Friday, April 10, 2015

অভিভাবকহীন পাইকগাছার কপিলমুনি ও সোলাদানা ইউনিয়ন

পাইকগাছা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন ২নং কপিলমুনি ও ৫নং সোলাদানা এখন অভিভাবকহীন। ২নং কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন ডাবস্নু এবং ৫নং সোলাদানা ইউপি চেয়ারম্যান এসএম এনামুল হক রাজনৈতিক ও অসুস্থতাজনিত কারণে দীর্ঘদিন এলাকায় অনুপস্থিত থাকায় অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি ইউনিয়ন। ফলে পরিষদ সংশ্লিষ্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে চরম বিঘ্নের সৃষ্টি হচ্ছে। এমতাবস্থায় ইউনিয়নের উন্নয়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১১ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ২নং কপিলমুনি ও ৫নং সোলাদানা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিন হন শাহাদত হোসেন ডাবস্নু ও এসএম এনামুল হক। এরপর পরিষদ সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম এগিয়ে চললেও বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে নানা সমালোচনার মুখে পড়েন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদ্বয়। ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন ডাবস্নু ও এসএম এনামুল হকদ্বয়ের শক্ত অবস্থানের কারণে সার্বিক বিষয় নিয়ে তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি।

ঘটনাক্রমে দেশে চলমান রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে বিরামহীন অবরোধ ও ধর্মঘাটের কারণে স্বক্রিয় বিএনপি রাজনীতিতে জড়িত থাকা এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ দুই চেয়ারম্যানই গ্রেফতার এড়াতে দীর্ঘদিন পূর্বে আত্মগোপনে চলে যান। এরপর থেকে পরিষদ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বিঘ্নিত হতে থাকে। ফলে ইউনিয়ন দুটি অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছে। 

এমতাবস্থায় ইউনিয়নে বিচারপ্রার্থীসহ পরিষদ সংশিষ্ট সার্বিক কার্যক্রমে চরম বিঘ্নের সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। নামমাত্র প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন করা হলেও তাতে আশানুরূপ প্রতিফলন ঘটেনি। 

ইউনিয়নে দুটিতে চলছে ভূমি দখল আর ডিসিআর বাণিজ্যের হলিখেলা। বর্তমানে কপিলমুনিতে কপোতাক্ষের জেগে ওঠা চর দখলে চলছে প্রতিযোগিতা। একইভাবে এসব সরকারি সম্পত্তির বন্দোবস্ত নিয়ে দলিল প্রক্রিয়ার নামে ও প্রাথমিক পর্যায় ডিসিআরের নামে চলছে রমরমা বাণিজ্য। লোপাট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি ইউনিয়ন দীর্ঘদিন অভিভাবক শূন্য অবস্থায় বিরাজ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছেন কুম্ভকর্ণের ন্যায় ঘুমে আচ্ছন্ন। ফলে একদিকে যেমন ইউনিয়নের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে পরিষদ সংশ্লিষ্ট অনেক কাজ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা বিরাজ করছে। অভিজ্ঞ মহল ইউনিয়নের ভাবমূর্তি রক্ষাসহ সার্বিক কার্যক্রম সমুন্নত রাখতে ইউনিয়ন সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

চলতি মৌসুমে পশ্চিম সুন্দরবনে মধু ও মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

২২৫০ কুইন্টাল মধু ও ৬৬৫ কুইন্টাল মোম 


সুন্দরবনের মধু আহরণের মৌসুম শুরু হয়েছে। মৌয়ালরা মধু সংগ্রহের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছেন। চলতি মৌসুমে বাঘের আক্রমনের ঝুঁকির পাশাপাশি বনদস্যুদের হামলার ভয় মাথায় নিয়ে তাদের বনে যেতে হচ্ছে। বনে ঢোকার আগেই বনদস্যুদের নৌকা প্রতি ২০ হাজার করে টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে মৌওয়ালদের। তবে বন বিভাগের দাবি মৌওয়ালরা কোন অভিযোগ না করায় এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না

সুন্দরবনের মধু সু-মিষ্টি, এ বনের মধু মহাঔষধ ও প্রাকৃতিক সম্পদ। মধু দেশের চাহিদা মিটিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে মৌয়ালরা মধু আহরণ করতে গিয়ে বাঘ, সাপ, কুমিরের সাথে জীবন বাজি রেখে এবং ভয়ংকর বন দস্যুদের চাঁদা, মুক্তিপণ মাথায় নিয়ে সুন্দরবনে মধু আহরণ করতে হচ্ছে। তা ছাড়াও বন বিভাগ থেকে পাশ পারমিট নিতে তাদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১ এপ্রিল থেকে মধু আহোরণের মৌসুম শুরু হয়েছে। ৩০ জুন পর্যন্ত মধু আহরণ চলবে। বন বিভাগের বিভিন্ন স্টেশন থেকে মৌয়ালরা পাশ পারমিট নিয়ে বনে যাচ্ছে। খুলনা, সাতক্ষীরাসহ উপকূল এলাকার ১৯-২০টি উপজেলার মৌয়ালরা বিভিন্ন মহাজনের অধিনে মধু সংগ্রহ করতে বনে প্রবেশ করে।

সুন্দরবন বনবিভাগে পশ্চিম বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে পশ্চিম বন বিভাগ থেকে মধু ২২৫০ কুইন্টাল ও ৫৫৬ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্য মাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা রেঞ্জে মধু ৭৫০ কুন্টল ও ১৯০ কুইন্টল মোম এবং সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে ১৫০০ কুইন্টল এবং ৩৭৫ কুইন্টাল মোম। এ বছর বড় ধরণের কোন বিপর্যয় না হলে লক্ষ মাত্রার চেয়ে বেশি মধু আহরণের আশা করছে বনবিভাগ।

মধু সংগ্রহের জন্য যে সব বনজীবি মাওয়ালীরা বনে প্রবেশ করেছে এবং প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের জন্য সব থেকে বড় আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে সুন্দরবনের মুর্তিমান আতঙ্ক বনদস্যু। মৌয়ালরা জানায়, সুন্দরবনের বাঘ, কুমিরের মুখ থেকে রেহাই পেলেও রেহাই পাওয়া যায় না মানুষ রূপী ভয়ংকর বনদস্যুদের হাত থেকে। বনদস্যুরা নৌকা প্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার পর্যন্তা চাঁদা মৌয়ালদের কাছ থেকে আদায় করছে।

মৌয়ালরা আরো জানায়, তারা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে দাদন নিয়ে বনে মধু আহরণের জন্য প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন স্থানে চাঁদা দেওয়ায় বন থেকে মধু সংগ্রহ শেষে হিসাব করে দেখা যায় তাদের আয়ের থেকে খরচ বেড়ে গেছে। তারপরও মৌয়ালরা নানা সমস্যা মাথায় নিয়ে সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ করছে। 

এ ব্যাপারে সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগীয় কর্মকর্তা জহির উদ্দীন আহম্মেদ জানান, ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মধু আহরণ চলবে। মৌয়ালদের নিরাপত্তার জন্য বনবিভাগের পাশাপাশি কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। সুন্দরবনে বনজীবি মৌয়ালরা মধু আহরণে বনের ভিতর নিবিঘ্নে চলাচল করতে পারে তার জন্য প্রশাসনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করার জন্য বনবিভাগের নিকট দাবী করেছে।

পাইকগাছায় তামাক জাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে বিপনী বিতান

জরিমানা করার পরও প্রচারনা মূলক বিজ্ঞাপন অব্যাহত রেখে তামাক কোম্পনী গুলো রীতিমত সরকারের সাথে চ্যালেঞ্জ করছে 


পাইকগাছায় তামাক জাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে বিপনী বিতানগুলো। তামাক নিয়ন্ত্রন আইনে তামাক জাত দ্রব্যের প্রচারনা মূলক বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলেও আইনের যথাযত প্রয়োগ না থাকায় এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে তামাক কোম্পানী গুলো। ফলে আকর্ষনীয় নজর কাড়া বিজ্ঞাপনে উৎসাহিত হয়ে ধুমপানে আকৃষ্ট হচ্ছে উঠতি বয়সের ছেলে মেয়ে থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। 

সম্প্রতি পৌর সদর সহ সরল বাজার, নতুন বাজার, গদাইপুর, আগড়ঘাটা, বানিজ্যিক শহর কপিলমুনি, বাঁকা বাজার, কাশিমনগর, চাঁদখালী’সহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ন স্থান সমূহের বিপনী বিতান গুলো তামাক কোম্পানির বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেটের প্যাকেট ও লিফলেটে ছেয়ে ফেলা হয়েছে। 

ইতোপূর্বে কয়েকজন দোকান মালিককে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হলে বেশ কিছু দিন বিজ্ঞাপন গুলো সরিয়ে রাখে দোকান মালিকরা। পরবর্তীতে তামাক কোম্পানীর লোকজন দোকান মালিকদের ওপর ধার্য্যকৃত জরিমানার টাকা পরিশোধ করে দেয়ার ফলে আবারও তামাক জাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে বিপনী বিতান গুলো। 

নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর জানান, তামাকের ব্যবহার থেকে সাধারন মানুষকে নিরুৎসাহিত করতে ধুমপান বিরোধী কার্যক্রম শক্তিশালী করন ও তামাকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে প্রচার-প্রচারনা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। 

তামক বিরোধী সংগঠন সিয়ামের নির্বাহী পরিচালক মাসুম বিল্লাহ জানান, সম্প্রতি তামাক নিয়ন্ত্রন আইন (সংশোধিত) ২০১৩ এর বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়েছে। আইনে তামাক জাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তামাক কোম্পানী গুলো প্রচলিত আইন উপেক্ষা করে প্রচারনা অব্যাহত রেখেছে। এ ক্ষেত্রে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা’সহ আইনের যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন। 

উপজেলা তামাক নিয়ন্ত্রন টাস্ক ফোর্স কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কবির উদ্দিন জানান, জরিমানা করার পরও প্রচারনা মূলক বিজ্ঞাপন অব্যাহত রেখে তামাক কোম্পনী গুলো রীতিমত সরকারের সাথে চ্যালেঞ্জ করছে। এ ব্যাপারে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।