Monday, April 25, 2016

ঢাকের তালে এল বৈশাখ (কবিতা)

মোঃ আবুল আমিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পাইকগাছা।


ঢাকের তালে বৈশাখ এলো বাঙালীর ঘরে ঘরে,
বৈশাখ এল নতুনরূপে পূণ্য মনের দ্বারে।

দোকানীরা সব পূরনোকে ভুলে খুলে দিল হালখাতা,
বৈশাখী পালে ছুড়ে দিল প্রেম জীবনের ছেঁড়াপাতা।

সাজ সাজ রব পড়ে গেল যেন প্রকৃতির পটে পটে,
বৈশাখী গান উঠল বেজে জীবনের বালুতটে।

নতুনের পালে কেতন উড়িয়ে বৈশাখ দিল প্রাণ,
সারাদেশ থেকে ভেসে এল যেন বৈশাখীর আহবান।

বোশাখী মিছিল এগিয়ে চলল বাজনার তালে তালে,
লাগল হাওয়া নতুন করে জীবনের ছেঁড়া পালে।

কিশোর যুবক ঢাকের তালে দুলছে নতুন সাজে,
বাঙালীআনার পুরো পরিচয় বৈশাখী নব তাজে।

সারাদেশ আজ ভরে গেল যেন র‌্যালী মিছিলের বানে,
সম্প্রীতিমাখা বৈশাখ এল নতুন ছন্দ গানে।

ব্যানার ফেস্টুনে উঠল ভরে বোশেখী প্রভাতফেরী,
হিন্দুু-মুসলিম হাতে হাত রেখে সম্প্রীতি করে ফেরী।

চারদিকে চলে মাটির শানুকে পান্তা ইলিশভোজন,
উৎসব আমেজে নেচে কুঁদে চলে রঙিন বর্ষবরণ।

বৈশাখ দিল নতুন সর নতুন প্রাণের কল্পনা,
নতুন ছন্দ নতুন গান নতুন দেশের আল্পনা।

সম্প্রীতিমাখা এই বাংলার বোমেখী মিলনমেলা,
শেখালো মোদের নতুন করে একসাথে পথচলা।

শত বছরের বাঙালী আবেগ মিশে হল একাকার,
নতুন শপথে বলীয়ান মন দৃপ্ত ও দুর্বার।

সোনালী দিনের হিল্লোলে মোরে কল্লোলে দিনগুনি,
নতুন বছরে নতুন আলোয় সন্ধির জাল বুনি।

রুদ্ধশ্বাস হানাহানি যত দূর হোক অনাচার,
গ্লানি মুছে গিয়ে শুচি হোক ধরা ঢেকে যাক পাপাধার।

উচ্ছ্বাস ভরা বাঙালী হৃদয় ভরে যাক ফুলে ফুলে,
নতুন আগামীর হাসি লেগে থাক রমনার বটমূলে।

কমলো জ্বালানি তেলের দাম

সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো সরকার। রবিবার মধ্যরাত থেকে কমানো দাম কার্যকর হবে। রবিবার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এই দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী অকটেন ও পেট্রোল প্রতি লিটারে ১০ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিন প্রতি লিটারে তিন টাকা করে কমানো হয়েছে।এখন প্রতি লিটার ডিজেল ৬৫ টাকা, কেরোসিন ৬৫ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা ও পেট্রোল ৮৬ টাকায় পাওয়া যাবে।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারের বর্তমান দাম (অপরিশোধিত প্রতি ব্যারেল বা ১৫৯ লিটার) অনুযায়ী প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েল বিপিসি কিনছে ৩০ টাকায়, অকটেন ৫৫ টাকায় ও পেট্রোল ৫০ টাকায়। ডিজেল আর কেরোসিন কিনছে ৩৮ টাকায়। কিন্তু দেশের বাজারে বিপিসি বিক্রি করছে প্রতি লিটার অকটেন ৯৯, পেট্রোল ৯৬, কেরোসিন ও ডিজেল ৬৮ টাকায়।

কম দামে কিনে দেশে বেশি দামে বিক্রি করায় গত অর্থবছরে (২০১৪-১৫) বিপিসি ৫ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। আর চলতি অর্থবছরে (২০১৫-১৬) ৭ হাজার কোটি টাকা লাভের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এরমধ্যেই অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মুনাফা হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। যার প্রায় পুরোটাই আমদানি করা হয়। এ তেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় পরিবহন খাতে, ৪৫ শতাংশ। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে ২৫ শতাংশ, কৃষি খাতে ১৯ শতাংশ, শিল্প খাতে ৪ শতাংশ এবং গৃহস্থালী ও অন্যান্য খাতে ৭ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। তখন পেট্রোল-অকটেন লিটার প্রতি ৫ টাকা এবং ডিজেল কেরোসিনের দাম ৭ টাকা করে বাড়ানো হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ২০১৪ সালের জুন থেকে। কিন্তু দেশে এখন পর্যন্ত দাম না কমানোয় গত দুই বছর ধরে লাভ করছে বিপিসি।

গত ৩১ মার্চ ফার্নেস তেলের দাম প্রতি লিটার ৬০ টাকা থেকে ৪২ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এর ২৩ দিন পর অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম কমানো হলো।

খুলনা দিবস আজ

আজ খুলনা দিবস। খুলনা জেলার প্রতিষ্ঠার দিন। ১৮৮২ সালের ২৫ এপ্রিল খুলনা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। খুলনাতে মহাকুমা করা হয়েছিলো ১৮৪২ সালে। এর আগে ১৮৩৬ সালে খুলনা জেলার রূপসা উপজেলায় তুর্ক আফগান আমলে প্রতিষ্ঠিত ‘কিসমত খুলনা’ মৌজায় নয়াবাদ নামে একটি থানা স্থাপিত হয়। খুলনা জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক ছিলেন মি. ডাবলু এম. ক্লে। ১৯৬১ সালে খুলনা বিভাগে রূপ লাভ করে। 



খুলনা নাম নিয়ে আছে বেশ কয়েকটি কিংবদন্তি। ঐতিহাসিক সিরাজুদ্দীন আহমেদ লিখেছেন, ‘খুলনা জেলার প্রাচীন নাম বুড়ন দ্বীপ। গঙ্গানদের শাখা হলদিনদীর মোহনায় এ দ্বীপের সৃষ্টি। রামায়ণে হলদিনী নদীর বর্ণনা আছে। খ্রিস্টিয় প্রথম শতকে টলেমি এ নদীকে কামবেরীঘন বলে উল্লেখ করেছেন। কামবেরীঘন বর্তমান কতোতাক্ষ নদ। কুমার, ভৈরব ও বেত্রাবতী প্রাচীন হলদিনী বা কামবেরীঘনের বিভিন্ন প্রশাখা।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘প্রাগ ঐতিহাসিককালে ভৈরব, কামবেরীঘন ও বেত্রাবতীর তীরে জনবসতি গড়ে ওঠে। অস্ট্রিক, মঙ্গোলিয় ও আল পাইন প্রভৃতি এ অঞ্চলের আদি অধিবাসী।’

ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজির বঙ্গ বিজয়ের একশ বছর পার হলেও খুলনা জেলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যতদূর জানা যায়, শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ (১৩১০-১৩২৫) প্রথম খুলনা দখল করেছিলেন। তার মুদ্রা সুন্দরবন অঞ্চলে পাওয়া গেছে। সুলতানি আমলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা যুগান্তকারি ছিলো বলে হিন্দু-মুসলমান ঐক্য সম্প্রতি বজায় ছিলো সুন্দরভাবে। 

সম্রাট আকবরের শাসনামলে খুলনা জেলার অধিকাংশ এলাকা সরকার খলিফাতাবাদের অধীনে ছিলো। নবাব সিরাজদ্দৌলার শাসনামলে যশোরের ফৌজদার পদ বিলুপ্ত হয়ে যায়। তখন মুর্শিদাবাদ থেকে সরাসরি খুলনা জেলার শাসন করা হতো। ইংরেজ শাসনের প্রথম একশ বছর (১৭৫৭-১৮৫৭) খুলনা জেলায় চরম অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছিলো। অনেকে এই সময়ের শাসন কালকে ‘মগের মুল্লুকের প্রশাসন’ বলতো।

২০০৯ সালের ২৫ এপ্রিল খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে যথাযথ মর্যাদায় প্রথম বারের মতো সরকারিভাবে খুলনা দিবস পালিত হয়। এরপর ২০১০ সালেও খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে খুলনা দিবস পালিত হয়েছে।

'খুলনা দিবস' পালনের গুরুত্ব রয়েছে। এটি পালনের মধ্যে দিয়ে  আমরা খুলনা জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য খুঁজে নিতে পারি। এ দিবস পালনের মধ্যে সব শ্রেণির মানুষ ইতিহাস সচেতন হয়ে ওঠতে পারে।