Tuesday, November 8, 2016

স্বপ্নের আরও কাছে আবুল বাজনদার

দুই হাতে গাছের শাখা-প্রশাখার মতো আঁচিলের ভার থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে আর মাস খানেকের অপেক্ষা। ছোট কয়েকটি অস্ত্রোপচারের পরই স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন ছুঁতে পারবেন ‘বৃক্ষমানব’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া পাইকগাছার আবুল বাজনদার। ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন জানান, বাজনদারের দুই হাতে পাঁচ বার করে দশটি আর দুই পায়ে দুইবার করে চারটি অস্ত্রোপচার হয়েছে।
 
দুই হাতে গাছের শাখা-প্রশাখার মতো আঁচিল নিয়ে জানুয়ারিতে ভর্তি হয়েছিলেন আবুল বাজনদার । অস্ত্রোপচারের পর অগাস্টে আঁচিলমুক্ত।
চিকিৎসক সামন্ত লাল বলেন, “আবুল এখন ৯৫ শতাংশ সুস্থ আর দুই হাতে চারটি ও দুই পায়ে দুটি ছোট অপারেশন করলেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে বলে আশা করছি। এক মাসের মধ্যে আবুল ‍পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তারপর তাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেনেওয়ার চেষ্টা করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব সময় আবুলের খোঁজ রেখেছেন।”

বিরল ‘এপিডারমোডাইসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’ রোগে আক্রান্ত হয়ে ১০ কেজি ওজনের আঁচিল নিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে ভর্তি হন খুলনার ২৫ বছর বয়সী এই যুবক। এরপর থেকে সরকারি খরচে চলে তার চিকিৎসা। ১৪ বার অস্ত্রোপচারের পর এখন তার হাত-পায়ে আর কোনো আঁচিল নেই।

রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেলে কথা হয় আবুল বাজনদারের সঙ্গে। স্ত্রী হালিমা বেগম আর তিন বছর বয়সী মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস পাশেই ছিলেন এসময়। হাসিমুখে আবুল জানালেন, অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন বাড়ি ফেরার। শৈশবের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফেরার। হালিমা বলেন, “ওর জীবন এভাবে ফিরে পাব কোনোদিন ভাবতে পারিনি। সত্যি এতো ভালোলাগার কথা প্রকাশ করতে পারব না।”

ছোট বেলায় খালাতো ভাই সাদেক ও এরশাদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর স্মৃতিটাই বেশি টানে আবুলকে। “সুস্থ্ হয়ে বাড়ি ফিরে তাদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে ঘুরতে-ফিরতে পারব- এটা ভাবতেই কেমন জানি ভালো লাগছে।” নিজের দুই হাত দেখিয়ে বলেন, “আমি যখন এখানে এসেছিলাম তখন কেমন ছিলাম আর এখন দেখেন কত পরিবর্তন হয়েছে। মনে হয়ে দুই হাত, পায়ে কিছুই নাই।”
 
আবুল বাজনদারের সঙ্গে স্ত্রী হালিমা বেগম আর তিন বছর বয়সী মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস
প্রায় দশ মাস ধরে হাসপাতালে থাকায় চিকিৎসক, নার্স, দর্শনার্থী, সাংবাদিক- সবার পরিচিত এই দম্পতি। আর কিছুদিন পর হাসপাতাল ছেড়ে যেতে হবে, ভাবতেই কিছুটা যেন মন খারাপ হয় আবুলের। “প্রায় দশ মাস এই ঘরে আছি। এখানকার ডাক্তার, আপনারা সবাই আমাকে ভালোবাসা দিয়েছেন। অনেক দেখেছেন।ছেড়ে যেতে আমার কষ্ট হবে। কিন্তু সুস্থ্ হয়ে বাড়ি যাব; রাস্তায় স্বাভাবিক মানুষের মতো হাঁটতে পারব-সেই অপেক্ষা অনেক বড়।”

বলতে বলতে বাষ্পরুদ্ধ হয়ে আসে আবুলের কণ্ঠ- “এখানে শুধু আমি চিকিৎসাই পাইনি, পড়াশোনাও পেয়েছি।” একটি স্কুল ব্যাগ দেখিয়ে বললেন, “আমার মেয়ে জান্নাত অ, আ, ক, খ আর ছড়া, কবিতা বলতে পারে। এখানে বসে আমার স্ত্রী জান্নাতকে এগুলো শিখিয়েছে। বাড়িতে থাকলে কী এসব হতো?”

সরকারি খরচে চিকিৎসার সঙ্গে বাড়ি ও চাষাবাদের জমি কিনতে এক চিকিৎসকের কাছ থেকে টাকা পেয়েছেন আবুল।

কৈশোরে বাবার সঙ্গে ভ্যান চালিয়ে সংসারের ঘানি টানার মধ্যেই রোগের সঙ্গে লড়াইয়ের শুরু। এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে ব্যবসা করার পরিকল্পনার কথা আগেই জানিয়েছিলেন আবুল বাজনদার। রোববার আবারও মনে করিয়ে দিলেন সেই স্বপ্নের কথা।
 
--কামাল হোসেন তালুকদার