Sunday, April 24, 2016

পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্স সংকট; মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা

পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্স সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। বর্তমান ৫০ শয্যার হাসপাতালে ২১ জন নার্সের স্থলে কর্মরত রয়েছে ৬ জন। একদিকে নার্স স্বল্পতা অপরদিকে যারা কর্মরত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে দায়িত্ব অবহেলার গুরুতর অভিযোগ। ফলে চিকিৎসা সেবা নিয়ে ভোগান্তিতে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। সাধারণ রোগীদের সেবার পাশাপাশি মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিশু ও প্রসূতি সেবা কার্যক্রম। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই হাসপাতালের অতিতের সকল অর্জন ও সুনাম ম্লান হতে চলেছে বলে মনে করছেন সচেতন এলাকাবাসী।

সূত্রমতে, ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর উপজেলা সদরের প্রাণ কেন্দ্রেই ৩১ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যাত্রা শুরু হয়। জন বহুল এ উপজেলায় সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সরকার ২০০৯ সালের ২ ডিসেম্বর ৩১ শয্যার হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় শুধুমাত্র খাতা-কলম কিংবা ফাইল পত্রেই সিমাবদ্ধ রয়েছে ৫০ শয্যার ব্যবস্থা।

উন্নতকরণের গত ৬ বছরেও বৃদ্ধি করা হয়নি জনবল। ৫০ শয্যার হাসপাতালে নেই ৩১ শয্যারও জনবল। সবচেয়ে বেশি রয়েছে নার্স সংকট। ৫০ শয্যার হাসপাতালে যেখানে ২১জন নার্স থাকার কথা সেখানে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৬জন নার্স। যার মধ্যে ১জন রয়েছেন মাতৃকালীন ছুটিতে। ফলে ৫জন নার্সকে জরুরী বিভাগ, পুরুষ বিভাগ, মহিলা বিভাগ, ডায়রিয়া বিভাগ ও প্রসূতি বিভাগে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এরমধ্যে দিনের সিংহভাগ সময় দিতে হয় অপারেশন থিয়েটারে। ফলে মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও নার্সদের দেখা মেলেনা বলে অভিযোগ করেন চিকিৎসাধীন সাধারণ রোগীরা। নাজমুন নাহার বেগম জানান, হাসপাতালে নার্স স্বল্পতা যেমন আছে তেমনি যারা কর্মরত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও দায়িত্ব অবহেলার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

কিছু কিছু নার্সদের মধ্যে সেবার মানসিকতা ও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রসূতি রোগী জানান, অপারেশনের পর ডাক্তারদের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যায় আমার এন্টিবায়েটিক ইনজেকশন দেওয়ার কথা রয়েছে, অথচ একজন নার্স এসে বলে ইনজেকশন দেওয়া লাগবে না আরেকজন বলেন, ইনজেকশন দিতে হবে। এভাবেই নার্সদের গাফিলাতির কারণে প্রতিদিন অসংখ্য রোগীর সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মূল্যবান ঔষধ পত্র মিসিং হয়।

এ ব্যাপারে নার্স স্বল্পতার কথা স্বীকার করলেও তাদের গাফিলতার বিষয়টি পরক্ষভাবে এড়িয়ে যান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের অতিতের সুনাম ফিরিয়ে আনতে জরুরী ভিত্তিতে নার্স ও প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধিসহ কর্মরতদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়েছেন সচেতন এলাকাবাসী।

পাইকগাছা হাসপাতালে গাইনী ডাক্তার নেই, মহাবিপাকে প্রসূতি মায়েরা

পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনী ডাক্তার না থাকায় মহাবিপাকে পড়েছেন প্রসূতি মায়েরা। এছাড়াও জনবল সংকটের কারনে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যেখানে সরকার স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর, সেখানে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি স্রেফ জোড়াতালি দিয়ে চলছে। ৩১ শয্যা থাকালীনই প্রয়োজনীয় জনবল ছিল সংকট, সেই একই জনবল দিয়ে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য সেবার মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়।



হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অবকাঠামো নির্মাণের পর বিগত ২০০৯ সালের ২ ডিসেম্বর ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়। তবে অদ্যবধি প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধি করা হয়নি। ৩১ শয্যার জন্য ৯ জন মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও আছেন মাত্র ৫ জন। তার মধ্যে ডেপুটেশনে গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুজন কুমার সরকার সাতক্ষীরা ও ডাঃ ডালিয়া আক্তার খুমেক হাসাপাতালে কর্মরত রয়েছেন। হাসপাতালে বর্তমান একজনও গাইনী ডাক্তার নেই। আবার যে তিনজন ডাক্তার হাসপাতালে রয়েছেন তার মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ ও পঃ পঃ কর্মকর্তা প্রশাসনিক কাজে সার্বক্ষণিক থাকেন ব্যস্ত।

সূত্র মতে, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) পদে একজন থাকলেও তিনি প্রেসনে ঢাকায় কর্মরত। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (প্যাথলজিস্ট) দু’টি পদের কেউ নেই দীর্ঘ বছরযাবৎ। ফলে বাধ্য হয়ে চড়ামূল্যে বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা (টেস্ট) করাতে হচ্ছে রোগীর। সেক্ষেত্রে অসহায়-দরিদ্র রোগীরা কাহিল হয়ে পড়েন অতিরিক্ত ফি দিয়ে রোগ নির্ণয় করাতে গিয়ে। আবার অনেকে টাকার অভাবে টেস্ট না করিয়েই বাড়ি ফিরছেন। 

অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের ডাক্তাররা বাইরের কোন না কোন প্যাথলজির সাথে (ব্যবসায়ীকভাবে) জড়িত রয়েছেন। আর সেজন্যই হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ সচল রাখা নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারোরই। 

এদিকে ৩১ শয্যার জন্য নার্সের ১২টি পদ থাকলেও (৫০ শয্যার হাসপাতালে) রয়েছেন মাত্র ৬ জন নার্স। এর মধ্যে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে একজন এবং একজন অসুস্থ। হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ দু’টি পোস্ট হচ্ছে ফার্মাসিস্ট ও সুইপার। ফার্মাসিস্ট দু’টি পদের একজনও নেই বিগত দু’বছরেরও বেশি সময়। হাসপাতালের ফ্রি ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে অন্য একজনকে দিয়ে। আর পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ৫টি পদের বিপরীতে রয়েছে মাত্র একজন। ফলে হাসপাতাল অভ্যন্তরে দুর্গন্ধময় পরিবেশ বিরাজ করছে সারাক্ষণ। 

সূত্র জানায়, হাসপাতালে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন উন্নতমানের একটি এক্সরে মেশিন থাকলেও তার সুফল পাচ্ছে না রোগীরা। এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘ বছর পড়ে থাকার পর ২০০৫ সালে স্থাপন করা হয়। তবে এক্স-রে মেশিন স্থাপনের পর এ পর্যন্ত (১১ বছরে) ফ্রি এক্স-রে সুবিধা পেয়েছেন মাত্র ৪০ জন রোগী। বর্তমানে হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি বিকল অবস্থায় আর টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফার) পদটিও শূন্য পড়ে রয়েছে। সবমিলিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না রোগীরা।

--এম,আর মন্টু, পাইকগাছা।

কয়রায় আংটিহারা বেড়িবাঁধের এক কিলোমিটার জুড়ে ভয়াবহ ভাঙন

কয়রা উপজেলার সর্ব দক্ষিণে শাকবাড়িয়া নদী সংলগ্ন পাউবোর ১৩-১৪/১ পোল্ডারের আংটিহারা বেড়িবাঁধের এক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে ভয়াবহ নদী ভাঙন দেখা দেয়ায় স্থানীয় লোকজনের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড গত বছর আংটিহারা বেড়িবাঁধের যে অংশটি সংস্কার করেছিল সেই অংশে নুতন করে ভয়াবহ ফাটল ধরেছে। নদীর প্রবল স্রোত ও তুফানের ঢেউ কূলে আছড়ে পড়ায় বেড়িবাঁধ ক্ষয়িষ্ণু ও দুর্বল হয়ে গেছে। ফলে যে কোন মুহূর্তে পুরো বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে আংটিহারা, জোড়শিং, ঘড়িলাল, চরামুখা এলাকা লোনা পানিতে তলিয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পাক শাসন আমলে ১৯৬৮ সালে আংটিহারা গ্রামে যে আইবি ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছিল তার পশ্চিম দিকের ওয়াপদা বাঁধের সোয়া কিলোমিটারের বেশী জায়গা শাকবাড়িয়া নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। 

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, গত বছর বাঁধে মাটি ফেলে সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু নদীর কিনার অংশের বাঁধে ঠিকমতো স্লোভ না করে ঠিকাদার দায়সারাভাবে মাটি ফেলে মোটা কাপড় ও বাঁশের তরজা দিয়ে স্লোভ ঢেকে দেয়। কয়েক মাস যেতে না যেতে তুফানে বাঁশের তরজা নষ্ট হয়ে পুরো বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। 

স্থানীয় সমাজ সেবক মিজানুর রহমান খোকা ও গাজী আব্দুস সোবহান বলেন, নদীর কিনার ড্যাম্পিং করে ব্লক বসানো সম্ভব হলে ভাঙনের হাত থেকে মানুষ পরিত্রাণ পেতে পারে। 

দক্ষিণ বেদকাশির আংটিহারা এলাকার নব নির্বাচিত ইউপি সদস্য আব্দুল গনি জানিয়েছেন, নতুন করে বেড়িবাঁধে ভাঙন লাগায় মানুষ চরমভাবে ভীত হয়ে পড়েছে। বাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট পোল্ডারের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে পাউবোর খুলনাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বজলুর রশিদ বলেন, বেড়িবাঁধের ভাঙন ঠেকাতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ মিললে কাজ করা যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।