Wednesday, November 6, 2013

সড়ক, নাকি মরণফাঁদ !!!

দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া সড়কটিতে বছর দুই আগে বর্ষা মৌসুমে পানি জমে কদর্মাক্ত হয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী ধানের চারা রোপণ করে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তা সত্ত্বেও সেখানে কোনো সংস্কারকাজ হয়নি। এখন সেই সড়কের অবস্থা আরো করুণ। বড় বড় গর্তে বৃষ্টির পানি জমে যানচলাচল এখন প্রায় বন্ধ। যে কয়টি যানবাহন নিরুপায় হয়ে ওই সড়কে চলে সেগুলোকে প্রতিনিয়ত পড়তে হয় দুর্ঘটনায়। খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত দিয়ে যাওয়া বেতগ্রাম-তালা- কপিলমুনি সড়কটি এখন যেন মরণফাঁদ।

এলাকাবাসী জানায়, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের অন্যান্য সড়কের মতো এ সড়কটিও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘূর্ণিঝড়ের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনার কয়রা উপজেলা সফরকালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বেতগ্রাম (আঠারো মাইল) থেকে সাতক্ষীরার তালা ও খুলনার পাইকগাছা উপজেলা হয়ে কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি সড়কটি সংস্কারের পাশাপাশি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন একান্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান ২০১০ সালের ২৯ জুলাই সংশ্লিষ্ট বিভাগকে লিখিতভাবে জানান। এরপর কয়রা উপজেলার বেদকাশি থেকে কাজ শুরু হয়ে পাইকগাছার গোলাবাড়ী পর্যন্ত সড়কে সংস্কারকাজ হলেও বাকিটা অসমাপ্ত থেকে যায়।

জরাজীর্ণ ওই সড়কের গোলাবাড়ী থেকে তালা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তা ২০১১ সালের বর্ষা মৌসুমে কপোতাক্ষ নদের পানিতে প্লাবিত হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ওই সময়ে স্থানীয় জনগণের ব্যাপক আন্দোলন-সংগ্রামের মুখে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নড়ে বসে। ইট-সুরকি দিয়ে সড়কটি কোনো রকমে চালু করা হলেও ভালোভাবে সংস্কার করা হয়নি।

গত বছরের ২৮ জানুয়ারি সদ্য যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া ওবায়দুল কাদের সড়কটি পরিদর্শনে গিয়ে দ্রুত সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু আজও সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি।

চলতি বর্ষা মৌসুমে প্রবল বৃষ্টির কারণে সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে জেলা ও বিভাগীয় সদর এবং রাজধানীর সঙ্গে ওই এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। ফলে খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার চারটি উপজেলার ২০ লাখের বেশি মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। সম্প্রতি ঈদ ও পূজায় ঘরমুখো মানুষের বাড়তি চাপ সেই দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের আঠারো মাইল থেকে তালা-কপিলমুনি সড়কের প্রবেশমুখেই বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা কাশিমনগর এলাকায়। বৃষ্টি হলেই এখানে জমে থাকা পানি সরাতে হয় শ্যালো মেশিন দিয়ে। এ ছাড়া গোলাবাড়ী, নাছিরপুর, ঘোষনগর, গোনালীসহ বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

বাসচালক শফিকুল ইসলাম জানান, ওই সড়কে অনিয়মিত বাস চললেও বৃষ্টি হলেই বাসচলাচল বন্ধ রাখেন। মাঝে মধ্যে রাস্তার খাদে বাস আটকে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ থাকে। এ ছাড়া অন্যান্য দুর্ঘটনা তো আছেই।

তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ বাবলু জানান, সড়কটিতে চলাচলকারীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দক্ষিণ খুলনার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি সংস্কারে একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি।

এ বিষয়ে খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সোহরাব আলী সানা  Voice of Paikgacha 'কে জানান, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সড়কটি সংস্কারের কাজ শেষ হচ্ছে না। ইতিমধ্যে বেদকাশি-কয়রা-পাইকগাছা হয়ে গোলাবাড়ী পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ সড়কের বেশির ভাগ কাজ শেষ হলেও প্রবেশমুখে দুরবস্থার কারণে সরকারকে গালিগালাজ শুনতে হচ্ছে। তিনি জানান, সংসদের চলতি অধিবেশনেও তিনি এ বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণী নোটিশ উত্থাপন করেন। তার পরও কাজ হয়নি।

খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ওই সড়ক সংস্কারের বিভিন্ন প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। একাধিক দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু কাজ করা সম্ভব হয়নি। কারণ জলাবদ্ধতার হাত থেকে সড়কটি রক্ষায় গোলাবাড়ী থেকে তালা পর্যন্ত মাটি ভরাট করে তিন ফুট উঁচু করতে হবে। আর সেই প্রকল্পে বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজটি আটকে আছে।