সামান্য একটা লিপস্টিক, সঙ্গে কানের দুল। কতই বা
আর দাম। ১০ কি ১২ ডলার অর্থাৎ বড়জোর হাজার টাকা। বিদেশ-বিভুঁইয়ে এই
সামান্য টাকা খরচ করা কেন? কেউ তো আর দেখছে না। ব্যাগে পুরে নিলেই হলো। যেই
ভাবনা, সেই কাজ। ফল যা হওয়ার, তা-ই হলো।
ধরা পড়ার পর পুলিশ ডাকা হলো। ব্যাপারটা সামাল দিতে মালয়েশিয়ায়
বাংলাদেশ হাইকমিশনকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। বাংলাদেশকে দুঃখ প্রকাশ করতে
হয়েছে।

সম্মেলন শেষে তিনি কেনাকাটা করতে সেখানকার একটি শপিং মলে যান। এটা-সেটা কিনে রাখতে থাকেন ট্রলিতে। ঘুরতে ঘুরতে এক সময় প্রসাধনসামগ্রীর অংশে যান। সেখান থেকে দুল আর লিপস্টিক পছন্দ করে সেগুলো ট্রলিতে না রেখে ঢুকিয়ে ফেলেন নিজের ব্যাগে। দোকানের পাওনা মিটিয়ে বের হওয়ার সময় ঘটে বিপত্তি। ঠিক বের হওয়ার মুহূর্তে সিকিউরিটি সিস্টেম তাঁকে আটকে দেয়। ছুটে আসেন দোকানের কর্মীরা। তাঁরা জানতে চান দাম না মিটিয়ে তিনি কোনো কিছু নিয়েছেন কি না। তিনি অস্বীকার করেন। শেষ পর্যন্ত তল্লাশি করা হয়। ব্যাগের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে লিপস্টিক আর কানের দুল।
শপিং মলের সিস্টেম অ্যানালিস্ট সব ভিডিও হাজির করেন। লিপস্টিক ও দুল হাতে নেওয়া, উল্টেপাল্টে দেখা, এমনকি কায়দা করে জিনিস দুটি লুকিয়ে ফেলার সচিত্র প্রমাণ উপস্থাপন করা হলে নার্সিং কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারের চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। পরিচয় জেনে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় শপিং মল কর্তৃপক্ষ। এ খবর দ্রুত পৌঁছে যায় বাংলাদেশ দলের অন্য সদস্যদের কাছে। গোপন থাকে না সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়া ভিনদেশি মানুষের কাছেও। পরে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনের সহায়তায় প্রতিনিধিদলের নেতা থানা থেকে তাঁকে ছাড়িয়ে আনেন। দেশে এসেই স্বাস্থ্যসচিবকে ঘটনাটি অবহিত করা হয়। সচিব নির্দেশ দেন সাময়িক বরখাস্তের।
স্বাস্থ্যসচিব এম এম নিয়াজউদ্দিন এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যে ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই লজ্জার। আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।' স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব গাজী উদ্দিন মো. মনীরকে নার্সিং কাউন্সিল অব বাংলাদেশের রেজিস্ট্রারের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পুরো ঘটনা সম্পর্কে সুরাইয়া বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মালয়েশিয়ায় কী ঘটেছে, তা আমি সময়মতো বলব। এ মুহূর্তে আমি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। তবে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে সেগুলোর সবটা সত্য নয়। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।'
সুরাইয়া বেগমের এ ঘটনা পুরো স্বাস্থ্য সেক্টরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। তোলপাড় চলছে সচিবালয় ও মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনে। নার্সিং কাউন্সিল নার্সদের পেশাগত সনদ দিয়ে থাকে। এ ঘটনায় সংস্থাটির ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে যাওয়া একজন কর্মকর্তা বলেন, 'এ ঘটনায় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আমাদের হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের ছোট হতে হয়েছে। এর মানে বাংলাদেশ ছোট হয়েছে। এখানে সরকারও দায় এড়াতে পারে না।
৭২ সদস্যের বিশাল টিম কেন বিদেশে পাঠাতে হবে? বিদেশে এত বড় দলের কে কোথায় কী করছেন, তা কি নজরে রাখা সম্ভব?' তিনি আরো বলেন, 'বিদেশের কথা শুনলে সরকারি চাকরিজীবীরা তৎপর হয়ে ওঠেন। যেখানে জুনিয়র কর্মকর্তার যাওয়ার কথা, সেখানে সচিব গিয়ে বসে থাকেন।