খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য শেখ মোহাম্মদ নুরুল হকের পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারকে বাড়ি থেকে উৎখাত চেষ্টার। সে জন্য কয়েক ফুট উঁচু দেয়াল তুলে তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনাকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়েরের ঘটনাও ঘটেছে। তবে এমপি পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় এ বিষয়ে যথেষ্ট সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানাচ্ছেন বাদীপক্ষ।
পাইকগাছার স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী মোহাম্মদ আজিজ এবং তার পরিবারের অভিযোগ, যে বাড়িটিতে সত্তর বছর ধরে তারা বসবাস করে আসছেন, তাকে ঘিরে গত বছরের জানুয়ারিতে বেশ কয়েক ফুট উঁচু ইটের দেয়াল তৈরি করে তাদের অনেকটা অবরুদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়েছে।
আর এই অভিযোগ এসেছে খোদ খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য শেখ মোহাম্মদ নুরুল হকের পরিবারের বিরুদ্ধে।
 |
পরিবারের মহিলাদের বাইরে যেতে হচ্ছে মই দিয়ে দেওয়াল টপকে |
আজিজের পরিবার বলছে, বাড়ি থেকে বের হতে হলে মইয়ের সাহায্যে প্রাচীর ডিঙোতে হয়। বাড়ির বয়স্ক এবং শিশুদের জন্য বিষয়টি খুবই ঝূঁকিপূর্ণ এবং অমানবিক। বর্তমানে তারা দেয়ালের নিচে গর্ত খুঁড়ে আসা-যাওয়া করছেন বলে জানান মোহাম্মদ আজিজের ছেলে সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, "আমার মা-বাবা বা আমরা তো বাড়ি ছেড়ে যাইনি। শত কষ্ট হলেই এখানেই আছি। আমাদের প্রাচীর টপকে মই দিয়ে যেতে হয়। কোনও একটা রাস্তা নেই।" "আমার ভাইয়ের ছোট বাচ্চা আছে, ওকেও এভাবে স্কুলে যেতে হয়। এখন আমরা দেয়ালের নিচে একটা গর্ত খুঁড়ে সেখান দিয়ে যাচ্ছি। গেলে তাদের রাস্তার ওপর দিয়ে যেতে হয়", জানান তিনি।
 |
কখনও বা তারা বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছেন দেওয়ালের নিচে গর্ত খুঁড়ে |
বিষয়টি তাদের জন্য চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করেন সাইফুল ইসলাম। এ ঘটনায় আজিজ পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা দুটো মামলার একটির বাদী তিনি। অপর মামলাটি করেছেন তার বাবা মোঃ আজিজ নিজে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে মামলা দায়ের করতে গিয়েও তাদের হেনস্থার শিকার হতে হয় বলে জানান মোহাম্মদ আজিজের পরিবার।
একটি মামলায় বসত-ভিটা দখলের অভিযোগ আনা হয়। দ্বিতীয় মামলা হয় বাড়িঘরে হামলা ভাংচুরের অভিযোগে। দুটো মামলাতেই স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছেলে শেখ মনিরুল ইসলাম-সহ বেশ কয়েকজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
তবে এই ঘটনায় এমপি শেখ নুরুল হকের পরিবারও পাল্টা মামলা করেন। অভিযোগ চাঁদাবাজির। বিষয়টিতে তদন্তও করছে পুলিশ।
 |
মোহাম্মদ আজিজের বাড়িকে ঘিরে এই সেই বিতর্কিত দেওয়াল |
কিন্তু কীভাবে এই ঘটনার সূত্রপাত?
এ প্রসঙ্গে এ মামলার একজন তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "সত্তর বছর ধরে মোঃ আজিজের পরিবার ক্রয়সূত্রে ওই জমিতে বসবাস করছে। ওই জমির পাশের অর্পিত সম্পত্তির ৫০ শতাংশ স্থানীয় এমপির ছেলের নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে লিজ নেওয়ার পর শুরু হয় জমি নিয়ে বিরোধ।"
"কারণ মেপে দেখা যায় ৩০ শতাংশ আছে। ফলে বিবাদী পক্ষ দাবি করছে আজিজের বসতবাড়ির ২০ শতাংশ তাদের। এরপর তারা প্রাচীর তুলে দেয়", বলছিলেন তিনি। ওই দেয়াল ১০ ফুটের মত উঁচু বলে জানান তিনি। তবে এই জমিতে আজিজের পরিবার নিয়মিত খাজনা দেওয়া-সহ জমির আনুষঙ্গিক কাজকর্ম করে আসছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে, জানান পুলিশের এই সাব ইনস্পেক্টর। শিগগিরই এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
আজিজের পরিবার বলছেন, তারা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তর সহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। একাধিকবার তদন্তও হয়েছে। তবে সব কিছুর পরও এক বছর ধরে তাদের উঁচু দেয়ালের আড়ালে বন্দীর মত থাকতে হচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় তারা আদালতে অভিযোগ জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করছে পরিবারটি।