Tuesday, June 3, 2014

এক পশলা বৃষ্টির পর এক সমুদ্র পানি.... এ যেন পাইকগাছা মেইন রোডের নিত্যকার কাহিনী !

পাইকগাছা পৌরসভা লোনা পানি কেন্দ্রের সামনে থেকে তুলেছেন Gm Rajib.

কপিলমুনিতে বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হচ্ছে আম

কপিলমুনিতে বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হচ্ছে আমসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল। এতে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, কপিলমুনির কয়েকটি আড়তে প্রতিনিয়ত বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে আমসহ মৌসুমী ফল পাকানো হচ্ছে। এছাড়া আমের আকর্ষণীয় রং এর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে বিশেষ কেমিক্যাল। এ অবস্থা চলছে চলতি মৌসুমভর।

এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় এটি করে থাকেন। পাইকগাছার কোথাও কোথাও সম্প্রতি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইন অমান্যকারীদের জেল জরিমানা করা হলেও কপিলমুনি বাজারে তার কোন প্রভাব পড়েনি।

সূত্র জানিয়েছে, এলাকার কয়েকটি আড়ৎ থেকে কার্বাইট দিয়ে আম পাকিয়ে প্রতিনিয়ত দেশের বড় বড় মোকামে পাঠানো হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা দিনের পর দিন অবৈধ পন্থায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন।

একাধিক চিকিৎসক বলেন, কার্বাইড দিয়ে পাকানো ফল মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যা খাওয়ার ফলে মানুষ বিভিন্ন রকম জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। নিয়মিত এগুলো খাওয়ার ফলে অকালে হার্ট, কিডনি, লিভার ও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

অনতিবিলম্বে বিষাক্ত ক্যামিক্যাল দিয়ে আম পাকানোর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

পাইকগাছায় বাগদা চিংড়িতে ব্যাপক মড়ক

ভাইরাস না কি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব? -হিসাব মিলছেনা মৎস্য কর্মকর্তাদেরও 

 

পাইকগাছায় চিংড়ি ঘেরগুলোতে মৌসুমের শুরুতেই ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে মড়ক। চাষিরা এটাকে ভাইরাস সংক্রমণ বললেও মৎস্য অফিস বলছে মরা চিংড়িতে তারা কোনো রোগ-বালাই খুঁজে পাচ্ছেন না। কোনো পদ্ধতিতেই রোধ করতে যাচ্ছেনা বাগদা চিংড়ির এ মড়ক।

জলবায়ু পরিবর্তনে অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড তাপদাহ চিংড়ির উপযোগী লবণ পানির স্বাভাবিক পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন অবস্থায় চিংড়ির বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহতের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের ভবিষ্যত নিয়ে নানাবিধ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, গোটা উপজেলায় মোট কৃষি জমির পরিমাণ ৩০ হাজার হেক্টর। যার মধ্যে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতেই লবণ পানির চিংড়ি চাষ হয়।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার চিংড়ি ঘের রয়েছে। গত বছর উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবার মৎস্য অধিদপ্তর চিংড়ি উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৬ হাজার মেট্রিকটন। তবে মৌসুমের শুরুতেই ব্যাপক হারে চিংড়ি মাছ মারা যাওয়ার কারণে একদিকে যেমন লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে অন্যদিকে এবার বাগদা চিংড়ির দাম ভালো না থাকায় আগামীতে চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন চাষিরা।

প্রসঙ্গত,আশির দশক থেকে কৃষি অধ্যুষিত এ উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু হয় লবণ পানির চিংড়ি চাষ। শুরুতেই উৎপাদন ও দাম ভালো পাওয়ায় মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে উপজেলার দুই তৃতীয়াংশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এর চাষাবাদ। সোনার ধান, সোনালি আঁশ সবুজ সবজি আর শষ্যের পরিবর্তে দিগন্ত জোড়া মাঠের যে দিকেই চোখ যায় শুধু পানি আর পানি।

আর ফসলের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা নয়, সকাল-সন্ধ্যা ঝাঁঝালো গন্ধের চিকচিকে পানির নিচ থেকে উঠতে থাকে সোনাভরা বাগদা। কিছুদিনের মধ্যে পাইকগাছাকে চিংড়ি উৎপাদনের জন্য বিশেষায়িত করা হয় ‘সাদা সোনার রাজ্য’ হিসেবে। রাতা-রাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যান চিংড়ি চাষের সঙ্গে সম্পৃক্তরা।

তবে প্রকৃত জমির মালিকদের অবস্থা চলে যায় আরো নিচের দিকে। ফসলও ফলেনা জমিতে আবার চিংড়ি ঘেরের হারিও (ভাড়া) কম। এক সময় ঋণের দায়ে জমিটুকু ঘের মালিকদের কাছেই বেঁচে দিতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই। তবে এক থেকে দেড় দশকের মধ্যে ১৯৯৫ সালের পর থেকে চিংড়ি ঘেরে শুরু হয় ভাইরাস বা মড়ক রোগ সংক্রমণ। ধীরে ধীরে তা বিস্তার লাভ করায় পুরোপুরি লাভের মুখে থাকা চিংড়ি শিল্পে নেমে আসে ধ্স।

এভাবে সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের অনেকেই লাভের আশায় ধার-দেনা করে চাষাবাদ টিকিয়ে রেখে এক সময় চাপ সইতে না পেরে পালিয়ে গেছেন। অনেকেই সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। পরে কিছুটা ভালো হওয়ায় কোমর বেঁধে মাঠে নামেন চাষিরা। তবে মাত্র এক বছর পর মৌসুমের শুরুতেই চিংড়ি ঘেরে আবারো মড়ক নতুন করে বন্ধের উপক্রম হয়েছে সম্ভাবনাময় শিল্প।

চিংড়ি চাষি প্রতাপকাটী গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, ২৩ বিঘা ঘেরে এ পর্যন্ত তিনি কোনো মাছ ধরতে পারেনি। মৌসুমের শুরুতেই তার ঘেরে মাছ মারা যাচ্ছে। ভাইরাস না অন্য কিছুতেই মরছে তা তিনি বুঝতে পারছে না।

চিংড়ি চাষি কাশিমনগর গ্রামের নজরুল গাজী জানান, তার ২৬ বিঘা ঘেরে এ পর্যন্ত তিনি গোনের (অমাবশ্যা-পূর্ণিমা) কোনো দিন সর্বোচ্চ এক কেজি মাছ ধরতে পারেননি। তাও আবার আটল বা চারোতে নিয়মিত আসছে মরা মাছ। বছর শেষে এলাকা ছেড়ে পালাতে হবে। শুধু নজরুল গাজীই নয় এলাকার প্রায় সকলের অবস্থা একই।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল জানান, যে সব ঘেরের চিংড়ি মরছে ওইসব চিংড়িতে তারা কোনো রোগের লক্ষণ বা চিহ্ন পাচ্ছেন না।

কি কারণে মরছে চিংড়ি? এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে না পারলেও ওই কর্তা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড তাপদাহে চিংড়ির লবণ পানির উপযুক্ত পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে মাছের মড়ক লাগতে পারে।

এদিকে, চিংড়ির মড়ক রোধে বিভিন্ন কোম্পানি বাহারি সব প্রচারে বাজারজাত করছে নানাবিধ প্রতিষেধক বা ওষুধ। অনেকে আবার পরিবেশ বান্ধবের ধুয়া তুলে নিজেদের চিংড়ি বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করলেও মূলত তাদের কারো কোনো প্রেসক্রিপশনে কাজ না হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ছেন চাষিরা।