশালা অনুষ্ঠিত

পাইকগাছায় নিরাপদ মাতৃত্ব, অনাকাঙ্খিত গর্ভধারন ও অনিরাপদ এমআর রোধ প্রকল্পের অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সুশীলনের উদ্যোগ ও নেদারল্যান্ড দূতাবাসের সহায়তায় সোমবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আবুল ফজলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রশীদুজ্জামান।
 
সুশীলনের এমআর রোধ প্রকল্পের জেলা সমন্বয়কারী দীপালী বিশ্বাস ও উপজেলা সমন্বয়কারী নাহিদ সুলতানার পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন পাইকগাছা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মোঃ আব্দুল আজিজ, উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর উদয় মন্ডল, দেলোয়ার হোসেন ও নূরালী মোড়ল।

কর্মশালায় স্বাস্থ্য বিভাগের ৫৭ জন মাঠকর্মী অংশগ্রহণ করেন।

তৃতীয় লিঙ্গ 'হিজড়া'র রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

ব্যক্তির লিঙ্গ পরিচয় হিসেবে 'নারী' ও 'পুরুষের' পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গ পরিচয় হিসেবে'হিজড়া'কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিল বাংলাদেশ সরকার। এর ফলে সরকারি নথিপত্র ও পাসপোর্টে হিজড়াদের লিঙ্গ পরিচয়কে 'হিজড়া' হিসাবে উল্লেখ করা হবে। শিক্ষা, চিকিৎসা ও আবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য ঘোঁচাতেও কার্যকর হবে এই স্বীকৃতি। আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত 'নীতিমালা' অনুমোদন করা হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার হিজড়া রয়েছেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে শিক্ষা, চিকিৎসা ও আবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যর শিকার হয়ে আসছেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে তথ্য সংগ্রহের সময় ব্যক্তির লিঙ্গ পরিচয় হিসাবে 'নারী' ও 'পুরুষের’' পাশাপাশি 'হিজড়া' হিসাবে চিহ্নিত করার সুযোগ থাকবে। পাসপোর্টেও তাদের লিঙ্গ পরিচয় হবে 'হিজড়া'। নথিপত্রে ইংরেজিতেও 'হিজড়া' শব্দটি ব্যবহার করতে হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।

হিজড়াদের নিয়ে কাজ করছে এমন সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই এই জনগোষ্ঠীকে 'তৃতীয় লিঙ্গ' হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের সরকার আগেই তাদের এ স্বীকৃতি দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানের সড়কের বাস্তব অবস্থার চিত্রায়ণ !!!! (৫)

ছবিটি পাইকগাছা-আঠারমাইল সড়কের কাশিমনগর থেকে তোলা।


পাইকগাছায় অপহৃত দুই শিশুর ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন

পাইকগাছার লতা থেকে অপহৃত দুই শিশুর ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার ২২ ধারায় জবানবন্ধী শেষে আদালত তাদেরকে পিতা-মাতার জিম্মায় হস্তন্তর করেছে।

এলাকাবাসী ও থানা পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, ২ নভেম্বর সকালে প্রাইভেট পড়ে বাড়ী ফেরার পথে উপজেলার লতা ইউপির গঙ্গরকোনার চৈতন্য হালদারের মেয়ে ৫ম শ্রেণী পড়ুয়া সুমা হালদার (১২) ও একই এলাকার একই শ্রেণীতে পড়ুয়া আবুল কালাম সরদারের মেয়ে রাবেয়া খাতুন (১২) কে গঙ্গারকোনা ঘেরের দুই কর্মচারী খায়রুল ও সবুজ অপহরন করে। এ ঘটনার দুই ছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে সবুজ মোড়ল, খায়রুল গাজীসহ অনেকের নাম উল্লেখ করে পৃথকভাবে থানায় দুটি অপহরন মামলা করে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই হারুন অভিযান চালিয়ে সাতক্ষীরার তালা থানার মুড়াগাছা গ্রাম থেকে শনিবার রাতে অপহৃত সুমা ও রাবেয়াকে উদ্ধার করে বরিবার তাদের ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন করে। সোমবার পাইকগাছার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে দুই ছাত্রীর ২২ ধারায় জবান বন্দি গ্রহন শেষে আদালত দু’জনকে পিতা-মাতার জিম্মায় হস্তন্তর করে।

এদিকে অপহৃত শিশুর পিতা আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন ইতিপুর্বে গঙ্গারকোনা ঘেরের কর্মচারীরা অনেক নারী-শিশুকে অপহরন করলেও তাদেরকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অপহরনের সাথে ঘেরের ম্যানেজার আজগারের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ওসি এম মসিউর রহমান জানিয়েছেন।

banglanews24’কে ধন্যবাদ !

পাইকগাছার সোলাদানা ইউনিয়নের এই ছবিটি বাংলাদেশের সর্বাধিক পঠিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল banglanews24.com এর কাভার ফটো হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

Voice of Paikgacha’র পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ banglanews24’কে।
 
 

পাইকগাছায় মোবাইলের দোকানে চুরির ঘটনার কোন কিনারা হয়নি

পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রস্থ পৌর বাজারের দীপ্তি মোবাইল কর্ণার নামের দোকানে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিন পরিদর্শন করেন। গতকাল রোববার বেলা ১২ টার দিকে এএসপি (দাকোপ সার্কেল) প্রশান্ত কুমার দে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান পরিদর্শন করেন।

উল্লেখ্য, গত ৩ নভেম্বর দিনগত রাতের যেকোন সময় কে বা কারা পৌরসভা কার্যালয় সংলগ্ন দীপ্তি মোবাইল কর্নার নামের দোকানের উপরে উঠে প্রথমে টিন, পরে কাঠের তক্তা ও শেষে ফাইউড কেটে দোকানের মধ্যে প্রবেশ করে ক্যাশ বাক্স ভেঙ্গে নগদ সাড়ে ৭০ হাজার টাকাসহ প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকার মোবাইল সেট চুরি করে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় দোকানের স্বত্তাধিকারী দিলীপ কুমার মন্ডল বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাতদের আসামী করে ৪ নভেম্বর মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও পুলিশ খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধার বা কোন চোরকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

কয়রার মদিনাবাদ এলাকার মানুষ এখন স্বাস্থ্য বিষয়ে অনেক সচেতন

উপকূলীয় এলাকা কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ গ্রাম। সেখানকার মাদারস কাবের এক সদস্যের বাড়িতে মাটির কলসীতে ট্যাব লাগিয়ে নিচে রাখা হয়েছে একটি প্লাষ্টিকের বালতি। পার্শ্বেই সাবান কেস। বাথরুমের পর হাত ধোয়ার এ নতুন কৌশলটি দেখে অনেকের মধ্যেই কৌতুহল জাগে।

অথচ ওই এলাকার অনেক মানুষই এক সময় বাথরুম থেকে এসে হাত ধুতে হয় এমনটি মনে করতে পারতেন না। যে কারণে পেটের পীড়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ লেগেই থাকত। এখন তারা স্বাস্থ্য বিষয়ে বেশ সচেতন। তাই ওই বাড়ির ন্যায় অনেকেই এ ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন আঙিনায়। দুর্যোগ মোকাবেলার পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও বেশ এগিয়ে। সম্প্রতি সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায় এ ধরনের নানা সামাজিক কর্মকান্ডের প্রতিচ্ছবি।

আইলার পর কয়রা এখন ভবিষ্যৎ জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের সবচেয়ে বেশী সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত একটি জনপদ। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ জনপদ কয়রা। যেটি জলবায়ু পরিবর্তনে নিকট ভবিষ্যতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমন বাস্তবতায় সম্ভাব্য এই বিপদ বা ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারি উদ্যোগে কয়রায় কোন উদ্যোগ-আয়োজন না থাকলেও কয়রার মানুষ এখন অনেক সচেতন। নিজেদের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে তারা অনেকটাই সোচ্চার।

উন্নয়ন সংগঠন রূপান্তরের উদ্যোগে এবং ওয়াটার এইডের সহায়তায় জলবায়ু পরিবর্তনে পানি, পয়ঃনিষ্কাশন এবং স্বাস্থাভ্যাস বিষয়ক এক প্রকল্পের আওতায় কয়রার ৭টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে ছোট ছোট সংগঠন তৈরী করা হয়েছে বলেও জানা যায়।

রূপান্তরের সূত্রটি জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩টি করে মোট ১৯০টি অনানুষ্ঠানিক কাবে এলাকার শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতি, মা, প্রতিবন্ধী, উপজাতিসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিজ নিজ ওয়ার্ডের অন্যান্যদের মধ্যে জলবায়ু বিপদাপন্নতা বিষয়ে সচেতনতার কাজ করছে।

প্রতিটি কাবে ৩০ জন হিসেবে মোট ৫,৭০০ জন প্রশিতি সদস্য কয়রার পথে-প্রান্তরে স্বেচ্ছাশ্রমে নিরন্তন কাজ করে যাচ্ছে। দ্বারে দ্বারে ঘুরে উঠান বৈঠক করে ৫,৭০০ জন নারী-পুরুষ সমাজে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য নানাবিধ কর্মকান্ড-পরিচালনা করে যাচ্ছে।

রূপান্তরের প্রকল্প সমন্বয়কারী রাবেয়া বসরী জানান, ১৯০টি কাবের প্রতিটিই স্থানীয়ভাবে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, সতর্ক সংকেত প্রচার, উদ্ধার অভিযান পরিচালনা, কুসংস্কার দূরীকরণ, নারীর মতায়ন, নারী নির্যাতন, শিশু সুরা, বাল্য বিবাহসহ সমাজের বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করছে। অল্প সময়ে কাবগুলো স্থানীয়ভাবে শুভবুদ্ধি চর্চার এক একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ এবং ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সহযোদ্ধা হিসেবে এই কাবগুলো কয়রার প্রতিটি পরিবারে স্বাস্থাভ্যাস পরিবর্তন, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সুপেয় পানির সংররণের বিভিন্ন উপায় নিয়েও কাজ করে বিভিন্ন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে। দলবদ্ধ হলে, মতের ঐক্য হলে শত প্রতিবন্ধকতাও যে হার মানে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কয়রার সাম্প্রতিক এই পরিবর্তন। এই পরিবর্তন কোন কাঠামোর পরিবর্তন নয়-এই পরিবর্তন চেতনার। এই পরিবর্তন মননের। এই পরিবর্তন চিন্তার।

স্থানীয় সচেতন মানুষ জানান, চিন্তা-চেতনার এই পরিবর্তন সামগ্রিকভাবে কয়রার নেতিবাচক প্রভাবগুলোতে ইতিবাচক সুরা দিতে শুরু করেছে। তৃণমূল জনগোষ্ঠীর নিবিড় এই অংশগ্রহণে একটি নিরব বিপ্লব যেন ঘটছে এখানকার সমাজ ব্যবস্থায়-আর্থসামাজিক অবকাঠামোয়।

মদিনাবাদ গ্রামের মাদারস কাবের সভানেত্রী শিপ্রা রায় বলেন, তাদের কাবের সদস্যদের নিয়ে তারা দুর্যোগ মোকাবেলায় করণীয় ছাড়াও স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাসে বিভিন্ন কর্মকার্তা, টিউবওয়েলের গোড়া উঁচু করা, বাল্যবিয়ে ও যৌতুকবিরোধী সচেতনতাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড করছেন। দুর্যোগের পূর্বাভাসে তারা সম্পদের মায়া ত্যাগ করে আগে প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী নারী এবং শিশু-বৃদ্ধদের সাইকোন শেল্টার বা উঁচু স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় আশ্রয় নেয়ারও সহায়তা করেন। আইলার পর তাদের এলাকার পুরুষরাও অনেকটা সচেতন বলে তারা উল্লেখ করেন।

এ সময় কথা হয়, কাবের সাধারণ সম্পাদিকা তুলসী সরদার, সদস্য সরদা বিশ্বাস, নিলঞ্জনা মজুমদার, কল্পনা রায়, রোকসানা পারভীনসহ অনেকের সাথে। তারা জানান, ওই এলাকার স্বামীরা এখন আর বউ পেটায় না।

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক বিশ্ব-ঐতিহ্যস্থান সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইউনেস্কোসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্যারিসে ইউনেস্কোর সাধারণ সভার ৩৭তম অধিবেশনের নীতি নির্ধারণী বিতর্কে বাংলাদেশের পক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এ আহবান জানান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি এবং পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধির কুফল হিসেবে সুন্দরবন এবং এর জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। সুন্দরবনকে রক্ষা করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহায়তা প্রয়োজন।

জ্ঞানার্জনে মাতৃভাষার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে ‘ইউনেস্কো ক্যাটেগরি-২ সেন্টার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ইউনেস্কোর প্রতি আহ্বান জানান।

ইউনেস্কো সাধারণ সভার বর্তমান অধিবেশন গত ৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে এবং তা আগামী ২০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। ৫৮ সদস্যবিশিষ্ট ইউনেস্কো নির্বাহী বোর্ডের সদস্যপদ লাভের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আগামী ১৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ প্রথম ইউনেস্কোর সাধারণ সদস্যপদ লাভের পর এ পর্যন্ত পাঁচবার চার বছর মেয়াদী ইউনেস্কো নির্বাহী বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে।

ইউনেস্কো সাধারণ সভার ৩৭তম অধিবশেনে শিক্ষাসচিব ড. চৌধুরী পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রতিনিধিদলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন প্যারিসে ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের সচিব মো. মনজুর হোসেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম ও দ্বিতীয় সচিব।

লবণের গহ্বরে যেন অমৃত ফোটা

কয়রা দক্ষিণ খুলনার এক বর্ধিষ্ণু অঞ্চল। ঘূর্ণিঝড় আইলাবিধ্বস্ত এই জনপদ জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানকার পরিবেশে এখনো আইলার হিংস্র ছোবলের চিহ্ন বিদ্যমান। এক সময়ের চিরসবুজ প্রকৃতি এখনও রুক্ষ। প্রাণের অস্তিত্বে নিষ্প্রাণ ছন্দ।

জীবন-জীবিকায় অন্তহীন সংকট-দুর্দশা। অনাদিকাল হতেই প্রকৃতির সীমাহীন বৈরিতায় এখানকার মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন বারেবারেই লন্ডভন্ড হয়, ছিন্নভিন্ন হয়। তারপরেও এখানকার সংগ্রামী জীবন জেগে ওঠে। কন্টকময় পথেও জীবনচাকা বহমান হয়। প্রকৃতির রুদ্ররোষেও জীবনছন্দ টিকে আছে।

এই জনপদের দুঃখ নিরাপদ বা সুপেয় পানি। সুপেয় পানির অজন্ম সংকট এই জনপদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সমুদ্রঘনিষ্ট উপকূলীয় এই জনপদের মানুষের কাছে নলকূপের পানি স্বপ্নের মত। এই জনপদে নলকূপ কার্যকরী নয়। ভূ-গর্ভে-ভূপৃষ্টে-নদীতে-খালে সব জায়গায়ই লবণ পানি। মিষ্টি পানি এখানে অমৃতসম। এখানকার মানুষ সাধারণত বৃষ্টি এবং পুকুরের পানি পান করে। বছরের কয়েকমাস বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তা’ পান করে। বৃষ্টির পানি শেষ হলে পান করে পুকুরের পানি। পুকুরের পানিও খুব সীমিত। কয়েকটি মাত্র মিষ্টি পানির পুকুর রয়েছে এই জনপদে। তাই পানি সংগ্রহ করতে হয় ৫-১০-১৫ কিলোমিটার দূর হতে। একটি সময় পুকুরের পানিও শেষ হয়ে যায়। তখন শুরু হয় পানির জন্য হাহাকার। অবস্থাপন্ন অল্প কিছু পরিবার তখন উচ্চমূল্যে পানি কিনে খায়। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে নদীর লবণ পানিই তখন একমাত্র অবলস্বন। ঋতুচক্রের ধারাবাহিকতায় পরবর্তী বৃষ্টি না আসা পর্যন্ত নদীর লবণ কিংবা পুকুরের দূষিত পানিতেই তাদের তৃষ্ণা নিরারণ করতে হয়।

পানির অপর নাম জীবন। পানি মানুষের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন। মানুষের জীবনচক্রে সুপেয় পানির বিকল্প নেই। সুস্থ্য, সুন্দর এবং সাবলীলভাবে বেড়ে ওঠায় পানি প্রাণশক্তি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু কয়রার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের মানুষের কাছে এক ফোটা সুপেয় পানি যেন আজন্ম এক সাধনার নাম। এখানে একটি শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পর হতে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পানিকষ্টে ভোগে। এটিই এখানকার বাস্তবতা। এই কঠিন বাস্তবতার যন্ত্রনা ছিন্ন করে তীব্র পানি সংকটের এই ইউনিয়নে সুপেয় পানির এক নতুন উৎসের সন্ধান পেয়েছে এই জনপদের মানুষ।

স্থানীয় জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ওয়াটার-এইড এবং রূপান্তরের সহায়তায় তারা এখানে বাস্তবায়ন করেছে অতি প্রাচীন এক পদ্ধতির- যা ‘পাতকুয়া’ নামে পরিচিত। ‘পাতকুয়া’ নাম হলেও এটি সনাতনী ‘পাত কুয়া’ নয় বরং বিশেষ পদ্ধতির ভূগর্ভস্থ পানির আধার বিশেষ। এই পাত কুয়া থেকে স্বচ্ছ এবং সকল প্রাকৃতিক খনিজ গুণসম্পন্ন সুপেয় পানি পাওয়া যাচ্ছে। এ যেন লবণের গহ্ববরে অমৃত ফোটা। স্থানীয় জ্ঞানের সাথে কারিগরি জ্ঞানের সংমিশ্রণে তৈরী সাশ্রয়ী মূল্যের এই পাতকুয়া বা রিংওয়েল সুপেয় পানির তীব্র সংকটের কয়রার মহেশ্বরীপুর জনপদের জন্য এক আশির্বাদ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। মাত্র ৮৯ হাজার টাকা ব্যয়ের এই পাত কুয়াটি প্রায় ২০০ মানুষের সারা বছরের নিরাপদ পানি সংস্থানের বিশ্বস্ত উৎস হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে গঠিত একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি নিজস্ব অর্থে পাত কুয়াটি দেখভাল এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে বলে এটি এখন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রাণের সম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

লবণপ্রভাবিত মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের পাতকুয়ার এই সাফল্যকে বিবেচনায় নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত জনপ্রিয় এই প্রযুক্তি দক্ষিণাঞ্চলে মিষ্টি পানির দুঃপ্রাপ্যতা অনেকাংশেই লাঘব করতে সক্ষম হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতায় ঘনঘন ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকির বিপরীতে উল্লিখিত মডেলের পাত কুয়া কয়রার মত তীব্র লবণবেষ্টিত অঞ্চলের মধ্যেও মিষ্টি পানির উৎস হিসেবে খুবই টেকসহ ও লাগসহ প্রযুক্তি হতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল।

কয়রায় কাঠ পাচারকালে দু’পাচারকারী আটক

সুন্দরবন থেকে কাঠ পাচারকালে নৌকাসহ হাতেনাতে দু’পাচারকারীকে আটক করেছে বন বিভাগ।

জানা গেছে, হড্ডা বন টহল ফাঁড়ির ওসি আব্দুল মজিদ, ফরেষ্টার ও সঙ্গীয় স্টাফ শাহ আলম, মোস্তাফিজুর আফতার উদ্দীন, হাবিবুল্লাহ, দীপক চ›ন্দ্র গোপন সংবাদদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে গত শনিবার গভীর রাতে পশ্চিম সুন্দরবনের হড্ডা বন টহল ফাঁড়ির অধীনস্থ ৩৫ নং কম্পার্টমেন্ট বড় পদ্মখালী খাল এলাকা থেকে সুন্দরী কাঠ পাচারকালে নৌকাসহ পাইকগাছা উপজেলার শান্তা গ্রামের হাফিজুর সরদার (২৫) ও মইরুদ্দীন ঢালী (৫০) কে আটক করে।

এ ব্যাপারে বন মামলা দায়ের করা হয়েছে। আটককৃতদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।