Tuesday, February 7, 2017

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত পাইকগাছা কৃষি কলেজ স্থাপন প্রকল্পের কাজ স্থগিত

অবশেষে স্থগিত করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রস্তাবিত পাইকগাছা কৃষি কলেজ স্থাপন প্রকল্পের কাজ। গত বছরের শেষের দিকে পরিকল্পনা কমিশনের এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চলমান কার্যক্রম স্থগিত করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় হতাশ হয়েছেন এলাকাবাসী। পুনরায় প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানিয়েছেন অবহেলিত এলাকার সর্বস্তরের মানুষ।


উল্লেখ্য, স্বাধীনতা পরবর্তী গত ৪৫ বছরেও জেলার অবহেলিত এ এলাকায় এখনো গড়ে ওঠেনি কৃষি ও প্রযুক্তি ভিত্তিক কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অথচ অত্র এলাকা কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনের জন্য অত্যান্ত সমৃদ্ধ। পাইকগাছা ও কয়রাসহ অত্র এলাকা থেকে উৎপাদিত হাজার হাজার কোটি টাকার চিংড়ি ও মৎস্য সম্পদ প্রতি বছর বিদেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। 

অপরদিকে এলাকার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে এলাকায় কোন কৃষি ও প্রযুক্তি ভিত্তিক কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় এলাকার দরিদ্র ছেলে মেয়েদেরকে এ ধরণের শিক্ষা গ্রহণ করতে যেতে হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। অনুরূপভাবে অর্থের অভাবে অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে কৃষি ভিত্তিক শিক্ষা থেকে। এরই মাঝে কৃষি ভিত্তিক লেখাপড়ার স্বপ্ন দেখে উপকূলীয় এ অঞ্চলের মানুষ। 

বিশেষ করে এমন স্বপ্ন দেখান বর্তমান সরকারের শিক্ষাবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ২০১০ সালের ২৩ জুলাই কয়রার এক জনসভায় পাইকগাছা উপজেলায় একটি কৃষি কলেজ স্থাপনের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণায় কৃষি ভিত্তিক লেখাপড়ায় আগ্রহ বাড়ে এলাকার ছেলে মেয়েদের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির ৩ বছরের মধ্যে শুরু হয় কৃষি কলেজ স্থাপন প্রকল্পের কার্যক্রম। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে প্রকল্পটি পাশ হয় একনেকে। বরাদ্দ দেয়া হয় অর্থ। উপজেলার লস্কর ইউনিয়নের পাইকগাছা-কয়রা সড়কের পাশেই চকবগুড়া মৌজায় অধিগ্রহণ করা হয় ২৫ একর জমি। ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয় ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রীয়া। মূল অবকাঠামোগত কাজ শুরুর আগেই গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে প্রকল্প এলাকা পরিবর্তনের জন্য আবেদন করা হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়ে। এরই ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা পরিদর্শন করেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকা। পরবর্তীতে পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পের সকল কার্যক্রম।

লস্কর ইউনিয়নের সরকার দলীয় ইউপি চেয়ারম্যান কেএম আরিফুজ্জামান তুহিন জানান, প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় আমরা একদিকে যেমন হতাশ হয়েছি, তেমনি কি জন্য বন্ধ হলো এ বিষয়টিও আমাদের কাছে অস্পষ্ট। কারণ প্রস্তাবিত কৃষি কলেজ স্থাপন প্রকল্পটি সাধারণ কোন বিষয় নয়। এটি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির একটি প্রকল্প। আর প্রধানমন্ত্রীর কোন প্রতিশ্রুতির কাজ বন্ধ হয়ে যাক এটা কারও কাম্য নয়। প্রকল্পের কার্যক্রম পূণরায় চালু করার ব্যাপারে ইতোমধ্যে চেষ্টা করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে এলাকাবাসী মানববন্ধন সহ অন্যান্য কর্মসূচি ও পালন করতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।

পৌরসভার মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর জানান, শুনেছি পরিকল্পনা কমিশনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন দাখিলের পর প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা যখন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন তখন ছিল বর্ষা মৌসুম। মূলত অত্র উপজেলার সকল জমি হচ্ছে বিলান প্রকৃতির। এ কারণে কৃষি কলেজের মুল কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পতিত জমিতে পানি জমে ছিল। আর এটা দেখে হয়তো বা পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাবৃন্দ জলাকার মনে করেছিলেন। প্রকৃত অর্থে যেখানে প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে অধিগ্রহণকৃত সকল জমির ধরণ হচ্ছে বিলান। যা দলিল খতিয়ানে রেকর্ড ভূক্ত রয়েছে। এছাড়াও এলাকার কোথাও বিলান প্রকৃতি ছাড়া খুব উচু ধরণের কোন জমি নাই। এ জন্য এ ধরণের একটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যথাযোগ্য জায়গায় প্রকল্প এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পৌরসভার পাশেই গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কের সাথেই প্রকল্প এলাকা নির্ধারণ করায় অত্র উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি উপজেলার ছেলে মেয়েরা এখানে লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি কৃষি কলেজ স্থাপন প্রকল্পের কার্যক্রম পূণরায় শুরু করার জন্য সরকার দলীয় এ জনপ্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

Voice of Paikgacha