ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলবাসী
আজ ভয়াল ২৫ মে। ২০০৯ সালের এইদিনে উপকূলবাসী প্রত্যক্ষ করে প্রকৃতির এক নির্মম দানবিকতা। এদিন ঝড়ো বাতাসে সৃষ্ট প্রলয়ংকারী জলোচ্ছ্বাস আইলার আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় গোটা উপকূলীয় এলাকা। আইলার ভয়াল ছোবলে লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বঙ্গোপসাগরে একাকার হয়ে যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ও পদ্মপুকুর। বাস্তহারা হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে লাখো মানুষ।
এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে ৫ বছর। তবে এ দীর্ঘ সময়েও আইলার সর্বনাশা আঘাতের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি এসব দুর্গত এলাকার মানুষজন।
আইলার আঘাতে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া গাবুরা ইউনিয়নের সোরা গ্রামের আনছার আলী, রহিমা খাতুন, আশরাফ গাজীসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন ওইদিনের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে শিউরে ওঠেন।
তারা বলেন, ঘটনার দুই দিন আগে থেকেই একটানা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। ২৫ মে সকালে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো বাতাস শুরু হয়। একপর্যায়ে দুপুর একটার কিছু পরেই আইলা আঘাত হানে। এতে ঝড়ো বাতাস ও পানির তোড়ে শুরুতেই গাবুরার উপকূল রক্ষা বাঁধ ভেঙে চল্লিশ হাজারেরও বেশি জনবসতি সাগরের পানিতে নিমজ্জিত হয়।
মুহূর্তের মধ্যে লণ্ড-ভণ্ড হয়ে যায় সবকিছু। স্বজনহারা হয় শতাধিক পরিবার। গৃহহীন হয়ে পড়ে লাখো মানুষ। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট, বেড়িবাঁধসহ অন্যান্য অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ভেসে যায় হাজার হাজার গবাদি পশু, হাঁসমুরগি, ফসলি ক্ষেত ও চিংড়ি ঘের। তলিয়ে যায় সহস্রাধিক নলকূপ ও দুই হাজারেরও বেশি পুকুর। দিনের আলোতেই দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর, গাবুরা, মুন্সীগঞ্জ, ভেটখালী, কৈখালী ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, খাজরা ইউনিয়নসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকার লাখ লাখ মানুষ।
এদিকে, আইলার আঘাতের ৫ বছর পার হলেও এখনো আইলার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেনি এ অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্তরা। এ দীর্ঘ সময়ে রাস্তাঘাট পুনঃনির্মাণ ও উপকূল রক্ষা বাঁধ কিছুটা সংস্কার করা হলেও উপকূলবাসীর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়নি আজও।
আইলার তাণ্ডবে যে কর্মসংস্থানের সংকট সৃষ্টি হয়েছিল তাও এখনো স্বাভাবিক হয়নি। সমুদ্রের পানিতে ডুবে যাওয়া পুকুর-জলাশয়গুলো এখনো ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়নি। ফলে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে গোটা উপকূলজুড়ে। প্রচণ্ড লবণাক্ততায় জনপদগুলো বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়েছে। জ্বালানি, খাবার পানি ও কর্মসংস্থানের সংকট মানুষের জীবনযাত্রাকে করে তুলেছে দুর্বিষহ।
ক্ষতিগ্রস্তরা বসতভিটায় ফিরে কোনো রকমে বসবাস শুরু করলেও কয়েক হাজার পরিবার আজও বসতভিটায় ফিরতে পারেনি। চারিদিকে বাঁধ বেষ্টিত দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ও পদ্মপুকুরের উপকূল রক্ষা বাঁধ যেনতেনভাবে সংস্কার করায় যেকোনো সময় আবারো বাঁধ ধসে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ মানুষ।
এছাড়া চাষযোগ্য জমির লবণাক্ততা মোকাবেলা করে কোনো কোনো জমিতে ধান চাষ করা সম্ভব হলেও অধিকাংশ কৃষি জমি এখনো অনাবাদী রয়েছে। কাজ ও জ্বালানি সংকটের কারণে সুন্দরবনের উপর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ।
অপরদিকে, এসব অঞ্চলে ধ্বংস্তুপে পরিণত হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো রকমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও লেখাপড়ার স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি হয়নি আজও।
স্থানীয় গাবুরা খোলপেটুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন Voice of Paikgacha'কে বলেন, আইলার পর এখানকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন ঘটাতে উপকূল রক্ষা বেড়িবাধ উঁচু ও মজবুত করার কোনো বিকল্প নেই।
স্থানীয় পরিবেশ গবেষক শাহীন ইসলাম Voice of Paikgacha'কে বলেন, এলাকায় মানুষের মধ্যে তীব্র অপুষ্টি বিরাজ করছে। আইলায় খাদ্য নিরাপত্তা বিপর্যস্ত হয়েছে। বর্তমানে কৃষকরা খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে লবণাক্ততা মোকাবেলা করে আবার ধান চাষের চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাদের এ প্রচেষ্টায় সরকার সহযোগিতা না করলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তবিবুর রহমান বলেন, সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা আইলা উপদ্রুত মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। লবণাক্ত এলাকা হওয়ায় অন্যান্য এলাকার চেয়ে এখানে কাজ শুরু করে শেষ করা বেশ কষ্টসাধ্য।
আইলার আঘাতে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া গাবুরা ইউনিয়নের সোরা গ্রামের আনছার আলী, রহিমা খাতুন, আশরাফ গাজীসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন ওইদিনের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে শিউরে ওঠেন।
তারা বলেন, ঘটনার দুই দিন আগে থেকেই একটানা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। ২৫ মে সকালে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো বাতাস শুরু হয়। একপর্যায়ে দুপুর একটার কিছু পরেই আইলা আঘাত হানে। এতে ঝড়ো বাতাস ও পানির তোড়ে শুরুতেই গাবুরার উপকূল রক্ষা বাঁধ ভেঙে চল্লিশ হাজারেরও বেশি জনবসতি সাগরের পানিতে নিমজ্জিত হয়।
মুহূর্তের মধ্যে লণ্ড-ভণ্ড হয়ে যায় সবকিছু। স্বজনহারা হয় শতাধিক পরিবার। গৃহহীন হয়ে পড়ে লাখো মানুষ। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট, বেড়িবাঁধসহ অন্যান্য অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ভেসে যায় হাজার হাজার গবাদি পশু, হাঁসমুরগি, ফসলি ক্ষেত ও চিংড়ি ঘের। তলিয়ে যায় সহস্রাধিক নলকূপ ও দুই হাজারেরও বেশি পুকুর। দিনের আলোতেই দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর, গাবুরা, মুন্সীগঞ্জ, ভেটখালী, কৈখালী ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, খাজরা ইউনিয়নসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকার লাখ লাখ মানুষ।
এদিকে, আইলার আঘাতের ৫ বছর পার হলেও এখনো আইলার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেনি এ অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্তরা। এ দীর্ঘ সময়ে রাস্তাঘাট পুনঃনির্মাণ ও উপকূল রক্ষা বাঁধ কিছুটা সংস্কার করা হলেও উপকূলবাসীর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়নি আজও।
আইলার তাণ্ডবে যে কর্মসংস্থানের সংকট সৃষ্টি হয়েছিল তাও এখনো স্বাভাবিক হয়নি। সমুদ্রের পানিতে ডুবে যাওয়া পুকুর-জলাশয়গুলো এখনো ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়নি। ফলে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে গোটা উপকূলজুড়ে। প্রচণ্ড লবণাক্ততায় জনপদগুলো বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়েছে। জ্বালানি, খাবার পানি ও কর্মসংস্থানের সংকট মানুষের জীবনযাত্রাকে করে তুলেছে দুর্বিষহ।
ক্ষতিগ্রস্তরা বসতভিটায় ফিরে কোনো রকমে বসবাস শুরু করলেও কয়েক হাজার পরিবার আজও বসতভিটায় ফিরতে পারেনি। চারিদিকে বাঁধ বেষ্টিত দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ও পদ্মপুকুরের উপকূল রক্ষা বাঁধ যেনতেনভাবে সংস্কার করায় যেকোনো সময় আবারো বাঁধ ধসে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ মানুষ।
এছাড়া চাষযোগ্য জমির লবণাক্ততা মোকাবেলা করে কোনো কোনো জমিতে ধান চাষ করা সম্ভব হলেও অধিকাংশ কৃষি জমি এখনো অনাবাদী রয়েছে। কাজ ও জ্বালানি সংকটের কারণে সুন্দরবনের উপর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ।
অপরদিকে, এসব অঞ্চলে ধ্বংস্তুপে পরিণত হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো রকমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও লেখাপড়ার স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি হয়নি আজও।
স্থানীয় গাবুরা খোলপেটুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন Voice of Paikgacha'কে বলেন, আইলার পর এখানকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন ঘটাতে উপকূল রক্ষা বেড়িবাধ উঁচু ও মজবুত করার কোনো বিকল্প নেই।
স্থানীয় পরিবেশ গবেষক শাহীন ইসলাম Voice of Paikgacha'কে বলেন, এলাকায় মানুষের মধ্যে তীব্র অপুষ্টি বিরাজ করছে। আইলায় খাদ্য নিরাপত্তা বিপর্যস্ত হয়েছে। বর্তমানে কৃষকরা খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে লবণাক্ততা মোকাবেলা করে আবার ধান চাষের চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাদের এ প্রচেষ্টায় সরকার সহযোগিতা না করলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তবিবুর রহমান বলেন, সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা আইলা উপদ্রুত মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। লবণাক্ত এলাকা হওয়ায় অন্যান্য এলাকার চেয়ে এখানে কাজ শুরু করে শেষ করা বেশ কষ্টসাধ্য।