Tuesday, September 15, 2015

মায়ের কাছে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করলো পাইকগাছার কলেজ ছাত্রী উর্মি

পাইকগাছায় সহপাঠীদের মিথ্যা অপবাদ সহ্য করতে না পেরে মায়ের কাছে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছে উর্মি নামের এক কলেজ ছাত্রী। সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলতো উর্মি। মিশতো সবার সাথে। ক্লাসে সবাইকে সে সহপাঠী হিসেবেই ভাবতো। লেখাপড়ার প্রতি তার ছিলো প্রবল আগ্রহ। ইচ্ছে ছিলো লেখাপড়া শিখে মা বাবার স্বপ্ন পূরণ করবে উর্মি। 

কিন্তু সহপাঠীদের অপবাদে সে স্বপ্ন পূরণ করা হলো না তার। মিথ্যা কলঙ্ক সহ্য করতে না পেরে উর্মি আত্মহত্যা করেছে। উর্মি খাতুন পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের লক্ষীখোলা কলেজিয়েট বিদ্যালয়ের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

উর্মির বাবা রেজাউল করিম তার মেয়ের চিড়কুটে লেখা আত্মহত্যার কারণ সূত্র ধরে বলেন, কলেজে বিভিন্ন সময় লাকী খাতুন, হেনা খাতুন, রনি, সামছুন্নাহার, রাব্বি, হোসেনসহ তার সহপাঠীরা উর্মিকে নিয়ে আজে-বাজে মন্তব্য ও প্রকাশ্যে তার মেয়েকে বারবার অপমান করত। অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে উর্মি। মৃত্যুর আগে মায়ের কাছে লেখা তিন পৃষ্টার চিরকুটে পাওয়া যায় তার আত্মহত্যার কাহিনী। তাতে লেখা আছে উর্মির আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার কারণ।

উর্মির মায়ের কাছে লেখা চিরকুটের কিছু অংশ তুলে ধরা হল, “আম্মু তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। আম্মু তুমি ভাবতে পার যে আমি মনে হয় কোনো ছেলের জন্য মরে যাচ্ছি। কিন্তু না আমি কোনো ছেলের জন্য এটা করছি না। আম্মু আমি সত্যিই মরতে চাইনি। কিন্তু কি করবো বলো। কেউ কি তার চরিত্র সম্পর্কে বাজে কথা শুনতে চাই। আম্মু তুমি জাননা সে দিন কলেজে সবার সামনে লাকি, হেনা, রনি, শামছুরনাহার এরা সবাই আমাকে কলেজে সবার সমানে আমাকে বলেছে যে আমি নাকি চরিত্রহীন। আমার নাকি একটা ছেলেতে হয় না। দুই তিনটা ছেলে লাগে। তার পর রনিকে লাকি বলেছে যে রনি উর্মির তিন চারটা তে হচ্ছে না। রনি তুই ও ওর সাথে যা। আবার তার কদিন আগে রাব্বি ও আমাকে কলেজে সবার সামনে অনেক বাজে কথা বলেছে। আর সবাই তাই জানে যে আমি অনেক খারাপ হয়ে গেছি……..আমি নাকি পাইকগাছাই ছেলেদের সাথে বাজে কাজ করে টাকা উপার্জন করছি। আরো কত কি আম্মু। আর লাকি, হেনা, রাব্বী এদের জন্য আম্মু আমাকে সবাই খারাপ বলে। আমার সাথে কেউ কথা বলতে চাই না। আম্মু তুমি আমাকে মাপ করে দিও। আমি ও কোনো দিন ভাবিনি যে আমাকে এভাবে মরতে হবে। ভালো থেকো আম্মু…। আম্মু আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। কতটা আশা নিয়ে পাইকগাছায় পড়তে এসেছিলাম। কিন্তু সে আশা আর পূরণ হলো না। আমি তোমার আশা পূরণ করতে পারলাম না। আম্মু তুমি ভালো থাকো। আর আমার জন্য বেশি ভেবোনা। আমার কপালে যেটা লেখা ছিল সেটা হচ্ছে।

--উর্মি


উর্মির বাবা রেজাউল করিম বলেন, চিড়কুটটি পাইকগাছা থানায় জমা দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে পাইকগাছা থানার উপপরিদর্শক স্বপন বাবু বলেন, পাইকগাছা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। চিড়কুটটি তিনি ১৩ সেপ্টেম্বর রোববার হাতে পেয়েছেন। চিড়কুটের লেখা যাচাই করা হচ্ছে। চিড়কুটের সত্যতা পেলে কেউ উর্মিকে যৌন হয়রানি করে থাকার প্রমান পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এলাকাবাসী জানায়, উর্মি তার মা-বাবার বড় সন্তান। লক্ষ্মীখোলা কলেজিয়েট বিদ্যালয়ের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্রী। একই গ্রামের সিরাজুল ইসলামের কন্যা আপন চাচাতো বোন লাকী খাতুন, হারুনের কন্যা হেনা খাতুন, শিক্ষক খলিলের পুত্র রাব্বি হোসেন, রফিকের পুত্র রনি, গণির কন্যা সামছুন্নাহারসহ অনেকে কলেজের ভিতর প্রায় সময় উর্মি দেহ ব্যবসা করে মর্মে অপবাদ দিত।

উর্মি লজ্জায় কোনো প্রতিবাদ না করায় উল্লেখিত বান্ধবী ও বন্ধুরা দীর্ঘদিন যাবৎ তাকে বিভিন্নভাবে প্রকাশ্যে অপমান করে। লাকী খাতুন প্রকাশ্যে রনিকে লেলিয়ে দেয় উর্মির সাথে খারাপ কাজ করার জন্য। এভাবে উর্মিকে মিথ্যা অপবাধ নীরবে সহ্য করতে হয়। এতে করে এক পর্যায়ে উর্মি সিদ্ধান্ত নেয় আত্মহত্যার।

তারই ধারাবাহিকতায় ৯ সেপ্টেম্বর নিজ বাড়িতে গোপনে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে। একই দিন উর্মির মামা শেখ দিদারুল হক উর্মির ডাইরির ভিতর থেকে তিন পৃষ্টার একটি চিড়কুট উদ্ধার করেন। চিড়কুটটি ছিল উর্মির মায়ের উদ্দেশ্যে লেখা।

সরেজমিনে যেয়ে উল্লেখিত ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদেরকে খুজে পাওয়া যায়নি। ১০ সেপ্টেম্বর খুলনা থেকে ময়না তদন্ত শেষে দুপুরে উর্মির মরদেহ বাড়িতে আনলে শোকের ছায়া নেমে আসে। বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন উর্মির মা। ছোট দু’ভাইবোন পাগলের মত মাটিতে গড়াগড়ি খেতে দেখা যায়। পুরো পরিবারটি শোকাহত।

এই ব্যাপারে লক্ষীখোলা কলেজিয়েট বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তাকে ছাত্র ছাত্রীরা খারাপ আচারণ করত আমার জানা ছিল না। তবে চিঠি পাওয়া গেছে শুনেছি।