Tuesday, March 4, 2014

তবু হাল ছাড়ছেন না জিয়া !

আফগান রূপকথার উল্টো দিকে যে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, সেখানে জিয়াউর রহমান এক পরাজিত সৈনিক। লড়েছেন সামর্থ্যের শেষটুকু দিয়ে, অসম্ভব এক জয়ের দোরগোড়ায় প্রায় নিয়েই গিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলকে। কিন্তু ইদিপাসের মতোই শেষ পর্যন্ত তাঁকে হার মানতে হয়েছে নিয়তির কাছে। তবে এখান থেকেই আগামীর সম্ভাবনা খুঁজছেন তরুণ এ অলরাউন্ডার।

কেন জানি তাঁর ওপর খুব একটা আস্থা ছিল না অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন মুশফিক, একঝাঁক স্পিন বোলিং অলরাউন্ডারের নির্বিষ বোলিং সেদিনও ছিল শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদের 'প্রিয় খাবার'। একজন তাঁর কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলেন, কারো বদলে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারকে দলে নিলে একটু তো বৈচিত্র্য আনা যায়। অধিনায়কের উত্তর ছিল, দেশের পেস বোলিং অলরাউন্ডার মান তাঁর কাছে ঠিক আশানুরূপ নয়।

ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত, কিন্তু হলো না। পরদিন দেওয়া এশিয়া কাপের দলে মাহমুদ উল্লাহ বাদ গেলেন, জিয়া এলেন, তারপর মুশফিক দল নির্বাচন নিয়ে তাঁর হতাশা জানালেন গণমাধ্যমে। কথায় নয়, এবার প্রমাণ দেওয়া যাক অঙ্কে। জিম্বাবুয়ে সফরের শেষ ওয়ানডেতে জিয়া ৫ ওভারে দিয়েছিলেন ২৫ রান, নিয়েছিলেন সিকান্দার রাজার উইকেটও। এরপর তাঁর হাতে আর বল দেননি মুশফিক, খরুচে হলেও বল করিয়ে গেছেন শফিউল আর রাজ্জাককে দিয়ে, যাঁরা উইকেটই পাননি।

ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ম্যাচেও জিয়া দিয়েছিলেন ৫ ওভারে মাত্র ২০ রান, অথচ ২৮তম ওভারের পর আর বলই পেলেন না। আর শেষদিকে রুবেল রীতিমতো দানছত্র খুলে বসলেন। ১০ ওভারে ৬৩ রান দিয়ে নিজের বোলিং কোটা শেষ করার ২ বল আগে পেয়েছেন বিরাট কোহলির উইকেট, ততক্ষণে ১৩৬ রান করে ম্যাচটা ভারতের পকেটে পুরে গিয়েছেন বিরাট কোহলি। ভাগ্যক্রমে সেই জিয়াই আফগানিস্তানের বিপক্ষে হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের লজ্জা এড়ানোর শেষ অবলম্বন।

ভারতের বিপক্ষে ৪৬তম ওভারে ব্যাট করতে নেমে ১২ বলে ১৮ রানের ছোটখাটো ঝড় তুলেছিলেন জিয়া, কভারে বরুণ অ্যারন দুর্দান্ত ক্যাচটা না ধরলে হয়তো আরেকটু দীর্ঘস্থায়ীই হতো ইনিংসটা। আফগানদের সঙ্গে যখন মাঠে নেমেছিলেন, তখনো হাওয়াটা প্রতিকূলে। সেখান থেকেই আক্রমণের ভাষায় জবাব দিচ্ছিলেন জিয়া, ২২ বলে ৪১ রানের ইনিংসটা শেষ হয় মোহাম্মদ নবীর বলে বোল্ড হয়ে। এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে ব্যাটে বলে করতে পারেননি, কিন্তু হতেও তো পারত !

সেসব এখন অতীত, কাল হোটেলের লবিতে বসে বন্ধু মোশাররফ হোসেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে জানালেন, 'যে ম্যাচটা হয়ে গেছে, সেটা তো শেষ। চেষ্টা করব সামনের দুটি ম্যাচে ভালো করার।'

এশিয়া কাপের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, সারা দেশে তখন সুর উঠবে 'চার-ছক্কা হইহই, বল গড়াইয়া গেল কই ?'। কিন্তু ফতুল্লায় চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছোটানো জিয়া তখন স্রেফ দর্শক। নির্বাচকরা তাঁকে নেননি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে, এই নিয়ে অবশ্য আর আক্ষেপও নেই তাঁর, 'এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই তো শেষ নয়, আরো খেলা আছে। ওই সময় ফরহাদ রেজা খুব ভালো করছিল, আমারও ফর্ম ছিল না।'

কয়েকদিন আগে জাতীয় লিগের ম্যাচে ১৩ ছক্কায় করেছিলেন ১৬৭, আন্তর্জাতিক ম্যাচেও ধরে রেখেছেন ছন্দটা। বোলিংয়ের ধার বাড়াতেও বাড়িয়ে দিয়েছেন অনুশীলন। সবই চলছে, নেই শুধু ভাগ্যের ছোঁয়া। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণার পরই যে এমন পারফরম্যান্স জিয়ার, তাই কেউ চোট পেয়ে ছিটকে না পড়লে খেলাই হবে না তাঁর ! যদিও এমন অমঙ্গল কামনা কখনোই করেন না জিয়া, বরং মন দিচ্ছেন নিজের খেলায়। মনের ভেতর দৃঢ় বিশ্বাস, একদিন নিয়তিও হার মানবে তাঁর কাছে।