আজ খুলনা দিবস। খুলনা জেলার প্রতিষ্ঠার দিন। ১৮৮২ সালের ২৫ এপ্রিল খুলনা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। খুলনাতে মহাকুমা করা হয়েছিলো ১৮৪২ সালে। এর আগে ১৮৩৬ সালে খুলনা জেলার রূপসা উপজেলায় তুর্ক আফগান আমলে প্রতিষ্ঠিত ‘কিসমত খুলনা’ মৌজায় নয়াবাদ নামে একটি থানা স্থাপিত হয়। খুলনা জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক ছিলেন মি. ডাবলু এম. ক্লে। ১৯৬১ সালে খুলনা বিভাগে রূপ লাভ করে।
খুলনা নাম নিয়ে আছে বেশ কয়েকটি কিংবদন্তি। ঐতিহাসিক সিরাজুদ্দীন আহমেদ লিখেছেন, ‘খুলনা জেলার প্রাচীন নাম বুড়ন দ্বীপ। গঙ্গানদের শাখা হলদিনদীর মোহনায় এ দ্বীপের সৃষ্টি। রামায়ণে হলদিনী নদীর বর্ণনা আছে। খ্রিস্টিয় প্রথম শতকে টলেমি এ নদীকে কামবেরীঘন বলে উল্লেখ করেছেন। কামবেরীঘন বর্তমান কতোতাক্ষ নদ। কুমার, ভৈরব ও বেত্রাবতী প্রাচীন হলদিনী বা কামবেরীঘনের বিভিন্ন প্রশাখা।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘প্রাগ ঐতিহাসিককালে ভৈরব, কামবেরীঘন ও বেত্রাবতীর তীরে জনবসতি গড়ে ওঠে। অস্ট্রিক, মঙ্গোলিয় ও আল পাইন প্রভৃতি এ অঞ্চলের আদি অধিবাসী।’
ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজির বঙ্গ বিজয়ের একশ বছর পার হলেও খুলনা জেলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যতদূর জানা যায়, শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ (১৩১০-১৩২৫) প্রথম খুলনা দখল করেছিলেন। তার মুদ্রা সুন্দরবন অঞ্চলে পাওয়া গেছে। সুলতানি আমলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা যুগান্তকারি ছিলো বলে হিন্দু-মুসলমান ঐক্য সম্প্রতি বজায় ছিলো সুন্দরভাবে।
সম্রাট আকবরের শাসনামলে খুলনা জেলার অধিকাংশ এলাকা সরকার খলিফাতাবাদের অধীনে ছিলো। নবাব সিরাজদ্দৌলার শাসনামলে যশোরের ফৌজদার পদ বিলুপ্ত হয়ে যায়। তখন মুর্শিদাবাদ থেকে সরাসরি খুলনা জেলার শাসন করা হতো। ইংরেজ শাসনের প্রথম একশ বছর (১৭৫৭-১৮৫৭) খুলনা জেলায় চরম অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছিলো। অনেকে এই সময়ের শাসন কালকে ‘মগের মুল্লুকের প্রশাসন’ বলতো।
২০০৯ সালের ২৫ এপ্রিল খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে যথাযথ মর্যাদায় প্রথম বারের মতো সরকারিভাবে খুলনা দিবস পালিত হয়। এরপর ২০১০ সালেও খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে খুলনা দিবস পালিত হয়েছে।
'খুলনা দিবস' পালনের গুরুত্ব রয়েছে। এটি পালনের মধ্যে দিয়ে আমরা খুলনা জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য খুঁজে নিতে পারি। এ দিবস পালনের মধ্যে সব শ্রেণির মানুষ ইতিহাস সচেতন হয়ে ওঠতে পারে।